কোরোনা প্যানডেমিকের প্রাণঘাতী আক্রমণে পৃথিবী ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে ৷ মৃত্যুর সংখ্যা কমানোর উদ্দেশে যখন থেকে লকডাউন জারি করা হয়েছে, তখন থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রের কাজে প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷ এই স্থবিরতা বেশিদিন স্থায়ী হবে না ৷ সংকট কেটে যাওয়ার পর পরিস্থিতি আবার ভালো হবে ৷ প্রধানমন্ত্রী মোদী সম্প্রতি তাঁর ক্যাবিনেটের সদস্যদের নতুন করে কাজ শুরু করতে বলেছেন এবং উৎপাদন ও রপ্তানি ক্ষেত্রকে কীভাবে পুনরুজ্জীবিত করা যায়, তা দেখতে বলেছেন ৷ এটা জানা গিয়েছে যে, সরকারের বিভিন্ন দফতর দেশে আরও বেশি করে খুচরো যন্ত্রাংশ ও সামগ্রী তৈরির উপর জোর দিয়েছে ৷ ফার্মাসিউটিক্যাল, বস্ত্র, ইলেকট্রনিক্স, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং সামরিক সরঞ্জাম শিল্পই বর্তমানের এই থেমে যাওয়া অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে নতুন শক্তি জোগাতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে ৷ আগামী পাঁচ বছরে অস্ত্র ও গোলাবারুদ রপ্তানি করে 35 হাজার কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ইতিমধ্যেই বেঁধে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ৷ যা পরিকল্পনা করা হয়েছে, সেই লক্ষ্যমাত্রায় যদি পৌঁছানো যায়, তাহলেই ‘Make in India’-র লক্ষ্যে নতুন প্রাণ সঞ্চারিত হবে ৷
সাড়ে পাঁচ বছর আগে যখন ‘Make in India’ প্রকল্পের সূচনা হয়েছিল, তখন কেন্দ্র গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করেছিল যে এই উৎপাদন ক্ষেত্রের লক্ষ্য হবে 2022 সালের মধ্যে মোট দেশি পণ্যে 22 শতাংশ অবদান রাখা এবং আরও দশ মিলিয়ন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা ৷ তবে অল্পসময়ের মধ্যেই এই উচ্ছ্বাস কমে যায় ৷ সাম্প্রতিক আর্থিক সমীক্ষায় ‘Startup India’-র মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে চার কোটি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির নতুন পরিকল্পনা সামনে আনা হয়েছে ৷ এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন একটি কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করার, যা শ্রমজীবী শ্রেণির জন্য স্থানীয়ভাবে পর্যাপ্ত কাজ তৈরি করতে পারবে । এই সময় যখন কার্পেট, ম্যাট্রেস এবং জামাকাপড়ের উৎপাদন থেমে গিয়েছে, তখন বস্ত্রশিল্প এগিয়ে এসেছে মাস্ক তৈরিতে৷ এখন ফসল কাটার সময় ৷ এই সময়ে অনেক রাজ্যই গানি ব্যাগ ও তারপোলিনের অভাবে ভুগছে ৷ স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী ছোটো শিল্পগুলিকে এই কাজে নিযুক্ত করা যেতে পারে ৷ দস্তানার মতো ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম দ্রুত প্রয়োজন ৷ যখন অসংগঠিত ক্ষেত্রের 40 মিলিয়ন শ্রমিকের জীবন সংশয় তৈরি হয়েছে, তখন তাঁদের পছন্দসই কাজ দেওয়ার একটা প্রচেষ্টা তৈরি করতে হবে ৷
সাম্প্রতিক একটি তথ্য অনুযায়ী, যেহেতু ওষুধের কাঁচামালের 67 শতাংশ চিন থেকে আসে, তাই Active Pharma Ingredients (APIs)-এর জন্য ভারতকে তাদের উপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে ৷ যদিও API তৈরি করা ভারতের একটি সহজাত শক্তি ৷ 25 বছর আগেও বিভিন্ন ওষুধ তৈরির কাঁচামাল উৎপাদন এবং তার পরিশোধন দেশেই হত ৷ যদি সেই অভ্যাস আবার শুরু করা যায়, তাহলে API রপ্তানিতে ভারতের প্রতিযোগী হিসেবে কেউ থাকবে না ৷ বেতের চেয়ার, পাট, চামড়ার সামগ্রী, হস্তশিল্পের মতো ক্ষুদ্র শিল্প সাহায্যকারী হিসেবে বিস্ময়কর কিছু সৃষ্টি করতে পারে ৷ তাই তাদের সরকারের সহায়তা খুবই প্রয়োজন ৷ খুচরো যন্ত্রাংশ, সরঞ্জাম এবং সাবসিস্টেমগুলি নিয়ন্ত্রণ করে সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদনের মতো ক্ষেত্রগুলি স্বাবলম্বী হতে পারে । ভারতের মতো কৃষি প্রধান দেশের কাছে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের প্রযুক্তির উন্নতি করা মাছের জলে থাকার মতোই সহজ ৷ যদি আমাদের জন্য অপরিহার্য এবং দেশে উৎপাদন করে রপ্তানি করা যায়, তাহলেই বেকারত্ব দূর করা যাবে এবং ভারত আবার স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারবে ৷