ETV Bharat / bharat

জাগতে রহো : সাইবার রিভেঞ্জের নিশানায় সব বয়সের মহিলারা

বিভিন্ন আর্থিক প্রতারণার পরই ভারতে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ দায়ের হয় সাইবার রিভেঞ্জের ঘটনায় ৷ কোনও কোনও রাজ্যে অপরাধের শীর্ষে রয়েছে সাইবার রিভেঞ্জ ৷

জাগতে রহো
জাগতে রহো
author img

By

Published : Jul 20, 2020, 9:23 PM IST

Updated : Jul 20, 2020, 9:28 PM IST

কলকাতা, 20 জুলাই : সাইবার রিভেঞ্জ ৷ অর্থাৎ অনলাইনে প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা ৷ এই সাইবার রিভেঞ্জ বর্তমানে অন্যতম বড় থ্রেট হয়ে দাঁড়িয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে ৷ বিশেষ করে এর ফলে সম্মানহানি হচ্ছে দেশের কিশোরী, যুবতি ও মহিলাদের ৷ ইন্টারনেট দুনিয়ায় শ্লীলতাহানি চলছে বছরের পর বছর ধরে ৷ ছবি বিকৃত করে করা হচ্ছে আপলোড ৷ বিভিন্ন আর্থিক প্রতারণার পরই ভারতে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ দায়ের হয় সাইবার রিভেঞ্জের ঘটনায় ৷ কোনও কোনও রাজ্যে অপরাধের শীর্ষে রয়েছে সাইবার রিভেঞ্জ ৷ সম্মান বাঁচাতে অনেক সময় আত্মহত্যাও করেছেন অনেকে ৷

ঘটনা 1 : 10 মার্চ আমেদাবাদের সরদারনগর থানা এলাকায় আত্মহত্যা করেন 16 বছরের এক কিশোরী ৷ তাঁর প্রেমিক 29 ফেব্রুয়ারি নিজেদের এক ঘনিষ্ঠ ভিডিয়ো ইন্টারনেটে আপলোড করে ৷ মুহূর্তে ভাইরালও হয়ে যায় সেটি ৷ তারপর অপমানে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন ওই কিশোরী ৷

ঘটনা 2 : 10 বছর আগে বাংলাতেও ঘটে একই ধরনের ঘটনা ৷ শিলিগুড়ির এক কলেজ পড়ুয়া যুবতির প্রেমিক নিজেদের গোপন ভিডিয়ো MMS হিসেবে প্রকাশ করে দেয় ৷ ইউটিউবেও আপলোড করা হয় ভিডিয়োটি ৷ সাত বছরের সম্পর্কের পরও এরকম হতে পারে স্বপ্নেও ভাবেননি ওই যুবতি ৷ পরে যুবতির পরিবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ৷ পুলিশ ভিডিয়োটি ইউটিউব থেকে সরিয়ে দেয় ৷ কিন্তু, তারপরও শিলিগুড়ির এক শ্রেণির মানুষের কাছে রয়ে গিয়েছিল ভিডিয়োটি ৷ পরে আত্মহত্যা করেন ওই যুবতি ৷

সময় যত এগিয়েছে ইন্টারনেটে এই অপরাধের ধরন বদলেছে ৷ বেড়েছে অপরাধের পরিমাণও ৷ শুধুমাত্র গোপন ছবি প্রকাশ নয়, অনেক সময় ছবিকে বিশেষভাবে এডিট করে মহিলাদের নগ্ন ছবি বানিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ইন্টারনেট দুনিয়ায় ৷

দেশে সাইবার রিভেঞ্জের চিত্রটা ঠিক কী?
দেশে সাইবার রিভেঞ্জের চিত্রটা ঠিক কী?

ঘটনা 3 : বছর দেড়েক আগে কলকাতার যুবতি এমনই এক ঘটনার শিকার হন ৷ দিনদুপুরে এমন কী, মাঝরাতেও তাঁর বাড়ির দরজায় বেজে উঠছিল কলিং বেল ৷ বাইরে দাঁড়িয়ে অপরিচিত নানা বয়সের যুবক ৷ কী প্রয়োজন প্রশ্ন করতেই পালটা প্রশ্ন করছিল তারা ৷ তাদের বক্তব্য, "আপনিই তো ঠিকানা দিয়েছিলেন ৷ এখন বাইরে দাঁড় করিয়ে না রেখে ভিতরে ঢুকতে দিন ৷ চাহিদা মতো টাকা সঙ্গে এনেছি ৷" প্রথমে কিছুই বুঝতে পারেননি ওই গৃহবধূ ৷ পরে এক যুবক বিষয়টি জানান তাঁকে ৷ তিনি বলেন, "এসকট সার্ভিসে ছবি-সহ এই বাড়ির ঠিকানা দিয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে ৷ সঙ্গে দেওয়া হয়েছে যোগাযোগ নম্বরও ৷ সেখানে যোগাযোগ করলে বলে দেওয়া হচ্ছে সময় ৷" সেই বিজ্ঞাপনের ওয়েবসাইটে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ ওই যুবতি ও তাঁর পরিবারের ৷ শুধু তাঁর ছবি নয়, তাঁর ভাইয়ের বউকে নিয়েও দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞাপন ৷ লজ্জায় অপমানে কী করে এই সমস্যা থেকে বের হবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না ৷ বাড়ির বাইরে CCTV ক্যামেরা বসানো হয় ৷ বাইরে লিখে দেওয়া হয়, ওয়েবসাইট দেখে কেউ এই বাড়িতে আসবেন না ৷ কিন্তু, তারপরও অপরিচিতদের আনাগোনো বন্ধ হয় না ৷ পরে, লালবাজার সাইবার অপরাধ থানায় যোগাযোগ করেন ওই যুবতি ৷ দায়ের করা হয় অভিযোগও ৷ গুরুত্ব বুঝে দ্রুত তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা বিভাগ ৷ প্রাথমিকভাবে উঠে আসে কলকাতারই এক যুবকের নাম ৷ তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ৷ তাকে জেরা করে জানা যায়, সে এই পরিবারকে চেনে না ৷ তবে, এক বান্ধবীর নির্দেশে এই কাজ করেছে ৷ তার বান্ধবী আসলে ওই যুবতির প্রতিবেশী ৷ জমি বিবাদের জেরে প্রতিশোধ নিতেই এই ব্যবস্থা নিয়েছিল সে ৷ এভাবে সাইবার দুনিয়ায় ক্রমাগত ঘটে চলেছে প্রতিশোধের ঘটনা ।

সাইবার রিভেঞ্জ থেকে বাঁচার উপায় কি?
সাইবার রিভেঞ্জ থেকে বাঁচার উপায় কি?

এ প্রসঙ্গে সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, "দেখুন মহিলারা নিজেদের প্রচার করতে গিয়ে সোশাল মিডিয়াকে ব্যবহার করছে নানাভাবে । আর সেটাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে ।" আসলে যুগটা প্রচারের । কেউ কেউ বলেন দেখনদারির । সোশাল মিডিয়ার বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বিভিন্ন বয়সের মহিলারা নিজেদের সৌন্দর্য কিংবা গুণের জাহির করতে মরিয়া । রমরমিয়ে চলছে সেই সব সোশাল সাইটও । চাহিদা একটাই যত বেশি সম্ভব মানুষের কাছে পৌঁছানো । আর তাদের লাইক ।

লকডাউন চলাকালীন এপ্রিল মাসের 17 তারিখ নয়ডার সালারপুরে এক কিশোরী আত্মহত্যা করে । তার অভিমান ছিল, টিকটক চিনা অ্যাপে কেন লাইক পাচ্ছে না সে । তার আগে 7 মে গুরগাঁওয়ে 17 বছরের এক কিশোর একই কারণে 11 তলা থেকে ঝাঁপ দেয় । যে বিভিন্ন সোশাল মিডিয়ার চাপ সহ্য করতে পারছিল না । অর্থাৎ আজকের টিনেজার কিংবা যুবতিদের আত্মপ্রচারের ঝোঁক জীবন পর্যন্ত নিয়ে নিচ্ছে । আর সেটাই কাল হচ্ছে । এর জেরে তৈরি হয়ে যাচ্ছে তাদের নগ্ন ছবি কিংবা ভিডিয়ো । কখনও তারা ব্ল্যাকমেলের শিকার হচ্ছেন ।

মূলত কোন কোন পদ্ধতিতে হচ্ছে সাইবার রিভেঞ্জের মতো অপরাধ?
মূলত কোন কোন পদ্ধতিতে হচ্ছে সাইবার রিভেঞ্জের মতো অপরাধ?

লালবাজার সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত কলকাতায় শাড়ি পরে চ্যালেঞ্জ কিংবা কমেন্ট চ্যালেঞ্জের বিষয়ে মামলা হয়নি । কিন্তু অভিজ্ঞতা বলছে, লজ্জার ভয়ে অনেকেই এ ধরনের মামলা করেন না । বরং টাকা পয়সা দিয়ে মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন । কিন্তু কেন এত উদ্বেগ? কেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই ধরনের চ্যালেঞ্জে পা না দিতে? সন্দীপবাবু জানাচ্ছেন, এর আগে নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়ার পরও নতুন একটি অ্যাপ এবং ওয়েবসাইট ফেরত এসেছে । তারা বিনামূল্যে কাজ করে দিচ্ছে । ওই ওয়েবসাইটে যেকোনও মহিলার ছবি দেওয়া হলে কিছুক্ষণের মধ্যেই তার নগ্নরূপ চলে আসবে ওই অ্যাপ ব্যবহারকারীর হাতে । আর এভাবেই দেশের অনেক প্রান্তে শাড়ি পরে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া যুবতি কিংবা কিশোরীরা ফাঁদে পড়ে গিয়েছেন । এর সুযোগ নিয়ে ব্ল্যাকমেল করা হচ্ছে বলে খবর আসছে । অর্থাৎ ছবি এডিটিংয়ের কাজটি কাউকে নিজেকেও করতে হচ্ছে না । নির্দিষ্ট একটি অ্যাপে ছবি দিলেই হল । চলে আসবে নগ্ন ছবি । তথ্য বলছে এতটা সহজলভ্যতার কারণে দিনের পর দিন বাড়ছে সাইবার প্রতারণার ঘটনা ।

কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইমের এক অফিসার জানাচ্ছেন, সাইবার রিভেঞ্জের প্রকৃত চিত্র পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যাবে না । কারণ, অনেক ক্ষেত্রেই এই মামলা থানা পর্যন্ত পৌঁছায় না । দেশের শহরগুলিতে কিছুটা সচেতনতা বাড়ায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুলিশের দ্বারস্থ হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা । কিন্তু, গ্রামে এখনও পর্যন্ত সমস্যা রয়েই গিয়েছে। অস্বীকার করার জায়গা নেই মানুষের মধ্যে যেমন সচেতনতার অভাব রয়েছে, তেমন গ্রামের থানাগুলিতে সাইবার অপরাধ নিয়ে এখনও পর্যন্ত সচেতনতা সেইভাবে পুলিশের মধ্যেও নেই । অথচ আগামী দিনে মানব সভ্যতার কাছে সবথেকে বড় হুমকি হতে চলেছে সাইবার অপরাধ ।

সাইবার রিভেঞ্জ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত

সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত এ প্রসঙ্গে বলেন, "এর থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় বলতে গেলে নেই । একটাই মাত্র পথ খোলা । সোশাল মিডিয়ায় নিজেদের যে ছবিগুলো পোস্ট করা হচ্ছে, সেগুলো শুধুমাত্র নিজেদের ব্যক্তিগতভাবে চেনা মানুষদের মধ্যেই শেয়ার করা উচিত । অপরিচিত কোনও ব্যক্তির সঙ্গে নিজের কোনও ছবি শেয়ার করা উচিত নয় । এই ফাঁদ থেকে বাঁচার এটিই একমাত্র উপায় ।" কলকাতা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার (অপরাধ) মুরলীধর শর্মা এ প্রসঙ্গে বলেন, "সাইবার রিভেঞ্জের জন্য অত্যন্ত সতর্ক থাকা প্রয়োজন । নিজের ছবি কোনওভাবেই যাতে অপরিচিতের কাছে না যায় তা নিশ্চিত করতে হবে । তার পরেও যদি এমন কোনও ঘটনার খবর আসে দ্রুত পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে ।"

কলকাতা, 20 জুলাই : সাইবার রিভেঞ্জ ৷ অর্থাৎ অনলাইনে প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা ৷ এই সাইবার রিভেঞ্জ বর্তমানে অন্যতম বড় থ্রেট হয়ে দাঁড়িয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে ৷ বিশেষ করে এর ফলে সম্মানহানি হচ্ছে দেশের কিশোরী, যুবতি ও মহিলাদের ৷ ইন্টারনেট দুনিয়ায় শ্লীলতাহানি চলছে বছরের পর বছর ধরে ৷ ছবি বিকৃত করে করা হচ্ছে আপলোড ৷ বিভিন্ন আর্থিক প্রতারণার পরই ভারতে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ দায়ের হয় সাইবার রিভেঞ্জের ঘটনায় ৷ কোনও কোনও রাজ্যে অপরাধের শীর্ষে রয়েছে সাইবার রিভেঞ্জ ৷ সম্মান বাঁচাতে অনেক সময় আত্মহত্যাও করেছেন অনেকে ৷

ঘটনা 1 : 10 মার্চ আমেদাবাদের সরদারনগর থানা এলাকায় আত্মহত্যা করেন 16 বছরের এক কিশোরী ৷ তাঁর প্রেমিক 29 ফেব্রুয়ারি নিজেদের এক ঘনিষ্ঠ ভিডিয়ো ইন্টারনেটে আপলোড করে ৷ মুহূর্তে ভাইরালও হয়ে যায় সেটি ৷ তারপর অপমানে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন ওই কিশোরী ৷

ঘটনা 2 : 10 বছর আগে বাংলাতেও ঘটে একই ধরনের ঘটনা ৷ শিলিগুড়ির এক কলেজ পড়ুয়া যুবতির প্রেমিক নিজেদের গোপন ভিডিয়ো MMS হিসেবে প্রকাশ করে দেয় ৷ ইউটিউবেও আপলোড করা হয় ভিডিয়োটি ৷ সাত বছরের সম্পর্কের পরও এরকম হতে পারে স্বপ্নেও ভাবেননি ওই যুবতি ৷ পরে যুবতির পরিবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ৷ পুলিশ ভিডিয়োটি ইউটিউব থেকে সরিয়ে দেয় ৷ কিন্তু, তারপরও শিলিগুড়ির এক শ্রেণির মানুষের কাছে রয়ে গিয়েছিল ভিডিয়োটি ৷ পরে আত্মহত্যা করেন ওই যুবতি ৷

সময় যত এগিয়েছে ইন্টারনেটে এই অপরাধের ধরন বদলেছে ৷ বেড়েছে অপরাধের পরিমাণও ৷ শুধুমাত্র গোপন ছবি প্রকাশ নয়, অনেক সময় ছবিকে বিশেষভাবে এডিট করে মহিলাদের নগ্ন ছবি বানিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ইন্টারনেট দুনিয়ায় ৷

দেশে সাইবার রিভেঞ্জের চিত্রটা ঠিক কী?
দেশে সাইবার রিভেঞ্জের চিত্রটা ঠিক কী?

ঘটনা 3 : বছর দেড়েক আগে কলকাতার যুবতি এমনই এক ঘটনার শিকার হন ৷ দিনদুপুরে এমন কী, মাঝরাতেও তাঁর বাড়ির দরজায় বেজে উঠছিল কলিং বেল ৷ বাইরে দাঁড়িয়ে অপরিচিত নানা বয়সের যুবক ৷ কী প্রয়োজন প্রশ্ন করতেই পালটা প্রশ্ন করছিল তারা ৷ তাদের বক্তব্য, "আপনিই তো ঠিকানা দিয়েছিলেন ৷ এখন বাইরে দাঁড় করিয়ে না রেখে ভিতরে ঢুকতে দিন ৷ চাহিদা মতো টাকা সঙ্গে এনেছি ৷" প্রথমে কিছুই বুঝতে পারেননি ওই গৃহবধূ ৷ পরে এক যুবক বিষয়টি জানান তাঁকে ৷ তিনি বলেন, "এসকট সার্ভিসে ছবি-সহ এই বাড়ির ঠিকানা দিয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে ৷ সঙ্গে দেওয়া হয়েছে যোগাযোগ নম্বরও ৷ সেখানে যোগাযোগ করলে বলে দেওয়া হচ্ছে সময় ৷" সেই বিজ্ঞাপনের ওয়েবসাইটে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ ওই যুবতি ও তাঁর পরিবারের ৷ শুধু তাঁর ছবি নয়, তাঁর ভাইয়ের বউকে নিয়েও দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞাপন ৷ লজ্জায় অপমানে কী করে এই সমস্যা থেকে বের হবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না ৷ বাড়ির বাইরে CCTV ক্যামেরা বসানো হয় ৷ বাইরে লিখে দেওয়া হয়, ওয়েবসাইট দেখে কেউ এই বাড়িতে আসবেন না ৷ কিন্তু, তারপরও অপরিচিতদের আনাগোনো বন্ধ হয় না ৷ পরে, লালবাজার সাইবার অপরাধ থানায় যোগাযোগ করেন ওই যুবতি ৷ দায়ের করা হয় অভিযোগও ৷ গুরুত্ব বুঝে দ্রুত তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা বিভাগ ৷ প্রাথমিকভাবে উঠে আসে কলকাতারই এক যুবকের নাম ৷ তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ৷ তাকে জেরা করে জানা যায়, সে এই পরিবারকে চেনে না ৷ তবে, এক বান্ধবীর নির্দেশে এই কাজ করেছে ৷ তার বান্ধবী আসলে ওই যুবতির প্রতিবেশী ৷ জমি বিবাদের জেরে প্রতিশোধ নিতেই এই ব্যবস্থা নিয়েছিল সে ৷ এভাবে সাইবার দুনিয়ায় ক্রমাগত ঘটে চলেছে প্রতিশোধের ঘটনা ।

সাইবার রিভেঞ্জ থেকে বাঁচার উপায় কি?
সাইবার রিভেঞ্জ থেকে বাঁচার উপায় কি?

এ প্রসঙ্গে সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, "দেখুন মহিলারা নিজেদের প্রচার করতে গিয়ে সোশাল মিডিয়াকে ব্যবহার করছে নানাভাবে । আর সেটাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে ।" আসলে যুগটা প্রচারের । কেউ কেউ বলেন দেখনদারির । সোশাল মিডিয়ার বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বিভিন্ন বয়সের মহিলারা নিজেদের সৌন্দর্য কিংবা গুণের জাহির করতে মরিয়া । রমরমিয়ে চলছে সেই সব সোশাল সাইটও । চাহিদা একটাই যত বেশি সম্ভব মানুষের কাছে পৌঁছানো । আর তাদের লাইক ।

লকডাউন চলাকালীন এপ্রিল মাসের 17 তারিখ নয়ডার সালারপুরে এক কিশোরী আত্মহত্যা করে । তার অভিমান ছিল, টিকটক চিনা অ্যাপে কেন লাইক পাচ্ছে না সে । তার আগে 7 মে গুরগাঁওয়ে 17 বছরের এক কিশোর একই কারণে 11 তলা থেকে ঝাঁপ দেয় । যে বিভিন্ন সোশাল মিডিয়ার চাপ সহ্য করতে পারছিল না । অর্থাৎ আজকের টিনেজার কিংবা যুবতিদের আত্মপ্রচারের ঝোঁক জীবন পর্যন্ত নিয়ে নিচ্ছে । আর সেটাই কাল হচ্ছে । এর জেরে তৈরি হয়ে যাচ্ছে তাদের নগ্ন ছবি কিংবা ভিডিয়ো । কখনও তারা ব্ল্যাকমেলের শিকার হচ্ছেন ।

মূলত কোন কোন পদ্ধতিতে হচ্ছে সাইবার রিভেঞ্জের মতো অপরাধ?
মূলত কোন কোন পদ্ধতিতে হচ্ছে সাইবার রিভেঞ্জের মতো অপরাধ?

লালবাজার সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত কলকাতায় শাড়ি পরে চ্যালেঞ্জ কিংবা কমেন্ট চ্যালেঞ্জের বিষয়ে মামলা হয়নি । কিন্তু অভিজ্ঞতা বলছে, লজ্জার ভয়ে অনেকেই এ ধরনের মামলা করেন না । বরং টাকা পয়সা দিয়ে মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন । কিন্তু কেন এত উদ্বেগ? কেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই ধরনের চ্যালেঞ্জে পা না দিতে? সন্দীপবাবু জানাচ্ছেন, এর আগে নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়ার পরও নতুন একটি অ্যাপ এবং ওয়েবসাইট ফেরত এসেছে । তারা বিনামূল্যে কাজ করে দিচ্ছে । ওই ওয়েবসাইটে যেকোনও মহিলার ছবি দেওয়া হলে কিছুক্ষণের মধ্যেই তার নগ্নরূপ চলে আসবে ওই অ্যাপ ব্যবহারকারীর হাতে । আর এভাবেই দেশের অনেক প্রান্তে শাড়ি পরে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া যুবতি কিংবা কিশোরীরা ফাঁদে পড়ে গিয়েছেন । এর সুযোগ নিয়ে ব্ল্যাকমেল করা হচ্ছে বলে খবর আসছে । অর্থাৎ ছবি এডিটিংয়ের কাজটি কাউকে নিজেকেও করতে হচ্ছে না । নির্দিষ্ট একটি অ্যাপে ছবি দিলেই হল । চলে আসবে নগ্ন ছবি । তথ্য বলছে এতটা সহজলভ্যতার কারণে দিনের পর দিন বাড়ছে সাইবার প্রতারণার ঘটনা ।

কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইমের এক অফিসার জানাচ্ছেন, সাইবার রিভেঞ্জের প্রকৃত চিত্র পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যাবে না । কারণ, অনেক ক্ষেত্রেই এই মামলা থানা পর্যন্ত পৌঁছায় না । দেশের শহরগুলিতে কিছুটা সচেতনতা বাড়ায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুলিশের দ্বারস্থ হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা । কিন্তু, গ্রামে এখনও পর্যন্ত সমস্যা রয়েই গিয়েছে। অস্বীকার করার জায়গা নেই মানুষের মধ্যে যেমন সচেতনতার অভাব রয়েছে, তেমন গ্রামের থানাগুলিতে সাইবার অপরাধ নিয়ে এখনও পর্যন্ত সচেতনতা সেইভাবে পুলিশের মধ্যেও নেই । অথচ আগামী দিনে মানব সভ্যতার কাছে সবথেকে বড় হুমকি হতে চলেছে সাইবার অপরাধ ।

সাইবার রিভেঞ্জ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত

সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত এ প্রসঙ্গে বলেন, "এর থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় বলতে গেলে নেই । একটাই মাত্র পথ খোলা । সোশাল মিডিয়ায় নিজেদের যে ছবিগুলো পোস্ট করা হচ্ছে, সেগুলো শুধুমাত্র নিজেদের ব্যক্তিগতভাবে চেনা মানুষদের মধ্যেই শেয়ার করা উচিত । অপরিচিত কোনও ব্যক্তির সঙ্গে নিজের কোনও ছবি শেয়ার করা উচিত নয় । এই ফাঁদ থেকে বাঁচার এটিই একমাত্র উপায় ।" কলকাতা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার (অপরাধ) মুরলীধর শর্মা এ প্রসঙ্গে বলেন, "সাইবার রিভেঞ্জের জন্য অত্যন্ত সতর্ক থাকা প্রয়োজন । নিজের ছবি কোনওভাবেই যাতে অপরিচিতের কাছে না যায় তা নিশ্চিত করতে হবে । তার পরেও যদি এমন কোনও ঘটনার খবর আসে দ্রুত পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে ।"

Last Updated : Jul 20, 2020, 9:28 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.