প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্যোগে অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়াল ইজ়রায়েলের সঙ্গে মজবুত সম্পর্ক স্থাপনে গুরুত্ব দেন । এরপর গত দুই বছরে ভারতের উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে একাধিক বার সফর করেন ইজ়রায়েলের কর্তাব্যক্তিরা । আর এ বার, খুব শীঘ্রই অসমের রাজধানী গুয়াহাটিতে একটি সাম্মানিক দূতাবাস তৈরি করার কথা জানিয়েছে ইজ়রায়েল ।
দিল্লিতে একটি অনুষ্ঠানে এই কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী সোনওয়াল । বলেন, "আমাদের সঙ্গে সম্প্রতি ইজ়রায়েলের একটি চুক্তি হয়েছে । খুব শীঘ্রই অসমে ইজ়রায়েলের একটি সাম্মানিক দূতাবাস তৈরি হবে । প্রধানমন্ত্রী আমাদের বলেছেন যে, ইজ়রায়েল কৃষি প্রযুক্তি, জল সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা, পর্যটন প্রভৃতিতে সেরা । তাই আমি যেন ইজ়রায়েলের সঙ্গে কথা বলি । তার ফলাফল আমরা এখন পাচ্ছি । "
গুয়াহাটিতে অবশ্য আগে থেকেই বাংলাদেশ এবং ভুটানের দূতাবাস রয়েছে । এই দুই দেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে অসমের । কিন্তু রাজ্যে ইজ়রায়েলি দূতাবাস তৈরি হওয়া নিঃসন্দেহে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় । দিল্লিতে প্রধান দূতাবাস ছাড়াও মুম্বই ও বেঙ্গালুরুতে দূতাবাস রয়েছে ইজ়রায়েলের ।
সাম্মানিক দূতাবাস মূলত গড়া হয় অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পর্ক মজবুত করতে । খেয়াল রাখা হয় দুই দেশের স্বার্থের বিষয়ই । তবে একইসঙ্গে, প্রয়োজনে এবং পরিস্থিতি বিচারে এইসব সাম্মানিক দূতাবাসের ক্ষমতা বাড়ানোও সম্ভব ।
জঙ্গি বিরোধী অভিযান এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের কৌশলের দিক থেকে ইজ়রায়েল বিশ্বের অন্যতম অগ্রণী রাষ্ট্র । যেহেতু অসমের বেশিরভাগ জায়গায় আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে এবং এই রাজ্যের সঙ্গে চিনের সীমান্তও রয়েছে, সেহেতু অসমের দিকে ইজ়রায়েলের দৃষ্টি দেওয়া নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ । নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভের জেরে অসম আপাতত কিছুটা অশান্ত ।
2011 সালের আদমসুমারি অনুযায়ী, অসমে মুসলিম নাগরিকের মোট সংখ্যা এক কোটি ছয় লাখ অর্থাৎ রাজ্যের মোট জনসংখ্যার 34.22 শতাংশ । অর্থাৎ মোট মুসলিম জনসংখ্যায় গোটা দেশের মধ্যে অসমের স্থান দুই নম্বরে, জম্মু ও কাশ্মীরের ঠিক পরেই । 2019 সালের 5 অগাস্টের পর থেকে অবশ্য জম্মু-কাশ্মীর আর রাজ্য নয় ।
গুয়াহাটিতে দূতাবাস থাকলে ইজ়রায়েলের পক্ষে মিজো, কুকি এবং পৈতেই জনজাতির দিকে বিশেষ ভাবে নজর দেওয়া সম্ভব হবে । মণিপুর ও মিজ়োরামের এই জনজাতিরা নিজেদের ইজারায়েলের হারিয়ে যাওয়া 10 জনজাতির একটির বর্তমান প্রজন্ম হিসাবে দাবি করে ।
স্থানীয় লোকগাথা ও উপকথা অনুযায়ী, এইসব জনজাতির পূর্বপুরুষ, যাঁরা নিজেদের ‘বেঁই মেনাশে’ অর্থাৎ মেনাশের সন্তান বলতেন, তাঁরা প্রায় 2700 বছর আগে অ্যাসাইরান রাজার দ্বারা বিতারিত হয়েছিলেন । মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ঘোরাঘুরি করে অবশেষে তাঁরা বর্তমানে যেখানে মণিপুর ও মিজোরাম রাজ্য রয়েছে, সেখানে বসবাস শুরু করেন । এই জনজাতির প্রায় পাঁচ হাজার সদস্য ইতিমধ্যেই ইজ়রায়েল ফিরে গিয়েছে ।
সেনা, স্ট্র্যাটেজি ও তথ্য বিনিময়ে ভারত ও ইজ়রায়েল খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে দীর্ঘদিন । ভারত ইজ়রায়েলের সবচেয়ে বড় অস্ত্র-ক্রেতা । রাশিয়ার পর বিশেষ অস্ত্র ব্যবস্থা কেনার ক্ষেত্রে ইজ়রায়েলকেই সবচেয়ে বেশি ভরসা করে ভারত ।
তবে অসম চায় না সে রাজ্যে মাত্র কয়েকটি দেশের কূটনৈতিক উপস্থিতি থাক । মুখ্যমন্ত্রী সোনওয়াল বলেন, "আমরা চাই ASEAN গোষ্ঠীর সব দেশের দূতাবাস থাক গুয়াহাটিতে । আমরা এ বিষয়ে বিদেশমন্ত্রকের সাহায্য চেয়েছিলাম এবং তারা আমাদের প্রচুর সাহায্য করেছে । আমরা গুয়াহাটিকে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বার বানাতে চাই ।"
সঞ্জীবকুমার বড়ুয়া
দিল্লি