ETV Bharat / bharat

বরফ ধুলোয় তৈরি এরা, সূর্যই এদের নিয়তি - কী এই ধূমকেতু

ধূমকেতুর মধ্যে বরফ, মিথেন, হাইড্রোজেন থাকে । ধূমকেতু দু'ধরনের হয় । স্বল্পকালীন ও দীর্ঘকালীন ধূমকেতু । এরা নির্দিষ্ট সময় পর পর সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে ।

ধূমকেতু
ধূমকেতু
author img

By

Published : Jul 15, 2020, 7:01 AM IST

কিছু বরফ ধুলো নিয়ে জন্মায় এরা ৷ তারপর হঠাৎ কী যেন এক টানে সূর্যের দিকে ছুটে আসা ৷ হাজার-হাজার বছর পেরিয়ে যার সান্নিধ্যে আসে এরা, সেই সূর্যই হয়ে দাঁড়ায় এদের নিয়তি ৷ কেউ প্রদক্ষিণ শেষে বাড়ি ফেরে ৷ কেউ আবার সূর্যের কাছেই সঁপে দেয় নিজেদের ৷ বড় অদ্ভুত এই ধূমকেতুদের জীবন ৷

সাড়ে ছয় হাজার বছর পেরিয়ে আবার সেই রকম এক সময় এসে দাঁড়িয়েছে ৷ ফের পৃথিবীর কাছাকাছি এসেছে ধূমকেতু নিওওয়াইজ় ৷ কলকাতা-সহ গোটা ভারত থেকে খালি চোখে দেখা যাবে এই ধূমকেতুকে ৷ কিন্তু কীভাবে জন্ম হয় ধূমকেতুর, আর কীভাবেই বা মহাকাশে বিলীন হয়ে যায় ?

কী এই ধূমকেতু

ইংরেজি নাম কমেট ৷ ধুলোর কণা, বরফ ও গ্যাসের তৈরি এক ধরনের মহাজাগতিক বস্তু । দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে কয়েকশো কিলোমিটার পর্যন্ত হয় ৷

image
নির্দিষ্ট সময়ের ভিত্তিতে সৌরজগতে প্রবেশ করে ধূমকেতু

ধূমকেতুর শরীর ও মুগ্ধ করা লেজ

  • ধূমকেতুর মূল শরীরকে বলা হয় নিউক্লিয়াস ৷ এর মধ্যে ধুলো-বালি, পাথর, বরফ, মিথেন, হাইড্রোজেন, অনেক সময় অ্যামোনিয়া, কার্বন ডাই অক্সাইড ও সামান্য পরিমাণ জল থাকে ৷
  • যখন এরা সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে শুরু করে, তখন সূর্যের উত্তাপে বরফকণা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়তে থাকে মহাকাশে । সূর্যের বিকিরণ বল ও সৌরবায়ুর প্রভাবেই এই অবস্থা হয় ধূমকেতুর ৷ এক কথায় এরা সূর্যের যত কাছে আসে, ততই ভাঙতে থাকে ৷ তখনই তৈরি হয় লেজ ৷ যার সৌন্দর্য মুগ্ধ করে আমাদের ৷
  • ধূমকেতুর দুই ধরনের লেজ থাকে ৷ একটিকে ডাস্ট টেল বলা হয় ৷ যা আমরা খালি চোখে দেখতে পাই ৷ আর একটি হল প্লাজ়মা টেল ৷ যার ছবি তোলা যায় ৷ বা কোনও যন্ত্রের মাধ্যমে দেখা যায় ৷ কিন্তু খালি চোখে দেখা যায় না ৷
  • সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি এর কক্ষপথের অংশের নাম পেরিহেলিয়ন ৷ আর দূরের অংশের নাম এপিহেলিয়ন ৷

ধূমকেতুর জন্ম ও পর্যায়কাল

  • একটি ধূমকেতুর পর্যায়কাল কয়েক বছর থেকে শুরু করে কয়েকশো বা কয়েক হাজার বছর পর্যন্ত হতে পারে । স্বল্পকালীন ধূমকেতু সৃষ্টি হয় কুইপার বেল্ট থেকে যার অবস্থান নেপচুনের কক্ষপথের বাইরে ৷ 200 বছরের মধ্যে হয় এদের পর্যায়কাল ৷ যেন হ্যালির ধূমকেতু ৷ 76 বছর পর্যায়কাল ৷
  • দীর্ঘকালীন ধূমকেতু তৈরি হয় ওরট মেঘ থেকে, যা সৌরজগতের বাইরে একটি বরফময় বস্তুর গোলাকার মেঘ । এদের পর্যায়কাল 200 বছর থেকে কয়েক লাখ বছর হতে পারে ৷
    image
    পর্যায়কাল অনুযায়ী দুধরনের হয় ধূমকেতু

ধূমকেতুর নামকরণ

অতীতে ধূমকেতুর আবিষ্কর্তার নামেই ধূমকেতুর নামকরণ করা হত ৷ যেমন, এডমন্ড হ্যালির নামে হ্যালির ধূমকতেু ৷

বর্তমানে নামকরণের পদ্ধতিতে অনুমোদন দেয় ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিকাল ইউনিয়ন (IAU) ৷ এক্ষেত্রে নামকরণের পদ্ধতি হল, যদি এটি পিরিয়ডিক হয়, তাহলে P লিখে ধূমকেতু আবিষ্কারের বছর লিখতে হবে ৷ যেমন-

P/ পর্যায়কালীন ধূমকেতু যেমন হ্যালির ধূমকেতু হল 1P/1682 Q1 ৷ C দিয়ে নামকরণ করা হয় ৷ যখন ধূমকেতু পর্যায়কালীন নয় ৷ হেল-বপ ধূমকেতু হল C/1995 O1 ৷ এইভাবে যেগুলির পর্যায়কাল হিসাব করা সম্ভব হয়নি, সেগুলি X দিয়ে ও হারিয়ে যাওয়া পর্যায়কালীন ধূমকেতু D দিয়ে চিহ্নিত করা হয় ৷

তবে এই ধূমকেতুদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত নাম হ্যালির ধূমকেতু ৷ প্রতি 76 বছরে একবার করে ফিরে আসে এটি ৷ এর আগে 1965 সালে দেখা গেছিল ইকেয়া সাকি ধূমকেতুটিকে । তবে টেলিস্কোপে । তারপর খালি চোখে দেখা গেছিল হ্যালির ধূমকেতুকে ৷

সূর্যই নিয়তি ধুমকেতুর

সূর্যই এদের নিয়তি ৷ সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে গিয়ে খণ্ড-বিখণ্ড হতে শুরু করে ৷ তারপর ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যায় ৷ ভিতরের বরফ, উপাদান সব নিঃশেষ হয়ে যায় ৷ অনেকসময় বৃহস্পতির মতো বড় গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে একটি ধূমকেতু সৌরজগত ছেড়ে চলে যেতে পারে । অনেক সময় এরা সূর্যের এত কাছে চলে আসে যে, সূর্যের মধ্যেই পড়ে যায় ৷ শেষ হয়ে যায় ধূমকেতুর জীবন ৷ তবে অনেকে আবার প্রদক্ষিণ সেরে ফিরেও যায় ৷ যেমনভাবে ফিরছে নিওওয়াইজ় ৷ যেমনভাবে ফেরে হ্যালির ৷

কিছু বরফ ধুলো নিয়ে জন্মায় এরা ৷ তারপর হঠাৎ কী যেন এক টানে সূর্যের দিকে ছুটে আসা ৷ হাজার-হাজার বছর পেরিয়ে যার সান্নিধ্যে আসে এরা, সেই সূর্যই হয়ে দাঁড়ায় এদের নিয়তি ৷ কেউ প্রদক্ষিণ শেষে বাড়ি ফেরে ৷ কেউ আবার সূর্যের কাছেই সঁপে দেয় নিজেদের ৷ বড় অদ্ভুত এই ধূমকেতুদের জীবন ৷

সাড়ে ছয় হাজার বছর পেরিয়ে আবার সেই রকম এক সময় এসে দাঁড়িয়েছে ৷ ফের পৃথিবীর কাছাকাছি এসেছে ধূমকেতু নিওওয়াইজ় ৷ কলকাতা-সহ গোটা ভারত থেকে খালি চোখে দেখা যাবে এই ধূমকেতুকে ৷ কিন্তু কীভাবে জন্ম হয় ধূমকেতুর, আর কীভাবেই বা মহাকাশে বিলীন হয়ে যায় ?

কী এই ধূমকেতু

ইংরেজি নাম কমেট ৷ ধুলোর কণা, বরফ ও গ্যাসের তৈরি এক ধরনের মহাজাগতিক বস্তু । দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে কয়েকশো কিলোমিটার পর্যন্ত হয় ৷

image
নির্দিষ্ট সময়ের ভিত্তিতে সৌরজগতে প্রবেশ করে ধূমকেতু

ধূমকেতুর শরীর ও মুগ্ধ করা লেজ

  • ধূমকেতুর মূল শরীরকে বলা হয় নিউক্লিয়াস ৷ এর মধ্যে ধুলো-বালি, পাথর, বরফ, মিথেন, হাইড্রোজেন, অনেক সময় অ্যামোনিয়া, কার্বন ডাই অক্সাইড ও সামান্য পরিমাণ জল থাকে ৷
  • যখন এরা সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে শুরু করে, তখন সূর্যের উত্তাপে বরফকণা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়তে থাকে মহাকাশে । সূর্যের বিকিরণ বল ও সৌরবায়ুর প্রভাবেই এই অবস্থা হয় ধূমকেতুর ৷ এক কথায় এরা সূর্যের যত কাছে আসে, ততই ভাঙতে থাকে ৷ তখনই তৈরি হয় লেজ ৷ যার সৌন্দর্য মুগ্ধ করে আমাদের ৷
  • ধূমকেতুর দুই ধরনের লেজ থাকে ৷ একটিকে ডাস্ট টেল বলা হয় ৷ যা আমরা খালি চোখে দেখতে পাই ৷ আর একটি হল প্লাজ়মা টেল ৷ যার ছবি তোলা যায় ৷ বা কোনও যন্ত্রের মাধ্যমে দেখা যায় ৷ কিন্তু খালি চোখে দেখা যায় না ৷
  • সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি এর কক্ষপথের অংশের নাম পেরিহেলিয়ন ৷ আর দূরের অংশের নাম এপিহেলিয়ন ৷

ধূমকেতুর জন্ম ও পর্যায়কাল

  • একটি ধূমকেতুর পর্যায়কাল কয়েক বছর থেকে শুরু করে কয়েকশো বা কয়েক হাজার বছর পর্যন্ত হতে পারে । স্বল্পকালীন ধূমকেতু সৃষ্টি হয় কুইপার বেল্ট থেকে যার অবস্থান নেপচুনের কক্ষপথের বাইরে ৷ 200 বছরের মধ্যে হয় এদের পর্যায়কাল ৷ যেন হ্যালির ধূমকেতু ৷ 76 বছর পর্যায়কাল ৷
  • দীর্ঘকালীন ধূমকেতু তৈরি হয় ওরট মেঘ থেকে, যা সৌরজগতের বাইরে একটি বরফময় বস্তুর গোলাকার মেঘ । এদের পর্যায়কাল 200 বছর থেকে কয়েক লাখ বছর হতে পারে ৷
    image
    পর্যায়কাল অনুযায়ী দুধরনের হয় ধূমকেতু

ধূমকেতুর নামকরণ

অতীতে ধূমকেতুর আবিষ্কর্তার নামেই ধূমকেতুর নামকরণ করা হত ৷ যেমন, এডমন্ড হ্যালির নামে হ্যালির ধূমকতেু ৷

বর্তমানে নামকরণের পদ্ধতিতে অনুমোদন দেয় ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিকাল ইউনিয়ন (IAU) ৷ এক্ষেত্রে নামকরণের পদ্ধতি হল, যদি এটি পিরিয়ডিক হয়, তাহলে P লিখে ধূমকেতু আবিষ্কারের বছর লিখতে হবে ৷ যেমন-

P/ পর্যায়কালীন ধূমকেতু যেমন হ্যালির ধূমকেতু হল 1P/1682 Q1 ৷ C দিয়ে নামকরণ করা হয় ৷ যখন ধূমকেতু পর্যায়কালীন নয় ৷ হেল-বপ ধূমকেতু হল C/1995 O1 ৷ এইভাবে যেগুলির পর্যায়কাল হিসাব করা সম্ভব হয়নি, সেগুলি X দিয়ে ও হারিয়ে যাওয়া পর্যায়কালীন ধূমকেতু D দিয়ে চিহ্নিত করা হয় ৷

তবে এই ধূমকেতুদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত নাম হ্যালির ধূমকেতু ৷ প্রতি 76 বছরে একবার করে ফিরে আসে এটি ৷ এর আগে 1965 সালে দেখা গেছিল ইকেয়া সাকি ধূমকেতুটিকে । তবে টেলিস্কোপে । তারপর খালি চোখে দেখা গেছিল হ্যালির ধূমকেতুকে ৷

সূর্যই নিয়তি ধুমকেতুর

সূর্যই এদের নিয়তি ৷ সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে গিয়ে খণ্ড-বিখণ্ড হতে শুরু করে ৷ তারপর ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যায় ৷ ভিতরের বরফ, উপাদান সব নিঃশেষ হয়ে যায় ৷ অনেকসময় বৃহস্পতির মতো বড় গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে একটি ধূমকেতু সৌরজগত ছেড়ে চলে যেতে পারে । অনেক সময় এরা সূর্যের এত কাছে চলে আসে যে, সূর্যের মধ্যেই পড়ে যায় ৷ শেষ হয়ে যায় ধূমকেতুর জীবন ৷ তবে অনেকে আবার প্রদক্ষিণ সেরে ফিরেও যায় ৷ যেমনভাবে ফিরছে নিওওয়াইজ় ৷ যেমনভাবে ফেরে হ্যালির ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.