অনুচ্ছেদ 370 ও 35এ বাতিল এবং জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখকে নিয়ে দুইটি নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করার পর 2019 সালের নভেম্বরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্রের নতুন সংস্করণ প্রকাশ করা হয়েছে ৷ নেপালের তরফে এই মানচিত্র নিয়ে আপত্তি তোলা হয়েছে ৷ তাদের দাবি, বিতর্কিত ‘কালাপানি’ এলাকাকে ভারতের উত্তরাখণ্ডের পিথোরাগড় জেলার অংশ হিসেবে ভুলভাবে দাবি করা হয়েছে ৷ অমীমাংসিত ওই এলাকা সেই দেশের সুদূর পশ্চিম প্রদেশের দারচুলা জেলার অধীনে৷ ভারত নিজের অবস্থান বজায় রেখে জানিয়েছে, এর মধ্যে মানচিত্র পরিবর্তন করা হয়নি এবং পূর্বে প্রকাশিত মানচিত্রকে একই রেখে নতুন মানচিত্র ‘নির্ভুল’ ভাবে প্রকাশ করা হয়েছে ৷
গত সপ্তাহে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং চিন সীমান্ত বরাবর দারচুলা থেকে লিপু লেখের মধ্যে নতুন লিঙ্ক রোডের উদ্বোধন করেন ৷ এই লিঙ্ক রোড কৈলাস মান-সরোবর যাত্রাপথ অনেকটাই কমিয়ে দেবে বলে আশা করা হয়েছে ৷ এর পরই নয়াদিল্লি এবং কাঠমান্ডুর মধ্যে চাপানউতোর শুরু হয়েছে ৷ নেপালের বিদেশমন্ত্রকের তরফে এর পরই এক কড়া ভাষায় বিবৃতি দেওয়া হয় ৷ ‘নেপালি অঞ্চল’ কোনওরকম কর্মকাণ্ড থেকে ভারতকে বিরত থাকতে বলা হয় ওই বিবৃতিতে ৷ 1816 সালের সুগৌলি চুক্তি অনুযায়ী ওই বিবৃতিতে ‘লিম্পিয়াধুরা, কালাপানি ও লিপু লেখ’-সহ মহাকালী নদীর পূর্বদিকের সমস্ত অঞ্চলকে নিজেদের বলে দাবি করা হয়েছে ৷”
বিদেশমন্ত্রকের তরফে অবশ্য নেপালের দাবি নস্যাৎ করে দেওয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে, ‘‘সদ্য উদ্বোধন করা রাস্তা উত্তরাখণ্ডের পিথোরাগড় জেলার অংশ ৷ যা পুরোপুরি ভারতের সীমানার মধ্যেই অবস্থিত ৷’’ এর সঙ্গে যোগ করা হয়েছে যে, সেখানে সীমান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য একটি বর্ণনামূলক প্রক্রিয়া রয়েছে এবং COVID19-এর সংকট কেটে যাওয়ার পর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বিদেশ সচিব পর্যায়ের বৈঠক হবে ৷
এই সপ্তাহে নেপালের বিদেশমন্ত্রী প্রদীপ গয়ালি তাঁদের দেশের সংসদে জানিয়েছেন যে, এই হিমালয়ান দেশের ভারতের সঙ্গে থাকা পশ্চিম সীমান্তে সেনা মোতায়েন বৃদ্ধি করেছে এবং ‘নির্ধারিত সীমান্ত’ তৈরির কাজ শুরু করেছে ৷ এটা সেই সমস্ত দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলির মধ্যে অন্যতম । বিশিষ্ট ব্যক্তিদের (Eminent Persons) গোষ্ঠীর রিপোর্টে উল্লেখ ছিল ৷ ওই গোষ্ঠীর মেয়াদ শেষে দেওয়া রিপোর্ট এখন হিমঘরেই পড়ে রয়েছে ৷ কারণ, দ্বিপাক্ষিক সহমতের ভিত্তিতে তৈরি ওই গোষ্ঠীর আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী মানতে রাজি নন ৷ নেপালের বিদেশমন্ত্রী সোমবার সেখানে ভারতের রাষ্ট্রদূত বিনয় কাওয়াত্রাকে ডেকেও পাঠিয়েছিলেন ৷ যদিও ভারতের বিদেশমন্ত্রকের দাবি রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠানো হয়নি, তাঁর সঙ্গে নেপালের বিদেশমন্ত্রীর বৈঠক হয় ৷
কাঠমান্ডু কেন তাদের পুরনো অবস্থানে অনড় ? নেপালের পূর্বতন রাজত্বের উপর চিনের ছায়া ভারতের জন্য কতটা উদ্বেগজনক ? নেপালকে আশ্বস্ত করতে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ভারতের কী পদক্ষেপ করা উচিত ? সীমান্ত লঙ্ঘনের বিষয়ে নেপালের অভিযোগ কি যুক্তিসঙ্গত ? কিংবা এটা ঐতিহাসিক অবিশ্বাস বা অভ্যন্তরীণ বক্তব্য দিয়ে কি পরিচালিত ?
এই বিষয়গুলির উপরই সাংবাদিক স্মিতা শর্মা অনুষ্ঠানে আলোচনা করেছেন কাঠমান্ডুতে কাজ করে আসা ভারতের অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত রঞ্জিত রাই এবং ব্রুকিংস ইন্ডিয়ার ফেলো কন্টানটিনো জেভিয়ারের সঙ্গে ৷
কনস্টানটিনো জেভিয়ার সতর্ক করে বলেছেন যে ভারত ও নেপালের মধ্যে সীমান্ত সমস্যার 98 শতাংশ সমাধান হয়ে গিয়েছে ৷ এখনই ব্যবস্থা না নিলে কালাপানির মতো অমীমাংসিত এলাকা নিয়ে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে স্থায়ী বিবাদ শুরু হয়ে যাবে ৷ ভূটানের তিনমাথায় যেভাবে চিনা PLA-র সঙ্গে 73 দিনের ডোকালাম সংকট তৈরি হয়েছিল, সেই ভাবে নেপালের তিনমাথায় কালাপানিতে একই পরিস্থিতি তৈরির সুযোগ করে দেওয়া উচিত নয় বলেই তিনি জোর দিয়ে জানিয়েছেন ৷
রাষ্ট্রদূত রাই উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছেন যে, চিন নেপালে তাদের অর্থনৈতিক উপস্থিতিকে রাজনৈতিক দিকে বদল করতে চাইছে এবং ‘শাটল ডেমোক্রসি’র অংশ হতে চাইছে ৷ তাঁর পরামর্শ, ভারতের উচিত নেপালের সমস্ত রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং সমস্যাগুলি শান্তভাবে ‘রোটি-বেটি সম্বন্ধ’ পদ্ধতিতে গঠনমূলক বাতাবরণের মধ্যে অথবা দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে যে ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, তা দিয়েই সামলাতে হবে ৷