নয়াদিল্লি : স্থায়ী বসবাস আইন, যার জেরে এতদিন বাইরের লোকেদের জম্মু-কাশ্মীরের নাগরিকত্ব পেতে বাধা ছিল। কয়েকমাস আগে BJP সরকার তা তুলে দেওয়ার পর, সেখানে কর্মরত এক সিনিয়র IAS অফিসার প্রথম সরকারি আধিকারিক হিসেবে ডোমিসাইল সার্টিফিকেট পেলেন।
বিহারের বাসিন্দা নবীনকুমার চৌধুরি, যিনি বর্তমানে কৃষি ও উদ্যান বিভাগের প্রধান সচিব পদে কর্মরত, তিনি জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য ডোমিসাইল সার্টিফিকেট পেলেন, যা তাঁকে সেখানে সম্পত্তি, জমি ও অন্যান্য অধিকার দেয়। 35এ ধারার আওতায়, স্থানীয় নন এমন ব্যক্তিরা জম্মু-কাশ্মীরে ডোমিসাইল রাইট পেতে বা সম্পত্তির মালিক হতে পারতেন না। যদিও, গত বছরের 5 অগাস্ট 370 এবং 35এ ধারা প্রত্যাহারের পর এধরনের সাংবিধানিক বাধা সমাপ্ত হয়, যার ফলে নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে স্থানীয় নন এমন ব্যক্তিদের সামনে বসবাস এবং সম্পত্তির অধিকারের দরজা খুলে গেছে।
নবীনকুমার চৌধুরিকে দেওয়া নতুন ডোমিসাইল সার্টিফিকেট অনুযায়ী, তিনি জম্মু জেলার গান্ধিনগর তহশিলে আবেদন করেন। নবীনবাবু হলেন সেই 25,000 মানুষের মধ্যে একজন, যাঁদের এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ডোমিসাইল সার্টিফিকেট মঞ্জুর করা হয়েছে।
বাহুর তহশিলদার রোহিত শর্মার ইশু করা এই শংসাপত্রে লেখা আছে, “শ্রী দেওকান্ত চৌধুরীর পুত্র শ্রী নবীন কুমার চৌধুরি, যিনি বর্তমানে জম্মুর গান্ধি নগরে থাকেন, তিনি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দা।”
শংসাপত্রে নবীনের ছবি ও আধার নম্বর রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, “জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর গ্র্যান্ট ডোমিসাইল সার্টিফিকেট (প্রোডাকশন) রুল 2020-র 5 নম্বর নিয়মের আওতায় এই আবেদনকারীর যোগ্যতা প্রমাণ হয়েছে।”
18 মে লাগু হওয়া নতুন নিয়ম অনুসারে, যাঁরা 15 বছরের বেশি সময় ধরে জম্মু-কাশ্মীরে বসবাস করছেন, তাঁরা শংসাপত্রের জন্য আবেদন করতে পারবেন। নতুন বিধি অনুযায়ী, গত সপ্তাহে কাশ্মীরের বাসিন্দা হিসেবে প্রথম ডোমিসাইল সার্টিফিকেট পেয়েছেন বারামুলার এক তরুণী। ডোমিসাইল সার্টিফিকেট পাওয়া সহজতর করার জন্য সরকার একটি পোর্টালও তৈরি করেছে, যেখানে আবেদনকারীকে তাঁর আধার নম্বর দিতে হবে। আর জম্মু-কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দাদের দিতে হয় PRC।
সরকারি রেকর্ড অনুযায়ী, 33,157টি আবেদন জমা পড়েছে জম্মু-কাশ্মীরের ডোমিসাইল সার্টিফিকেটের জন্য এবং 25 হাজারেরও বেশি মানুষকে নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে। এঁদের মধ্যে স্থানীয় ও বাইরের লোকেরা রয়েছেন।
জম্মু অঞ্চলের দশটি জেলায় 32 হাজার আবেদন জমা পড়েছে, যেখানে কাশ্মীরের জন্য আবেদন রয়েছে মাত্র 720টা। সবথেকে বেশি 8500টি ডোমিসাইল সার্টিফিকেট ইশু করা হয়েছে ডোডাতে। রাজৌরিতে 6214টি, পুঞ্চে 6123টি এবং জম্মুতে 2820টি সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে। জম্মু জেলায় প্রায় 414টি ডোমিসাইল সার্টিফিকেট দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
কাশ্মীরে সবথেকে বেশি সংখ্যায় শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে পুলওয়ামায়ায় (153)। এর পর রয়েছে অনন্তনাগ (106), কুলগাম (90), বারামুলা(39), শোপিয়ান (20), বান্দিপোরা (10), কুপওয়াড়া (10), বাদগাম (9), গন্দেরবাল(1) এবং শ্রীনগর(0)। শ্রীনগরই একমাত্র জেলা যেখানে 65টি আবেদন জমা পড়েছে, কিন্তু এখনও পর্যন্ত একজনকেও শংসাপত্র দেওয়া হয়নি। জম্মু-কাশ্মীরের জনবিন্যাস বদলে দেওয়ার লক্ষ্যেই নতুন ডোমিসাইল নীতি আনা হয়েছে বলে মনে করেছেন অনেকেই । কিন্তু সরকারের যুক্তি হল, সংবিধানে বৈষম্য মুছতে এই পরিবর্তনগুলো করতেই হত।