ETV Bharat / bharat

ট্রাম্পের রাজনীতিতে গান্ধিজির চিন্তাধারার ছাপ দেখিনি, মন্তব্য খুরশিদের - Pakistan-Occupied Kashmir

বিশ্বের সেরা নেতাদের দেশে আসা ও তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক একটি দেশের স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো হলেও এগুলি শেষ হয়ে যাওয়ার পর যখন বসে লাভ-লোকসানের হিসাব কষা শুরু হয়, তখনই জানা যায় যে ঠিক কী চেয়েছিলাম আর কী পেলাম ৷ এমনই মন্তব্য সলমন খুরশিদের ৷ সাক্ষাৎকার নিলেন অমিত অগ্নিহোত্রী ৷

Salman Khurshid
সলমান খুরশিদ
author img

By

Published : Feb 26, 2020, 5:52 PM IST

প্রশ্ন: অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফর নিয়ে সকলে উচ্ছ্বসিত ৷ মোদি সরকারের মতে এই সফরের ফলে বিদেশনীতিতে বিপুল লাভ হবে ৷ আপনি কীভাবে এর মূল্যায়ন করবেন?

উত্তর: আমার মতে চিয়ারলিডারদের এনে, একগাদা টাকা খরচ করে ও নানা রঙের ব্যবহারের বিষয়টা ফাঁপা ৷ বিশ্বের সেরা নেতাদের দেশে আসা ও তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক একটি দেশের স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো হলেও এইগুলি শেষ হয়ে যাওয়ার পর যখন বসে লাভ-লোকসানের হিসাব কষা শুরু হয়, তখনই জানা যায় যে ঠিক কী চেয়েছিলাম আর কী পেলাম ৷ আমার মতে দেখানোর মত কিছুই নেই ৷ আমাদের সরকার ফাঁপা জিনিসেই বেশ সন্তুষ্ট, বাইরে থেকে অনেক আওয়াজ করলেও ভিতরটি সম্পূর্ণ ফাঁপা ৷ আমি ট্রাম্পের এই সাক্ষাৎকে এভাবেই বর্ণনা করব ৷ ট্রাম্পের জন্যই এটি ভালো ৷

প্রশ্ন: আসন্ন অ্যামেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই কি ট্রাম্পের এই সফর ছিল? কিছু মানুষ বলছেন যে ট্রাম্প কেবল নিজের নির্বাচন নিয়েই চিন্তিত ৷ এই বিষয়ে আপনার বক্তব্য ?

উত্তর: অবশ্যই, তার হাতে কেবল ছয় মাস সময় রয়েছে ৷ অবশ্যই তিনি চিন্তিত এই বিষয়ে ৷ রাষ্ট্র কোনও একক ব্যক্তির সঙ্গে সংযুক্তি করে না, মানুষের সঙ্গে সংযুক্ত হয় এবং আমি মনে করি আমাদের সঙ্গে অ্যামেরিকার বাসিন্দাদের সেই যোগসূত্র রয়েছে ৷ অতীতে আমাদের সঙ্গে অ্যামেরিকার সমস্যা ছিল ৷ অ্যামেরিকা গোটা বিশ্বকে যেই চোখে দেখে, আমরা তার সঙ্গে ও বেশ কিছু নীতির সঙ্গে সহমত নই ৷ সেই কারণেই এই দুটি রাষ্ট্রের গণতন্ত্রের মধ্যে বিভেদ ছিল ৷ কিন্তু যদি আমাদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ভালো থাকে তাহলে কারোর অভিযোগের কোনও সুযোগ থাকে না, সেই নিয়ে আমরা খুশি ৷ কিন্তু এই ঘনিষ্ট সম্পর্ক আমাদের জন্য কী আনছে, সেটাই বড় প্রশ্ন ৷ আমি তো সেরকম কিছু দেখছি না ৷

প্রশ্ন: ভারতের সঙ্গে চিন, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া বা ইজরায়েলের মত দেশের সম্পর্ক তৈরির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মতো শক্তিশালী নেতার ভাবমূর্তি কি বিশ্বের কাছে আমাদের অবস্থান তুলে ধরতে সাহায্য করছে ?

উত্তর: এটা কি হয়? কে আমাদের সঙ্গে কথা বলে? কে বলে যে জেরুজালেম সম্পর্কে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভারতের সঙ্গে কথা বলব৷ এই অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্টই কি আমাদের কাছে মতামত চায় জেরুজালেম নিয়ে কী করা হবে,সেই বিষয়ে? তিনি কী আমাদের ফোন করে প্রশ্ন করেন কি করা উচিত যখন চিন রাস্তা তৈরি বা অন্য কোনও সিদ্ধান্ত নেয়? তিনি কি আমাদের সঙ্গে কথা বলেন যখন তিনি পাকিস্তানকে বন্ধু বলে সম্বোধন করেন? কোথায় সেই সব বিনিয়োগ ও লাভের ফল, যার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল আমাদের? আদৌই আমাদের কোনও লাভ হয়েছে বলে মনে হয় না ৷ আমরা চিনে সঙ্গে যা করছি, তা নিয়ে কি চিন বা জাপানের নাগরিকরা খুশি? ভারতকে সমর্থন অব্যাহত থাকছে, এটি ভালো কথা ৷ কিন্তু বিগত চার-পাঁচ বছরে তা হয়নি ৷ এটি একটি লম্বা কাহিনি ৷ বহু ঘটনা ঘটেছে বিগত বছরগুলিতে ৷ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্পর্ক কতটা ভালো সেই বিষয়টি প্রচার করার আগে সেই দিনগুলিও মনে রাখা উচিত যখন জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে হেটেছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জন কেনেডি ৷ এটাও ভোলা উচিত নয় যে জ্যাকুলিন কেনেডিকে ভারতে পাঠানো হয়েছিল বিশেষভাবে ৷ এই দেশে এমন অনেক কিছুই হয়েছে যা মোদি হয়তো জানেন না ৷

প্রশ্ন: তাহলে কি ভারতের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে বিগত কয়েক বছরে?

উত্তর: ভারতের অবস্থান কিন্তু বরাবরই উঁচুতেই ছিল ৷ ভুলে যাবেন না যে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রথম সারিতে ছিলাম আমরা ৷ কেবল তিনটি দেশই ছিল, যুগোস্লাভিয়া, মিশর ও ভারত ৷ আমাদের অবস্থান তখনও উচুতেই ছিল যখন আমরা BRICS-র সদস্য হয়েছিলাম এবং SAARC-র প্রবীণতম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দেশে পরিণত হয়েছিলাম ৷ মোদি আসার আগেই কিন্তু ASEAN ও এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারত নিজের প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল ৷ তাই ওঁকে ধন্যবাদ জানানোর কিছু নেই ৷ বরং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প থাকাকালীন দিল্লিতে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বা বাকি দেশে যা হচ্ছে, তাতে যেন আমাদের বর্তমান ভাবমূর্তি খারাপ না হয়, সেটাই আশা করছি ৷

প্রশ্ন: অবাক করার বিষয় হল, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন সবরমতী আশ্রমে গেলেন, তখন তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানালেও মহাত্মা গান্ধির কোনও উল্লেখ করেন নি ৷ এই বিষয়ে আপনি কি বলবেন?

উত্তর: অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা ৷ কেউ হয়তো প্রেসিডেন্টকে ব্রিফ করতে ভুলে গিয়েছিল বা সারা বিশ্বের কাছে যে ব্যক্তি সমাদৃত ,তার সম্পর্কে ট্রাম্প অবগতই নন ৷ ট্রাম্পের রাজনীতিতে গান্ধির চিন্তাধারার ছাপও খুব একটা দেখা যায় না ৷

প্রশ্ন: ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ককে কেন্দ্রের বিদেশনীতির কেন্দ্রবিন্দু বলে মনে হচ্ছে, আপনি কীভাবে দেখছেন এই বিষয়টিকে?

উত্তর: আমি জানিনা... আমরা কি পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই, পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে চাই নাকি পাকিস্তানকে উপেক্ষা করতে বা নিজেদের পাকিস্তান থেকে বাঁচাতে চাই ৷

প্রশ্ন: প্রায়শই দাবি করা হয় যে সরকারের তরফ থেকে জম্মু-কাশ্মীরে 370 ধারা তুলে নেওয়ার পর পাক-অধিকৃত কাশ্মীরও পুনঃদখল করবে তারা ৷ এটি কি সত্যি বলে মনে হয়?

উত্তর: কেউ বারণ করছে না ৷ আমাদের কেন হুমকি দেওয়া হচ্ছে যে এই করা হবে, ওই করা হবে? যান, করুন ৷ আমরা সংসদে সর্বসম্মতভাবে একটি বিল পাশ করেছি ৷ ওটা পড়ুন এবং এগিয়ে যান ৷ কিন্তু আমাদের এক ধাপ এগিয়ে ভাবতে হবে ৷ আপনারা যখন পাক-অধিকৃত কাশ্মীর দখল করতে যাবেন, তখন ওখানের ছেলেরা কি করবে? তারা কি দেশের শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের মতই ব্যবহার করবে নাকি উপদ্রব সৃষ্টি করবে?

প্রশ্ন: এবার আসা যাক দক্ষিণ-এশীয় অঞ্চলে, আমরা কি কোনও অগ্রগতি করেছি?

উত্তর: SAARC তো অন্তর্ধান করেছে ৷ আমি মনে করি যে প্রতিবেশী দেশগুলির থেকে আমরা যে ধরনের আত্মবিশ্বাস ও আন্তরিক সমর্থন পেতে পারতাম, সেখানে কিছু সংরক্ষণ রয়েছে ৷ তবে আমরা যদি সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারি, তাহলে এই কাজের কৃতিত্ব যেই পাক না কেন, আমরা সবাই এই সাফল্য উদযাপন করব ৷

প্রশ্ন: মোদি সরকারের বৈদেশিক নীতির লক্ষ্য কী হওয়া উচিত?

উত্তর: একটা বিদেশনীতির জন্য সবার প্রথমেই.. দেশের স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মত বিদেশ নীতি তৈরি করতে হবে ৷ আমাদের বৈদেশিক নীতিতে দার্শনিক বিষয়বস্তু সর্বদাই বিশ্বের কাছে প্রশংসিত হয়েছে । আমরা রাশিয়া, আমেরিকা বা চিনের মতো দুর্দান্ত সামরিক শক্তিশালী হতে পারব না । তবে আমরা সাংস্কৃতিক প্রভাবের দিক থেকে তাদের চেয়ে বৃহত্তর শক্তিতে পরিণত হতে পারি । আমরা সেটাকেই কেন লক্ষ্য হিসাবে রাখি না?

প্রশ্ন: অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফর নিয়ে সকলে উচ্ছ্বসিত ৷ মোদি সরকারের মতে এই সফরের ফলে বিদেশনীতিতে বিপুল লাভ হবে ৷ আপনি কীভাবে এর মূল্যায়ন করবেন?

উত্তর: আমার মতে চিয়ারলিডারদের এনে, একগাদা টাকা খরচ করে ও নানা রঙের ব্যবহারের বিষয়টা ফাঁপা ৷ বিশ্বের সেরা নেতাদের দেশে আসা ও তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক একটি দেশের স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো হলেও এইগুলি শেষ হয়ে যাওয়ার পর যখন বসে লাভ-লোকসানের হিসাব কষা শুরু হয়, তখনই জানা যায় যে ঠিক কী চেয়েছিলাম আর কী পেলাম ৷ আমার মতে দেখানোর মত কিছুই নেই ৷ আমাদের সরকার ফাঁপা জিনিসেই বেশ সন্তুষ্ট, বাইরে থেকে অনেক আওয়াজ করলেও ভিতরটি সম্পূর্ণ ফাঁপা ৷ আমি ট্রাম্পের এই সাক্ষাৎকে এভাবেই বর্ণনা করব ৷ ট্রাম্পের জন্যই এটি ভালো ৷

প্রশ্ন: আসন্ন অ্যামেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই কি ট্রাম্পের এই সফর ছিল? কিছু মানুষ বলছেন যে ট্রাম্প কেবল নিজের নির্বাচন নিয়েই চিন্তিত ৷ এই বিষয়ে আপনার বক্তব্য ?

উত্তর: অবশ্যই, তার হাতে কেবল ছয় মাস সময় রয়েছে ৷ অবশ্যই তিনি চিন্তিত এই বিষয়ে ৷ রাষ্ট্র কোনও একক ব্যক্তির সঙ্গে সংযুক্তি করে না, মানুষের সঙ্গে সংযুক্ত হয় এবং আমি মনে করি আমাদের সঙ্গে অ্যামেরিকার বাসিন্দাদের সেই যোগসূত্র রয়েছে ৷ অতীতে আমাদের সঙ্গে অ্যামেরিকার সমস্যা ছিল ৷ অ্যামেরিকা গোটা বিশ্বকে যেই চোখে দেখে, আমরা তার সঙ্গে ও বেশ কিছু নীতির সঙ্গে সহমত নই ৷ সেই কারণেই এই দুটি রাষ্ট্রের গণতন্ত্রের মধ্যে বিভেদ ছিল ৷ কিন্তু যদি আমাদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ভালো থাকে তাহলে কারোর অভিযোগের কোনও সুযোগ থাকে না, সেই নিয়ে আমরা খুশি ৷ কিন্তু এই ঘনিষ্ট সম্পর্ক আমাদের জন্য কী আনছে, সেটাই বড় প্রশ্ন ৷ আমি তো সেরকম কিছু দেখছি না ৷

প্রশ্ন: ভারতের সঙ্গে চিন, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া বা ইজরায়েলের মত দেশের সম্পর্ক তৈরির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মতো শক্তিশালী নেতার ভাবমূর্তি কি বিশ্বের কাছে আমাদের অবস্থান তুলে ধরতে সাহায্য করছে ?

উত্তর: এটা কি হয়? কে আমাদের সঙ্গে কথা বলে? কে বলে যে জেরুজালেম সম্পর্কে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভারতের সঙ্গে কথা বলব৷ এই অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্টই কি আমাদের কাছে মতামত চায় জেরুজালেম নিয়ে কী করা হবে,সেই বিষয়ে? তিনি কী আমাদের ফোন করে প্রশ্ন করেন কি করা উচিত যখন চিন রাস্তা তৈরি বা অন্য কোনও সিদ্ধান্ত নেয়? তিনি কি আমাদের সঙ্গে কথা বলেন যখন তিনি পাকিস্তানকে বন্ধু বলে সম্বোধন করেন? কোথায় সেই সব বিনিয়োগ ও লাভের ফল, যার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল আমাদের? আদৌই আমাদের কোনও লাভ হয়েছে বলে মনে হয় না ৷ আমরা চিনে সঙ্গে যা করছি, তা নিয়ে কি চিন বা জাপানের নাগরিকরা খুশি? ভারতকে সমর্থন অব্যাহত থাকছে, এটি ভালো কথা ৷ কিন্তু বিগত চার-পাঁচ বছরে তা হয়নি ৷ এটি একটি লম্বা কাহিনি ৷ বহু ঘটনা ঘটেছে বিগত বছরগুলিতে ৷ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্পর্ক কতটা ভালো সেই বিষয়টি প্রচার করার আগে সেই দিনগুলিও মনে রাখা উচিত যখন জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে হেটেছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জন কেনেডি ৷ এটাও ভোলা উচিত নয় যে জ্যাকুলিন কেনেডিকে ভারতে পাঠানো হয়েছিল বিশেষভাবে ৷ এই দেশে এমন অনেক কিছুই হয়েছে যা মোদি হয়তো জানেন না ৷

প্রশ্ন: তাহলে কি ভারতের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে বিগত কয়েক বছরে?

উত্তর: ভারতের অবস্থান কিন্তু বরাবরই উঁচুতেই ছিল ৷ ভুলে যাবেন না যে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রথম সারিতে ছিলাম আমরা ৷ কেবল তিনটি দেশই ছিল, যুগোস্লাভিয়া, মিশর ও ভারত ৷ আমাদের অবস্থান তখনও উচুতেই ছিল যখন আমরা BRICS-র সদস্য হয়েছিলাম এবং SAARC-র প্রবীণতম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দেশে পরিণত হয়েছিলাম ৷ মোদি আসার আগেই কিন্তু ASEAN ও এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারত নিজের প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল ৷ তাই ওঁকে ধন্যবাদ জানানোর কিছু নেই ৷ বরং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প থাকাকালীন দিল্লিতে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বা বাকি দেশে যা হচ্ছে, তাতে যেন আমাদের বর্তমান ভাবমূর্তি খারাপ না হয়, সেটাই আশা করছি ৷

প্রশ্ন: অবাক করার বিষয় হল, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন সবরমতী আশ্রমে গেলেন, তখন তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানালেও মহাত্মা গান্ধির কোনও উল্লেখ করেন নি ৷ এই বিষয়ে আপনি কি বলবেন?

উত্তর: অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা ৷ কেউ হয়তো প্রেসিডেন্টকে ব্রিফ করতে ভুলে গিয়েছিল বা সারা বিশ্বের কাছে যে ব্যক্তি সমাদৃত ,তার সম্পর্কে ট্রাম্প অবগতই নন ৷ ট্রাম্পের রাজনীতিতে গান্ধির চিন্তাধারার ছাপও খুব একটা দেখা যায় না ৷

প্রশ্ন: ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ককে কেন্দ্রের বিদেশনীতির কেন্দ্রবিন্দু বলে মনে হচ্ছে, আপনি কীভাবে দেখছেন এই বিষয়টিকে?

উত্তর: আমি জানিনা... আমরা কি পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই, পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে চাই নাকি পাকিস্তানকে উপেক্ষা করতে বা নিজেদের পাকিস্তান থেকে বাঁচাতে চাই ৷

প্রশ্ন: প্রায়শই দাবি করা হয় যে সরকারের তরফ থেকে জম্মু-কাশ্মীরে 370 ধারা তুলে নেওয়ার পর পাক-অধিকৃত কাশ্মীরও পুনঃদখল করবে তারা ৷ এটি কি সত্যি বলে মনে হয়?

উত্তর: কেউ বারণ করছে না ৷ আমাদের কেন হুমকি দেওয়া হচ্ছে যে এই করা হবে, ওই করা হবে? যান, করুন ৷ আমরা সংসদে সর্বসম্মতভাবে একটি বিল পাশ করেছি ৷ ওটা পড়ুন এবং এগিয়ে যান ৷ কিন্তু আমাদের এক ধাপ এগিয়ে ভাবতে হবে ৷ আপনারা যখন পাক-অধিকৃত কাশ্মীর দখল করতে যাবেন, তখন ওখানের ছেলেরা কি করবে? তারা কি দেশের শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের মতই ব্যবহার করবে নাকি উপদ্রব সৃষ্টি করবে?

প্রশ্ন: এবার আসা যাক দক্ষিণ-এশীয় অঞ্চলে, আমরা কি কোনও অগ্রগতি করেছি?

উত্তর: SAARC তো অন্তর্ধান করেছে ৷ আমি মনে করি যে প্রতিবেশী দেশগুলির থেকে আমরা যে ধরনের আত্মবিশ্বাস ও আন্তরিক সমর্থন পেতে পারতাম, সেখানে কিছু সংরক্ষণ রয়েছে ৷ তবে আমরা যদি সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারি, তাহলে এই কাজের কৃতিত্ব যেই পাক না কেন, আমরা সবাই এই সাফল্য উদযাপন করব ৷

প্রশ্ন: মোদি সরকারের বৈদেশিক নীতির লক্ষ্য কী হওয়া উচিত?

উত্তর: একটা বিদেশনীতির জন্য সবার প্রথমেই.. দেশের স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মত বিদেশ নীতি তৈরি করতে হবে ৷ আমাদের বৈদেশিক নীতিতে দার্শনিক বিষয়বস্তু সর্বদাই বিশ্বের কাছে প্রশংসিত হয়েছে । আমরা রাশিয়া, আমেরিকা বা চিনের মতো দুর্দান্ত সামরিক শক্তিশালী হতে পারব না । তবে আমরা সাংস্কৃতিক প্রভাবের দিক থেকে তাদের চেয়ে বৃহত্তর শক্তিতে পরিণত হতে পারি । আমরা সেটাকেই কেন লক্ষ্য হিসাবে রাখি না?

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.