বিচ্ছিন্নতাবাদ , জনপ্রিয় মত এবং ভারতের পক্ষে থাকা রাজনীতির মধ্যে বিভেদের রেখা ক্রমশ কমতে শুরু করেছে । আর পুরো জায়গাটাই একেবারে পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে । আর তা দখল করে নিয়েছে বড় আঞ্চলিক দলগুলির জোট । যাকে BJP ‘গুপকর গ্যাং’ বলে অভিহিত করেছে । 2019 সালের 5 অগাস্ট ভারতীয় সংসদে অনুচ্ছেদ 370 সরিয়ে দেওয়া হয় । তার বিরুদ্ধে জম্মু ও কাশ্মীরের বড় আঞ্চলিক দলগুলি এক জোট হয়ে তৈরি করেছে পিপলস অ্যালায়েন্স অফ গুপকর ডিক্লারেশন ( PGAD ) ।
এই গুপকর জোটে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য যারা , তারা একের পর এক কোনও না কোনও সময় পূর্বতন জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভায় একা একা লড়াই করে জোট গঠনে BJP এর সঙ্গে হাত মিলিয়েছে অথবা NDA ( ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স ) এর অংশ হয়েছে । আবদুল্লাদের ন্যাশনাল কনফারেন্স এই অঞ্চল থেকে প্রথমবার BJP এর জোট সঙ্গী হয়ে তৎকালীন বাজপেয়ীর শাসন কালে NDA এর অংশ হয়েছিল । আর এর পর মুফতিদের PDP মোদির নেতৃত্বাধীন NDA এর সঙ্গে জোট করে জম্মু ও কাশ্মীরে সরকার গঠন করেছিল । NC ও PDP উভয়েই একে অপরকে হারাতে বিজেপির সমর্থন চেয়েছিল । এখন সেই একই দলের বিরুদ্ধে তারা এক জোট হয়েছে নিজেদের অস্তিস্ব বাঁচানোর তাগিদে ।
‘গুপকর গ্যাং’ যারা তৈরি করেছে, তাদের হাত ধরেই এই অঞ্চলে নিজেদের অস্তিত্ব তৈরি করেছে BJP । পূর্বতন জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভায় BJP এর কাশ্মীরের 10 টি জেলায় কোনও বিধায়কই নেই । ওই জেলাগুলিকেই কাশ্মীরের সবচেয়ে বিতর্কিত জেলা হিসেবে ধরা হয় । জম্মুর মানুষ কিছুটা BJP এর প্রতি এবং অন্য রাজনৈতিক শক্তিগুলির প্রতি কোনও ভাবে নিরপেক্ষ মনোভাব নিয়ে ফেলেছে ।
জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেওয়া এবং তার পর এই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বন্দি করে রাখার ঘটনায়, মেহবুবা মুফতির জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার আগে পর্যন্ত BJP এর পক্ষে সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল । সরকার যেমন চাইছিল, সবকিছুই সেই ভাবেই চলছিল । আর তা হচ্ছিল BJP এর ‘নীরব কর্মী’ রাজ্যপাল মনোজ সিনহার নির্দেশে । নতুন কর্মসূচির মধ্যে যে কাজটা মনোজ সিনহা শেষ করতে পারেননি , তাহলে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরুর উদ্যোগ নেওয়া । যা 5 অগস্টের সিদ্ধান্তের পর একেবারে থমকে গিয়েছিল । মনোজ সিনহাকে রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার মূল কারণই ছিল এই অঞ্চলে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরায় শুরু করানো । ওমর ও তাঁর বাবা ফারুক আবদুল্লার মুক্তি সাধারণ মানুষের জন্য কোনও পার্থক্য তৈরি করেনি । তাঁরা শুধু 4G ইত্যাদি চালু করার দাবির মতো কিছু সাধারণ দাবি তুলেই থেমে গিয়েছিলেন । মনোজ সিনহার কাজ ফারুক আবদুল্লাদের অবজ্ঞা করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল । যা তাঁরা কখনওই সত্যি হতে দেননি । আর এর ফলে দিল্লির নেতৃত্বকে উৎসাহিত করে নতুন ভাবে গঠিত জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সাংবিধানিক সংস্কার সংক্রান্ত কিছু কাজ করার জন্য ।
BJP কিছু পরিকল্পনা করেছিল । কিন্তু সেই পরিকল্পনায় গলদ থেকে গিয়েছে । সেই কারণেই গুপকর জোটের বিরুদ্ধে সরব হয়ে অমিত শাহ, জিতেন্দ্র সিং থেকে সম্বিত পাত্র পর পর বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন ।
কয়েক মাস জেলে ছিলেন মেহবুবা মুফতি । তার পর ছাড়া পেয়ে তিনি যে বিবৃতি দিয়েছিলেন, সেই বিবৃতির মধ্যেই রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্তের বিষয়টি লুকিয়েছিল । তিনি বলেছিলেন যে যতদিন না অনুচ্ছেদ 370 ফিরিয়ে আনা হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত তিনি আর নির্বাচনে লড়াই করবেন না এবং আর কোনও পতাকা উত্তোলন করবেন না ( পড়ুন তেরঙ্গা পতাকা ) । এর জেরেই সম্ভবত NDA জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে তৃণমূলস্তরের নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। BJP ভেবেছিল যে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলি নির্বাচন থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখবে । আর এর ফলে BJP এর জন্য সম্পূর্ণ রাজনৈতিক জায়গা তৈরি হবে । যার মাধ্যমে তারা গ্রাম ও ব্লক স্তরে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাবে । DDC এর একটি সংশোধনীর মাধ্যমে তারা ইতিমধ্যেই কেন্দ্রাশাসিত অঞ্চলের বিধানসভাকে নখ, দাঁতহীন ভাবেই তৈরি করছে । কারণ, তারা ভেবেছিল যে NC ও PDP শুধুমাত্র বিধানসভাতেই লড়াই করতে চায় । বিধানসভা নির্বাচন যখন হবে, সেই সময়ের কথা মাথায় রেখে ওই নির্বাচনের জন্য বিজেপি অন্য আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলির তুলনায় নিজেদের রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি করতে চাইছিল । আর তার জন্য BJP চাইছিল যে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীরের পুরো এলাকায় একেবারে তৃণমূলস্তরে নিজেদের প্রতিনিধিত্ব তৈরি করতে ।
BJP কে চমকে দেওয়ার জন্য গুপকর জোট আচমকা একটি পদক্ষেপ করে এবং ঘোষণা করে যে তারা BJP এর বিরুদ্ধে যৌথভাবে নির্বাচনে লড়াই করবে । যা BJP একেবারেই আশা করেনি এবং এর ফলেই তাদের রাগ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে । গুপকর জোট কার্যত গোটা পরিসরটাই দখল করে নিয়েছে । সেটা যেমন মূলধারার পরিসর, তেমনই বিচ্ছন্নতাবাদ অথবা সেই ব্যাখ্যার পরিসর, যা জনপ্রিয় মত গড়ে তোলে, তাও দখল করে নিয়েছে । এর ফলে হুরিয়তের পরিসরও দখল করে নিয়েছে ।
কট্টর বিচ্ছিন্নতাবাদের মুখ এবং হুরিয়তের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম মাসরাত আলম ভাটকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে । ভাটকে কি BJP এর লাভের জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে ? আর তাঁর মুক্তিকে কীভাবে নিজেদের লাভের জন্য তারা হাতিয়ার করে সেটাই এখন খুব আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে । সরকার ভাটের মুক্তিকে নিজেদের সুবিধা মতো ব্যবহার করতে পারে , যদি তাঁকে জনগণণের কাছে গুপকর জোটের বিরুদ্ধে মানুষকে উৎসাহিত করার জন্য টোপ হিসেবে ব্যবহার করা যায় ।
BJP গুপকর গোষ্ঠীকে দেশ বিরোধী বলে দাগিয়ে দিয়েছে । আর তাদের এই প্রচারের জেরে চাপে পড়ে গিয়েছে কংগ্রেস । তাই গুপকর গোষ্ঠী থেকে সরে গিয়ে নিজেদের দায় ঝেড়ে ফেলতে চেয়েছে তারা । তবে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলির উপর এর কোনও প্রভাব পড়েনি ৷
বিলাল ভাট , ইটিভি ভারত