দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক সংখ্যকই মহিলা । গতবছর গড়ে প্রতিদিন 87 টা করে ধর্ষণের অভিযোগ নারীর মর্যাদা ও মাতৃত্বের ভাবনার উপর একটা কালো দাগ । সাত বছর আগে বিচারপতি জেএস ভার্মা কমিটি সেই কঠিন সত্যটা উচ্চারণ করেছিল, যে আইনের অভাব নয়, ভালো প্রশাসনের অভাব এবং আইনের শাসনের ভয় না থাকা থেকেই নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ তৈরি হয় । শিকড় থেকে রোগের মোকাবিলা না করে শুধু গাইডলাইন জারি করে আর আইন সংশোধন করে কোনও সমস্যার সমাধান করা যায় না । কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক আগেই রাজ্যগুলিকে গত বছরের 16 মে , 5 ডিসেম্বর এবং এই মাসের 5 তারিখে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে যে মহিলাদের উপর সংঘটিত হওয়া অপরাধের ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে পুলিশকে ।
কেন্দ্র সম্প্রতি স্পষ্ট করেছে যে , মহিলাদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনায় এলাকা না দেখে যে কোনও থানায় FIR দায়ের করা বাধ্যতামূলক । ফৌজদারি আইনের 173 নম্বর ধারায় বলা হয়েছে যে, এক্ষেত্রে 60 দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে এবং তদন্তে অবহেলা হলে কঠোর শাস্তি হবে । এতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে , অভিযোগ দায়ের করার পর তদারকি ব্যবস্থার মাধ্যমে তদন্তের পর ঘন ঘন নজর দেওয়া দরকার । সুপ্রিম কোর্ট 2013 সালে FIR দায়েরকে বাধ্যতামূলক করেছিল । সেক্ষেত্রে তারা আটটি নির্দেশিকা জারি করেছে যা পুলিশি ব্যবস্থার দিকনির্দেশ করতে পারে । যতদিন পুলিশকে দমিয়ে রাখা হবে এবং তারা তাদের রাজনৈতিক প্রভুদের ইশারায় চলবে, ততদিন গুন্ডা ও অপরাধীরা নারীদের উপর অত্যাচার চালিয়ে যাবে এই আত্মবিশ্বাস থেকে, যে তারা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে পার পেয়ে যাবে । বারবার গাইডলাইনের পুনরাবৃত্তি করার থেকে, লৌহদৃঢ় মানসিকতায় সেগুলিকে অবিলম্বে প্রয়োগ করা উচিত ।
যদি জঘন্য অপরাধে দোষীদের শাস্তি না হয়, তাহলে তদন্ত ও বিচারের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষের ভূমিকা খতিয়ে দেখা উচিত কঠোরভাবে । 2014 সালে আদালত রায় দিয়েছিল যে তাদের দায়ি করে বিভাগীয়ভাবে শাস্তি দেওয়া উচিত। যেহেতু সরকারগুলি ছ’মাসের মধ্যেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেনি, তাই অবাধে অপরাধমূলক কাজকর্ম চলছে । 2006 সালে প্রকাশ সিং মামলায় সুপ্রিম কোর্ট সাতটি স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিল । যদি আইনের শাসনকে তুলে ধরতে হয়, তাহলে পুলিশে সংস্কার প্রয়োজনীয় । কোনও রাজ্যই বিশ্বাসযোগ্যভাবে এটা মানেনি । যেখানে নির্লজ্জ সাহসের সঙ্গে দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি চলে এবং পুলিশ ব্যবস্থা তার অধীনে থাকে, সেখানে সামাজিক ন্যায় কী করে মিলবে? সেই একই বছরে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ভি এন খারে ন্যায়বিচার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে পঞ্চশীলের সঙ্গে তুলনীয় পাঁচটি শক্তিশালী পরামর্শ দেন । প্রথমটিই হল শাস্তিদানের ব্যবস্থাকে সরকারের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করা এবং নির্বাচন কমিশনের ধাঁচে একটা স্বাধীন সংস্থা গড়ে তোলা । আরেকটি পরামর্শ হল স্বাধীন তদন্তের । তৃতীয়টি হল, পুলিশের কাছে দেওয়া বয়ান একজন বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে রেকর্ড করতে হবে । এবং বিচার শুরু হওয়ার আগে আদালতের কাছে জমা করতে হবে । চতুর্থ হল সাক্ষীর নিরাপত্তা । এবং সর্বশেষে, অভিযুক্তদের মুক্তির বিরুদ্ধে আপিলের ক্ষমতা ভুক্তভোগীর পরিবারকে দেওয়া । সর্বনিম্ন সাজার কারণ দেখিয়ে, আইন কমিশন 2012 সালেই পরামর্শ দিয়েছিল যাতে সরকারি কৌঁসুলিদের নিয়োগ প্রক্রিয়ার সংস্কার করা হয় ।