ETV Bharat / bharat

মানা হচ্ছে না গান্ধির গ্রামীণ উন্নয়নের আদর্শ, আক্ষেপ আন্না হাজারের - গান্ধিজি

বর্তমানে ভারতে নগরায়নের গতি ক্রমশ বাড়ছে ৷ অথচ সেভাবে নজর দেওয়া হচ্ছে গ্রামের উন্নয়নের উপর ৷ অথচ গ্রামীণ উন্নয়নের উপর জোর দিয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধি ৷ এনিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করলেন আন্না হাজারে ৷

আন্না হাজারে
author img

By

Published : Aug 30, 2019, 5:23 AM IST

Updated : Aug 31, 2019, 7:49 AM IST

বরাবরই গ্রামীণ উন্নয়নের উপর জোর দিয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধি ৷ কিন্তু, স্বাধীনতার পর তাঁর সেই আদর্শ মানা হয়নি ৷ বরং ত্বরান্বিত হয়েছে নগরায়নের গতি ৷ বিরূপ প্রভাব পড়ছে প্রকৃতির উপর ৷ বাড়ছে দূষণ ৷ ফলে বাড়ছে তাপমাত্রা ৷ ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে শরীরে ৷ মহাত্মা গান্ধির জন্ম সার্ধশতবার্ষিকীর আগে ETV ভারতের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে একথা বললেন সমাজকর্মী আন্না হাজারে ৷

"মহাত্মার গ্রামীণ উন্নয়নের ভাবধারা মেনে চলতে হবে"

আন্না হাজারের বক্তব্য, নগরায়নের জন্যই দেশের বর্তমান অবস্থা সঙ্গীন ৷ তা নিয়ে খেদও ঝরে পড়ল তাঁর গলায় ৷ বলেন, "মহাত্মা বলতেন, গ্রামে চলো ৷ যতদিন না গ্রামের উন্নয়ন হবে ততদিন দেশের বিকাশ হবে না ৷ স্বাধীনতার পর আমরা ভুল পথ বেছে নিয়েছি ৷ গ্রামের পরিবর্তে শহরের উপরে নজর দিয়েছি ৷"

গ্রামের উন্নয়নের উপর নজর না দেওয়ায় সেখানে জীবনযাপনের প্রাথমিক চাহিদাগুলো পূরণ হচ্ছে না ৷ ফলে শহরে যেতে বাধ্য হচ্ছে গ্রামের যুবসমাজ ৷ আন্না বলেন, "শহরে যেরকম পরিকাঠামো, সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তা যদি গ্রামেও পাওয়া যেত, তাহলে গ্রামের মেধাবী ছেলেমেয়েরা শহরে যেত না ৷ জীবনযাপনের জন্য তাদের প্রয়োজন প্রাথমিক চাহিদার ৷ গ্রামে তা পাওয়া যাচ্ছে না ৷ কারণ, সরকার শুধু শহরের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে, গ্রামের দিকে নয় ৷"

আন্না হাজারে বলেন, বিকাশের জন্য গ্রামকেই কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বেছে নিতে বলেছিলেন মহাত্মা ৷ অথচ আজ উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে শহর ৷ ফলে,পরিবেশের স্বাভাবিকতা বিঘ্নিত হচ্ছে ৷ অধিক পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে পেট্রল, ডিজ়েল ৷ ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে অপুনর্নবীকরণ যোগ্য শক্তির ভাণ্ডার ৷ তিনি বলেন, "নগরায়নের ফলে বাড়ছে প্রকৃতির দহন ৷ পেট্রল, ডিজ়েল, কয়লার অত্যাধিক ব্যবহার হচ্ছে ৷ বাড়ছে দূষণ ৷ পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আমাদের অসুস্থতা ৷ বাড়ছে তাপমাত্রা ৷ আর উষ্ণায়ন নিয়ে আজ সারা বিশ্ব চিন্তিত ৷ সরকারের লক্ষ্য ভুল হয়েছে ৷"

ভিডিয়োয় শুনুন আন্না হাজারের বক্তব্য

"মানুষের উচিত গান্ধিজির ভাবধারা, মূল্যবোধ মেনে চলা"

বরাবরই সত্য ও অহিংসার আদর্শে উদ্বুদ্ধ ছিলেন মহাত্মা গান্ধি ৷ তাঁর সেই ভাবধারা আধুনিক যুগেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৷ তবে সেই আদর্শ শুধু চোখ বন্ধ করে মানলেই হবে না, প্রত্যেককে সেই শক্তি অনুভব করতে হবে বলে জানান আন্না ৷ তাঁর কথায়, "গান্ধির আচার-ব্যবহার বিশুদ্ধ ছিল ৷ সত্যাগ্রহীদেরও তা পালন করা উচিত ৷ তাঁদের চরিত্র, আচার ও ভাবনা-চিন্তা বিশুদ্ধ হওয়া দরকার ৷ তাঁদের জীবনে সামাজিক ও জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি থাকার প্রয়োজন ৷ যাঁরা আত্মত্যাগের আদর্শে উদুদ্ধ, তাঁরাই সত্যাগ্রহ ও অহিংসার ভাবধারা গ্রহণ করতে পারেন ৷ ভালো চরিত্র ছাড়া এই গুণ আদতে কোনও কাজের নয় ৷" আজকের যুগে দাঁড়িয়ে কী কারণে সত্যাগ্রহ ও অহিংসার চিন্তাধারা কিছুটা হলেও ধাক্কা খেয়েছে তা ব্যাখ্যা করেছেন আন্নাই ৷ তাঁর মতে, সমাজে ক্রমশ বাড়ছে স্বার্থপরতা ৷ ফলে ভেঙে চুরমার হচ্ছে সত্যাগ্রহ ও অহিংসার ভাবধারা ৷

এখানেই শেষ নয় ৷ মহাত্মার আদর্শ মেনে চলার জন্য মানুষকে সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে ৷ বাড়াতে হবে সহ্য ক্ষমতা ৷ কেউ অপমান বা ছোটো করলে তাতে ভ্রূক্ষেপ না করে লক্ষ্যে অবিচল থাকতে হবে ৷ তবেই আসবে সাফল্য ৷ আন্নার কথায়, "মানুষের মধ্যে অপমান সহ্য করার শক্তি থাকতে হবে ৷ জীবনে অনেক অপমানের সম্মুখীন হয়েছেন গান্ধি ৷ এমনকী তাঁকে ট্রেন থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল ৷ কিন্তু, কখনওই তাঁকে তা টলাতে পারেনি ৷ "

"ভালোভাবে গান্ধি ভাবধারা শেখানো হচ্ছে না"

চলতি বছরের 2 অক্টোবর দেশজুড়ে সাড়ম্বরে পালিত হবে মহাত্মা গান্ধির জন্ম সার্ধশতবার্ষিকী ৷ কিন্তু, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে গান্ধিজির আদর্শ,ভাবধারা আগামী প্রজন্মের মধ্যে সঠিকভাবে রোপণ করা হচ্ছে না বলে আক্ষেপ আন্না হাজারের ৷ ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের শেখানো হচ্ছে না গান্ধির আদর্শ, মতবাদ ও মূল্যবোধ ৷ আন্না হাজারের কথায়, "গান্ধি মতবাদ সকলের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়া দরকার ৷ কিন্তু, তা হচ্ছে না ৷ সেই মূল্যবোধকে বাচ্চাদের অন্তরে গেঁথে দেওয়া হচ্ছে না ৷ ছোটোবেলাতেই এগুলি শেখানো উচিত ৷ কিন্তু, তা হচ্ছে না ৷ এমনকী, স্কুল-কলেজেও উপযুক্ত মূল্যবোধের অভাব রয়েছে ৷ এইসব মূল্যবোধ নিয়ে বাচ্চাদের জ্ঞান শুধু বইয়ের পাতাতেই আটকে রয়েছে ৷ বাস্তবে সেই মূল্যবোধ চর্চা কীভাবে করতে হবে, তা শেখানো হচ্ছে না ৷"

বরাবরই গ্রামীণ উন্নয়নের উপর জোর দিয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধি ৷ কিন্তু, স্বাধীনতার পর তাঁর সেই আদর্শ মানা হয়নি ৷ বরং ত্বরান্বিত হয়েছে নগরায়নের গতি ৷ বিরূপ প্রভাব পড়ছে প্রকৃতির উপর ৷ বাড়ছে দূষণ ৷ ফলে বাড়ছে তাপমাত্রা ৷ ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে শরীরে ৷ মহাত্মা গান্ধির জন্ম সার্ধশতবার্ষিকীর আগে ETV ভারতের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে একথা বললেন সমাজকর্মী আন্না হাজারে ৷

"মহাত্মার গ্রামীণ উন্নয়নের ভাবধারা মেনে চলতে হবে"

আন্না হাজারের বক্তব্য, নগরায়নের জন্যই দেশের বর্তমান অবস্থা সঙ্গীন ৷ তা নিয়ে খেদও ঝরে পড়ল তাঁর গলায় ৷ বলেন, "মহাত্মা বলতেন, গ্রামে চলো ৷ যতদিন না গ্রামের উন্নয়ন হবে ততদিন দেশের বিকাশ হবে না ৷ স্বাধীনতার পর আমরা ভুল পথ বেছে নিয়েছি ৷ গ্রামের পরিবর্তে শহরের উপরে নজর দিয়েছি ৷"

গ্রামের উন্নয়নের উপর নজর না দেওয়ায় সেখানে জীবনযাপনের প্রাথমিক চাহিদাগুলো পূরণ হচ্ছে না ৷ ফলে শহরে যেতে বাধ্য হচ্ছে গ্রামের যুবসমাজ ৷ আন্না বলেন, "শহরে যেরকম পরিকাঠামো, সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তা যদি গ্রামেও পাওয়া যেত, তাহলে গ্রামের মেধাবী ছেলেমেয়েরা শহরে যেত না ৷ জীবনযাপনের জন্য তাদের প্রয়োজন প্রাথমিক চাহিদার ৷ গ্রামে তা পাওয়া যাচ্ছে না ৷ কারণ, সরকার শুধু শহরের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে, গ্রামের দিকে নয় ৷"

আন্না হাজারে বলেন, বিকাশের জন্য গ্রামকেই কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বেছে নিতে বলেছিলেন মহাত্মা ৷ অথচ আজ উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে শহর ৷ ফলে,পরিবেশের স্বাভাবিকতা বিঘ্নিত হচ্ছে ৷ অধিক পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে পেট্রল, ডিজ়েল ৷ ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে অপুনর্নবীকরণ যোগ্য শক্তির ভাণ্ডার ৷ তিনি বলেন, "নগরায়নের ফলে বাড়ছে প্রকৃতির দহন ৷ পেট্রল, ডিজ়েল, কয়লার অত্যাধিক ব্যবহার হচ্ছে ৷ বাড়ছে দূষণ ৷ পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আমাদের অসুস্থতা ৷ বাড়ছে তাপমাত্রা ৷ আর উষ্ণায়ন নিয়ে আজ সারা বিশ্ব চিন্তিত ৷ সরকারের লক্ষ্য ভুল হয়েছে ৷"

ভিডিয়োয় শুনুন আন্না হাজারের বক্তব্য

"মানুষের উচিত গান্ধিজির ভাবধারা, মূল্যবোধ মেনে চলা"

বরাবরই সত্য ও অহিংসার আদর্শে উদ্বুদ্ধ ছিলেন মহাত্মা গান্ধি ৷ তাঁর সেই ভাবধারা আধুনিক যুগেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৷ তবে সেই আদর্শ শুধু চোখ বন্ধ করে মানলেই হবে না, প্রত্যেককে সেই শক্তি অনুভব করতে হবে বলে জানান আন্না ৷ তাঁর কথায়, "গান্ধির আচার-ব্যবহার বিশুদ্ধ ছিল ৷ সত্যাগ্রহীদেরও তা পালন করা উচিত ৷ তাঁদের চরিত্র, আচার ও ভাবনা-চিন্তা বিশুদ্ধ হওয়া দরকার ৷ তাঁদের জীবনে সামাজিক ও জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি থাকার প্রয়োজন ৷ যাঁরা আত্মত্যাগের আদর্শে উদুদ্ধ, তাঁরাই সত্যাগ্রহ ও অহিংসার ভাবধারা গ্রহণ করতে পারেন ৷ ভালো চরিত্র ছাড়া এই গুণ আদতে কোনও কাজের নয় ৷" আজকের যুগে দাঁড়িয়ে কী কারণে সত্যাগ্রহ ও অহিংসার চিন্তাধারা কিছুটা হলেও ধাক্কা খেয়েছে তা ব্যাখ্যা করেছেন আন্নাই ৷ তাঁর মতে, সমাজে ক্রমশ বাড়ছে স্বার্থপরতা ৷ ফলে ভেঙে চুরমার হচ্ছে সত্যাগ্রহ ও অহিংসার ভাবধারা ৷

এখানেই শেষ নয় ৷ মহাত্মার আদর্শ মেনে চলার জন্য মানুষকে সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে ৷ বাড়াতে হবে সহ্য ক্ষমতা ৷ কেউ অপমান বা ছোটো করলে তাতে ভ্রূক্ষেপ না করে লক্ষ্যে অবিচল থাকতে হবে ৷ তবেই আসবে সাফল্য ৷ আন্নার কথায়, "মানুষের মধ্যে অপমান সহ্য করার শক্তি থাকতে হবে ৷ জীবনে অনেক অপমানের সম্মুখীন হয়েছেন গান্ধি ৷ এমনকী তাঁকে ট্রেন থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল ৷ কিন্তু, কখনওই তাঁকে তা টলাতে পারেনি ৷ "

"ভালোভাবে গান্ধি ভাবধারা শেখানো হচ্ছে না"

চলতি বছরের 2 অক্টোবর দেশজুড়ে সাড়ম্বরে পালিত হবে মহাত্মা গান্ধির জন্ম সার্ধশতবার্ষিকী ৷ কিন্তু, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে গান্ধিজির আদর্শ,ভাবধারা আগামী প্রজন্মের মধ্যে সঠিকভাবে রোপণ করা হচ্ছে না বলে আক্ষেপ আন্না হাজারের ৷ ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের শেখানো হচ্ছে না গান্ধির আদর্শ, মতবাদ ও মূল্যবোধ ৷ আন্না হাজারের কথায়, "গান্ধি মতবাদ সকলের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়া দরকার ৷ কিন্তু, তা হচ্ছে না ৷ সেই মূল্যবোধকে বাচ্চাদের অন্তরে গেঁথে দেওয়া হচ্ছে না ৷ ছোটোবেলাতেই এগুলি শেখানো উচিত ৷ কিন্তু, তা হচ্ছে না ৷ এমনকী, স্কুল-কলেজেও উপযুক্ত মূল্যবোধের অভাব রয়েছে ৷ এইসব মূল্যবোধ নিয়ে বাচ্চাদের জ্ঞান শুধু বইয়ের পাতাতেই আটকে রয়েছে ৷ বাস্তবে সেই মূল্যবোধ চর্চা কীভাবে করতে হবে, তা শেখানো হচ্ছে না ৷"

Intro:Body:

ANNA HAZARE


Conclusion:
Last Updated : Aug 31, 2019, 7:49 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.