এই গ্রামে সবাই জানে মাদারি-কা-খেল ! প্রায় সকলেই দড়ির উপর দিয়ে হাতে বাঁশ বা লাঠির মতো দণ্ড নিয়ে অনায়াশে হেঁটে যেতে পারে খাড়াই পাহাড়ি পথে ৷ সেই কারণেই গোটা বিশ্বে আলাদা পরিচয় রাশিয়ার পাহাড়ি গ্রামের ৷ এমনকী গ্রামটি আজ "টাইটরোপ" ভিলেজ নামেই পরিচিত ৷
গ্রেটার ককাস পর্বতের কোলে রাশিয়ার ছোট্ট সুন্দর গ্রামটির নাম সোভক্রা ৷ সে দেশের আর পাঁচটা গ্রাম আর সোভাক্রার মধ্যে এমনিতে তেমন পার্থক্য নেই ৷ বিশেষত্ব ওই এক জায়গায়, সোভাক্রার সকলে সরু দড়ির উপরে দিব্য হেঁটে যায় ! যে কাজ পেশাদার খেলোয়াড়ের, যে কাজ দীর্ঘ অনুশীলনেই কেবল সম্ভব, সেই কাজ জানে আস্ত গ্রাম ! প্রশ্ন হল কীভাবে ?
গ্রামবাসীরা জানান, এর পেছনে এক কাহিনি রয়েছে ৷ সে একশো বছর আগেকার কথা ৷ সে কালে সোভক্রার বিপজ্জনক পাহাড়ি পথে সেতুর বালাই ছিল না ৷ এদিকে পাশের গ্রামে বিয়ে ঠিক হত ৷ সে গ্রামে যাওয়ার ঝুঁকিহীন পথ ছিল বটে ৷ কিন্তু তা লম্বা সময় ব্যয়ের বিষয় ৷ অতএব চটজলদি পাশের গ্রামে বিয়ে করতে যেতে গ্রামের পুরুষদের ট্রেকিং করতেই হত ৷ ঝুঁকিবহুল ট্রেকিং ৷ ফলে বহু দুর্ঘটনাও ঘটে যেত মাঝেমাঝে ৷ এরপরই দড়ির ব্যবস্থা হয় ৷ এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড় অবধি দড়ি টাঙাত গ্রামবাসীরা ৷ আর তার উপর দিয়ে শরীরের ভারসাম্য বজায় রেখে যাতায়াত ! তাহলে তো জামাইকে শিখতে হত ব্যালেন্সের খেলা !
অবশ্যই শিখতে হত ৷ রীতিমতো টাইটরোপ ওয়াকিং বা দড়ির উপর দিয়ে হাঁটা অনুশীলন করেই বিয়ে করতে যেতেন সোভক্রার সেকালের পুরুষরা ৷ পরবর্তীকালে দুর্গম পাহাড়ি গ্রাম সোভক্রা অনেকটা সুগম হয় বটে ৷ তথাপি পুরোনো অভ্যাস থেকে যায় গ্রামবাসীদের মধ্যে ৷ প্রয়োজন হয়ে ওঠে প্যাশান ! আজ সোভাক্রার স্কুলগুলিতে ছোটোদের সেখানো হয় দড়ির উপর দিয়ে ভারসাম্য রেখে হাঁটার আশ্চর্য বিজ্ঞান ৷ আজ গ্রামের প্রায় সকলেই জানে মাদারি-কা-খেল !