ETV Bharat / bharat

বিশ্ব উষ্ণায়ন : আত্মহত্যার পথই অনুসরণ করছে মানব জাতি

author img

By

Published : Dec 24, 2019, 8:23 AM IST

আজ পৃথিবীর যা অবস্থা তাতে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের এই প্রশ্নটা করতেই পারে যে, উন্নয়নের নামে বাতাস দূষিত করে, উষ্ণায়ন ঘটিয়ে এই বিশ্বকে যে কার্যত এক জ্বলন্ত নরকে পর্যবসিত করা হয়েছে, তার দায় কে নেবে ? সেই অপরাধীদের বিচার কে করবে ?

Global Warming
বিশ্ব উষ্ণায়ন

এই পৃথিবী ও তার মাটি, জল, বাতাস কোনও কিছুই আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি নয় । এসব আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে থেকে পাইনি । আমরা এই পৃথিবী, তার মাটি, জল ও বাতাসের কাছে ঋণী । মহাত্মা গান্ধি বলেছেন, "এই প্রাকৃতিক সম্পদ আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বাঁচিয়ে রাখা উচিত এবং সেগুলি তাদের হস্তান্তর করাই আমাদের কর্তব্য ।"

আজ পৃথিবীর যা অবস্থা তাতে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের এই প্রশ্নটা করতেই পারে যে, উন্নয়নের নামে বাতাস দূষিত করে, উষ্ণায়ন ঘটিয়ে এই বিশ্বকে যে কার্যত এক জ্বলন্ত নরকে পর্যবসিত করা হয়েছে, তার দায় কে নেবে ? সেই অপরাধীদের বিচার কে করবে ?

মাদ্রিদে সম্প্রতি COP-25 বিশ্ব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে । সেখানে পরিবেশবিদ ও পরিবেশপ্রেমীদের পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরাও রাষ্ট্রপ্রধানদের প্রশ্ন করেছে যে, কেন পরিবেশ দূষণের মতো জ্বলন্ত সমস্যাকে এড়িয়ে গিয়ে জনসাধারণকে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে ? পরিবেশ দূষণের জেরে বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হতে বসেছে অথচ কেন সমস্যা মেটাতে প্রয়েোজনীয় পদক্ষেপ না করে রাষ্ট্রগুলো হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে ?

তবে, পরিবেশপ্রেমীরা ও নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিরা এই বিষয়টি নিয়ে সরব হলেও বাস্তবে এবার মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত COP 25 সম্মেলন কার্যত পর্বতের মুষিক প্রসবে পর্যবসিত হয়েছে । পরিবেশে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমানোর জন্য "২০১৫ প্যারিস চুক্তি" মেনে নির্দিষ্ট রূপরেখার খসড়া তৈরি করে রাষ্ট্রগুলির পদক্ষেপ করার কথা ছিল । মূলত, সেই বিষয়টি নিয়েও এবার মাদ্রিদের সম্মেলনে আলোচনা হয় । 14 দিন ধরে আলোচনা চলে । কিন্তু সেই আলোচনায় কোনও ঐক্যমত হয়নি । বিশ্বে মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণের পরিমাণের গড় 1.3 টন । যদিও অ্যামেরিকায় এই পরিমাণ 4.5 টন, চিনে 1.9 টন, ইউরোপে 1.8 টন এবং ভারতে মাত্র হাফ টন ।

UNO একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে । এই রিপোর্টে রয়েছে বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে কোন দেশের ভূমিকা কতখানি । এই রিপোর্টটি গত বছরের তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি । রিপোর্ট অনুসারে, বিশ্বে গত বছর মোট কার্বন নিঃসরণের 59 শতাংশর জন্য যে দেশগুলি দায়ি সেগুলি হল চিন, অ্যামেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারত । শতকরা হিসেবে এই পরিমাণ যথাক্রমে 28 শতাংশ, 15 শতাংশ, 9 শতাংশ ও 7 শতাংশ ।

UNO-র এই রিপোর্টের পরেই বায়ুমণ্ডলে কার্বনের নিঃসরণ কমানোর জন্য ভারত ও চিনের উপর আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমশ বাড়ছে । অন্যদিকে প্যারিস চুক্তি থেকে অ্যামেরিকা নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে । শেষ পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলের কার্বন নিঃসরণ কমানো নিয়ে একটি দায়সারা বিবৃতি দিয়েই মাদ্রিদের ওই সম্মেলন এই বছরের মতো শেষ হয় । অন্যদিকে ভারত জানিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক চাপের কাছে এই ইশুতে নতি স্বীকার করবে না । ভারতের দাবি, কার্বন নিঃসরণ কমানোর ক্ষেত্রে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলির প্রথমে পদক্ষেপ করা উচিত ।

প্রকৃতি কার্যত আমাদের মায়ের মতো । সে তার স্নেহ দিয়ে আমাদের লালিত-পালিত করে । তার দয়াতেই জীবজগৎ কার্যত বেঁচে রয়েছে । কিন্তু প্রকৃতির উপর মানুষের অত্যাচার যেভাবে দিন দিন বাড়ছে তার ফলে প্রকৃতি যেন এখন আমাদের মা নয় । সে যেন এখন শত্রু, সরাসরি মানবসমাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে । দুঃখের বিষয় এটাই যে, উন্নয়নের নামে প্রকৃতিকে আমরা ক্রমাগত দূষিত করে চলেছি । আর এক্ষেত্রে শিল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলির সবচেয়ে বড় ভূমিকা রয়েছে ।

এইদিকে, 28 সদস্য রাষ্ট্রের ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে, তারা UNO-র জেনেরাল সেক্রেটারির আবেদন মতো বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ শূন্যে (নেট জ়িরো) নামিয়ে আনবে । এজন্য তারা ইতিমধ্যে উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে । এই পরিস্থিতিতে ভারত ও চিনের উপরেও চাপ বাড়ছে । উলটো দিকে ভারত, চিন, ব্রাজ়িল ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো উন্নয়নশীল দেশগুলি দাবি করেছে যে, কিয়োটো প্রোটোকল 2005 মেনে উন্নত রাষ্ট্রগুলির উচিত প্রকৃতিতে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমানো । একমাত্র তবেই প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য বাস্তবায়িত হবে । ভারত জানিয়েছে, 2023 সালে প্যারিস চুক্তি সম্মেলন হওয়ার আগে কার্বণ নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ভারত নিজে থেকে কোনও পদক্ষেপ নেবে না ।
প্যারিস চুক্তির ষষ্ঠ ধারা কার্বন মার্কেট তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে । যে সমস্ত রাষ্ট্র নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রার থেকে কম কার্বন বায়ুমণ্ডলে নিঃসরণ করবে, তারা তাদের শেয়ার এই কার্বন মার্কেটের মাধ্যমে বিক্রি করতে পারবে । যদিও এই প্রস্তাব আগামী বছর পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে । এ'ছাড়া কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য দরিদ্র দেশগুলিকে ধনী দেশগুলির তরফে আর্থিক সাহায্যের যে প্রস্তাব প্যারিস চুক্তিতে রয়েছে সেটাও স্থগিত করা হয়েছে ।

বিশ্বে মোট কার্বন নিঃসরণের প্রায় 13 শতাংশের জন্য দায়ি মাত্র 77 টি রাষ্ট্র । যদি তারা কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ শূন্যে নামিয়ে আনার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দেয় তবে কি সুবিধা মিলবে ? তাদের শুকনো প্রতিশ্রুতি কি আদৌ পরিবেশ দূষণ কমাতে সাহায্য করবে ? প্যারিস চুক্তি রাষ্ট্রগুলিকে পরামর্শ দিয়েছে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা 2 ডিগ্রি সেলসিয়াস কমাতে অর্থাৎ যে তাপমাত্রা বিশ্বে শিল্পবিপ্লবের আগে ছিল । যদি রাষ্ট্রগুলি তাতে সম্মত হয় ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয় তবে বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা অনুসারে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা প্রায় 3 ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমানো সম্ভব । এটা ঘটনা যে, পরিবেশ দূষণ ও বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সাইক্লোন, খরা, বন্যা, দাবানলের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়েই চলেছে । আর তার ফলে আঘাত আসছে জনজীবনের পাশাপাশি অর্থনীতির উপর । পরিবেশ দূষণের এই ক্ষতিকর প্রভাব আমরা এড়াতে পারি না ।

প্যারিস চুক্তির পর বিশ্বজুড়ে বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ প্রায় 4 শতাংশ বেড়েছে । এই সমস্যা মেটাতে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আগামী 10 বছর ধরে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বছর পিছু 7 শতাংশ কমাতে হবে । প্যারিস চুক্তির মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ কমাতে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি, কারণ অ্যামেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কিয়োটো প্রোটোকল থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন । পরবর্তীতে অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যিনি "অ্যামেরিকাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেব" – এই স্লোগান দিয়ে নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় এসেছেন, তিনি প্যারিস চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছেন । এর জেরে গোটা বিশ্ব পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে এখন দাঁড়িয়ে ।
পরিবেশ দূষণে কোন দেশ কতটা দায়ি সেই বিষয়ে "জার্মান ওয়াচ" নামে একটি সংস্থা সমীক্ষা চালিয়েছে । তাদের সমীক্ষার রিপোর্ট অনুসারে বায়ুমণ্ডলে দূষণ সূচকে ভারত 2017 সালে ছিল 14 তম স্থানে, কিন্তু 2018 সালে ভারতে পঞ্চম স্থানে চলে এসেছে । এর থেকে বোঝা যায় ভারতে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কী হারে বাড়ছে ।

পরিবেশ দূষণ বা বিশ্ব উষ্ণায়ন কোনও একটি নির্দিষ্ট দেশের সমস্যা নয় । এটি সারা বিশ্বের সমস্যা । এই সমস্যা মেটাতে প্রতিটি রাষ্ট্রকে ঐক্যমতের ভিত্তিতে কার্যকরী প্রস্তাব নিতে হবে ও তা কার্যকর করতে হবে । যদি রাষ্ট্রপ্রধানরা তা না পারেন, তবে তা মানবজাতির পক্ষে আত্মহত্যার শামিল হবে ।

এই পৃথিবী ও তার মাটি, জল, বাতাস কোনও কিছুই আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি নয় । এসব আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে থেকে পাইনি । আমরা এই পৃথিবী, তার মাটি, জল ও বাতাসের কাছে ঋণী । মহাত্মা গান্ধি বলেছেন, "এই প্রাকৃতিক সম্পদ আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বাঁচিয়ে রাখা উচিত এবং সেগুলি তাদের হস্তান্তর করাই আমাদের কর্তব্য ।"

আজ পৃথিবীর যা অবস্থা তাতে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের এই প্রশ্নটা করতেই পারে যে, উন্নয়নের নামে বাতাস দূষিত করে, উষ্ণায়ন ঘটিয়ে এই বিশ্বকে যে কার্যত এক জ্বলন্ত নরকে পর্যবসিত করা হয়েছে, তার দায় কে নেবে ? সেই অপরাধীদের বিচার কে করবে ?

মাদ্রিদে সম্প্রতি COP-25 বিশ্ব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে । সেখানে পরিবেশবিদ ও পরিবেশপ্রেমীদের পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরাও রাষ্ট্রপ্রধানদের প্রশ্ন করেছে যে, কেন পরিবেশ দূষণের মতো জ্বলন্ত সমস্যাকে এড়িয়ে গিয়ে জনসাধারণকে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে ? পরিবেশ দূষণের জেরে বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হতে বসেছে অথচ কেন সমস্যা মেটাতে প্রয়েোজনীয় পদক্ষেপ না করে রাষ্ট্রগুলো হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে ?

তবে, পরিবেশপ্রেমীরা ও নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিরা এই বিষয়টি নিয়ে সরব হলেও বাস্তবে এবার মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত COP 25 সম্মেলন কার্যত পর্বতের মুষিক প্রসবে পর্যবসিত হয়েছে । পরিবেশে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমানোর জন্য "২০১৫ প্যারিস চুক্তি" মেনে নির্দিষ্ট রূপরেখার খসড়া তৈরি করে রাষ্ট্রগুলির পদক্ষেপ করার কথা ছিল । মূলত, সেই বিষয়টি নিয়েও এবার মাদ্রিদের সম্মেলনে আলোচনা হয় । 14 দিন ধরে আলোচনা চলে । কিন্তু সেই আলোচনায় কোনও ঐক্যমত হয়নি । বিশ্বে মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণের পরিমাণের গড় 1.3 টন । যদিও অ্যামেরিকায় এই পরিমাণ 4.5 টন, চিনে 1.9 টন, ইউরোপে 1.8 টন এবং ভারতে মাত্র হাফ টন ।

UNO একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে । এই রিপোর্টে রয়েছে বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে কোন দেশের ভূমিকা কতখানি । এই রিপোর্টটি গত বছরের তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি । রিপোর্ট অনুসারে, বিশ্বে গত বছর মোট কার্বন নিঃসরণের 59 শতাংশর জন্য যে দেশগুলি দায়ি সেগুলি হল চিন, অ্যামেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারত । শতকরা হিসেবে এই পরিমাণ যথাক্রমে 28 শতাংশ, 15 শতাংশ, 9 শতাংশ ও 7 শতাংশ ।

UNO-র এই রিপোর্টের পরেই বায়ুমণ্ডলে কার্বনের নিঃসরণ কমানোর জন্য ভারত ও চিনের উপর আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমশ বাড়ছে । অন্যদিকে প্যারিস চুক্তি থেকে অ্যামেরিকা নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে । শেষ পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলের কার্বন নিঃসরণ কমানো নিয়ে একটি দায়সারা বিবৃতি দিয়েই মাদ্রিদের ওই সম্মেলন এই বছরের মতো শেষ হয় । অন্যদিকে ভারত জানিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক চাপের কাছে এই ইশুতে নতি স্বীকার করবে না । ভারতের দাবি, কার্বন নিঃসরণ কমানোর ক্ষেত্রে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলির প্রথমে পদক্ষেপ করা উচিত ।

প্রকৃতি কার্যত আমাদের মায়ের মতো । সে তার স্নেহ দিয়ে আমাদের লালিত-পালিত করে । তার দয়াতেই জীবজগৎ কার্যত বেঁচে রয়েছে । কিন্তু প্রকৃতির উপর মানুষের অত্যাচার যেভাবে দিন দিন বাড়ছে তার ফলে প্রকৃতি যেন এখন আমাদের মা নয় । সে যেন এখন শত্রু, সরাসরি মানবসমাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে । দুঃখের বিষয় এটাই যে, উন্নয়নের নামে প্রকৃতিকে আমরা ক্রমাগত দূষিত করে চলেছি । আর এক্ষেত্রে শিল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলির সবচেয়ে বড় ভূমিকা রয়েছে ।

এইদিকে, 28 সদস্য রাষ্ট্রের ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে, তারা UNO-র জেনেরাল সেক্রেটারির আবেদন মতো বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ শূন্যে (নেট জ়িরো) নামিয়ে আনবে । এজন্য তারা ইতিমধ্যে উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে । এই পরিস্থিতিতে ভারত ও চিনের উপরেও চাপ বাড়ছে । উলটো দিকে ভারত, চিন, ব্রাজ়িল ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো উন্নয়নশীল দেশগুলি দাবি করেছে যে, কিয়োটো প্রোটোকল 2005 মেনে উন্নত রাষ্ট্রগুলির উচিত প্রকৃতিতে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমানো । একমাত্র তবেই প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য বাস্তবায়িত হবে । ভারত জানিয়েছে, 2023 সালে প্যারিস চুক্তি সম্মেলন হওয়ার আগে কার্বণ নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ভারত নিজে থেকে কোনও পদক্ষেপ নেবে না ।
প্যারিস চুক্তির ষষ্ঠ ধারা কার্বন মার্কেট তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে । যে সমস্ত রাষ্ট্র নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রার থেকে কম কার্বন বায়ুমণ্ডলে নিঃসরণ করবে, তারা তাদের শেয়ার এই কার্বন মার্কেটের মাধ্যমে বিক্রি করতে পারবে । যদিও এই প্রস্তাব আগামী বছর পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে । এ'ছাড়া কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য দরিদ্র দেশগুলিকে ধনী দেশগুলির তরফে আর্থিক সাহায্যের যে প্রস্তাব প্যারিস চুক্তিতে রয়েছে সেটাও স্থগিত করা হয়েছে ।

বিশ্বে মোট কার্বন নিঃসরণের প্রায় 13 শতাংশের জন্য দায়ি মাত্র 77 টি রাষ্ট্র । যদি তারা কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ শূন্যে নামিয়ে আনার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দেয় তবে কি সুবিধা মিলবে ? তাদের শুকনো প্রতিশ্রুতি কি আদৌ পরিবেশ দূষণ কমাতে সাহায্য করবে ? প্যারিস চুক্তি রাষ্ট্রগুলিকে পরামর্শ দিয়েছে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা 2 ডিগ্রি সেলসিয়াস কমাতে অর্থাৎ যে তাপমাত্রা বিশ্বে শিল্পবিপ্লবের আগে ছিল । যদি রাষ্ট্রগুলি তাতে সম্মত হয় ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয় তবে বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা অনুসারে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা প্রায় 3 ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমানো সম্ভব । এটা ঘটনা যে, পরিবেশ দূষণ ও বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সাইক্লোন, খরা, বন্যা, দাবানলের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়েই চলেছে । আর তার ফলে আঘাত আসছে জনজীবনের পাশাপাশি অর্থনীতির উপর । পরিবেশ দূষণের এই ক্ষতিকর প্রভাব আমরা এড়াতে পারি না ।

প্যারিস চুক্তির পর বিশ্বজুড়ে বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ প্রায় 4 শতাংশ বেড়েছে । এই সমস্যা মেটাতে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আগামী 10 বছর ধরে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বছর পিছু 7 শতাংশ কমাতে হবে । প্যারিস চুক্তির মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ কমাতে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি, কারণ অ্যামেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কিয়োটো প্রোটোকল থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন । পরবর্তীতে অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যিনি "অ্যামেরিকাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেব" – এই স্লোগান দিয়ে নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় এসেছেন, তিনি প্যারিস চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছেন । এর জেরে গোটা বিশ্ব পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে এখন দাঁড়িয়ে ।
পরিবেশ দূষণে কোন দেশ কতটা দায়ি সেই বিষয়ে "জার্মান ওয়াচ" নামে একটি সংস্থা সমীক্ষা চালিয়েছে । তাদের সমীক্ষার রিপোর্ট অনুসারে বায়ুমণ্ডলে দূষণ সূচকে ভারত 2017 সালে ছিল 14 তম স্থানে, কিন্তু 2018 সালে ভারতে পঞ্চম স্থানে চলে এসেছে । এর থেকে বোঝা যায় ভারতে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কী হারে বাড়ছে ।

পরিবেশ দূষণ বা বিশ্ব উষ্ণায়ন কোনও একটি নির্দিষ্ট দেশের সমস্যা নয় । এটি সারা বিশ্বের সমস্যা । এই সমস্যা মেটাতে প্রতিটি রাষ্ট্রকে ঐক্যমতের ভিত্তিতে কার্যকরী প্রস্তাব নিতে হবে ও তা কার্যকর করতে হবে । যদি রাষ্ট্রপ্রধানরা তা না পারেন, তবে তা মানবজাতির পক্ষে আত্মহত্যার শামিল হবে ।

Mumbai, Dec 24 (ANI): While talking about the ongoing CAA protests being held across the country, Bollywood actor Kangana Ranaut said that people instigating violence in name of democracy are still hung on to pre-independence era. She said, "The condition of this country is such that there are so many, who are dying of malnutrition. So it's not correct for people to instigate violence and in the name of democracy, we are still hung on to pre-Independence era."
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.