মুম্বই, 1 মে : কোরোনার জেরে দেশে হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে । কিন্তু মৃতদেহ সৎকার নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে । কোথাও পরিবার- পরিজনরা মৃতদেহ নিতে রাজি হয়নি তাই পুলিশকেই শেষকৃত্য করতে হয়েছে । কোথাও শ্মশানে নিয়ে গিয়ে স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মীরা । সবক্ষেত্রেই সংক্রমণের আতঙ্ক প্রবলভাবে দেখা দিয়েছে আর সেজন্যই কোরোনা মৃতদেহ সৎকার ঘিরে দেশের নানা প্রান্তে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠছে । বর্তমানে যা সামাজিক ও মানসিক স্তরে এক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে ।
কোরোনায় দেশে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য মহারাষ্ট্র । এখানে প্রতিদিনই মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে । আর ইতিমধ্যেই এই মৃতদেহ সৎকার নিয়ে নানারকম গুজব ছড়ানো হয়েছে । এবিষয়ে এখানকার চিকিৎসকদের একটি দল বলছেন, কোরোনা ফুসফুসে সংক্রমিত হয় । তাই কফ, কাশি, হাঁচির মাধ্যমে ছড়াতে পারে এই ভাইরাস । কিন্তু রোগীর মৃত্যুর পর তা ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে না ।
এবিষয়ে ETV ভারতকে চিকিৎসকরা জানান, এক্ষেত্রে সুরক্ষা হিসেবে দেহপৃষ্ঠের বাইরে উপস্থিত ভাইরাসগুলি থেকে দূরে থাকতে হবে । প্রয়াস হেলথ গ্রুপের চিকিৎসক বিনয় কুলকার্নি এবং চিকিৎসক অনন্ত ফাড়কে, চিকিৎসক অরুণ গাদ্রে, সারদা বাপাত, এবং পুনের সিটিজ়েন ডক্টর ফোরামের শ্রীরাম গীত নিয়ে গঠিত এই পাঁচ বিশেষজ্ঞের দল কোরোনা রোগীদের মৃতদেহ গ্রহণ করার সময় এবং মৃত ব্যক্তির শেষকৃত্যের সময় পরিবার ও আত্মীয়দের জন্য বেশ কয়েকটি নিয়ম তৈরি করেছে । এই ভাইরাসগুলি বায়ুবাহিত নয় এবং এগুলি নিজে থেকে ছড়াতে পারে না । তাঁরা বলেন, "মৃতদেহ নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত । মূলত, মৃতদেহ স্পর্শ করার সময় মুখ এবং নাক থেকে নিঃসরণ এড়াতে হাতে গ্লাভস পরা উচিত। "
মৃতদেহ পরিজনদের হস্তান্তর করার সময় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক ইতিমধ্যে হাসপাতালের কর্মীদের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক একটি নির্দেশিকা জারি করেছে । স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, ভাইরাসের ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে মৃত্যুর পর কোরোনা রোগীর নাক ও মুখে থাকা টিউব এক শতাংশ সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট দ্রবণে (ব্লিচিং সলিউশন) ডুবিয়ে রাখতে হবে । হাসপাতালের কর্মীদের অবশ্যই মৃতদেহের নাক, মুখ বা ক্ষতস্থান থেকে কোনও নিঃসরণ মুছে ফেলার সময় যাবতীয় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কোরোনায় রোগীর মৃতদেহ একটি প্লাস্টিকের ব্যাগে মুড়ে ফেলতে হবে হাসপাতালের কর্মীদের । একটি ব্লিচিং সলিউশন দিয়ে ব্যাগটি বাইরে থেকে মুছতে হবে এবং এটিতে একটি দ্বিতীয় কভার লাগাতে হবে । অবশিষ্ট পোশাক, জিনিসপত্র ব্লিচিং সলিউশন দিয়ে স্যানিটাইজ় করতে হবে । পাশাপাশি সেগুলি যেখানে রাখা হবে সেই জায়গাটিকেও ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে । তারপর মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে । মৃতদেহ তোলার ক্ষেত্রে হাতে গ্লাভস পরলে সংক্রমণের কোনও সম্ভাবনা নেই । কিন্তু খালি হাতে মৃতদেহ স্পর্শ করলে সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যায় ।
মহারাষ্ট্রের চিকিৎসকদের ওই দল বলেন, " খালি হাতে মৃতদেহ স্পর্শ না করা পর্যন্ত সংক্রমণের কোনও আশঙ্কা নেই । গ্লাভস পরলেই হবে । শেষকৃত্যের সময় নিজেকে আপাদমস্তক ঢেকে রাখার কোনও প্রয়োজন নেই । এটা স্বাভাবিক পরিবার পরিজন কান্নায় ভেঙে পড়ে । কাঁদতে কাঁদতে একে অন্যকে আলিঙ্গন করে । সান্ত্বনা দেয়। তবে কিছু প্রাথমিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে । একজনকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে । সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে । গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে । 6 ফুটের দূরত্ব বজায় রাখতে হবে । শেষকৃত্য শেষ হলেই বাড়ি ফিরে স্নান করতে হবে । জামা-কাপড় সাবান জলে ডুবিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে ।
মৃতদেহ শেষকৃত্যের পর কি ভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে ?
চিকিৎসকরা বলছেন, মৃতদেহ পোড়ানোর পর ছাইয়ের মধ্য়ে ভাইরাস টিকে থাকতে পারে না । কবর দিলে মাটিতেও এই ভাইরাস থাকার কোনও সম্ভাবনা নেই । তাই এলাকাটি জীবাণুমুক্ত করার দরকার নেই। ছাইতে বা কবরস্থানে জীবাণুনাশক স্প্রে করার দরকার নেই। আতঙ্ক কোনও নতুন ব্যাপার নয় । চল্লিশ বছর আগে HIV আক্রান্তের মৃতদেহ সৎকারের সময় এরকমই আতঙ্ক ছিল মানুষজনের মধ্যে। এমনকী, আত্মীয় স্বজনরা শেষকৃত্য করতে রাজি ছিল না। তবে জনসচেতনতার মাধ্যমে এই আতঙ্ক কমবে ।