ETV Bharat / bharat

দ্বিচারিতা ছাড়ুন ! প্যানডেমিক পরবর্তী বিশ্বের মুখোমুখি হতে শিক্ষাকে মুক্ত করে দিন

কোরোনা পরবর্তী শিক্ষাব্যবস্থায় কী পদক্ষেপ প্রয়োজন, সেই বিষয়ে লিখছেন গুরুচরণ দাস ।

edu
edu
author img

By

Published : Jul 19, 2020, 12:49 PM IST

Updated : Jul 19, 2020, 1:07 PM IST

মহাভারতে বিদুর বলেছিলেন, "সেইসব মানুষের থেকে সাবধান, যারা বলে এক, করে আর এক ।" তিনি প্রবঞ্চকদের বিরুদ্ধে রাজা ধৃতরাষ্ট্রকে পরামর্শ দিচ্ছিলেন কিন্তু তিনি সহজেই ভারতের শিক্ষাব্যবস্থার প্রসঙ্গও টানতে পারতেন যেখানে বহু মিথ্যা বিশ্বাসের গভীরে রয়েছে দ্বিচারিতার শিকড় । কোরোনা পরবর্তী বিশ্বে এই দ্বিচারিতা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে । যেখানে শুধু দক্ষ, নমনীয় এবং সৃজনশীলরাই টিকে থাকবেন । দুর্ভাগ্যজনকভাবে সর্বশেষ জাতীয় শিক্ষা নীতি যা শীঘ্রই মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য আনা হবে তা এই বাস্তবের মুখোমুখি হয়নি ।

এরকমই একটি মিথ হল, জনগণের ভালো করতে গেলে সরকারকেই শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে । তাই, বেসরকারি স্কুলগুলিকে সহ্য করতে হবে । একটা দ্বিচারিতায় পূর্ণ মিথ্যার ভিত্তিতে যা তাদের লাভ করতে আটকাবে যেখানে সবাই জানে যে অনেক স্কুলই আসলে আর্থিক লাভ করে । দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রকে সবসময় বেসরকারি স্কুলগুলিকে লাইসেন্স-রাজের শিকল পরিয়ে রাখতেই হবে যাতে তারা ঠিকঠাক আচরণ করে । এই মিথ সেই ভুল বিশ্বাসের উপর তৈরি । যেখানে বলা হয়, এগিয়ে থাকা দেশগুলিতে না কি শিক্ষা শুধুই সরকারি । সত্যিটা হল যে অ্যামেরিকা, ব্রিটেন, এমনকী সমাজতান্ত্রিক স্ক্যান্ডিনেভিয়ানের শিক্ষাক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সংস্কারে বেসরকারি উদ্যোগকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। উন্নত দেশগুলোর বহু স্কুলই আজ সরকারি অর্থ সাহায্যে বেসরকারি পরিচালনার মডেলের দিকে এগোচ্ছে ।

এই মিথের পিছনে ছুটতে গিয়ে ভারত সরকারি স্কুলগুলিতে বিপুল বিনিয়োগ করে ফেলেছে । কিন্তু তার ফল যন্ত্রণাদায়ক । ভারতের ছেলেমেয়েরা আন্তর্জাতিক PISA পরীক্ষায় 74টি দেশের মধ্যে 73তম স্থান পেয়েছে । পিছনে রয়েছে শুধু কিরঘিজ়স্তান । ক্লাস ফাইভের অর্ধেকেরও কম সংখ্যক পড়ুয়া, ক্লাস টু-র টেক্সট থেকে একটা প্যারাগ্রাফ পড়তে পারে; ক্লাস ফাইভের অর্ধেকেরও বেশি পড়ুয়া ক্লাস টু-র টেক্সট থেকে পাটিগণিতের অঙ্ক করতে পারে না । কয়েকটি রাজ্যে 10 শতাংশেরও কম শিক্ষক টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্ট (TET) পাশ করেছেন । উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে চারজনের মধ্যে তিনজন শিক্ষকই ক্লাস ফাইভের বই থেকে শতাংশের অঙ্ক করতে পারেন না । গড়পরতা সরকারি স্কুলে চারজনের একজন শিক্ষক গরহাজির থাকেন। এবং যাঁরা থাকেন তাঁদের দু'জনের মধ্যে একজন পড়ানই না ।

এই পরিস্থিতির ফলে 2010-11 এবং 2017-18-র মধ্যে 2.4 কোটি পড়ুয়া সরকারি স্কুল ত্যাগ করে বেসরকারি স্কুলে ভরতি হয়েছে, বলছে সরকারের DISE তথ্য । আজ ভারতের ছেলেমেয়েদের 47 শতাংশই বেসরকারি স্কুলে পড়ে । 12 কোটি পড়ুয়া সহ আমাদের বেসরকারি স্কুল-ব্যবস্থা হল বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম । এই বেসরকারি ব্যবস্থায় 70 শতাংশ অভিভাবক মাসিক 1000 টাকারও কম ফি দেন এবং 45 শতাংশ অভিভাবক দেন 500 টাকারও কম । এক্ষেত্রে সেই মিথটাও নষ্ট হচ্ছে যে বেসরকারি স্কুল শুধু বড়লোকদের জন্য ।

যে গতিতে সরকারি স্কুলগুলো খালি হচ্ছে, সেই অনুযায়ী আরও 1 লাখ 30 হাজার বেসরকারি স্কুলের প্রয়োজন আছে । একটা ভালো স্কুলে সন্তানকে ভরতি করাতে চেয়ে অভিভাবকদের লম্বা লাইন একটা হৃদয়বিদারক দৃশ্য । ভালো বেসরকারি স্কুলের অভাবের পিছনে তিনটি কারণ রয়েছে । একটি হল লাইসেন্স রাজ । একজন সৎ মানুষের পক্ষে একটা স্কুল চালু করা খুবই কঠিন । রাজ্য অনুযায়ী 35 থেকে 125টি অনুমতির প্রয়োজন হয়, এবং প্রতিটি অনুমতির জন্যই দৌড়ঝাঁপ এবং ঘুষের প্রয়োজন হয় । সবথেকে বেশি ঘুষ দিতে হয় এসেনশিয়ালিটি সার্টিফিকেটের (যাতে প্রমাণ হয় যে স্কুলটির প্রয়োজন আছে) জন্য আর অনুমোদন এবং অন্যান্য প্রক্রিয়ার জন্য পাঁচ বছরও লাগতে পারে ।

দ্বিতীয় কারণটি অর্থনৈতিক । স্কুল চালানো আর লাভজনক নয় । সমস্যার শুরু হয়েছে শিক্ষার অধিকার আইন থেকে । যখন সরকার গরিবদের জন্য বেসরকারি স্কুলগুলোতে 25শতাংশ আসন সংরক্ষিত রাখার নির্দেশ দেয় । ভাবনা ভালো হলেও, তা প্রয়োগ হয়েছে খারাপভাবে । যেহেতু সরকার সংরক্ষিত আসনগুলির জন্য বেসরকারি স্কুলগুলিকে ক্ষতিপূরণ দেয়নি, তাই বাকি 75শতাংশ পড়ুয়ার ফি বেড়ে গেছে । এতে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে, এবং অনেক রাজ্য ফি-এর ওপর নিয়ন্ত্রণ চাপিয়েছে, যা ক্রমে স্কুলগুলির আর্থিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটিয়েছে । টিকে থাকার জন্য স্কুলগুলিকে খরচ কমাতে হয়েছে, যার ফলে মানের অবনতি হয়েছে । কিছু স্কুল একেবারে বন্ধই হয়ে গেছে । প্যানডেমিকের পর আরও বন্ধ হবে ।

তৃতীয় যে কারণে একজন সৎ মানুষ স্কুল খুলবেন না, তা হল জাতীয় দ্বিচারিতা । বেসরকারি স্কুলগুলিকে মুনাফা করতে আইন বাধা দেয়, কিন্তু বেশিরভাগ স্কুলই তা করে । বিশ্বের সেরা দশটি অর্থনীতির দেশের ন’টিই লাভজনক শিক্ষায় অনুমোদন দেয় । ভারতই একমাত্র এটা করে না । এই মনোভাব ঝেড়ে ফেলার এটাই সবথেকে ভালো সময় । শুধু ‘অলাভজনক’ থেকে ‘লাভজনক’ ক্ষেত্রে পরিবর্তন হলেই একটা বিপ্লব আসতে পারে । শিক্ষায় বিনিয়োগ আসবে, যার ফলে বিকল্প এবং মানের উন্নতি হবে । অধ্যক্ষদের মিথ্যে বলতে হবে না, বা তাঁদের চোর বলা হবে না । 1991 সালের পর থেকে অভিভাবকরা বিকল্প এবং প্রতিযোগিতাকে গুরুত্ব দেন । যেভাবে তাঁরা জল, বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেটের জন্য অর্থব্যয় করেন, সেভাবেই তাঁরা ভালো মানের শিক্ষার জন্যও ব্যয় করবেন ।

এই বিপ্লবের জন্য অন্যান্য পদক্ষেপও প্রয়োজন । সৎ বেসরকারি স্কুলশিক্ষা চালু করতে লাইসেন্স রাজ সরাতে হবে । দ্বিতীয়ত, স্কুলগুলিকে একধরণের স্বায়ত্বশাসন দেওয়া প্রয়োজন যা উন্নত দেশগুলিতে দেখা যায় । আজ কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া বেশিরভাগ ভারতীয় বেসরকারি স্কুলগুলিই মাঝারি মানের । স্কুলগুলি কোভিড পরবর্তী প্রযুক্তিতে একমাত্র তখনই বিনিয়োগ করবে, যদি নমনীয় বিধি এবং বেতন, ফি এবং পাঠ্যক্রমের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা থাকে । একটি সজীব বেসরকারি স্কুল ক্ষেত্র ভারতের পক্ষে আরও ভালো ফল দেবে এবং তারা এটা করবে সরকারি স্কুলগুলির এক-তৃতীয়াংশ খরচে । সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের বেতনের বিপুল বৃদ্ধির কারণে, একটা প্রাইভেট স্কুলে খরচ কম –2017-18 সালে উত্তরপ্রদেশে একজন জুনিয়র শিক্ষকের শুরুর বেতনই ছিল মাসে 48,918 টাকা, যা উত্তর প্রদেশের গড় মাথাপিছু আয়ের 11 গুণ বেশি ।

আগেরগুলোর মতোই সাম্প্রতিক শিক্ষানীতিও সম্ভবত ব্যর্থ হবে । ভারতের শিক্ষা সংস্কারের দুটি লক্ষ্য থাকা উচিত: 1. সরকারি স্কুলগুলোর মানোন্নয়ন । 2. বেসরকারি স্কুলগুলোকে স্বায়ত্বশাসন । এর জন্য সরকারকে তার দুটো কাজ আলাদা করতে হবে: 1. শিক্ষায় নিয়ন্ত্রণ এবং 2. সরকারি স্কুল পরিচালনা । আজ স্বার্থের সংঘাতের জেরে সবার জন্যই খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে । কোরোনা পরবর্তী পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত হতে, ভারতের আরও সৃজনশীল স্কুলের প্রয়োজন । এটা একমাত্র তখনই হতে পারে, যদি আমরা আমাদের বেসরকারি স্কুলগুলোকে আরও স্বাধীনতা দিই । এইসব পদক্ষেপ আমাদের দ্বিচারিতা ঝেড়ে ফেলতে এবং আরও সৎ হতে সহায়ক হবে ।

গুরুচরণ দাস ।

মহাভারতে বিদুর বলেছিলেন, "সেইসব মানুষের থেকে সাবধান, যারা বলে এক, করে আর এক ।" তিনি প্রবঞ্চকদের বিরুদ্ধে রাজা ধৃতরাষ্ট্রকে পরামর্শ দিচ্ছিলেন কিন্তু তিনি সহজেই ভারতের শিক্ষাব্যবস্থার প্রসঙ্গও টানতে পারতেন যেখানে বহু মিথ্যা বিশ্বাসের গভীরে রয়েছে দ্বিচারিতার শিকড় । কোরোনা পরবর্তী বিশ্বে এই দ্বিচারিতা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে । যেখানে শুধু দক্ষ, নমনীয় এবং সৃজনশীলরাই টিকে থাকবেন । দুর্ভাগ্যজনকভাবে সর্বশেষ জাতীয় শিক্ষা নীতি যা শীঘ্রই মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য আনা হবে তা এই বাস্তবের মুখোমুখি হয়নি ।

এরকমই একটি মিথ হল, জনগণের ভালো করতে গেলে সরকারকেই শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে । তাই, বেসরকারি স্কুলগুলিকে সহ্য করতে হবে । একটা দ্বিচারিতায় পূর্ণ মিথ্যার ভিত্তিতে যা তাদের লাভ করতে আটকাবে যেখানে সবাই জানে যে অনেক স্কুলই আসলে আর্থিক লাভ করে । দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রকে সবসময় বেসরকারি স্কুলগুলিকে লাইসেন্স-রাজের শিকল পরিয়ে রাখতেই হবে যাতে তারা ঠিকঠাক আচরণ করে । এই মিথ সেই ভুল বিশ্বাসের উপর তৈরি । যেখানে বলা হয়, এগিয়ে থাকা দেশগুলিতে না কি শিক্ষা শুধুই সরকারি । সত্যিটা হল যে অ্যামেরিকা, ব্রিটেন, এমনকী সমাজতান্ত্রিক স্ক্যান্ডিনেভিয়ানের শিক্ষাক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সংস্কারে বেসরকারি উদ্যোগকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। উন্নত দেশগুলোর বহু স্কুলই আজ সরকারি অর্থ সাহায্যে বেসরকারি পরিচালনার মডেলের দিকে এগোচ্ছে ।

এই মিথের পিছনে ছুটতে গিয়ে ভারত সরকারি স্কুলগুলিতে বিপুল বিনিয়োগ করে ফেলেছে । কিন্তু তার ফল যন্ত্রণাদায়ক । ভারতের ছেলেমেয়েরা আন্তর্জাতিক PISA পরীক্ষায় 74টি দেশের মধ্যে 73তম স্থান পেয়েছে । পিছনে রয়েছে শুধু কিরঘিজ়স্তান । ক্লাস ফাইভের অর্ধেকেরও কম সংখ্যক পড়ুয়া, ক্লাস টু-র টেক্সট থেকে একটা প্যারাগ্রাফ পড়তে পারে; ক্লাস ফাইভের অর্ধেকেরও বেশি পড়ুয়া ক্লাস টু-র টেক্সট থেকে পাটিগণিতের অঙ্ক করতে পারে না । কয়েকটি রাজ্যে 10 শতাংশেরও কম শিক্ষক টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্ট (TET) পাশ করেছেন । উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে চারজনের মধ্যে তিনজন শিক্ষকই ক্লাস ফাইভের বই থেকে শতাংশের অঙ্ক করতে পারেন না । গড়পরতা সরকারি স্কুলে চারজনের একজন শিক্ষক গরহাজির থাকেন। এবং যাঁরা থাকেন তাঁদের দু'জনের মধ্যে একজন পড়ানই না ।

এই পরিস্থিতির ফলে 2010-11 এবং 2017-18-র মধ্যে 2.4 কোটি পড়ুয়া সরকারি স্কুল ত্যাগ করে বেসরকারি স্কুলে ভরতি হয়েছে, বলছে সরকারের DISE তথ্য । আজ ভারতের ছেলেমেয়েদের 47 শতাংশই বেসরকারি স্কুলে পড়ে । 12 কোটি পড়ুয়া সহ আমাদের বেসরকারি স্কুল-ব্যবস্থা হল বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম । এই বেসরকারি ব্যবস্থায় 70 শতাংশ অভিভাবক মাসিক 1000 টাকারও কম ফি দেন এবং 45 শতাংশ অভিভাবক দেন 500 টাকারও কম । এক্ষেত্রে সেই মিথটাও নষ্ট হচ্ছে যে বেসরকারি স্কুল শুধু বড়লোকদের জন্য ।

যে গতিতে সরকারি স্কুলগুলো খালি হচ্ছে, সেই অনুযায়ী আরও 1 লাখ 30 হাজার বেসরকারি স্কুলের প্রয়োজন আছে । একটা ভালো স্কুলে সন্তানকে ভরতি করাতে চেয়ে অভিভাবকদের লম্বা লাইন একটা হৃদয়বিদারক দৃশ্য । ভালো বেসরকারি স্কুলের অভাবের পিছনে তিনটি কারণ রয়েছে । একটি হল লাইসেন্স রাজ । একজন সৎ মানুষের পক্ষে একটা স্কুল চালু করা খুবই কঠিন । রাজ্য অনুযায়ী 35 থেকে 125টি অনুমতির প্রয়োজন হয়, এবং প্রতিটি অনুমতির জন্যই দৌড়ঝাঁপ এবং ঘুষের প্রয়োজন হয় । সবথেকে বেশি ঘুষ দিতে হয় এসেনশিয়ালিটি সার্টিফিকেটের (যাতে প্রমাণ হয় যে স্কুলটির প্রয়োজন আছে) জন্য আর অনুমোদন এবং অন্যান্য প্রক্রিয়ার জন্য পাঁচ বছরও লাগতে পারে ।

দ্বিতীয় কারণটি অর্থনৈতিক । স্কুল চালানো আর লাভজনক নয় । সমস্যার শুরু হয়েছে শিক্ষার অধিকার আইন থেকে । যখন সরকার গরিবদের জন্য বেসরকারি স্কুলগুলোতে 25শতাংশ আসন সংরক্ষিত রাখার নির্দেশ দেয় । ভাবনা ভালো হলেও, তা প্রয়োগ হয়েছে খারাপভাবে । যেহেতু সরকার সংরক্ষিত আসনগুলির জন্য বেসরকারি স্কুলগুলিকে ক্ষতিপূরণ দেয়নি, তাই বাকি 75শতাংশ পড়ুয়ার ফি বেড়ে গেছে । এতে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে, এবং অনেক রাজ্য ফি-এর ওপর নিয়ন্ত্রণ চাপিয়েছে, যা ক্রমে স্কুলগুলির আর্থিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটিয়েছে । টিকে থাকার জন্য স্কুলগুলিকে খরচ কমাতে হয়েছে, যার ফলে মানের অবনতি হয়েছে । কিছু স্কুল একেবারে বন্ধই হয়ে গেছে । প্যানডেমিকের পর আরও বন্ধ হবে ।

তৃতীয় যে কারণে একজন সৎ মানুষ স্কুল খুলবেন না, তা হল জাতীয় দ্বিচারিতা । বেসরকারি স্কুলগুলিকে মুনাফা করতে আইন বাধা দেয়, কিন্তু বেশিরভাগ স্কুলই তা করে । বিশ্বের সেরা দশটি অর্থনীতির দেশের ন’টিই লাভজনক শিক্ষায় অনুমোদন দেয় । ভারতই একমাত্র এটা করে না । এই মনোভাব ঝেড়ে ফেলার এটাই সবথেকে ভালো সময় । শুধু ‘অলাভজনক’ থেকে ‘লাভজনক’ ক্ষেত্রে পরিবর্তন হলেই একটা বিপ্লব আসতে পারে । শিক্ষায় বিনিয়োগ আসবে, যার ফলে বিকল্প এবং মানের উন্নতি হবে । অধ্যক্ষদের মিথ্যে বলতে হবে না, বা তাঁদের চোর বলা হবে না । 1991 সালের পর থেকে অভিভাবকরা বিকল্প এবং প্রতিযোগিতাকে গুরুত্ব দেন । যেভাবে তাঁরা জল, বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেটের জন্য অর্থব্যয় করেন, সেভাবেই তাঁরা ভালো মানের শিক্ষার জন্যও ব্যয় করবেন ।

এই বিপ্লবের জন্য অন্যান্য পদক্ষেপও প্রয়োজন । সৎ বেসরকারি স্কুলশিক্ষা চালু করতে লাইসেন্স রাজ সরাতে হবে । দ্বিতীয়ত, স্কুলগুলিকে একধরণের স্বায়ত্বশাসন দেওয়া প্রয়োজন যা উন্নত দেশগুলিতে দেখা যায় । আজ কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া বেশিরভাগ ভারতীয় বেসরকারি স্কুলগুলিই মাঝারি মানের । স্কুলগুলি কোভিড পরবর্তী প্রযুক্তিতে একমাত্র তখনই বিনিয়োগ করবে, যদি নমনীয় বিধি এবং বেতন, ফি এবং পাঠ্যক্রমের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা থাকে । একটি সজীব বেসরকারি স্কুল ক্ষেত্র ভারতের পক্ষে আরও ভালো ফল দেবে এবং তারা এটা করবে সরকারি স্কুলগুলির এক-তৃতীয়াংশ খরচে । সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের বেতনের বিপুল বৃদ্ধির কারণে, একটা প্রাইভেট স্কুলে খরচ কম –2017-18 সালে উত্তরপ্রদেশে একজন জুনিয়র শিক্ষকের শুরুর বেতনই ছিল মাসে 48,918 টাকা, যা উত্তর প্রদেশের গড় মাথাপিছু আয়ের 11 গুণ বেশি ।

আগেরগুলোর মতোই সাম্প্রতিক শিক্ষানীতিও সম্ভবত ব্যর্থ হবে । ভারতের শিক্ষা সংস্কারের দুটি লক্ষ্য থাকা উচিত: 1. সরকারি স্কুলগুলোর মানোন্নয়ন । 2. বেসরকারি স্কুলগুলোকে স্বায়ত্বশাসন । এর জন্য সরকারকে তার দুটো কাজ আলাদা করতে হবে: 1. শিক্ষায় নিয়ন্ত্রণ এবং 2. সরকারি স্কুল পরিচালনা । আজ স্বার্থের সংঘাতের জেরে সবার জন্যই খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে । কোরোনা পরবর্তী পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত হতে, ভারতের আরও সৃজনশীল স্কুলের প্রয়োজন । এটা একমাত্র তখনই হতে পারে, যদি আমরা আমাদের বেসরকারি স্কুলগুলোকে আরও স্বাধীনতা দিই । এইসব পদক্ষেপ আমাদের দ্বিচারিতা ঝেড়ে ফেলতে এবং আরও সৎ হতে সহায়ক হবে ।

গুরুচরণ দাস ।

Last Updated : Jul 19, 2020, 1:07 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.