শ্রীনগর: সামনেই আসুরা, কিন্তু প্যানডেমিক পরিস্থিতিতে জম্মু ও কাশ্মীরে ধর্মীয় কাজকর্ম নিষিদ্ধ করা হয়েছে । অন্যদিকে জিশান জয়পুরীর মতো কাশ্মীরি নোহা লেখক ও গায়করা তাঁদের মারসিয়া ও নোহার নতুন সংস্করণ নিয়ে তৈরি ।
শিয়া সম্প্রদায়ের কাছে নোহা হল কারবালার যুদ্ধে হুসেন ইবন আলির মর্মান্তিক পরিণতির জন্য বিলাপ । মারসিয়া এবং নোহার সঙ্গে ইসলামপূর্ব আরবীয় ও পারসিক সংস্কৃতির ঐতিহাসিক ও সামাজিক যোগসূত্র রয়েছে । মারসিয়ার অংশকেই নোহা এবং সোয়াজ বলা হয়, যার অর্থ বিলাপ ।
শ্রীনগরের হাসানাবাদ এলাকার বাসিন্দা, ২৫ বছরের তরুণ নোহা লেখক জয়পুরী বললেন, “নোহা সাধারণত শোকজ্ঞাপনের কবিতা । শিয়া সম্প্রদায় ও তার বিভিন্ন শাখার অনুগামীদের সাহিত্যে বিলাপের একটা কেন্দ্রীয় ভূমিকা রয়েছে । পারসিক ও উর্দু সহ বহু ভাষায় এটা লেখা হয়েছে । নোহা লেখার কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম নেই, আমাদের একটা ছন্দ মেনে লিখতে হয় ।”
তিনি আরও বলেন, “অন্যান্য ধারার কবিতা নিয়ে যত কাজ হয়েছে, সেই তুলনায় নোহা নিয়ে বেশি কাজ হয়নি । আমার মনে হয় একটা কারণ হল, যে নোহার কোনও নিয়ম নেই, কিন্তু ছন্দ আছে ।”
জয়পুরী বলেন, “কয়েক হাজার বছর ধরে নোহা লেখা ও গাওয়া হচ্ছে । আমি মনে করি, সমস্ত সমস্যার সমাধান কারবালার যুদ্ধের মধ্যে রয়েছে । প্রতি বছর নতুন নোহা লেখা হচ্ছে । এটাই এই ধরনের কবিতার সৌন্দর্য । আর প্রতিটি নোহা একটা নতুন গল্প বলে । নোহা নির্দিষ্টভাবে শুধু কারবালা নয়, যে কোনও দিন নিয়েই লেখা যেতে পারে ।”
জয়পুরী বলেন, "কোনও সন্দেহ নেই যে নোহার মূল ভাবনা সবসময়ই কারবালা কিন্তু প্রতিদিন তার বিবর্তন হচ্ছে । সমাজ যেমন বদলাচ্ছে, নোহাও বদলে যাচ্ছে । এবছরও আমরা অনেক নোহা লিখেছি এবং মাজালির সময় পরিবেশনও করেছি । প্যানডেমিক মানুষের উৎসাহকে দমিয়ে দিয়েছে কিন্তু আমাদের দমাতে পারেনি ।"
তিনি ছোটো থেকেই নোহা লিখছেন । তিনি এমন একটা পরিবারে বড় হয়েছেন যেখানে নোহা হচ্ছে জ্ঞানের উৎস, অনুপ্রেরণা এবং সহবত শেখার উপায় । আর এখন তিনি এলাকার জনপ্রিয় নোহা গ্রুপের একটির প্রতিনিধিত্ব করেন ।
কাশ্মীর প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “এখানে নোহা লেখকের কোনও অভাব নেই । আমার বন্ধুরা কাশ্মীরি ও উর্দু দুটোতেই লেখে । দেখুন নোহার সৌন্দর্য কারবালার যুদ্ধের ভিত্তিতে । আর এই যুদ্ধের মধ্যে পারিবারিক থেকে রাজনৈতিক ও সামাজিক– প্রতিটি ইশুর সমাধান রয়েছে । আমি বলতে পারি নোহা হচ্ছে কারবালার যুদ্ধ থেকে নিংড়ে নেওয়া এমন এক ওষুধ, যা সমস্ত সমস্যার সমাধান দেয় ।”
তাঁর সংযোজন, “নোহা লেখা বিরাট কষ্টসাধ্য কোনও কাজ নয় । আপনাকে লেখার সময় মনে রাখতে হবে যে আপনি নবির পৌত্রকে নিয়ে লিখছেন । আপনার বোধগম্যতা নয়, ভাবতে হবে আধ্যাত্মিকতা এবং মনের পবিত্রতা দিয়ে ।”