হায়দরাবাদ, 16 মে : দেশের কর্মক্ষমতার 80 শতাংশ ভিনরাজ্যের শ্রমিকরা । অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর মূল ভিত এঁরাই । কিন্তু লকডাউন ঘোষণার পর থেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এই শ্রমিক শ্রেণি । কারোর সেভাবে কাজ নেই, আয় নেই, ঘরেও ফিরতে পারছেন না । টাকা না থাকায় ভিনরাজ্যে জীবনযাপন করাও দায় হয়ে যাচ্ছে । কেউ 1300 কিলোমিটার হাঁটছেন তো কেউ 3 মাসের শিশুকে কোলে নিয়ে মাইলের পর মাইল হাঁটছেন । কোথাও কারোও পায়ে চটি নেই, কোথাও বাচ্চাকে জলটুকুও দিতে পারছেন না । তবুও এই প্যানডেমিক পরিস্থিতিতে শিকড়ে ফিরতে চাইছেন প্রত্যেকেই । যার ফল, কোথাও ডিহাইড্রেশনে মৃত্যু তো কোথাও শারীরিক অক্ষমতার জেরে । কোথাও আবার মালগাড়ির চাকায় পিষে বা ট্রাকের ধাক্কায় ।
লকডাউনের প্রথম দফা শুরু হওয়া থেকে রোজই এমন ছবি সামনে আসছে । টিভি স্ক্রিনে বা মোবাইলে উঠে আসছে শ্রমিকদের দুর্দশার কথা । একদিকে লাশ গুনছে কোরোনা, অন্যদিকে দুর্ঘটনা ।
- 16 মে : উত্তরপ্রদেশের অউরাইয়া জেলায় রাজস্থান থেকে বাড়ি ফেরার পথে ট্রাক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে 24 জনের । গুরুতর আহত 22 জন ।
- 14 মে : মধ্যপ্রদেশের গুনায় ট্রাকে করে বাড়ি ফেরার সময় বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হয় ভিনরাজ্যের 8 জন শ্রমিকের । আহত হন 54 জন ।
- 13 মে : হরিয়ানা থেকে হেঁটে বিহারে ফিরছিলেন 16 জন শ্রমিক । উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরপুর- সাহারানপুর রাজ্য সড়কে দ্রুত গতিতে আসা বাস ধাক্কা মারে তাঁদের । মৃত্যু হয় 6 জনের ।
- 9 মে : মধ্যপ্রদেশের নরসিংহপুর জেলায় ট্রাক উলটে মৃত্যু হয় ভিনরাজ্যের 5 শ্রমিকের । আহত হন 13 জন ।
- 8 মে : মহারাষ্ট্রের জালনা ও ঔরঙ্গাবাদের মাঝে রেলওয়ে ট্র্যাকে ঘুমিয়েছিলেন তাঁরা । ভোরের দিকে মালগাড়ি পিষে দেয় ক্লান্ত 16 শ্রমিককে । আহত হন 5 জন ।
- 5 মে : উত্তরপ্রদেশের মথুরায় অটো করে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় সাতজন শ্রমিকের । প্রত্যেকেই মধ্যপ্রদেশের ছাতারপুরের বাসিন্দা ।
- 3 মে : ওড়িশায় ফেরার পথে মহারাষ্ট্র ও ওড়িশায় দু'টি পৃথক পথ দুর্ঘটনায় আহত হন ছ'জন শ্রমিক । দুই ক্ষেত্রেই শ্রমিকরা গুজরাতের সুরাত থেকে ফিরছিলেন ।
- 1 মে : সাইকেলে করে দিল্লি থেকে বিহারে ফেরার পথে সাহজাহানপুরে হঠাৎ শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় মৃত্যু হয় এক ব্যক্তির ।
- 29 এপ্রিল : 1640 কিলোমিটার সাইকেলে করে ফেরার পথে মধ্যপ্রদেশের বারওয়ারি এলাকার বিজাসেনে মৃত্যু হয় এক শ্রমিকের ।
- 28 এপ্রিল : মহারাষ্ট্র থেকে মধ্যপ্রদেশে ফেরার পথে দুই রাজ্যের সীমান্ত এলাকায় অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়ে শ্রমিকের । তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন ।
- 21 এপ্রিল : হেঁটে উত্তরপ্রদেশে বাড়ি ফিরছিলেন এক শ্রমিক । মধ্যপ্রদেশ- মহারাষ্ট্র সীমান্তে মৃত্যু হয় তাঁর ।
- 18 এপ্রিল : তেলাঙ্গানা থেকে ছত্তিশগড়ের বিজাপুরে হেঁটে ফিরছিল নাবালিকা । বাড়ি থেকে মাত্র 10 কিলোমিটার দূরে মৃত্যু হয় তার । চিকিৎসকরা জানান, ডিহাইড্রেশনে মৃত্যু হয়েছে তার ।
- 18 এপ্রিল : অন্ধ্রপ্রদেশের কুরনুল জেলায় বাড়ি । ফিরতে গিয়ে আটচামপেটা মণ্ডল এলাকায় কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মৃত্যু হয় ব্যক্তির ।
- 2 এপ্রিল : হরিদ্বার-দিল্লি জাতীয় সড়কের ত্রাণ শিবিরে মৃত্যু হয় ভিনরাজ্যের এক শ্রমিকের । তাঁকে হেঁটে উত্তরপ্রদেশ ফিরতে দেয়নি সরকার ।
- 1 এপ্রিল : 500 কিলোমিটার হেঁটে রওনা দিয়েছিলেন । পরে তেলাঙ্গানার এক শেলটার হোমে মৃত্যু হয় যুবকের ।
- 29 মার্চ : হরিয়ানার কুন্ডলি মানেসর পালওয়াল এক্সপ্রেসওয়েতে অপেক্ষারত অবস্থায় ধাক্কা মারে ট্রাক । মৃত্যু হয় পাঁচজন ভিন রাজ্যের শ্রমিকের । তাঁরা উত্তরপ্রদেশে ফেরার চেষ্টা করছিলেন ।
- 28 মার্চ : দিল্লির এর রেস্তরাঁয় ডেলিভারি বয়ের কাজ করতেন । মধ্যপ্রদেশের মোরেনায় ফিরতে গিয়ে আগ্রায় মৃত্যু হয় ব্যক্তির । একই দিনে মুম্বই-গুজরাত হাইওয়েতে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারান ভিনরাজ্যের চারজন শ্রমিক । তাঁরা গুজরাতে ফিরছিলেন বলে জানা যায় । 28 মার্চই হরিয়ানা সোনিপথ থেকে উত্তরপ্রদেশের রামপুরে হেঁটে ফিরতে গিয়ে মোরাদাবাদের পাকওরহা এলাকায় মৃত্যু হয় এক শ্রমিকের । এই দিন চতুর্থ দুর্ঘটনায় তেলাঙ্গানার সূর্যপেট থেকে কর্নাটকে নিজের বাড়ি ফিরতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ভিনরাজ্যের শ্রমিকদের একটি ট্রাক । একটি লরি তাঁদের ট্রাককে ধাক্কা মারে । সাতজন শ্রমিকের মৃত্যু হয় । তাঁদের মধ্যে দু'জন নাবালক ছিল ।
- 27 মার্চ : কর্নাটকের রায়চুরে ফিরতে গিয়ে তেলাঙ্গানায় দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় আটজনের । যাঁদের মধ্যে 18 মাসের এক শিশু ছিল ।
- 24 মার্চ : লকডাউন ঘোষণার দিন অর্থাৎ 24 তারিখ তামিলনাড়ুর থেনি জেলায় এক শিশুসহ মৃত্যু হয় চার ভিনরাজ্যের শ্রমিকের । দাবানলের কবলে পড়েছিলেন তাঁরা ।