ETV Bharat / bharat

অপরিশোধিত তেল ও COVID 19 : ভারতের উপর প্রভাব - বিশ্বজুড়ে অপরিশোধিত তেলের দাম ফের বাড়ার দিকে

কোরোনা কি অপরিশোধিত তেলের দামে প্রভাব ফেলেছে ? লিখেছেন উত্তরাখণ্ডের HNB গাড়োয়াল কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মহেন্দ্র বাবু কুরুভা

ছবিটি প্রতীকী
ছবিটি প্রতীকী
author img

By

Published : Jun 25, 2020, 4:01 PM IST

বিশ্বজুড়ে অপরিশোধিত তেলের দাম ফের বাড়ার দিকে বলেই মনে করা হচ্ছে । সোমবার 2.1 শতাংশ বেড়ে মঙ্গলবার ব্রেন্ট ক্রুডের দাম 43.14 ডলারে পৌঁছায় । অন্যদিকে, ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম এপ্রিলে 21 বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন হওয়ার পর দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে এবং তা বাড়তে থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে । এই প্রবণতার পিছনে প্রধানত তিনটি কারণ রয়েছে । প্রথমত, ওপেক প্লাসের সরবরাহ রেকর্ড কাটছাঁট হয়ে প্রতিদিন 9.7 মিলিয়ন ব্যারেলে পৌঁছানো । দ্বিতীয়ত, অ্যামেরিকার ভাণ্ডারে ঘাটতি এবং তৃতীয়ত, চাহিদায় সামান্য বৃদ্ধি । এই প্রেক্ষাপটে এটা বলে রাখা ভালো, যে এইসব অগ্রগতি সত্ত্বেও অপরিশোধিত তেলের দাম স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি ভবিষ্যতে কমই থাকবে, যা নীতির দিক থেকে প্রভাব ফেলবে ভারত তথা বিশ্বের উপর ।

সস্তা অপরিশোধিত তেলই নিউ নর্মাল -

বিশ্বজুড়ে কোরোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে । এই সপ্তাহেই দক্ষিণ কোরিয়া ঘোষণা করেছে, দেশ কোরোনা ভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে । আরও গুরুত্বপূর্ণ যেটা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) রবিবার বিশ্বজুড়ে কোরোনা কেসে রেকর্ড সংখ্যাবৃদ্ধির রিপোর্ট দিয়েছে, যার মধ্যে সবথেকে বেশি উত্তর ও দক্ষিণ অ্যামেরিকায় । এমনও আশঙ্কা রয়েছে যে ভাইরাস চিনে ফের ধাক্কা দিতে পারে, যারা বিশ্বের সবথেকে বেশি অপরিশোধিত তেল আমদানি করে। আস্তে আস্তে এর ফলে অপরিশোধিত তেলের দাম কমবে। অন্যদিকে ঝড়ের মরশুমের শুরুতে অপরিশোধিত তেলের দামের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা অদূর ভবিষ্যতে ভালো দামের আশায় জল ঢেলে দিয়েছে । তাই সস্তায় অপরিশোধিত তেলই এখন স্বাভাবিক বিষয় এবং বিশ্বকে এটাই মেনে নিতে হবে ।

ভারতের উপর প্রভাব -

এটা স্পষ্ট যে, বিশ্বজুড়ে যা ভূ-রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক গতিবিধি, তাতে অপরিশোধিত তেলের দাম 70 ডলার প্রতি ব্যারেলে পৌঁছানো অনেক দূরের ব্যাপার । যেখানে আন্তর্জাতিক অপরিশোধিত তেলের দামে ভারতের প্রায় কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই, সেখানে অপরিশোধিত তেলের দামের ওঠানামার সূদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে দেশের নীতি নির্ধারণের উপরে । বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারত অপরিশোধিত তেলের কম দামের ফায়দা তুলছে, এবং এপর্যন্ত বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার 507.64 বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর রেকর্ড বৃদ্ধিতেই সেটা স্পষ্ট । এটা প্রধানত কম আমদানি বিলের কারণে, যা সাধারণভাবে অপরিশোধিত তেল আমদানির উপর নির্ভর করে । 2019 সালে এর গড় ছিল প্রতিদিন প্রায় 4.5 মিলিয়ন ব্যারেল। এই বিরাট লাভের কারণে, স্বল্পমেয়াদি, দীর্ঘমেয়াদি এবং মধ্যমেয়াদি নীতি নির্ধারণের প্রয়োজন রয়েছে, যাতে পরিস্থিতির ফায়দা তোলা যায় । সংক্ষেপে বলতে গেলে, অপরিশোধিত তেলের কম দামের লাভ সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে । এর ফলে তাৎক্ষণিকভাবে পরিবহণের খরচ, এমনকী উৎপাদনের খরচ কমবে এবং আস্তে আস্তে জিনিসপত্রও সস্তা হবে । অন্যদিকে, এতে ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা তৈরি হবে, এই মুহূর্তে অর্থনীতিকে চাঙা করতে যেটা প্রয়োজন । কিন্তু সম্পূর্ণ বিপরীতে গিয়ে দেশের রাজধানীতে গত 19 দিনে পেট্রোলের দাম লিটারে 8.66 টাকা এবং ডিজ়েল লিটারপ্রতি 10.63 টাকা বেড়েছে । জ্বালানির দাম বাড়িয়ে সস্তার অপরিশোধিত তেল থেকে ফায়দা তোলার নীতিতে করের টাকা আসতে পারে, কিন্তু অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে । জ্বালানির দাম বাড়ানোর আগে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়পক্ষকেই এই দিকটা ভেবে দেখতে হবে । মধ্যবর্তী পদক্ষেপে, আমাদের অপরিশোধিত তেল মজুত করার ক্ষমতাবৃদ্ধি করা প্রয়োজনীয়, যদি তা সস্তায় পাওয়া যায় । বর্তমানে ভারতের 39 মিলিয়ন ব্যারেল মজুত রাখার ক্ষমতা রয়েছে, যা দেশকে 9 দিনের জ্বালানির নিরাপত্তা দিতে পারে । যদিও জাপান বা চিনের মতো এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলো, যাদের স্ট্র্যাটেজিক অয়েল রিজ়ার্ভ (SOR) যথাক্রমে 550 মিলিয়ন এবং 528 মিলিয়ন ব্যারেল, তাদের তুলনায় তা অত্যন্ত সামান্য । এই প্রেক্ষিতে আমাদের SOR ক্ষমতাবৃদ্ধির জন্য সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে । এতে শুধু আমাদের সস্তার তেল মজুত করার ক্ষমতাই বাড়বে না, পাশাপাশি শ্রমিকদের কাজের সুযোগ তৈরি হবে এবং নির্মাণ সামগ্রীর চাহিদা বাড়বে, যা এই কঠিন সময়ে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় । ভবিষ্যতে ভারতকে কৌশলগতভাবে পুণর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎসের দিকে যেতে হবে এবং অন্যদিকে শক্তি সংরক্ষণের চেষ্টা করতে হবে । এর কারণ হল যে অপরিশোধিত তেলের দাম একেবারেই স্থিতিশীল নয়, এবং এমন কিছু বিষয়ের উপর তা নির্ভরশীল, যার নিয়ন্ত্রণ ভারতের আয়ত্তে নেই । দেশের শক্তি নিরাপত্তার জন্য এধরনের উৎসের ওপর দীর্ঘমেয়াদি নির্ভরতা তৈরি হলে, তার জন্য অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত মাশুল দিতে হবে দেশকে । যত তাড়াতাড়ি আমরা পদক্ষেপ করব, ততই ভাল । আমাদের শুধু দরকার একটা জোরালো রাজনৈতিক সদিচ্ছা ।

বিশ্বজুড়ে অপরিশোধিত তেলের দাম ফের বাড়ার দিকে বলেই মনে করা হচ্ছে । সোমবার 2.1 শতাংশ বেড়ে মঙ্গলবার ব্রেন্ট ক্রুডের দাম 43.14 ডলারে পৌঁছায় । অন্যদিকে, ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম এপ্রিলে 21 বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন হওয়ার পর দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে এবং তা বাড়তে থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে । এই প্রবণতার পিছনে প্রধানত তিনটি কারণ রয়েছে । প্রথমত, ওপেক প্লাসের সরবরাহ রেকর্ড কাটছাঁট হয়ে প্রতিদিন 9.7 মিলিয়ন ব্যারেলে পৌঁছানো । দ্বিতীয়ত, অ্যামেরিকার ভাণ্ডারে ঘাটতি এবং তৃতীয়ত, চাহিদায় সামান্য বৃদ্ধি । এই প্রেক্ষাপটে এটা বলে রাখা ভালো, যে এইসব অগ্রগতি সত্ত্বেও অপরিশোধিত তেলের দাম স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি ভবিষ্যতে কমই থাকবে, যা নীতির দিক থেকে প্রভাব ফেলবে ভারত তথা বিশ্বের উপর ।

সস্তা অপরিশোধিত তেলই নিউ নর্মাল -

বিশ্বজুড়ে কোরোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে । এই সপ্তাহেই দক্ষিণ কোরিয়া ঘোষণা করেছে, দেশ কোরোনা ভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে । আরও গুরুত্বপূর্ণ যেটা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) রবিবার বিশ্বজুড়ে কোরোনা কেসে রেকর্ড সংখ্যাবৃদ্ধির রিপোর্ট দিয়েছে, যার মধ্যে সবথেকে বেশি উত্তর ও দক্ষিণ অ্যামেরিকায় । এমনও আশঙ্কা রয়েছে যে ভাইরাস চিনে ফের ধাক্কা দিতে পারে, যারা বিশ্বের সবথেকে বেশি অপরিশোধিত তেল আমদানি করে। আস্তে আস্তে এর ফলে অপরিশোধিত তেলের দাম কমবে। অন্যদিকে ঝড়ের মরশুমের শুরুতে অপরিশোধিত তেলের দামের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা অদূর ভবিষ্যতে ভালো দামের আশায় জল ঢেলে দিয়েছে । তাই সস্তায় অপরিশোধিত তেলই এখন স্বাভাবিক বিষয় এবং বিশ্বকে এটাই মেনে নিতে হবে ।

ভারতের উপর প্রভাব -

এটা স্পষ্ট যে, বিশ্বজুড়ে যা ভূ-রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক গতিবিধি, তাতে অপরিশোধিত তেলের দাম 70 ডলার প্রতি ব্যারেলে পৌঁছানো অনেক দূরের ব্যাপার । যেখানে আন্তর্জাতিক অপরিশোধিত তেলের দামে ভারতের প্রায় কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই, সেখানে অপরিশোধিত তেলের দামের ওঠানামার সূদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে দেশের নীতি নির্ধারণের উপরে । বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারত অপরিশোধিত তেলের কম দামের ফায়দা তুলছে, এবং এপর্যন্ত বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার 507.64 বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর রেকর্ড বৃদ্ধিতেই সেটা স্পষ্ট । এটা প্রধানত কম আমদানি বিলের কারণে, যা সাধারণভাবে অপরিশোধিত তেল আমদানির উপর নির্ভর করে । 2019 সালে এর গড় ছিল প্রতিদিন প্রায় 4.5 মিলিয়ন ব্যারেল। এই বিরাট লাভের কারণে, স্বল্পমেয়াদি, দীর্ঘমেয়াদি এবং মধ্যমেয়াদি নীতি নির্ধারণের প্রয়োজন রয়েছে, যাতে পরিস্থিতির ফায়দা তোলা যায় । সংক্ষেপে বলতে গেলে, অপরিশোধিত তেলের কম দামের লাভ সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে । এর ফলে তাৎক্ষণিকভাবে পরিবহণের খরচ, এমনকী উৎপাদনের খরচ কমবে এবং আস্তে আস্তে জিনিসপত্রও সস্তা হবে । অন্যদিকে, এতে ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা তৈরি হবে, এই মুহূর্তে অর্থনীতিকে চাঙা করতে যেটা প্রয়োজন । কিন্তু সম্পূর্ণ বিপরীতে গিয়ে দেশের রাজধানীতে গত 19 দিনে পেট্রোলের দাম লিটারে 8.66 টাকা এবং ডিজ়েল লিটারপ্রতি 10.63 টাকা বেড়েছে । জ্বালানির দাম বাড়িয়ে সস্তার অপরিশোধিত তেল থেকে ফায়দা তোলার নীতিতে করের টাকা আসতে পারে, কিন্তু অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে । জ্বালানির দাম বাড়ানোর আগে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়পক্ষকেই এই দিকটা ভেবে দেখতে হবে । মধ্যবর্তী পদক্ষেপে, আমাদের অপরিশোধিত তেল মজুত করার ক্ষমতাবৃদ্ধি করা প্রয়োজনীয়, যদি তা সস্তায় পাওয়া যায় । বর্তমানে ভারতের 39 মিলিয়ন ব্যারেল মজুত রাখার ক্ষমতা রয়েছে, যা দেশকে 9 দিনের জ্বালানির নিরাপত্তা দিতে পারে । যদিও জাপান বা চিনের মতো এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলো, যাদের স্ট্র্যাটেজিক অয়েল রিজ়ার্ভ (SOR) যথাক্রমে 550 মিলিয়ন এবং 528 মিলিয়ন ব্যারেল, তাদের তুলনায় তা অত্যন্ত সামান্য । এই প্রেক্ষিতে আমাদের SOR ক্ষমতাবৃদ্ধির জন্য সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে । এতে শুধু আমাদের সস্তার তেল মজুত করার ক্ষমতাই বাড়বে না, পাশাপাশি শ্রমিকদের কাজের সুযোগ তৈরি হবে এবং নির্মাণ সামগ্রীর চাহিদা বাড়বে, যা এই কঠিন সময়ে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় । ভবিষ্যতে ভারতকে কৌশলগতভাবে পুণর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎসের দিকে যেতে হবে এবং অন্যদিকে শক্তি সংরক্ষণের চেষ্টা করতে হবে । এর কারণ হল যে অপরিশোধিত তেলের দাম একেবারেই স্থিতিশীল নয়, এবং এমন কিছু বিষয়ের উপর তা নির্ভরশীল, যার নিয়ন্ত্রণ ভারতের আয়ত্তে নেই । দেশের শক্তি নিরাপত্তার জন্য এধরনের উৎসের ওপর দীর্ঘমেয়াদি নির্ভরতা তৈরি হলে, তার জন্য অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত মাশুল দিতে হবে দেশকে । যত তাড়াতাড়ি আমরা পদক্ষেপ করব, ততই ভাল । আমাদের শুধু দরকার একটা জোরালো রাজনৈতিক সদিচ্ছা ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.