হায়দরাবাদ, 9 এপ্রিল : কোরোনা ভাইরাসের প্রতিনিয়ত বেড়ে চলা সংক্রমণ নিয়ে চিন্তিত সারা বিশ্বের মানুষ ৷ গত বছরের ডিসেম্বর মাসে এই ভাইরাস প্রথম দেখা দেয় চিনের ইউহান শহরে৷ গত তিন মাসের মধ্যে বিশ্বের ভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস ৷ এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে 80 হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ৷ আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে 15 লাখ ৷ দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে এই ভাইরাসে নতুন করে সংক্রমিত হওয়ার খবর আসছে ৷ আপনার কী অসুস্থ অনুভব করছেন? শরীরে কী কাশি, শ্বাসকষ্ট জ্বর জ্বর ভাব লক্ষ করছেন ? আপনি কী মনে করছেন আপনার শরীরে কোরোনা ভাইরাসের সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিয়েছে ? কী করা উচিত তাই ভাবছেন?
1. কোরোনা ভাইরাসের পরীক্ষা করা কোনও সরকারি হাসপাতালে ছুটে যাবেন না ৷ হাসপাতালে হয়তো আপনাকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে পারে ৷ অথবা হাসপাতালে অপেক্ষা করাকালীন একটি বড় সম্ভবনা থেকে যায় সেখান থেকেই এই ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ৷ বিগত 14 দিনে আপনার কোনও ট্রেভেল হিস্ট্রি আছে এমন কোনও দেশে যেখানে কোরোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে? বা আপনি কি এমন কারওর সংস্পর্শে এসেছিলেন যার শরীরে কোরোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পরেছে? যদি উল্লেখিত দুটি প্রশ্নের মধ্যে কোনটির উত্তর হ্যাঁ হয় তাহলে আপনার শারীরিক পরীক্ষার প্রয়োজন (বিশেষ করে যদি আপনার শরীরে জ্বর ও কাশির মতো উপসর্গ দেখা দেয়) ৷
2. প্রয়োজনে সরকারি হাসপাতালে অথবা হেল্প লাইন নম্বরে ফোন করুন ৷ প্রয়োজনে কোরোনা পরীক্ষা করার অনুমতি প্রাপ্ত বেসরকারি কোনও ল্যাবের সাহায্য নিন ৷ নমুনা সংগ্রহ করার জন্য ওই ল্যাব কর্তৃপক্ষকে আপনার বাড়িতে কাউকে পাঠানোর জন্য আবেদন করুন ৷ প্রয়োজনে বাড়িতেই সেল্ফ কোয়ারান্টাইনে থাকবেন কী না সে বিষয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিন ৷ যদি নিতান্তই আপনার টেস্টের প্রয়োজন হয় আর আপনাকে হাসপাতালে যেতে হয় সেক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করুন ৷ মাস্ক পড়ুন, স্যানিটাইজ়ার সঙ্গে রাখুন ৷ অযথা মুখে, চোখে হাত দেবেন না ৷ ট্রেস্টের ফলাফল আসতে আট দিন সময় লাগে ৷ সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ততদিন বাড়িতে সেল্ফ-কোয়ারান্টাইনে থাকার অনুমতি দেওয়ার জন্য হাসপাতালের ডাক্তারদের কাছে আবেদন করুন ৷
3. শেষ কয়েকটি দিনে আপনি কার কার সঙ্গে দেখা সাক্ষাত করেছেন তাঁদের নামের একটি তালিকা বানান ৷ তাঁদের প্রত্যেকে জানান যে আপনি সুস্থ্য অনুভব করছেন না ৷ এবং আপনি নিজে থেকেই আইসোলেশনে আছেন সতর্কতা বসত আপনি এই পদক্ষেপ নিয়েছেন ৷ যদিও এখন পর্যন্ত টেস্টের ফলাফল এখন আসেনি ৷ এই পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যদি ভুল বসত আপনি এমন কারোর সংস্পর্শে চলে আসেন যিনি কোনও কারণে সম্প্রতি ভারত এসেছেন ৷ এবং যেখান থেকে এসেছেনে সেখানে কোরোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে ৷
4. বাড়িতে কমপক্ষে সব সময়ের জন্য 6 ফিট দূরত্ব বজায় রাখুন পরিবারের লোকেদের থেকে ৷ বিশেষ করে বয়জ্যেষ্ঠদের থেকে ৷ বাড়ির জানলা, দরজার হাতল, লক, এমন সকল বস্তু যেগুলি বাড়িতে থাকতে গেলে প্রতিনিয়ত স্পর্শ করতে হয় এমন বস্তু বা জিনিসগুলি আট ঘণ্টায় এক বার বা যদি সম্ভব হয় তার বেশি বার স্যানিটাইজ়ার বা ওই জাতীয় কিছু দিয়ে স্যানিটাইজ় করুন ৷ আপনার ব্যবহৃত সরঞ্জাম অন্য কাউকে ব্যবহার করতে না দেওয়ার ভালো ৷
5. ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন ৷ তার পরামর্শ মেনে চলুন ৷ সোশাল মিডিয়ায় বা হোয়াটস অ্যাপে শেয়ার করা কোনও চিকিৎ পরামর্শ মানবেন না ৷ আপনি প্রয়োজনে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ নিতে পারেন ৷ পরিমাণ মত জল পান করুন ৷ এবং বিশ্রাম নিন ৷
6. নিয়ম মেনে চললে পরবর্তী পাঁচ থেক সাতদিনের মধ্যে আপনি কিছুটা ভালো অনুভব করতে পারেন ৷ চিন্তা করার প্রয়োজন নেই ৷ বেশি চিন্তিত হবেন না ৷ আপনি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবেন ৷ শুধু চেষ্টা করবেন যেন কোনও ভাবেই আপনার শরীর থেকে আপনার পরিবারের মধ্যে যেন ছড়িয়ে না পরে এই ভাইরাস ৷ প্রয়োজনে দূরত্ব বজায় রাখুন ৷
7. আপনি তাঁদের মধ্যে একজন হতে পারেন যাঁদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাসের সঙ্গে মোকাবিলায় কঠিন হেয় পড়ছে ৷ আপনি হয়তো শ্বাসকষ্টের সমস্যা অনুভব করতে পারেন ৷ যদি এমনটি হয়, তাহলে আপনার হাসপাতালে ভরতি হওয়া উচিত ৷ আপনার হয়তো ভেন্টিলেটর বা অক্সিজেনের প্রয়োজন হতে পারে ৷ অতএব আপনি যদি শ্বাসকষ্টের অসুবিধা অনুভব করেন তাহলে হাসপাতালে যান ৷
8. যদি আপনি বয়স্ক হন, আপনার যদি ডায়াবেটিস বা হার্টের সমস্যা থাকে অথবা অপনার স্বাস্থ্য যদি সাধারণত স্বাস্থ্যকর না হয় সেক্ষেত্রে আপনার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে ভরতি হওয়া প্রয়োজন ৷ কখন কোন হাসপাতালে ভরতি হতে হবে সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলুন ৷
9. মনে রাখবেন কোরোনা ভাইরাস বা Covid -19- এর সংক্রমণ বা ছড়িয়ে পরার ক্ষমতা অনেক বেশি ৷ সব সময় সচেতন থাকুন ৷ এটা আপনার দায়িত্ব, আপনার থেকে যাতে অন্যদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে না পরে সে বিষয়ে সতর্ক থাকা ও অন্যদের, সমাজকে, দেশেকে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করা আপনার দায়িত্ব ৷ সে জন্য যখনি সুস্থ অনুভব করবেন না মাস্ক পড়ুন ৷ অন্যদের এই ভাইরাসের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করা আপনার দায়িত্ব ৷
10. সবশেষে একটাই বিষয়, মনে রাখবেন প্যানিক করার কোনও কারণ নেই ৷ প্রথমত, আপনার শরীরে যে কোরোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যাবে তাঁর সম্ভবনা খুব কম ৷ দ্বিতীয়ত, যদি আপনি সংক্রমিত হয়েও পরেন সেক্ষেত্র আপনি এই ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করবেন ও এক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন ৷ তৃতীয়ত, চিনে দিন দিন নতুন করে আক্রান্তের সংখ্য ও মৃতের সংখ্যা কমে এসেছে এটাই আমাদের আশা জুগিয়েছে ৷ যার থেকে আমরা আশা করতে পারি এই ভাইরাস থেকে আমরা মুক্তি পাব ৷