হায়দরাবাদ, 24 সেপ্টেম্বর : মুদাসসির ইয়াকুব । শ্রীনগরের বাসিন্দা । যেদিন তাঁর বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয় পাত্রীর সঙ্গে, সেই দিনই তিনি ঠিক করেছিলেন যে বিয়ের আয়োজন হবে চোখ ধাঁধানো । গত বছর অগাস্টে তাঁর বিয়ের দিন ঠিক হয়েছিল । কিন্তু BJP-র নেতৃত্বাধীন সরকার অনুচ্ছেদ 370 বাতিল করে দেওয়ার পর তিনি বিয়ের দিন মার্চ মাসে পিছিয়ে দিতে বাধ্য হন । আর মার্চে কোরোনা প্যানডেমিকের জন্য লকডাউন জারি হয়ে যায় । ফলে তাঁকে আবার বিয়ের দিন পিছিয়ে দিতে হয় । এই সময়ের মধ্যে মুদাস্সিরের সবচেয়ে মূল্যবান ও সুখী অনুষ্ঠান ক্রমশ যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠেছে । 25 বছরের এই পাত্র কখনও ভাবেননি যে অতিথিদের তালিকা তৈরি করার জন্য তাঁকে সরকারের কাছে অনুমতি নিতে যেতে হবে ।
মুদাসসির ইয়াকুব বলেন, "আমাদের বিয়ে গত বছর অগাস্টে হবে বলে ঠিক হয়েছিল । অনুচ্ছেদ 370 বাতিল হয়ে যাওয়ার পর কাশ্মীরের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায় । তাই বিয়ে পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই । মার্চ মাসে কোরোনা পরিস্থিতির জেরে আবার তা পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয় ৷" কাশ্মীরে বিয়ের অনুষ্ঠান অত্যন্ত জাঁকযমকপূর্ণ ভাবে পালন করা হয় । খরার সময় যেমন বৃষ্টির জন্য অধীর হয়ে অপেক্ষা করতে হয় । তেমনই বর ও কনে বিয়ের দিনের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন । অতিথিদের তালিকা কয়েক সপ্তাহ আগেই তৈরি করা হয় । একটি বড় হলঘরে অতিথিদের "ওয়াজওয়ান" নামে একটি তামার থালায় খেতে দেওয়া হয় । বর ও কনে অভিনব পোশাকে নিজেদের সাজান ।
ছয় মাস শীতকাল থাকার পর যখন বসন্তের প্রথম আলো পড়ে, কাশ্মীরে বিয়ের মরসুম শুরু হয়ে যায় । তবে এই বছর প্যানডেমিক ও নতুন SOP গুলির জন্য বিয়ের আকার ছোট করতে হয়েছে । আর ঐতিহ্যে অনেকটাই কাটছাঁট করতে হয়েছে । নতুন যে নিয়ম করা হয়েছে, তাতে বিভিন্ন অঞ্চলের ভাগ অনুযায়ী অতিথিদের তালিকা 30 থেকে 50 এর মধ্যেই বেঁধে রাখতে বলা হয়েছে । যদি এই নিয়মের
কোনও লঙ্ঘন হয়, তাহলে মহামারি আইন ভাঙার দায়ে নাগরিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হবে । শ্রীনগরের ডেপুটি কমিশনার শাহিদ ইকবাল চৌধুরি জানান, "বিয়ের অনুষ্ঠান করতে গেলে প্রয়োজনীয় অনুমতি নিতে হবে । আর সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে চলা বাধ্যতামূলক ।
কোরোনা ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার জন্য কাশ্মীর অঞ্চলে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে । এখনও পর্যন্ত 41 হাজার 560 জন আক্রান্ত হয়েছেন । আর 778 জন মারা গিয়েছেন । যে সমস্ত SOP গুলি মেনে চলতে হবে, তা কাশ্মীরে বিয়ের ধারণাকে একেবারে বদলে দিয়েছে । বিয়ে সাধারণত বৃহত্তর পরিবার ও বন্ধুদের কয়েকদিনের জন্য কাছাকাছি আসার বিরল সুযোগ করে দিত । মুদাসসির বলেন "এই বছরের অগাস্টে প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার পর আমরা আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান করেছি । কোরোনা সংক্রান্ত যা যা SOP ছিল, আমরা সব মেনে চলেছি । জমায়েত এড়াতে আমরা আত্মীয়দেরও নিমন্ত্রণ করতে পারিনি ।"
ওই অঞ্চলের অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি করতে বিয়ের অনুষ্ঠান খুবই সাহায্য করে । কারণ, এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সেক্টরে অনেক পরিমাণে খরচ করা হয় । এর মধ্যে রাঁধুনি ও ডেকরেটরসরাও রয়েছেন । মুদাসসির জানান তাঁরা এই প্যানডেমিক থেকে অনেক কিছু শিখেছেন । তিনি বলেন,"এই প্যানডেমিকের জন্য আমরা সাধারণ ভাবে বিয়ে করার সুযোগ পেলাম । বড় জমায়েতের সময় অনেক খাবার নষ্ট হয় । এবার সেটা হয়নি । এর ফলে টাকাও অনেক বাঁচানো গিয়েছে ।"