বেঙ্গালুরু, 19 জুলাই : স্বাস্থ্য নিয়ে মানুষ যদি কঠোরভাবে সচেতন থাকে, মাস্ক পরে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে তাহলে কিছুটা আটকানো যেতে পারে কোরোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ৷ কিন্তু, তা সত্ত্বেও সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে শিখরে পৌঁছাবে দেশে কোরোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৷ এমনই মনে করছেন পাবলিক হেল্থ ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট কে শ্রীনাথ রেড্ডি ৷ তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, দেশে কোরোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে ৷ আমাদের চেষ্টা করা উচিত যাতে তাড়াতাড়ি এটাকে নির্মূল করা যায়৷ বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন সময়ে কোরোনা সংক্রমণ শিখরে পৌঁছাবে ৷"
যদি স্বাস্থ্য নিয়ে মানুষ কঠোরভাবে সচেতন হয় এবং মাস্ক পরা বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো বিধিনিষেধ মেনে চলে তাহলে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝির আগে ভারতে কোরোনা সংক্রমণ শিখরে পৌঁছানোর সম্ভাবনাকে ঠেকানো সম্ভব বলে মনে করছেন তিনি ৷ বলেন, "যদি প্রত্যেকে যা যা করণীয় তা কঠোরভাবে মেনে চলেন তবে সংক্রণের হার ঠেকানো সম্ভব । বিষয়টি নির্ভর করছে সাধারণ মানুষের সচেতনতা ও সরকারি পদক্ষেপের উপর ।"
অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান রেড্ডির মতে, লকডাউনের দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ রুখতে ভারত সরকার কঠোর পদক্ষেপ করেছিল । সংক্রমণ রুখতে নেওয়াও হয়েছিল বিভিন্ন ব্যবস্থা । কিন্তু যবে থেকে বিভিন্ন বিষয়ে ছাড় মিলেছে ও লকডাউন শিথিল হয়েছে তবে থেকেই সংক্রমণের হার বেড়েছে। তিনি বলেন, "3 মে-র পর থেকে কিছু বিষয়ে ছাড় দেওয়া হয়েছে । কারণ, ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে সচল করা দরকার ছিল । কিন্তু এই সময়ে যাতে সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে থাকে তার জন্য স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে জোরাল করাও খুব দরকার ছিল । যেমন- যে কোনও রকম উপসর্গের সমীক্ষা করা, দ্রুত পরীক্ষা ও আইসোলেশনের ব্যবস্থা, ব্যাপক হারে কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের ব্যবস্থা করা উচিত ছিল । কিন্তু এর মধ্যে কোনওটাই হয়নি । তখন থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হ্রাস পেতে শুরু করে । কমতে থাকে ব্যক্তিগত সতর্কতাও । ব্যক্তিগত সাবধনতা অবলম্বনও বর্তমানে অনেকটাই কমে গেছে । লকডাউন উঠে যাওয়ার পর বিষয়গুলি প্রায় লোপ পাওয়ায় কোরোনা সংক্রমণ বাড়ছে ।"
তাঁর কথায়, "এখন এমন একটা পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে যেন কোনও কিছুই হয়নি । মানুষ সংক্রমণের গুরুত্বটা বুঝতেই নারাজ । বিষয়টা এমন যেন সদ্য স্কুলের পরীক্ষা শেষ হয়েছে । কয়েক মাস আগেই যেন রেজ়াল্ট বেরিয়ে গেছে । তাই এখন আনন্দ করার সময় । সম্প্রতি বেশকিছু জায়গায় মানুষ জমায়েত হয়ে অসেচতনতার পরিচয় দিয়েছে । আমরা হাসপাতালের শয্যা সংখ্যায় বেশি মনোনিবেশ করেছি । বিষয়টি গুরত্বপূর্ণ বলে মানছি । তবে তার থেকেও বেশি গুরত্বপূর্ণ বিষয় হওয়া উচিত ছিল কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের বিষয়টিতে নজর দেওয়া । বিষয়টি আরও জোরদার করতে হবে । উপসর্গযুক্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তৎক্ষণাৎ পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে । বিষয়গুলির উপর বেশি করে নজর দিলে সংক্রমণের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে । শক্তিশালী জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা না থাকা ও মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাবের জন্যই এই ভাইরাস দ্রুত সংক্রমিত হচ্ছে । "
তিনি আরও বলেন, "বর্তমানে ভারতের গ্রামগুলিতে সংক্রমণের হার রোধে ব্যবস্থা নিতে হবে । এই বিষয়টি এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ । এছাড়াও ছোটো শহর ও মফঃস্বল এলাকাতেও যাতে সংক্রমণ না ছড়ায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে । যথা সম্ভব সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে । কারণ, গ্রামে দ্রুত সংক্রমণ ছড়ালে তা ভয়াবহ আকার নেবে । মনে রাখতে হবে ভারতের দুই-তৃতীয়াংশই গ্রাম । গ্রামগুলিতে সংক্রমণ রোধে ব্যবস্থা নিতে পারলে আমরা সবদিক থেকে হওয়া ক্ষতিকেও অনেকটা রোধ করতে পারব ।"