একইসঙ্গে উপস্থিত শারীরিক অসুস্থতাকে কোমর্বিডিটি বলা হয় ৷ যেমন একই সময়ে একই ব্যক্তির শরীরে একটির বেশি রোগ বা অসুস্থতার উপস্থিতি । এই অবস্থা প্রায়শই ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি হয় । হায়দরাবাদের VINN হাসপাতালের চিকিৎসক রাজেশ ভুক্কালা (MD) বলেন, “ক্রনিক অসুস্থতার মধ্যে রয়েছে ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ, বেশি কলেস্টেরল, কিডনি, লিভার এবং হৃদরোগ ইত্যাদি । এতে মানুষের দীর্ঘ স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হয় । কোরোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে এর মধ্যে অনেকগুলোরই আরও বেশি প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে ।”
সুতরাং গত আট মাসে, যবে থেকে কোরোনা ভাইরাস বিশ্বে আঘাত হেনেছে তখন থেকেই লাগাতার গবেষণা চলছে এটা বুঝতে যে, কোরোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে কাদের ঝুঁকি বেশি । আর এভাবেই "কোমর্বিডিটি" শব্দটি আরও গুরুত্ব পেয়েছে । ডক্টর রাজেশ বুঝিয়ে দেন, কোরোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে বয়স একটা বিষয় । বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের কার্যক্ষমতা কমতে থাকে তখন এই সংক্রমণ একটা ঝুঁকির বিষয় তৈরি করে । একইরকমভাবে, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস যাঁদের রয়েছে, তাঁদের উপরও ভাইরাসের বেশি প্রভাব পড়বে সেই মানুষগুলোর তুলনায় যাঁরা গত কয়েক বছর ধরে ডায়াবিটিসকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন । সুতরাং ভাইরাসের প্রভাব তাঁদের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা হতে পারে ।
একইরকমভাবে যাঁদের হাইপারটেনশন রয়েছে তাঁদের ক্ষেত্রেও ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি । ড. রাজেশ বলেন, “উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে শরীরের রক্ত চলাচলের সম্পর্ক রয়েছে । যদি রক্ত সঞ্চালন সঠিকভাবে না হয় তাহলে শরীরের কার্যক্ষমতা বাধাপ্রাপ্ত হয়, যার প্রভাব হৃদপিণ্ড, লিভার ও মস্তিষ্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর ওপর পড়ে । এর ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। যার জন্য এটাও একটা ঝুঁকির বিষয় ।”
ডায়াবিটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ কোমর্বিডিটি হিসেবে বেশি চোখে পড়ছে অনান্য অসুখের তুলনায় । এর ফলে কোনও ব্যক্তির মধ্যে কোরোনার উপসর্গ আরও খারাপভাবে দেখা দিতে পারে । দেশে বিরাট সংখ্যায় মানুষ এই দুই অসুখ নিয়েই জীবনধারণ করছে । সুতরাং তাদের মধ্যেই সংক্রমণের তীব্রতার প্রবণতা বেশি, যার জেরে জটিলতা ও মর্বিডিটি তৈরি হচ্ছে ।
যদিও কোরোনাকে হারানো যাবে না যতক্ষণ না গবেষকরা একটা ভ্যাকসিন বা নির্দিষ্ট ওষুধ তৈরি করতে পারছেন । কিন্তু ডক্টর রাজেশ বলেন, “ ব্লাড সুগার ও ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে শরীরকে স্বাভাবিক রেখে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করা যেতে পারে । এছাড়াও ভালোভাবে ঘুমোন যাতে আপনার শরীর ও মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত বিশ্রাম পেতে পারে । যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালোভাবে ধরে রাখা যায় তাহলে ভাইরাসের প্রভাব অনেক কম হবে ।” এছাড়াও তিনি সুষম খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন যাতে পর্যাপ্ত প্রোটিন, ভিটামিন, তাজা ফল ও সবজি থাকবে । কারণ এগুলো শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য পরিচিত ।
যেহেতু রোগ উপশমের থেকে আগেভাগে প্রতিরোধ করাই ভালো, তাই এটা বুঝতে হবে যে শরীরের কোনও অসুস্থতায় ভাইরাসের আরও বেশি প্রভাব পড়তে পারে । তাই এধরনের পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত সতর্ক থাকা উচিত ।