1 ফেব্রুয়ারি দেশের সবার নজর থাকবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের উপর । ভারতীয় অর্থনীতির স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে পদক্ষেপ করে তিনি ওই দিন পেশ করবেন 2020 সালের বাজেট ।
যদিও এতদিন পর্যন্ত হওয়া বাজেটে সমাজের অতি দরিদ্র শ্রেণি, কৃষক, অসংগঠিত শ্রমিক এবং সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের কথা বেশি ভাবা হয়েছে ৷ এবারে মনে করা হচ্ছে, সাধারণ মানুষের হাতে টাকার যোগান বাড়াতে বেশ কিছুটা বড় পদক্ষেপ করা হতে পারে । এটা করার জন্য হয় কর ছাড় দেওয়া হবে, না হলে নতুন চাকরি তৈরি করা হবে, বা মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়াতে পদক্ষেপ করা হবে । মাস কয়েক আগে কর্পোরেট কর ছাড়ের কথা ঘোষণা করেছিলেন নির্মলা সীতারমন । এই পদক্ষেপের পর সাধারণ মানুষ আশা করছেন তাদের আয় বাড়াতে বাজেটে বড় পদক্ষেপ করা হবে ।
আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় 130 কোটি । কিন্তু, এর মধ্যে মাত্র পাঁচ কোটি 65 লাখ মানুষ আয়কর রিটার্ন জমা করেন । তাই সকলেই আশা করছেন, আয়করের স্ল্যাব কমিয়ে কর ছাড়ের ব্যবস্থা করবেন তিনি । ছাড়ের বিষয়টা হিসাব করলে দেখা যাবে, এখন পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা ব্যক্তিদের কোনও আয়কর দিতে হয় না । তবে, প্রাথমিক আয়ে ছাড়ের সীমা আড়াই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা করা হয়নি । আয়কর দপ্তরের রিপোর্ট বলছে, 97 লাখ ব্যক্তিগত করদাতা তাঁদের আয় পাঁচ লাখ থেকে 10 লাখ টাকার মধ্যে বলে জানিয়েছেন । তাঁদের কাছ থেকে মোট 45 হাজার কোটি টাকা কর আদায় করা গিয়েছে । তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই বেতনভুক শ্রেণি । অতএব, এই শ্রেণির মানুষ চাইবেন আয়করে ছাড় দেওয়া হোক । যদি সরকার আয়করে ছাড় দেওয়ার কথা ঘোষণা করে, তা হলে তাঁদের হাতে খরচ করার মতো আরও বেশি টাকা আসবে ।
আয়ের পিরামিডের একেবারে উপরে থাকা শ্রেণির আয়করের পরিমাণ 30 শতাংশ । এই শ্রেণির আয় 10 লাখ টাকা বা তার চেয়ে বেশি । সীতারমন যদি আয়ের স্তর বাড়িয়ে সেই স্তরে নিয়ে যেতে পারেন, যেখানে সর্বোচ্চ হার প্রয়োগ করা হয়, তা হলে বাজারের মেজাজ ভাল হতে বাধ্য । টাস্ক ফোর্সের একটা পরামর্শ ছিল যে, 10 লাখ টাকা বা তার বেশি আয়ের ক্ষেত্রে সরাসরি কর 30 শতাংশ না করে তা করা হোক 20 লাখ টাকা বা তার বেশি আয়ের ব্যক্তিদের উপর । পরিবর্তে 10 থেকে 20 লাখ টাকার আয়ের শ্রেণির জন্য 20 শতাংশ করের একটা নতুন স্ল্যাবের ব্যবস্থা করা হোক । আর আড়াই লাখ থেকে 10 লাখ পর্যন্ত আয়ের ক্ষেত্রে তা করা হোক 10 শতাংশ ।
এই মুহূর্তে ব্যক্তিগত মালিকানার ক্ষেত্রে গৃহ ঋণে ছাড়ের পরিমাণ দু'লাখ টাকা । এর মধ্যে প্রাক নির্মাণ সুদ পাঁচটি সমান কিস্তিতে দাবির ব্যবস্থাও রয়েছে । এর উপর গত অর্থবর্ষে যোগ হয়েছে একটি বাড়তি সুবিধা । 80EEA ধারায় সেই সব বাড়ি কেনার উপর অতিরিক্ত দেড় লাখ টাকা কর ছাড়ের কথা ঘোষণা করা হয়েছে, যেগুলিতে 45 লাখ টাকার বেশি স্ট্যাম্প ডিউটি লাগে না ।
কিন্তু দেশের বহু শহরে আবাসনের দাম অনেকটাই বেশি । তাই এসব ক্ষেত্রে বাড়ি কেনার দামের ঊর্ধ্বসীমা রাখা উচিত নয় । দাম বা বাড়ির আয়তন না দেখে করদাতাদের প্রথম বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ছাড়ের ব্যবস্থা করা উচিত । এটা করা হলে আবাসন শিল্পে গতি আসবে । ক্রেতারা আরও ভালো এবং আরও দামি বাড়ি কেনার কথাও ভাবতে পারবেন ।
একই ভাবে, 80C ধারায় বার্ষিক মাত্র দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়ের উপর ছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে । এই পরিমাণ অবিলম্বে বাড়ানো উচিত । এর ফলে মধ্যবিত্তের অনেকটাই সুরাহা হবে । সন্তানদের টিউশন ফি, জীবন বিমার প্রিমিয়াম এবং গৃহ ঋণের ছাড় আলাদাভাবে হিসাব করা উচিত । ন্যাশনাল পেনশন স্কিম (NPS)-এ অতিরিক্ত 50 হাজার টাকা ছাড়ের দাবিও বহু দিনের ।
তালিকাভুক্ত শেয়ারের উপর দীর্ঘমেয়াদি মূলধন লাভ এক লাখ টাকার বেশি হলে যে 10 শতাংশ কর দিতে হয়, সেই বিষয় নিয়ে ভাবার অনুরোধ রয়েছে বহু দিন । এই পরিমাণ খুবই কম, কারণ বহু বিনিয়োগকারি বছরের পর বছর ভালো শেয়ার কিনে রাখেন । এটা তাঁদের কাছে এক অর্থে জীবনের বিনিয়োগ । এই ক্ষেত্রে ছাড়ের পরিমাণ বাড়ালে বহু মানুষ নিঃসন্দেহে উপকৃত হবেন ।
এই মুহূর্তে দেশে প্রতিদিনের ব্যবহারের জিনিসপত্রে দাম এ যাবৎ সবচেয়ে বেশি অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে । নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে তা সবার নাগালে আনতেই হবে । কিছু জিনিসের উপর পণ্য পরিষেবা কর (GST) কমিয়ে সে সব জিনিসের বিক্রি বাড়িয়েও অর্থনীতির কিছুটা উন্নতি করা সম্ভব ।
শেখর আইয়ার