পটনা, 28 অক্টোবর : আজ বিহারে প্রথম দফার ভোট । দেশজুড়ে কোরোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে এই প্রথমবার বড় কোনও নির্বাচন হচ্ছে দেশে । কোরোনার সংক্রমণ রুখতে একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে । বিধানসভা নির্বাচনের জন্য 7 লাখ স্যানিটাইজ়ারের বোতল, 46 লাখ মাস্ক, 6 লাখ PPE কিট, 6 লাখ 70 হাজার ফেস শিল্ড ও 23 লাখ জোড়া গ্লাভসের ব্যবস্থা করছে নির্বাচন কমিশন ।
আজ প্রথম দফায় 71 টি আসনে ভোট হবে । ভোটযুদ্ধের ময়দানে নামছেন 1 হাজার 66 জন প্রার্থী । তাদের মধ্যে 114 জন মহিলা প্রার্থী ।
ভোটের লড়াইয়ের একদিকে রয়েছে BJP, JD(U)-এর নেতৃত্বে NDA জোট । এবারও NDA জোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী নীতীশ কুমার । অন্যদিকে রয়েছে RJD-বাম-কংগ্রেস মহাজোট । মহাজোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী তেজস্বী যাদব ।
এই দ্বিমুখী লড়াই ছাড়াও নজর থাকছে প্রয়াত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামবিলাস পাসওয়ানের দল LJP-র দিকেও । NDA জোটে থাকলেও বিহারে একলা চলার নীতি নিয়েছেন চিরাগ পাসওয়ান । ভোটে জিতলে নীতীশ কুমারকে জেলে পাঠানোর হুঁশিয়ারিও দিয়ে রেখেছেন তিনি । নির্বাচনী প্রচারে এসে তাঁকে বলতে শোনা গেছিল, "দুর্নীতির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বা যেই জড়িত থাকুক না কেন তাঁকে জেলে পাঠাবই ।"
সোমবার শেষ হয়েছে বিহারের প্রথম দফার ভোটের প্রচার । শেষ দিন পর্যন্ত নিজেদের পায়ের তলার মাটি আরও শক্ত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল দুই শিবির । সোমবার আসরে নেমেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । শেষ মুহূর্তের প্রচারে ঝড় তুলেছিলেন রাহুল গান্ধিও ।
আরও পড়ুন : একে অপরকে তীব্র আক্রমণ, প্রথম দফার প্রচার শেষ বিহারে
সকাল সাতটা থেকে শুরু হচ্ছে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া । তবে কয়েকটি মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকা বাদে বাকি জায়গাগুলিতে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া চলবে সন্ধে ছ'টা পর্যন্ত । শেষ এক ঘণ্টা রাখা হচ্ছে কোরোনা আক্রান্তরা যাতে ভোটপ্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারেন সেই জন্য ।
প্রথম দফার ভোটে ময়দানে নামতে চলেছে নীতীশ কুমারের মন্ত্রিসভার আধ ডজন হেভিওয়েট । তালিকায় রয়েছেন কৃষ্ণনন্দন বর্মা, প্রেম কুমার, জয়কুমার সিং, সন্তোষকুমার নিরালা, বিজয় সিনহা এবং রামনারায়ণ মণ্ডলের মতো মন্ত্রীরা ।
জেহানাবাদ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে লড়ছেন কৃষ্ণনন্দন বর্মা । তাঁর বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে তেজস্বীর অন্যতম তুরুপের তাস সুদয় যাদব । অন্যদিকে চিরাগের লোক জনশক্তি দলের হয়ে লড়ছেন ইন্দুদেবী কাশ্যপ ।
কৃষ্ণনন্দন বর্মা বিহারের শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন । রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ বলছেন, বর্তমান সরকারের উপর একাধিক ক্ষোভ রয়েছে জেহানাবাদে শিক্ষকমহলের । এলাকার অনেক সরকারি স্কুলেই অস্থায়ী শিক্ষকরা স্থায়ী শিক্ষকদের সমান বেতনের দাবি তুলে আসছেন । বেশ কিছু প্রাথমিক স্কুলেও নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে রয়েছে । সবমিলিয়ে জেহানাবাদে নির্বাচনী বৈতরণী পার করতে যথেষ্টই বেগ পেতে হতে পারে কৃষ্ণনন্দন বর্মাকে ।
নজর থাকবে ইমামগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের দিকেও । ইমামগঞ্জ কেন্দ্র থেকে NDA-র হয়ে লড়াইয়ে নামছেন বিহারে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চার প্রধান জিতনরাম মাঝি । মাঝিকে টক্কর দেওয়ার জন্য তেজস্বী ব্রিগেডের হয়ে ময়দানে নামছেন বিধানসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ তথা বর্ষীয়ান দলিত নেতা উদয়নারায়ণ চৌধুরি । গতবারের নির্বাচনে অবশ্য উদয়নারায়ণকে পরাস্ত করেছিলেন মাঝি । তবে চারবারের বিধায়ক এই বর্ষীয়ান দলিত নেতাকে কিন্তু মোটেই হালকা ভাবে নিচ্ছে না নীতীশের দল ।
আরও পড়ুন : 2020 বিহার নির্বাচন : নীতীশ কুমারের সামনে একাধিক চ্যালেঞ্জ
জেহানাবাদ, ইমামগঞ্জের পাশাপাশি নজর থাকবে মোকামা কেন্দ্রের দিকেও । RJD-র টিকিটে এবার সেখানে লড়াইয়ে নামছেন অনন্ত সিং । এককালে রাজনীতিবিদের তুলনায় ডন হিসেবেই বেশি পরিচিতি ছিল তাঁর । 2015-র বিধানসভা নির্বাচনে নীতীশের দলের বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি । জিতেও ছিলেন গতবারের ভোটে । উল্লেখ্য, অনন্ত সিংয়ের বিরুদ্ধে 38টি মামলা রয়েছে । এর মধ্যে খুনের মামলাও রয়েছে বেশ কয়েকটি । বর্তমানে তিনি বেআইনি কার্যকলাপ দমন আইনের অধীনে জেলে রয়েছেন ।
আজ যে 71 টি আসনে লড়াই হতে চলেছে তার মধ্যে 12টি আসনে গত বিধানসভা নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল । এই আসনগুলি মধ্যে রয়েছে আরা, দিনারা, তারারি, ভাবুয়া, দেহরি, চেইনপুর, শেরঘাটি, রাজাউলি (তপসিলি জাতি), গোবিন্দপুর, বাঁকা, জামালপুর ও মুঙ্গের । এই 12 টি আসনের মধ্যে BJP পেয়েছিল মাত্র তিনটি আসন । আটটি আসন জিতেছিল মহাজোট ।
প্রথম দফার 71টি আসনের মধ্যে 42 টিতে প্রার্থী দিয়েছে RJD । আর 21 টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেস । অন্যদিকে JD(U) প্রার্থী দিয়েছে 41টি আসনে । আর BJP -র প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন 29টি আসনে । এছাড়া চিরাগ পাসওয়ান, যিনি এবারের নির্বাচনে একলা চলার নীতি নিয়েছেন, তাঁর দল LJP প্রার্থী দিয়েছে 41টি আসনে ।
নির্বাচনকে ঘিরে যাতে কোনওরকম অপ্রীতিকর ঘটনা না হয় তার জন্য রয়েছে কড়া সতর্কতা । তিন দফার ভোটের জন্য সবমিলিয়ে প্রায় 30 হাজার কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান বিহারে পাঠানো হয়েছে । মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত 16 টি জেলায় বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে । নির্বাচন কমিশনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ঔরঙ্গাবাদ, গয়া, নওদা, জামুই ও লখিসরাই জেলার মাওবাদী অধ্যুষিত বিধানসভা কেন্দ্রগুলির জন্য 1200 কম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে ।