ETV Bharat / bharat

জাতীয় অরণ্য নীতির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি 6 দশকেও

author img

By

Published : Jan 31, 2020, 6:50 AM IST

Updated : Jan 31, 2020, 7:40 AM IST

জাতীয় অরণ্য নীতি ঘোষিত হয়েছিল 1952 সালে । সেই নীতি অনুসারে পরিকল্পনা নেওয়া হয় যে দেশের মোট এলাকার 33 শতাংশে বনাঞ্চল থাকবে । কিন্তু সেই নীতি ঘোষিত হওয়ার পর প্রায় 67 বছর কেটে গেছে । আজও সরকারের তরফে নেওয়া সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি ।

forest
ফাইল ফোটো

বন সমীক্ষা রিপোর্ট

সম্প্রতি জাতীয় বন সমীক্ষা রিপোর্ট (ন্যাশনাল সার্ভে রিপোর্ট 2017-19) প্রকাশিত হয়েছে । কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রী প্রকাশ জাওড়েকর রিপোর্টটি প্রকাশ করেছেন । দেশের বনাঞ্চল রক্ষা করা ও প্রসার ঘটনোর ক্ষেত্রে যে প্রচুর সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেই বিষয়টি রিপোর্টে উঠে এসেছে । 2015 সালের প্যারিস চুক্তি অনুসারে ভারত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তারা বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইড ও অন্যান্য দূষিত পদার্থের নিঃসরণ কমাবে । 2030 সালের মধ্যে সেই পরিমাণ কমিয়ে 250-300 টনে নামিয়ে আনার কথা । সেজন্য দেশের বনাঞ্চল ও সবুজের পরিমাণ বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ভারত সরকার । কিন্তু বন সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, গত দুই বছরে দেশের বনাঞ্চলের পরিমাণ মাত্র 0.56 শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে । যদিও রিপোর্ট প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রী জানিয়েছেন, প্যারিস চুক্তির সমস্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর ভারত । মন্ত্রী একথা বললেও তাঁর প্রকাশিত রিপোর্টেই বলা হয়েছে যে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বনাঞ্চল ধ্বংসের হার উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছেছে । কয়েক দশক ধরেই সরকারের লক্ষ্য দেশের মোট এলাকার 33 শতাংশে যেন বনাঞ্চল থাকে । কিন্তু উপযুক্ত উদ্যোগের অভাবে সেই লক্ষ্য আজও পূরণ করা সম্ভব হয়নি । দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই জাতীয় স্তরে বিভিন্ন পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশে বনাঞ্চলের পরিমাণ বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চলছে । কিন্তু তাতে আদৌ কতটা কাজ হয়েছে, লক্ষ্যমাত্রার কতটা পূরণ করা সম্ভব হয়েছে, তা বাস্তব পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে বিতর্কের বিষয় ।

লক্ষ্যমাত্রা পূরণ দূর-অস্ত

মানবসমাজের জন্য বিশুদ্ধ বায়ু, জল ও খাদ্যের সংস্থান করার পাশাপাশি অরণ্য অন্য যে কাজগুলি করে, তার মধ্যে অন্যতম হল ভূগর্ভের জল সংরক্ষণ, বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণ কমানো এবং সামগ্রিকভাবে জলবায়ুকে রক্ষা করা । তা ছাড়া অরণ্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষে অসংখ্য মানুষে জীবিকা নির্বাহে যে সাহায্য করে সেটা আমরা সবাই জানি । ভারত সরকারের তরফে জাতীয় অরণ্য নীতি ঘোষিত হয়েছিল 1952 সালে । সেই নীতি অনুসারে পরিকল্পনা নেওয়া হয় যে দেশের মোট এলাকার 33 শতাংশে বনাঞ্চল থাকবে । কিন্তু সেই নীতি ঘোষিত হওয়ার পর প্রায় 67 বছর কেটে গেছে । আজও সরকারের তরফে নেওয়া সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি । জাতীয় অরণ্য সমীক্ষা প্রতিষ্ঠান (FSI) গত দুই বছর ধরে উপগ্রহের মাধ্যমে ছবি তুলে দেশের বনাঞ্চলের পরিমাণের হ্রাস-বৃদ্ধি বোঝার চেষ্টা করেছে । FSI-র রিপোর্ট বলছে, দেশে বর্তমানে বনাঞ্চলের পরিমাণ 7 লাখ 12 হাজার 249 বর্গ কিমি । অর্থাৎ বনাঞ্চলের পরিমাণ দেশের মোট এলাকার 21.67 শতাংশ । এটা অবশ্য 2017 সালের হিসেব । তার আগে 2015 সালে বনাঞ্চলের পরিমাণ দেশের মোট এলাকার 21.54 শতাংশ ছিল । 2011 সালে দেশে বনাঞ্চলের পরিমাণ ছিল 6 লাখ 92 হাজার 27 বর্গ কিমি । গত এক দশকে দেশে বনাঞ্চলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে 20 হাজার 222 বর্গ কিমি, অর্থাৎ মাত্র 3 শতাংশ । যদিও ওয়াকিবহাল মহল বলছে, 20 হাজার 222 বর্গ কিমি বনাঞ্চল বৃদ্ধির হিসেবটাও অবশ্যই একটা বড় ব্যাপার । কিন্তু অনেক বিশেষজ্ঞ এই হিসেব নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান । তাঁদের প্রশ্ন, রিপোর্টে যে বনাঞ্চল বৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে সেই বনাঞ্চলের সঠিক চরিত্র আসলে কী ? রিপোর্ট বলছে, দেশে গভীর বনাঞ্চলের পরিমাণ মাত্র 3 লাখ 8 হাজার 472 বর্গ কিমি । আর বাগিচা অরণ্য অর্থাৎ চা ও কফির বাগান, বাঁশঝাড় ইত্যাদির পরিমাণ 3 লাখ 4 হাজার 499 বর্গ কিমি ।

গত দশকে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশে বাণিজ্যিক বনাঞ্চল অর্থাৎ বাগিচা অরণ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে 5.7 শতাংশ । অন্যদিকে প্রকৃত বনাঞ্চল বা গভীর অরণ্যের পরিমাণ কিন্তু কমেছে 3.8 শতাংশ । 2011 সালের সমীক্ষায় দেখা গেছিল যে, দেশে গভীর অরণ্যের পরিমাণ 3 লাখ 20 হাজার 736 বর্গ কিমি । কিন্তু 2017 সালের রিপোর্ট বলছে, সেই পরিমাণ কমে হয়েছে 3 লাখ 8 হাজার 472 বর্গ কিমি । যদি কোনও এলাকার প্রায় 70 শতাংশ জুড়ে গাছপালা থাকে, তবে সাধারণত সেই এলাকাকে গভীর অরণ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয় । বিশেষজ্ঞদের মতে, সেই গভীর অরণ্য বায়ুতে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ অনেকাংশে কমাতে সাহায্য করে । ভারতে সেই ধরনের অরণ্যর পরিমাণ কমে এখন দাঁড়িয়েছে 99 হাজার 278 বর্গ কিমি বা দেশের মোট এলাকার মাত্র 3 শতাংশে । দেশে এই ধরনের গভীর অরণ্যের বৃদ্ধির পরিমাণ মাত্র 1.14 শতাংশ ।

যদিও 2015-17 সালের রিপোর্ট বলছে, দেশে এই ধরনের গভীর অরণ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে 14 শতাংশ । রাজ্যওয়াড়ি হিসেব ধরলে বলা যায় কর্নাটকে 1025 বর্গ কিমি, অন্ধ্রপ্রদেশে 990 বর্গ কিমি, কেরালায় 823 বর্গ কিমি, জম্মু ও কাশ্মীরে 371 বর্গ কিমি ও হিমাচলপ্রদেশে 344 বর্গ কিমি । বৃক্ষ রোপণ ও বনাঞ্চল বৃদ্ধির তালিকায় এই পাঁচটি রাজ্য দেশের মধ্যে প্রথমে রয়েছে । তবে দেশে বনাঞ্চল বৃদ্ধি বা হ্রাসের উপর সমীক্ষায় যে সমস্ত তথ্য উঠে এসেছে তা নিয়ে অনেক বিশেষজ্ঞ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন । কারণ এই সমীক্ষায় অরণ্যে কী ধরনের গাছ রয়েছে, সেখানকার বাস্তুতন্ত্র কেমন ইত্যাদির উপর সেভাবে আলোকপাত করা হয়নি । উপগ্রহের ক্যামেরায় তোলা ছবি দেখে অরণ্যের পরিমাণ বিচার করার পদ্ধতি নিয়েও যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে । সাধারণত উপগ্রহের মাধ্যমে তোলা কোনও এলাকার ছবিতে যদি দেখা যায় যে, সেখানে হেক্টর পিছু 10 শতাংশ জমিতে গাছ রয়েছে, তবে সেই এলাকাকে অরণ্য বলে চিহ্নিত করা হয় । কিন্তু সাধারণত ইউক্যালিপটাস, আম বা নারকেল বাগানের ছবি যদি উপগ্রহের ক্যামেরায় মহাকাশ থেকে তোলা হয়, সেক্ষেত্রেও হেক্টর পিছু 10 বা তার বেশি শতাংশ জমিতে গাছ দেখা যাবে । কিন্তু তার মানে তো এই নয় যে, সেগুলো অরণ্য । তাই উপগ্রহের ছবির মাধ্যমে দেশের অরণ্যের পরিমাণ ও প্রকৃতি বিচার করার যে পদ্ধতি রয়েছে তার সঙ্গে অনেক বিশেষজ্ঞই সহমত নন ।

আশা জাগাচ্ছে CAMPA তহবিল

বন সংরক্ষণ আইন (1980) অনুসারে, সরকার ঠিক করেছিল যে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের যে সমস্ত অঞ্চলে অরণ্য নেই, সেই সমস্ত অঞ্চলে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে বনাঞ্চলের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হবে ৷ পাশাপাশি বিভিন্ন পদ্ধতিতে দেশে অরণ্য ধ্বংস নিয়ন্ত্রণ করা হবে । তারপর দেশে বনাঞ্চলের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য লাখ লাখ একর জমি চিহ্নিত করা হল । বিশ্ব ব্যাঙ্কের রিপোর্ট অনুসারে, 1980 থেকে 2016 সাল পর্যন্ত ভারতের 22 লাখ 23 হাজার একর জমিতে ‘অ-বনাঞ্চল’ জাতীয় বিভিন্ন শিল্প গড়ে উঠেছে । এই জমির পরিমাণ দেশের মোট বনাঞ্চলের 1.2 শতাংশ । বন সংরক্ষণ আইন অনুসারে ‘অ-বনাঞ্চল’ জাতীয় শিল্প গড়ে তুললে, তার তুল্যমূল্য পরিমাণ জমিতে বৃক্ষরোপণ করে দেশের বনাঞ্চল বৃদ্ধি করা উচিত । কিন্তু বাস্তবে ওই পরিমাণ জমিতে বৃক্ষরোপণ করে দেশের বনাঞ্চল বাড়ানো হয়েছিল কি না, তা নিয়ে পরবর্তীতে বন সমীক্ষা সংস্থা (FSI) কোনও সমীক্ষা চালিয়েছে বলে খবর নেই । 2009 সালে গঠিত হল ন্যাশনাল কমপেনসেটরি অ্যাফরেস্টেশন ফান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড প্ল্যানিং অথরিটি (ন্যাশনাল CAMPA) । এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ছিল অরণ্য সংরক্ষণের জন্য সরকারি তহবিলকে কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনা করে তা সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগানো । কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, বন সংরক্ষণের পাশাপাশি এই তহবিলের অর্থ অন্যান্য প্রকল্পেও কাজে লাগানো হচ্ছে । CAMPA তহবিলের অর্থের এই অপব্যবহার বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়েছিল CAG । তারপর 2016 সালে CAMPA-কে আইনি স্বীকৃতি দিয়ে রাজ্যসভায় একটি বিল পাশ হয় । গত বছর সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারগুলিকে নির্দেশ দেয় যে CAMPA-র তহবিলে 54 হাজার কোটি টাকা জমা করতে হবে । তারপরই পরিবেশমন্ত্রী প্রকাশ জাওড়েকর গত বছরের অগাস্টে CAMPA তহবিলে 27টি রাজ্যের জন্য 47 হাজার কোটি টাকা জমা করেন ।

তবে পরিস্থিতি পুরোটাই হতাশাজনক নয় । বনাঞ্চল বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে প্রশংসনীয় কাজ হয়েছে । উদাহরণ হিসেবে অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলাঙ্গানার কথা বলা যেতে পারে । এই দুটি রাজ্যে বৃক্ষরোপণ প্রকল্পে যথেষ্ট ভালো কাজ হয়েছে । বিশেষ ভাবে বলা যেতে পারে তেলাঙ্গানার কথা । এই রাজ্য ‘হরিতা হারাম’ নামে সামাজিক বনসৃজন প্রকল্প সহ বিভিন্ন প্রকল্পে আগামী পাঁচ বছরে 23 কোটি বৃক্ষরোপণ ও তার পরিচর্যার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে । রাজ্যে দুটি গ্রাম পিছু গড়ে একটি করে নার্সারি তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে । এই নার্সারিতে ফুল ও ফলের, ঔষধি ও ছায়াপ্রদানকারী বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে ।


অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার ‘ভনাম-মনাম’ প্রকল্পে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি নিয়েছে । এই প্রকল্পে সেই রাজ্যের সরকার 2029 সালের মধ্যে রাজ্যের মোট এলাকার 50 শতাংশ এলাকাকে বনাঞ্চলে পরিণত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে ।

বনসৃজন প্রকল্পগুলির বাস্তবায়নে অন্যতম বড় সমস্যা হল বিভিন্ন রাজ্যে বন দপ্তরের একাধিক পদ দীর্ঘদিন ধরে খালি পড়ে রয়েছে । পর্যাপ্ত সংখ্যায় কর্মী নিয়োগ হচ্ছে না । এছাড়া, দাবানলের জন্য বনাঞ্চলের অ্যালুভিয়াল মাটির ক্ষতি হচ্ছে । তার জেরে মাটি তার উর্বরতা হারিয়ে ফেলছে । দাবানল প্রতিরোধের অন্যতম কার্যকরী উপায় হল বনাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় পরিখা খনন করা । পাশাপাশি বনাঞ্চলের জমি দখল করে বসতি তৈরি কড়া হাতে দমন করা উচিত । বনাঞ্চলের ভূমি ক্ষয় প্রতিরোধে একাধিক কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন । দেশের ছাত্রসমাজের মধ্যে বনাঞ্চল রক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো দরকার । এজন্য বৃক্ষ রোপণ ও তার পরিচর্যার ভিত্তিতে স্কুল ও কলেজের পরীক্ষা ব্যবস্থায় পড়ুয়াদের জন্য বিশেষ নাম্বার সিস্টেম চালু করা উচিত । প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে বনাঞ্চল রক্ষায় জিও-ট্যাগিং পদ্ধতি চালু করা প্রয়োজন । ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে বাণিজ্যিকভাবে বৃক্ষরোপণ করার জন্য জমির মালিকদের সরকারের তরফে বিশেষ উৎসাহ ভাতা দেওয়া প্রয়োজন ।

কঠিন শিক্ষা দিল অস্ট্রেলিয়ার দাবানল

গত কয়েক মাস ধরে অস্ট্রেলিয়ার বনাঞ্চলের একটা বড় অংশ জুড়ে দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে । এই দাবানলে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে । দেশজুড়ে তীব্র তাপ্রবাহের জেরে এই দাবানল ছড়িয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা । এই ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, পরিবেশের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সবুজের প্রয়োজনীয়তা কতটা । সবুজের অভাবে পরিবেশের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে না থাকলে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে, তার প্রমাণ অস্ট্রেলিয়ার এই দাবানল । এই দাবানলে শুধু অরণ্যের ও সাধারণ মানুষের ক্ষতি হয়নি, সেই সঙ্গে জীবজগতেরও প্রভূত ক্ষতি হয়েছে । বিশ্বে গত একদশকে বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় এক ডিগ্রি সেলসিয়াস । পরিবেশে এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ নির্বিচারে অরণ্য ধ্বংস । আর পরিবেশে এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির জেরে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল বৃষ্টিপাতের অভাবে খরার মুখে পড়ছে । গতবছরের সেপ্টেম্বর থেকে অস্ট্রেলিয়ায় এই বিধ্বংসী দাবানল শুরু হয়েছে । আর তার জেরে সেই দেশের যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা কার্যত অপূরণীয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা । সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে সেই দেশের কুইন্সল্যান্ড ও নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের । তবে শুধু ওই দুই রাজ্যই নয়, প্রায় 80 কিমি বেগে চলা তীব্র তাপপ্রবাহের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেই দেশের একাধিক শহর । তার মধ্যে রয়েছে মেলবোর্ন ও সিডনির মতো গুরুত্বপূর্ণ শহর । এখনও পর্যন্ত সেই দেশের সরকারি তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া দাবানলের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে 10 মিলিয়ন একরের বেশি বনাঞ্চল । মৃত্যু হয়েছে 24 জন নাগরিকের । নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে দাবানলের জেরে পুড়ে গেছে 1300টি বাড়ি । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দিনরাত কাজ করে চলেছে সেই দেশের কয়েক হাজার স্থল সেনা ও বায়ু সেনা । পরিবেশবিদদের আশঙ্কা, অস্ট্রেলিয়ার এই ভয়াবহ দাবানলের জেরে প্রায় 48 বিলিয়ন পশু ও পাখির মৃত্যু হয়েছে । সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা টেডি বিয়ারের মতো দেখতে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম পরিচিত প্রাণী কোয়ালার প্রায় 30 শতাংশ এই দাবানলের জেরে বিপন্ন হয়ে পড়েছে । কোয়ালা দেখতে অনেকটা পান্ডার মতো এবং তারা খুব ধীরে চলাফেরা করে । তাই তীব্র গতিতে ছড়িয়ে পড়া দাবানলের গ্রাস থেকে পালিয়ে রক্ষা পাওয়া তাদের পক্ষে খুবই কঠিন । কোয়ালার পাশাপাশি সেই দেশের ক্যাঙারু, ওলাল্লাবিস, ওমবাট সহ একাধিক প্রজাতির পশু ও পাখিও এই দাবানলের জেরে বিপন্ন । দাবানলের গ্রাস থেকে প্রাণ বাঁচাতে প্রচুর পশু বনাঞ্চল সংলগ্ন একাধিক বাড়িতে ঢুকে আশ্রয় নিয়েছে । পরিবেশবিদরা বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়ন ও পরিবেশ দূষণের জেরে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রার ক্রমাকত বৃদ্ধির জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে । তাই অস্ট্রেলিয়ার এই ঘটনা থেকে বিশ্বের সব দেশকেই শিক্ষা নিতে হবে । যদি আমরা শিক্ষা না নিই, যদি এখনও সতর্ক না হই, তবে প্রকৃতি আগামী দিনে তার গুরুত্ব বোঝাতে আমাদের যে আরও কঠিন শিক্ষা দেবে তা বলাই বাহুল্য ।

বন সমীক্ষা রিপোর্ট

সম্প্রতি জাতীয় বন সমীক্ষা রিপোর্ট (ন্যাশনাল সার্ভে রিপোর্ট 2017-19) প্রকাশিত হয়েছে । কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রী প্রকাশ জাওড়েকর রিপোর্টটি প্রকাশ করেছেন । দেশের বনাঞ্চল রক্ষা করা ও প্রসার ঘটনোর ক্ষেত্রে যে প্রচুর সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেই বিষয়টি রিপোর্টে উঠে এসেছে । 2015 সালের প্যারিস চুক্তি অনুসারে ভারত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তারা বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইড ও অন্যান্য দূষিত পদার্থের নিঃসরণ কমাবে । 2030 সালের মধ্যে সেই পরিমাণ কমিয়ে 250-300 টনে নামিয়ে আনার কথা । সেজন্য দেশের বনাঞ্চল ও সবুজের পরিমাণ বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ভারত সরকার । কিন্তু বন সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, গত দুই বছরে দেশের বনাঞ্চলের পরিমাণ মাত্র 0.56 শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে । যদিও রিপোর্ট প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রী জানিয়েছেন, প্যারিস চুক্তির সমস্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর ভারত । মন্ত্রী একথা বললেও তাঁর প্রকাশিত রিপোর্টেই বলা হয়েছে যে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বনাঞ্চল ধ্বংসের হার উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছেছে । কয়েক দশক ধরেই সরকারের লক্ষ্য দেশের মোট এলাকার 33 শতাংশে যেন বনাঞ্চল থাকে । কিন্তু উপযুক্ত উদ্যোগের অভাবে সেই লক্ষ্য আজও পূরণ করা সম্ভব হয়নি । দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই জাতীয় স্তরে বিভিন্ন পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশে বনাঞ্চলের পরিমাণ বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চলছে । কিন্তু তাতে আদৌ কতটা কাজ হয়েছে, লক্ষ্যমাত্রার কতটা পূরণ করা সম্ভব হয়েছে, তা বাস্তব পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে বিতর্কের বিষয় ।

লক্ষ্যমাত্রা পূরণ দূর-অস্ত

মানবসমাজের জন্য বিশুদ্ধ বায়ু, জল ও খাদ্যের সংস্থান করার পাশাপাশি অরণ্য অন্য যে কাজগুলি করে, তার মধ্যে অন্যতম হল ভূগর্ভের জল সংরক্ষণ, বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণ কমানো এবং সামগ্রিকভাবে জলবায়ুকে রক্ষা করা । তা ছাড়া অরণ্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষে অসংখ্য মানুষে জীবিকা নির্বাহে যে সাহায্য করে সেটা আমরা সবাই জানি । ভারত সরকারের তরফে জাতীয় অরণ্য নীতি ঘোষিত হয়েছিল 1952 সালে । সেই নীতি অনুসারে পরিকল্পনা নেওয়া হয় যে দেশের মোট এলাকার 33 শতাংশে বনাঞ্চল থাকবে । কিন্তু সেই নীতি ঘোষিত হওয়ার পর প্রায় 67 বছর কেটে গেছে । আজও সরকারের তরফে নেওয়া সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি । জাতীয় অরণ্য সমীক্ষা প্রতিষ্ঠান (FSI) গত দুই বছর ধরে উপগ্রহের মাধ্যমে ছবি তুলে দেশের বনাঞ্চলের পরিমাণের হ্রাস-বৃদ্ধি বোঝার চেষ্টা করেছে । FSI-র রিপোর্ট বলছে, দেশে বর্তমানে বনাঞ্চলের পরিমাণ 7 লাখ 12 হাজার 249 বর্গ কিমি । অর্থাৎ বনাঞ্চলের পরিমাণ দেশের মোট এলাকার 21.67 শতাংশ । এটা অবশ্য 2017 সালের হিসেব । তার আগে 2015 সালে বনাঞ্চলের পরিমাণ দেশের মোট এলাকার 21.54 শতাংশ ছিল । 2011 সালে দেশে বনাঞ্চলের পরিমাণ ছিল 6 লাখ 92 হাজার 27 বর্গ কিমি । গত এক দশকে দেশে বনাঞ্চলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে 20 হাজার 222 বর্গ কিমি, অর্থাৎ মাত্র 3 শতাংশ । যদিও ওয়াকিবহাল মহল বলছে, 20 হাজার 222 বর্গ কিমি বনাঞ্চল বৃদ্ধির হিসেবটাও অবশ্যই একটা বড় ব্যাপার । কিন্তু অনেক বিশেষজ্ঞ এই হিসেব নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান । তাঁদের প্রশ্ন, রিপোর্টে যে বনাঞ্চল বৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে সেই বনাঞ্চলের সঠিক চরিত্র আসলে কী ? রিপোর্ট বলছে, দেশে গভীর বনাঞ্চলের পরিমাণ মাত্র 3 লাখ 8 হাজার 472 বর্গ কিমি । আর বাগিচা অরণ্য অর্থাৎ চা ও কফির বাগান, বাঁশঝাড় ইত্যাদির পরিমাণ 3 লাখ 4 হাজার 499 বর্গ কিমি ।

গত দশকে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশে বাণিজ্যিক বনাঞ্চল অর্থাৎ বাগিচা অরণ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে 5.7 শতাংশ । অন্যদিকে প্রকৃত বনাঞ্চল বা গভীর অরণ্যের পরিমাণ কিন্তু কমেছে 3.8 শতাংশ । 2011 সালের সমীক্ষায় দেখা গেছিল যে, দেশে গভীর অরণ্যের পরিমাণ 3 লাখ 20 হাজার 736 বর্গ কিমি । কিন্তু 2017 সালের রিপোর্ট বলছে, সেই পরিমাণ কমে হয়েছে 3 লাখ 8 হাজার 472 বর্গ কিমি । যদি কোনও এলাকার প্রায় 70 শতাংশ জুড়ে গাছপালা থাকে, তবে সাধারণত সেই এলাকাকে গভীর অরণ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয় । বিশেষজ্ঞদের মতে, সেই গভীর অরণ্য বায়ুতে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ অনেকাংশে কমাতে সাহায্য করে । ভারতে সেই ধরনের অরণ্যর পরিমাণ কমে এখন দাঁড়িয়েছে 99 হাজার 278 বর্গ কিমি বা দেশের মোট এলাকার মাত্র 3 শতাংশে । দেশে এই ধরনের গভীর অরণ্যের বৃদ্ধির পরিমাণ মাত্র 1.14 শতাংশ ।

যদিও 2015-17 সালের রিপোর্ট বলছে, দেশে এই ধরনের গভীর অরণ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে 14 শতাংশ । রাজ্যওয়াড়ি হিসেব ধরলে বলা যায় কর্নাটকে 1025 বর্গ কিমি, অন্ধ্রপ্রদেশে 990 বর্গ কিমি, কেরালায় 823 বর্গ কিমি, জম্মু ও কাশ্মীরে 371 বর্গ কিমি ও হিমাচলপ্রদেশে 344 বর্গ কিমি । বৃক্ষ রোপণ ও বনাঞ্চল বৃদ্ধির তালিকায় এই পাঁচটি রাজ্য দেশের মধ্যে প্রথমে রয়েছে । তবে দেশে বনাঞ্চল বৃদ্ধি বা হ্রাসের উপর সমীক্ষায় যে সমস্ত তথ্য উঠে এসেছে তা নিয়ে অনেক বিশেষজ্ঞ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন । কারণ এই সমীক্ষায় অরণ্যে কী ধরনের গাছ রয়েছে, সেখানকার বাস্তুতন্ত্র কেমন ইত্যাদির উপর সেভাবে আলোকপাত করা হয়নি । উপগ্রহের ক্যামেরায় তোলা ছবি দেখে অরণ্যের পরিমাণ বিচার করার পদ্ধতি নিয়েও যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে । সাধারণত উপগ্রহের মাধ্যমে তোলা কোনও এলাকার ছবিতে যদি দেখা যায় যে, সেখানে হেক্টর পিছু 10 শতাংশ জমিতে গাছ রয়েছে, তবে সেই এলাকাকে অরণ্য বলে চিহ্নিত করা হয় । কিন্তু সাধারণত ইউক্যালিপটাস, আম বা নারকেল বাগানের ছবি যদি উপগ্রহের ক্যামেরায় মহাকাশ থেকে তোলা হয়, সেক্ষেত্রেও হেক্টর পিছু 10 বা তার বেশি শতাংশ জমিতে গাছ দেখা যাবে । কিন্তু তার মানে তো এই নয় যে, সেগুলো অরণ্য । তাই উপগ্রহের ছবির মাধ্যমে দেশের অরণ্যের পরিমাণ ও প্রকৃতি বিচার করার যে পদ্ধতি রয়েছে তার সঙ্গে অনেক বিশেষজ্ঞই সহমত নন ।

আশা জাগাচ্ছে CAMPA তহবিল

বন সংরক্ষণ আইন (1980) অনুসারে, সরকার ঠিক করেছিল যে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের যে সমস্ত অঞ্চলে অরণ্য নেই, সেই সমস্ত অঞ্চলে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে বনাঞ্চলের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হবে ৷ পাশাপাশি বিভিন্ন পদ্ধতিতে দেশে অরণ্য ধ্বংস নিয়ন্ত্রণ করা হবে । তারপর দেশে বনাঞ্চলের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য লাখ লাখ একর জমি চিহ্নিত করা হল । বিশ্ব ব্যাঙ্কের রিপোর্ট অনুসারে, 1980 থেকে 2016 সাল পর্যন্ত ভারতের 22 লাখ 23 হাজার একর জমিতে ‘অ-বনাঞ্চল’ জাতীয় বিভিন্ন শিল্প গড়ে উঠেছে । এই জমির পরিমাণ দেশের মোট বনাঞ্চলের 1.2 শতাংশ । বন সংরক্ষণ আইন অনুসারে ‘অ-বনাঞ্চল’ জাতীয় শিল্প গড়ে তুললে, তার তুল্যমূল্য পরিমাণ জমিতে বৃক্ষরোপণ করে দেশের বনাঞ্চল বৃদ্ধি করা উচিত । কিন্তু বাস্তবে ওই পরিমাণ জমিতে বৃক্ষরোপণ করে দেশের বনাঞ্চল বাড়ানো হয়েছিল কি না, তা নিয়ে পরবর্তীতে বন সমীক্ষা সংস্থা (FSI) কোনও সমীক্ষা চালিয়েছে বলে খবর নেই । 2009 সালে গঠিত হল ন্যাশনাল কমপেনসেটরি অ্যাফরেস্টেশন ফান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড প্ল্যানিং অথরিটি (ন্যাশনাল CAMPA) । এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ছিল অরণ্য সংরক্ষণের জন্য সরকারি তহবিলকে কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনা করে তা সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগানো । কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, বন সংরক্ষণের পাশাপাশি এই তহবিলের অর্থ অন্যান্য প্রকল্পেও কাজে লাগানো হচ্ছে । CAMPA তহবিলের অর্থের এই অপব্যবহার বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়েছিল CAG । তারপর 2016 সালে CAMPA-কে আইনি স্বীকৃতি দিয়ে রাজ্যসভায় একটি বিল পাশ হয় । গত বছর সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারগুলিকে নির্দেশ দেয় যে CAMPA-র তহবিলে 54 হাজার কোটি টাকা জমা করতে হবে । তারপরই পরিবেশমন্ত্রী প্রকাশ জাওড়েকর গত বছরের অগাস্টে CAMPA তহবিলে 27টি রাজ্যের জন্য 47 হাজার কোটি টাকা জমা করেন ।

তবে পরিস্থিতি পুরোটাই হতাশাজনক নয় । বনাঞ্চল বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে প্রশংসনীয় কাজ হয়েছে । উদাহরণ হিসেবে অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলাঙ্গানার কথা বলা যেতে পারে । এই দুটি রাজ্যে বৃক্ষরোপণ প্রকল্পে যথেষ্ট ভালো কাজ হয়েছে । বিশেষ ভাবে বলা যেতে পারে তেলাঙ্গানার কথা । এই রাজ্য ‘হরিতা হারাম’ নামে সামাজিক বনসৃজন প্রকল্প সহ বিভিন্ন প্রকল্পে আগামী পাঁচ বছরে 23 কোটি বৃক্ষরোপণ ও তার পরিচর্যার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে । রাজ্যে দুটি গ্রাম পিছু গড়ে একটি করে নার্সারি তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে । এই নার্সারিতে ফুল ও ফলের, ঔষধি ও ছায়াপ্রদানকারী বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে ।


অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার ‘ভনাম-মনাম’ প্রকল্পে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি নিয়েছে । এই প্রকল্পে সেই রাজ্যের সরকার 2029 সালের মধ্যে রাজ্যের মোট এলাকার 50 শতাংশ এলাকাকে বনাঞ্চলে পরিণত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে ।

বনসৃজন প্রকল্পগুলির বাস্তবায়নে অন্যতম বড় সমস্যা হল বিভিন্ন রাজ্যে বন দপ্তরের একাধিক পদ দীর্ঘদিন ধরে খালি পড়ে রয়েছে । পর্যাপ্ত সংখ্যায় কর্মী নিয়োগ হচ্ছে না । এছাড়া, দাবানলের জন্য বনাঞ্চলের অ্যালুভিয়াল মাটির ক্ষতি হচ্ছে । তার জেরে মাটি তার উর্বরতা হারিয়ে ফেলছে । দাবানল প্রতিরোধের অন্যতম কার্যকরী উপায় হল বনাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় পরিখা খনন করা । পাশাপাশি বনাঞ্চলের জমি দখল করে বসতি তৈরি কড়া হাতে দমন করা উচিত । বনাঞ্চলের ভূমি ক্ষয় প্রতিরোধে একাধিক কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন । দেশের ছাত্রসমাজের মধ্যে বনাঞ্চল রক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো দরকার । এজন্য বৃক্ষ রোপণ ও তার পরিচর্যার ভিত্তিতে স্কুল ও কলেজের পরীক্ষা ব্যবস্থায় পড়ুয়াদের জন্য বিশেষ নাম্বার সিস্টেম চালু করা উচিত । প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে বনাঞ্চল রক্ষায় জিও-ট্যাগিং পদ্ধতি চালু করা প্রয়োজন । ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে বাণিজ্যিকভাবে বৃক্ষরোপণ করার জন্য জমির মালিকদের সরকারের তরফে বিশেষ উৎসাহ ভাতা দেওয়া প্রয়োজন ।

কঠিন শিক্ষা দিল অস্ট্রেলিয়ার দাবানল

গত কয়েক মাস ধরে অস্ট্রেলিয়ার বনাঞ্চলের একটা বড় অংশ জুড়ে দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে । এই দাবানলে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে । দেশজুড়ে তীব্র তাপ্রবাহের জেরে এই দাবানল ছড়িয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা । এই ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, পরিবেশের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সবুজের প্রয়োজনীয়তা কতটা । সবুজের অভাবে পরিবেশের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে না থাকলে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে, তার প্রমাণ অস্ট্রেলিয়ার এই দাবানল । এই দাবানলে শুধু অরণ্যের ও সাধারণ মানুষের ক্ষতি হয়নি, সেই সঙ্গে জীবজগতেরও প্রভূত ক্ষতি হয়েছে । বিশ্বে গত একদশকে বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় এক ডিগ্রি সেলসিয়াস । পরিবেশে এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ নির্বিচারে অরণ্য ধ্বংস । আর পরিবেশে এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির জেরে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল বৃষ্টিপাতের অভাবে খরার মুখে পড়ছে । গতবছরের সেপ্টেম্বর থেকে অস্ট্রেলিয়ায় এই বিধ্বংসী দাবানল শুরু হয়েছে । আর তার জেরে সেই দেশের যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা কার্যত অপূরণীয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা । সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে সেই দেশের কুইন্সল্যান্ড ও নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের । তবে শুধু ওই দুই রাজ্যই নয়, প্রায় 80 কিমি বেগে চলা তীব্র তাপপ্রবাহের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেই দেশের একাধিক শহর । তার মধ্যে রয়েছে মেলবোর্ন ও সিডনির মতো গুরুত্বপূর্ণ শহর । এখনও পর্যন্ত সেই দেশের সরকারি তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া দাবানলের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে 10 মিলিয়ন একরের বেশি বনাঞ্চল । মৃত্যু হয়েছে 24 জন নাগরিকের । নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে দাবানলের জেরে পুড়ে গেছে 1300টি বাড়ি । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দিনরাত কাজ করে চলেছে সেই দেশের কয়েক হাজার স্থল সেনা ও বায়ু সেনা । পরিবেশবিদদের আশঙ্কা, অস্ট্রেলিয়ার এই ভয়াবহ দাবানলের জেরে প্রায় 48 বিলিয়ন পশু ও পাখির মৃত্যু হয়েছে । সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা টেডি বিয়ারের মতো দেখতে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম পরিচিত প্রাণী কোয়ালার প্রায় 30 শতাংশ এই দাবানলের জেরে বিপন্ন হয়ে পড়েছে । কোয়ালা দেখতে অনেকটা পান্ডার মতো এবং তারা খুব ধীরে চলাফেরা করে । তাই তীব্র গতিতে ছড়িয়ে পড়া দাবানলের গ্রাস থেকে পালিয়ে রক্ষা পাওয়া তাদের পক্ষে খুবই কঠিন । কোয়ালার পাশাপাশি সেই দেশের ক্যাঙারু, ওলাল্লাবিস, ওমবাট সহ একাধিক প্রজাতির পশু ও পাখিও এই দাবানলের জেরে বিপন্ন । দাবানলের গ্রাস থেকে প্রাণ বাঁচাতে প্রচুর পশু বনাঞ্চল সংলগ্ন একাধিক বাড়িতে ঢুকে আশ্রয় নিয়েছে । পরিবেশবিদরা বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়ন ও পরিবেশ দূষণের জেরে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রার ক্রমাকত বৃদ্ধির জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে । তাই অস্ট্রেলিয়ার এই ঘটনা থেকে বিশ্বের সব দেশকেই শিক্ষা নিতে হবে । যদি আমরা শিক্ষা না নিই, যদি এখনও সতর্ক না হই, তবে প্রকৃতি আগামী দিনে তার গুরুত্ব বোঝাতে আমাদের যে আরও কঠিন শিক্ষা দেবে তা বলাই বাহুল্য ।

New Delhi, Jan 31 (ANI): While speaking to ANI in the national capital on January 30, the Vice Chancellor of Jamia Millia Islamia University spoke on firing in the Jamia area. She said, "It is really unfortunate that during this entire time, a contingent of police stood there and just watched everything happen." "I am proud that my students handled the situation very calmly," Jamia VC added. A man brandished a country-made pistol and opened fire, injuring a student protesting against the Citizenship Amendment Act (CAA) on January 30. The firing took place despite heavy police presence in the area and the man was later overpowered by protesters. The students were heading from Jamia to Mahatma Gandhi's memorial Rajghat.
Last Updated : Jan 31, 2020, 7:40 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.