ঋতুবদল প্রকৃতিতে নতুন জীবনদান করে । মানুষের জীবন সেইসব পরম্পরা ও উৎসবের আবর্তে ঘুরপাক খেতে থাকে, যা উঠে এসেছে তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও ফসলদায়ী বৃষ্টির মতো আবহাওয়ায় বদল থেকে । পশ্চিমী দেশগুলিতে চারটি ঋতু চিহ্নিত করা হলেও, ভারতীয় উপমহাদেশে ঋতু ছয়টি । এই ছয়টির মধ্যে তিনটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ । গ্রীষ্ম একটি বিশেষ ঋতু যা নিরক্ষীয় অঞ্চলকে পরিশুদ্ধ করে, কিন্তু একই সঙ্গে আমাদের ক্লান্তও করে । আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ পি ভি রঙ্গনায়কুলু জানালেন যে কীভাবে আমরা গ্রীষ্মে সুস্থ ও সতেজ থাকতে পারি ।
আয়ুর্বেদ মনে করে, গ্রীষ্মের শরীর খারাপের পিছনে রয়েছে পিত্ত । গ্রীষ্মের উত্তাপে পিত্তের আধিক্য হয়, তাই উপযুক্ত পদক্ষেপ করা উচিত । কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং প্রকৃতি সঙ্কুচিত হয়ে আসার ফলে এইসব সতর্কতার অনেকগুলোই এখন প্রযোজ্য নয় । তাই আমরা ঘরেই এমন পরিবেশ তৈরি করতে পারি । আয়ুর্বেদ বলে, ঝরনার পাশে আরও বেশি সময় কাটাতে । আমরা ঘরেই ক্রস ভেন্টিলেশনের মাধ্যমে আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারি । ঘরের ভেতরে তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রির নিচে রাখতে পারি ।
হিট স্ট্রোক আসলে হাইপোথার্মিয়া ছাড়া কিছুই নয়, যেখানে শরীরের তাপমাত্রা সহনশীলতার উপরে চলে যায় । একে আয়ুর্বেদে উষ্ণতাপ বলা হয় । যখন শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের উপর চলে যায়, তখন মস্তিষ্ক তার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বজায় রাখতে পারে না । মানুষের শরীর ৯৮-৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইটে চলার জন্য তৈরি হয়েছে । শরীরের উষ্ণতাবৃদ্ধি আমাদের স্বাভাবিক শারীরিক ক্রিয়াপ্রক্রিয়ার জন্য বিপজ্জনক । কয়েকজন মানুষ, বিশেষ করে প্রবীণরা এর ঝুঁকির মধ্যে বেশি থাকেন ।
অত্যধিক গরম জায়গায় বেশিক্ষণ থাকা, অতিরিক্ত ব্যায়াম করা, মদ্যপান, রোদ্দুরে ঘোরাঘুরি করার জন্য মস্তিষ্কের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় প্রভাব পড়ে । ঘাম না হওয়া সান স্ট্রোকের অন্যতম কারণ । এক্ষেত্রে নিম্নলিখিত উপসর্গগুলো দেখা যায় ।
- ঘাম না হওয়া
- শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি
- ডেলিরিয়াম, অস্বস্তি, সিজার
- নসিয়া ও বমি
- লাল ত্বক
- শ্বাসপ্রশ্বাস বেড়ে যাওয়া
- মাথার যন্ত্রণা
- হৃদস্পম্দন বেড়ে যাওয়া
- লো ব্লাড প্রেসার
- সংজ্ঞা হারানো
তাই আয়ুর্বেদের পরামর্শ দিচ্ছে আমলকি, গুলঞ্চ, উশীর, চন্দন, নারকেল ইত্যাদি ব্যবহার করতে, যাতে শরীরের ওপর তাপের প্রভাব কমে । সাধারণভাবে যা যা করা উচিত:
- অতিরিক্ত পরিশ্রম করবেন না
- কফি, অ্যালকোহল, এরিয়েটেড পানীয় এড়িয়ে চলুন
- শীতল জায়গায় বিশ্রাম নিন
- বার বার জল খান
- ভিজে কাপড়ে গা মুছুন
- বেলের সরবত খান
- আমলকির রস খান
- ডাবের জল খেতে পারেন
- ঘোলও খাওয়া যেতে পারে
- মাথায় নারকেল তেল লাগান
- তরমুজের মতো ফল খান, যাতে জলের পরিমাণ বেশি
- নোনতা, টক এবং মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলুন
- মিষ্টি এবং তেতো খাবার খান
- খাবার কম খান, জল বেশি খেয়ে হাইড্রেটেড থাকুন
- ফুল ও সুগন্ধ উপভোগ করুন
যখন প্রবল গরম সত্ত্বেও রোগীর ঘাম হয় না, তখন তাদের ঘরের মধ্যেই রাখতে হবে এবং যেন যথাযথ ভেন্টিলেশন থাকে । নিম্নলিখিত ওষুধগুলো শরীর শীতল রাখে:
- চন্দনাদি বটি (দুটি ট্যাবলেট দিনে দুবার)
- মৃতসঞ্জীবনী সুরা 25 মিলিলিটার করে দিনে দুবার।
সর্বাধিক তাপমাত্রা দুপুর দুটোয় এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ভোর পাঁচটায় রেকর্ড করা হয় । তাই সকাল 11টা থেকে বিকেল 4টে পর্যন্ত রোদ্দুরে না বেরোনোই ভাল । যাঁদের বেরোতে হবে, তাঁরা সাদা টুপি বা ছাতা ব্যবহার করুন । শ্রমজীবী মানুষেরা, যাঁরা দৈনিক মজুরির ওপর নির্ভরশীল, তাঁরাই গরমে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন । তাঁদের পক্ষে নুন-চিনির জল খেলে উপকার হবে ।