অযোধ্যা, 13 জানুয়ারি: 22 জানুয়ারি অযোধ্যায় রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠান হবে । এই অনুষ্ঠানে সাত হাজারেরও বেশি অতিথি আসার সম্ভাবনা রয়েছে । এমন পরিস্থিতিতে কোনওরকম বিশৃঙ্খলা যাতে না ঘটে, তাই অযোধ্যায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ । 10 হাজার সিসিটিভি ক্যামেরা, হিউম্যান ইন্টেলিজেন্স, কৃত্তিম বৃদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি দিয়ে শহরের প্রতিটি কোণে নজরদারি করা হচ্ছে । সারাক্ষণ উড়ছে ড্রোন ক্য়ামেরা ৷ এছাড়াও নিরাপত্তার জন্য সশস্ত্র উত্তরপ্রদেশের এটিএস কর্মী এবং 10 হাজারেরও বেশি পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে ।
শহরের প্রতিটি কোণে 10 হাজার পুলিশ মোতায়েন
উত্তরপ্রদেশে পুলিশ জানিয়েছে, 22 জানুয়ারি নিরাপত্তা কর্মীদের দ্বারা মুড়ে ফেলা হবে অযোধ্যা শহরকে । এর জন্য আধাসামরিক বাহিনী, উত্তরপ্রদেশের এটিএস, এসটিএফ ছাড়াও 10 হাজার পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে । আধুনিক অস্ত্র ছাড়াও এই বাহিনীদের অ্যান্টি-ড্রোন প্রযুক্তি এবং দশ হাজার সিসিটিভি ক্যামেরা ও ড্রোনের সাহায্যও দেওয়া হবে । যাতে তারা শহরের প্রতিটি কোণে নজর রাখতে পারে । ডিজিপি সদর দফতর থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, অযোধ্যায় 100টিরও বেশি ডেপুটি এসপি, 325 ইন্সপেক্টর এবং 800 সাব ইন্সপেক্টর মোতায়েন করা হচ্ছে ৷ এছাড়া পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর 10 হাজার কর্মী মোতায়েন করা হবে । স্থল, আকাশ ও জলের দিকে নজর রাখবে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলি । এর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন কমান্ড কন্ট্রোল সিস্টেম ।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে মানব বুদ্ধিমত্তা
অযোধ্যা রেঞ্জের আইজি প্রবীণ কুমার জানান, অযোধ্যায় আসা-যাওয়া প্রত্যেক ব্যক্তির শারীরিক পরীক্ষা করা হচ্ছে । এছাড়া নিরাপত্তার জন্য মানব বুদ্ধিমত্তাও ব্যবহার করছে প্রশাসন । এতে সরায়ু নদীর আশেপাশে বসবাসকারী শহরের ডুবুরি, নাবিক, দোকানদার-সহ স্থানীয় লোকজন মানব বুদ্ধিমত্তার কাজ করছেন । নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মানুষের বুদ্ধি সবচেয়ে কার্যকর । স্থানীয় মানুষ যদি নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সহযোগিতা করে এবং তাদের চারপাশের দিকে নজর রাখে, তাহলে তারাও পুলিশের কর্মী হিসেবে কাজ করে । এমনটাই জানালেন আইজি ৷
আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে নজরদারি
10 হাজারেরও বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা এবং এক হাজার ড্রোন অযোধ্যায় পুরো শহরের উপর নজর রাখবে । এগুলো সবই হবে এআই প্রযুক্তি নির্ভর ক্যামেরা । এআই ক্যামেরার সাহায্যে প্রতিটি সন্দেহজনক কার্যকলাপ, ব্যক্তি, সন্দেহজনক বস্তু সহজেই নজরদারি করা হবে । এছাড়া ড্রোন সরায়ু নদী ও প্রতিটি রাস্তার আশেপাশে ঘোরাফেরা করবে এবং আকাশ থেকে নজর রাখবে । সন্দেহজনক কিছু দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা কর্মীদের সতর্ক করা হবে ।
হোটেল, বাসস্ট্যান্ড এবং রেলস্টেশনে প্রতিটি যাত্রীর যাচাইকরণ
22 জানুয়ারি শুধুমাত্র আমন্ত্রিত ব্যক্তিদের অযোধ্যায় আসতে দেওয়া হবে ৷ তবে তার আগে এখানে আসা প্রতিটি রাম ভক্তকে ভালো করে তল্লাশি করা হচ্ছে । স্থানীয় গোয়েন্দা ও পুলিশ সেখানে গিয়ে পরিচয় যাচাই করে দেখছে । এছাড়া তাদের 17 জানুয়ারির আগে অযোধ্যা ছেড়ে যেতে বলা হচ্ছে ৷ পাশাপাশি নিরাপত্তা কর্মীরা বম্ব স্কোয়াডের সঙ্গে বাসস্ট্যান্ডে সময়ে সময়ে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে । অযোধ্যা রেলস্টেশনে নিরাপত্তার জন্য 150 সিআইএসএফ কর্মী মোতায়েন করা হবে ।
নিরাপত্তা গম্বুজ তৈরি করা হয়েছে
সূত্রের খবর, রাম মন্দির চত্বরে একটি নিরাপত্তা গম্বুজ তৈরি করা হচ্ছে, যা 4.5 কিলোমিটার মধ্যে নজর রাখবে । মিসাইল বা সন্দেহজনক ড্রোনের মতো কোনও সন্দেহজনক বস্তু উড়তে দেখা গেলে তা খুঁজে বের করে নিরাপত্তা আধিকারিকদের সতর্ক করা হবে । শুধু তাই নয়, নিরাপত্তা আধিকারিকদের নির্দেশে এই গম্বুজটি আকাশে সন্দেহভাজন কিছু দেখলে সেটিকে ধ্বংস করবে । সূত্রের খবর, শুধু রাম মন্দির উদ্বোধন উপলক্ষেই নয়, এই গম্বুজটি সর্বদা এখানে থাকবে ।
নেপাল সীমান্ত এলাকায় নজরদারি
রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানের বিষয়ে একটি বিশেষ গোয়েন্দা সেল গঠন করা হয়েছে, যা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নিরাপত্তা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেবে । নিরাপত্তা সংস্থা আইএসআইও বিশেষ সেলের ইনপুটে নেপালের সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় নজর রাখছে । এসব এলাকায় নেপাল থেকে আসা কাঁচা সড়কে টহল বাড়ানো হয়েছে । সন্ত্রাসী ঘটনা মোকাবিলা করার জন্য ইউপি এটিএস টিম নেপালের সমস্ত সীমান্তে 24 ঘণ্টা নজর রাখছে ।
সোশাল মিডিয়ায় নজরদারি
অযোধ্যায় অনুষ্ঠানের জন্য ডিজিপি সদর দফতরে উপস্থিত সোশাল মিডিয়া সেলও 24 ঘণ্টা সক্রিয় রয়েছে । বিভিন্ন সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের পোস্টগুলিতে নজর রাখা হচ্ছে । রাম মন্দির, মসজিদ, বদলা, কোরবানি, বাবরি মসজিদের মতো ট্যাগ শব্দগুলিতে নজর রাখা হচ্ছে । সোশাল মিডিয়া ফোর্স যদি কোনও সন্দেহজনক পোস্ট দেখে তবে তা অবিলম্বে মুছে ফেলা হচ্ছে এবং পোস্ট করা ব্যক্তিকে খুঁজে বের করা হচ্ছে। সোশাল মিডিয়া বাহিনী অযোধ্যা-সহ উত্তরপ্রদেশের যে কোনও জায়গায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিঘ্নিত করতে পারে এমন সমস্ত পোস্টের উপর নজর রাখছে ।
আরও পড়ুন: