কলকাতা, 18 অগস্ট: টোকিয়োর (Tokyo) রেনকোজি মন্দিরে (Renkoji Temple) সংরক্ষিত চিতাভস্মের যত দ্রুত সম্ভব ডিএনএ পরীক্ষা (DNA Test) করানোর পক্ষপাতী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর (Netaji Subhas Chandra Bose) মেয়ে অনিতা বসু পাফ (Anita Bose Pfaff) ৷ তিনি জানিয়েছেন, শীঘ্রই ভারত ও জাপান সরকারের কাছে এই বিষয়ে আবেদন জানাবেন ৷ সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে অনিতা বলেন, তাঁর বাবার জীবন এবং মৃত্যু নিয়ে আজও অনেক রহস্য রয়েছে ৷ এ বার তার উপর থেকে পর্দা ওঠা উচিত ৷
অনিতা চান, স্বাধীনতার 75 বছর পূর্তির (75 Years of Independence) বছরেই নেতাজির চিতাভস্ম ভারতে ফিরিয়ে আনা হোক ৷ তাহলেই দেশনায়ককে যোগ্য সম্মান দেওয়া হবে ৷ কিন্তু, এ নিয়েও বিতর্কের অবকাশ রয়েছে ৷ ওয়াকিবহাল মহলেরই একাংশ মনে করেন, জাপানের মন্দিরে সংরক্ষিত চিতাভস্ম আদতে নেতাজির নয় ৷ তাই আগে এই বিষয়ে সংশয় দূর হওয়া দরকার ৷ চিতাভস্মের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে সেটা সম্ভব ৷
আরও পড়ুন: Netaji daughter নেতাজির চিতাভস্ম দেশে ফিরিয়ে আনার সময় হয়েছে, স্বাধীনতা দিবসে দাবি কন্যার
এই প্রসঙ্গে অনিতা বলেন, "নেতাজির মেয়ে হিসাবে আমি চাই, আমার জীবদ্দশাতেই এই রহস্যের সমাধান হোক ৷ শীঘ্রই আমি ভারত সরকারকে চিতাভস্মের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আবেদন জানাব ৷ তারপর আমাকে কিছুদিন উত্তরের অপেক্ষা করতে হবে ৷ যদি উত্তর পাই, তাহলে তো খুবই ভালো ৷ কিন্তু, যদি কোনও উত্তর না পাই, তাহলে আমি জাপান সরকারের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলব ৷ যদি তারপর সরকারের তরফ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয় তো খুব ভালো ৷ আর যদি তারা এই বিষয়টিতে যুক্ত না হতে চায়, তাহলে আমি আমার মতো করেই পরবর্তী পদক্ষেপ করব ৷"
অনিতা নিজে জার্মানির নাগরিক ৷ তাঁর দাবি, কেন্দ্রে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন সরকার থাকাকালীনই জাপানের মন্দিরে সংরক্ষিত চিতাভস্মের ডিএনএ পরীক্ষা করানোর আবেদন জানিয়েছিলেন তিনি ৷ কিন্তু, সেই সময় ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে কোনও উত্তর দেওয়া হয়নি ৷ এরই প্রেক্ষিতে অনিতা বলেন, "এ বার আর এই বিষয়ে কোনও কালক্ষেপ হোক, সেটা আমি চাই না ৷ করোনা পরিস্থিতির জেরে এমনতিতেই এই উদ্যোগ দু'বছর পিছিয়ে গিয়েছে ৷ তাই আমি ভারত সরকারের পাশাপাশি জাপান সরকারের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছি ৷ প্রাথমিকভাবে জাপান সরকার ভেবেছিল, তারা মাত্র কয়েক মাসের জন্য নেতাজির চিতাভস্ম তাদের জিম্মায় রাখবে ৷ কিন্তু, তারপর 77 বছর কেটে গিয়েছে ৷"
ভারতের রাজনীতিকরা যে নিজেদের স্বার্থে আজও নেতাজিকে ব্যবহার করে চলেছেন, কার্যত সেই অভিযোগও শোনা গিয়েছে অনিতার গলায় ৷ তিনি বলেন, "আমি কারও নাম নিতে চাই না ৷ কিন্তু, এটা সত্যি যে কিছু মানুষ, তাঁদের নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য নেতাজির জীবন এবং তাকে ঘিরে থাকা রহস্য ব্যবহার করছেন ৷ কিন্তু, ভারতের আমজনতার অধিকাংশই আজও নেতাজিকে শ্রদ্ধা করেন ৷ আর এঁদের সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই ৷"
ভারতীয় রাজনীতিকদের এই আচরণ নিয়ে সরাসরি আক্ষেপ প্রকাশ করেছে অনিতা ৷ একইসঙ্গে, নেতাজির মৃত্যু প্রসঙ্গে নিজের অবস্থানও স্পষ্ট করেছেন তিনি ৷ অনিতার কথায়, "আমি উদ্যোগ না নিলে কেউই এই বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করতে চাইছেন না ৷ বিমান দুর্ঘটনায় যে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল, তার প্রমাণ আমার কাছে রয়েছে ৷ তাই আমার কাছে এটা কোনও রহস্য নয় ৷ কিন্তু, আমি চাই, তাঁর চিতাভস্ম তাঁর মাতৃভূমিতে ফিরে আসুক ৷ আমি আমার বাবার জন্য এটা করতে চাই ৷ কিন্তু, এখনও অনেকে মনে করেন, 1945 সালের 18 অগস্ট বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়নি ৷ তাঁদের সন্দেহ ঘোচাতেই জাপানের মন্দিরে রাখা চিতাভস্মের ডিএনএ পরীক্ষা করানো দরকার ৷"