কলকাতা, 3 অগস্ট : পশ্চিমবঙ্গে সরকার গঠনে হ্য়াটট্রিকের পর এবার ত্রিপুরার মাটিতেও শিকড় গেড়ে বসতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের আগে ত্রিপুরায় ঘাসফুল ফোটানোই এখন তৃণমূল নেতৃত্বের অন্যতম লক্ষ্য ৷ কিন্তু প্রথম দিন থেকেই স্পষ্ট, ত্রিপুরার মাটিতে অন্তত বাংলার শাসকদলকে একচুলও জায়গা ছাড়তে নারাজ গেরুয়াশিবির ৷ তাই তৃণমূলকে ঠেকাতে এখন থেকেই মরিয়া প্রয়াস চালাচ্ছে বিজেপি ৷ একদিকে, যখন পশ্চিমবঙ্গে ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে বারবার সরব হচ্ছেন বিজেপি নেতারা, অন্যদিকে ঠিক তখনই ত্রিপুরায় গিয়ে সেই ‘বিজেপির হাতে’ই আক্রান্ত হতে হচ্ছে তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কে (Abhishek Banerjee) ৷ আর এতেই অশনি সঙ্কেত দেখতে পাচ্ছে ওয়াকিবহাল মহল ৷ তবে কি দুই রাজ্য়ের ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে ‘হিংসার বদলে হিংসা’র নীতিই ক্রমশ জোরালো হয়ে উঠছে ?
আরও পড়ুন : Abhishek Banerjee : নাড্ডার কনভয়ে হামলার প্রতিশোধ ? ত্রিপুরায় পৌঁছতেই অভিষেকের গাড়িতে লাঠির ঘা !
সোমবার ত্রিপুরায় অভিষেকের গাড়িতে হামলার যে ঘটনা ঘটেছে, তা যে নিন্দনীয়, তাতে কোনও দ্বিমত থাকতে পারে না ৷ তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, তাদের দল ত্রিপুরার রাজনীতিতে প্রবেশ করায় ভয় পেয়েছে বিজেপি ৷ আর সেই কারণেই এমন হামলা চালানো হয়েছে ৷ ত্রিপুরায় দলের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা ‘খেলা হবে’র স্রষ্টা দেবাংশু ভট্টাচার্য (Debangshu Bhattacharya) এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ত্রিপুরায় আইনের শাসন বলে কিছু নেই ৷ সেখানে জঙ্গলরাজ চলছে ৷ বিরোধীদের রাস্তায় নামার অধিকার পর্যন্ত নেই ৷ সেখানকার মানুষ সরকারের প্রতি বীতশ্রদ্ধ ৷ তাঁরা চাইছেন, এই সরকারের পরিবর্তন আসুক ৷ সোমবার তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর আক্রমণ আসলে বিজেপির ভয়ের বহিঃপ্রকাশ ৷ তারা বুঝতে পেরেছে, ত্রিপুরার মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) দলকে সমর্থন করছেন ৷ আর তাই যেকোনও উপায়ে তৃণমূলকে আটকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে ৷’’
দেবাংশুর এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার ৷ তৃণমূলের ত্রিপুরা দখলের পরিকল্পনাকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘‘স্বপ্ন দেখতে তো পয়সা লাগে না ৷ তৃণমূল স্বপ্ন দেখছে ৷ তা ভাল ৷ কিন্তু বাস্তব বড় কঠিন ৷ তৃণমূল ত্রিপুরায় সরকার গঠনের স্বপ্ন দেখছে ৷ আগে তো সেখানে সংগঠন তৈরি করুক ৷’’ তবে একইসঙ্গে অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের গাড়িতে হামলার ঘটনারও নিন্দা করেছেন জয়প্রকাশ ৷ তাঁর কথায়, ‘‘আমরা হামলার রাজনীতি সমর্থন করি না ৷’’ একইসঙ্গে জয়প্রকাশের প্রশ্ন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতিকে কি ফুল নিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ?’’ প্রসঙ্গত, বাংলায় একুশের বিধানসভা ভোটের আগের দলের প্রচারে এসে ডায়মন্ডহারবারের শিরাকোলে হামলার শিকার হয়েছিল জে পি নাড্ডার কনভয় ৷ জয়প্রকাশ সেই প্রসঙ্গ তোলায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, তবে কি মুখে অন্য কথা বললেও বাস্তবে হামলার পাল্টা হামলা নীতিতেই বিশ্বাস করে বিজেপি ?
আরও পড়ুন : Abhishek on Delhi Rape : দিল্লিতে নাবালিকাকে ‘ধর্ষণ করে খুন’, টুইটে অমিতকে তুলোধনা অভিষেকের
এই প্রসঙ্গে সিপিএম দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য হল, ‘‘যদি প্রকৃতিগতভাবে দেখেন, তাহলে বলতে হয়, বিজেপি আর তৃণমূলের মধ্যে কোনও তফাত নেই ৷ আর সেই কারণেই বিধানসভা ভোটের আগে বাংলায় যে ঘটনা ঘটেছে, আজ ত্রিপুরাতেও সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি হচ্ছে ৷ ত্রিপুরায় বিপ্লব দেব সরকারের বিরুদ্ধে সে রাজ্যের মানুষ এতটাই বিরক্ত যে তাঁরা আবার সেখানে বাম সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন ৷ তৃণমূল সেখানে গিয়ে বিজেপির সঙ্গে লড়াইয়ে নেমেছে ৷ এতে সবথেকে বেশি লাভ বিজেপিরই হবে ৷’’
অন্যদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, ত্রিপুরায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর আক্রমণ সে রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠনকে বাড়তি অক্সিজেন জোগাবে ৷ কিন্তু এর ফলে তৃণমূল সে রাজ্যে সরকার গড়ার মতো শক্তিতে পরিণত হতে পারবে কিনা, তা বলার সময় এখনও আসেনি ৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষক অমলকুমার মুখোপাধ্যায় মনে করেন, ‘‘তৃণমূল নিজেদের শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যেই পশ্চিমবঙ্গের বাইরে বিভিন্ন রাজ্য়ে সংগঠন বাড়ানোর চেষ্টা করছে ৷ কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, এখনই তারা ত্রিপুরায় সরকার গঠনের মতো অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছে ৷ তাছাড়া, ওই রাজ্যে এখনও বাম ও কংগ্রেসের শক্তিশালী সংগঠন রয়েছে ৷ আমার মনে হয় না প্রাক্তন বাম বিধায়ক বা প্রথম সারির বাম নেতারা এখনই তৃণমূলে নাম লেখাবেন ৷’’