হায়দরাবাদ, 1 জানুয়ারি: প্রতিদিন প্রায় 3 কোটি টাকা ৷ আটমাসে মোট 707.25 কোটি টাকা সাইবার অপরাধীদের খপ্পড়ে পরে খুইয়েছেন তেলেঙ্গানার মানুষ । 2023 সালে রাজ্যে ঘটেছে 16 হাজার 339টি সাইবার অপরাধ ৷ তার মধ্যে 15 হাজারই আর্থিক জালিয়াতির ঘটনা ৷ এই পরিস্থিতি চিন্তায় ফেলেছে রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনকে ৷
তেলেঙ্গানার সাইবার সিকিউরিটি ব্যুরোর বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, অনলাইনে বেশি আর্থিক জালিয়াতি করা হচ্ছে ৷ বিশেষ করে পাঁচটি অপরাধমূলক পদ্ধতির মাধ্যমে এটি ঘটছে । দেশে সাইবার অপরাধের 40 শতাংশেরও বেশি হয়েছে শুধুমাত্র তেলেঙ্গানায় ৷ এই পরিসংখ্যান থেকে পরিষ্কার যে সাইবার অপরাধীরা কীভাবে রাজ্যে আক্রমণ করছে ৷ বিশেষজ্ঞরা এই ধরনের জালিয়াতি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিচ্ছেন ৷
কাজ ও বিনিয়োগের নামে জালিয়াতি
প্রতারকরা পার্টটাইম কাজের নামে মেসেজ পাঠায় এবং উত্তরদাতাদের কিছু কাজ দেয় যা তাদের সম্পূর্ণ করতে বলা হয় । তারা বলে যে আপনি যদি তাদের উল্লেখিত ওয়েবসাইটের ভিডিয়োগুলি দেখেন এবং রেট দেন তবে আপনি প্রচুর টাকা পাবেন । আপনি যদি প্রথমে 1000 টাকা বিনিয়োগ করেন এবং কাজটি সম্পূর্ণ করেন, আপনি লাভ হিসাবে 866 টাকা পাবেন ৷ এই টাকার লোভে অনেকে বেশি বিনিয়োগ করে ফেলে । এরপর লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে প্রতারকরা মোবাইল বন্ধ করে পালিয়ে যাচ্ছে । হায়দরাবাদ পুলিশ জানিয়েছে, চিক্কাদাপল্লির বাসিন্দারা এই প্রতারণার শিকার হয়ে 28 লক্ষ টাকা হারিয়েছেন । এর পেছনে চিনাদের পাশাপাশি জঙ্গি গোষ্ঠীর যোগ রয়েছে বলে জানা গিয়েছে । তদন্তে দেখা গিয়েছে, এই প্রতারক গ্যাংগুলি সারা দেশে 712 কোটি টাকা লুঠ করেছে ৷
কুরিয়ারের নামে প্রতারণা
সাইবার অপরাধীরা কুরিয়ার কর্মচারী হিসাবে জাহির করে প্রতারণা করছে । প্রথমে ফোন করে গ্রাহককে জানানো হয় যে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে এবং তবে সেটি শুল্ক বিভাগে হস্তান্তর করা হয়েছে কারণ তাতে মাদক রয়েছে । কিছুক্ষণ পর কেউ কাস্টমস বা পুলিশ সেজে সেই গ্রাহককে আবার ফোন করে বলে যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে । আইনি জটিলতা এড়াতে 1 লক্ষ টাকা দিতে হবে ৷ অনেকক্ষেত্রে ভয়ে গ্রাহকরা সেই টাকা দিয়ে দিচ্ছে ৷ এমনটাই পুলিশ জানিয়েছে ৷
বিজ্ঞাপন দিয়ে জালিয়াতি
কোন গাড়া বিক্রয়ের জন্য ওয়েবসাইটগুলিতে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় । যারা কিনতে আগ্রহী তাদের বলা হয় গাড়িটি বিমানবন্দরের পার্কিং লটে রয়েছে । শুধু পরিবহণ চার্জ পাঠান এবং আপনার পছন্দের জায়গায় অনুযায়ী গাড়ি পৌঁছে যাবে । গ্রাহক সেই টাকা পাঠালে প্রতারকরা সেটি হাতিয়ে নেয় । তদন্তে দেখা গিয়েছে, রাজস্থানের ভরতপুর জেলার প্রতারকরা এই কাজ করছে ৷
কার্ড ব্লকের নামে প্রতারণা
ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড আপগ্রেড করার জন্য ব্যাংকের প্রতিনিধি সেজে ফোন করা হচ্ছে । কার্ড যাতে ব্লক না হয়ে যায় তার জন্য লিংক পাঠায় প্রতারকরা গ্রাহকদের ৷ সেই লিংকে কার্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ, সিভিভি নম্বর এবং অনলাইন ব্যাংকিংয়ের বিবরণ দিলেই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা গায়েব ।
লোন অ্যাপের মাধ্যমে জালিয়াতি
লোন অ্যাপের মাধ্যমে জালিয়াতি করা হচ্ছে । অ্যাপটি ইন্সটল করার জন্য প্রথমে গ্রাহকদের সমস্ত কিছুতে অনুমতিতে দেওয়ার কথা বলা হয় । সেই অনুমতি দিলে লোনের বদলে বেশি সুদ চাওয়া হয় ৷ আপনাকে কয়েক দিনের মধ্যে সেই টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য করে প্রতারকরা । আর টাকা না দিলে তারা ওই ব্যক্তিদের ফোনে থাকা অন্য নম্বরে নগ্ন ছবি পাঠিয়ে দেওয়া হুমকি দেয় । এভাবে প্রতারকরা কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে ৷
আরও পড়ুন: