পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

পর্যটন মানচিত্রে নেই রাসবিহারী বসুর জন্মভিটে সুবলদহ, আক্ষেপ গ্রামবাসীদের - Independence Day 2024

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Aug 15, 2024, 7:57 PM IST

Rash Behari Bose Birth Place: রাসবিহারী বসুর হাত ধরে স্বাধীনতার মুখ দেখেছে আমাদের দেশ ৷ সেই বিপ্লবীর জন্মভিটে সুবলদহ গ্রাম আজ উপেক্ষিত । তার জায়গা হয়নি পর্যটন মানচিত্রে ৷ 78তম স্বাধীনতা দিবসে দাঁড়িয়ে আক্ষেপ গ্রামবাসীদের ৷

Rash Behari Bose Birth Place
বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর জন্মভিটে সুবলদহ গ্রাম (নিজস্ব ছবি)

বর্ধমান, 15 অগস্ট: 1912 সালের 23 ডিসেম্বর । কলকাতা থেকে দিল্লিতে রাজধানী স্থানান্তরের সময় শোভাযাত্রায় অংশ নেন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ । সেই শোভাযাত্রা লক্ষ্য করে বোমা মারে বিপ্লবীরা । বোমার আঘাতে রক্তাক্ত হয়ে আহত হন হার্ডিঞ্জ । সেই বোমা মারার পরিকল্পনা করেছিলেন বিপ্লবী রাসবিহারী বসু । যে রাসবিহারী বসুর হাত ধরে স্বাধীনতার মুখ দেখেছে আমাদের দেশ, সেই বিপ্লবীর জন্মভিটে আজ উপেক্ষিত ।

পর্যটন মানচিত্রে নেই রাসবিহারী বসুর জন্মভিটে সুবলদহ, আক্ষেপ গ্রামবাসীদের (ইটিভি ভারত)

গ্রামবাসী মনসুর রহমান সাহানা বলেন, "খুবই লজ্জাজনক ঘটনা যে রাজবিহারী বসুর নামে যে জমি আছে, সেই জমি তাদের তিন ভাইয়ের নামে ছিল ৷ কিন্তু বর্তমানে অন্য দু'জনের নামে রেকর্ড করা হয়েছে ৷ কীভাবে সেটা হয় ! আমরা গ্রামবাসীরা এই খবরটা জানার পরে একদম ভালো লাগেনি ৷ এই গ্রামটা আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া একটা গ্রাম ৷ বন্যাপ্রবণ এলাকা ৷ এখানে যদি রাসবিহারী বসুর জন্মভূমিকে কেন্দ্র করে একটা পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা যায়, তাহলে একদিকে যেমন দেশের মানচিত্রে সুবলদহ জায়গা করে নেবে ৷ পাশাপাশি মানুষের সেই পর্যটনকে ঘিরে মানুষের আর্থিক সংস্থান তৈরি হবে ৷ এছাড়া আমরা এখানে একটা খেলার মাঠ এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে তোলা দাবি জানিয়েছি ।"

গাছ গাছালি ঘেরা গ্রাম সুবলদহ (নিজস্ব ছবি)

পূর্ব বর্ধমান জেলার সুবলদহ গ্রাম । বর্ধমান শহর পার করে দক্ষিণ দিকে সদরঘাট সেতু ৷ সেই সেতু পার করে দক্ষিণ দামোদরের রায়না ব্লকে সুবলদহ গ্রাম । অন্যদকে শ্যামসুন্দর হয়ে পাষন্ডা পার করে মিলবে বড় বৈনান । সেখান থেকে প্রায় 8 কিলোমিটার গেলেই মিলবে এই সুবলদহ গ্রাম । গাছ গাছালি ঘেরা গ্রাম সুবলদহ । গ্রামের ডান দিক দিয়ে বয়ে গিয়েছে দেবখাল । এটাকে খাল না বলে ছোটখাটো নদীও বলা যেতে পারে । সেই খালকে ডানদিকে রেখে নতুন বাঁধানো রাস্তা ধরেই মিলবে বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর জন্মভিটে ।

কিছুদিন আগে পর্যন্তও সুবলদহ গ্রামে ছিল কাঁচা মাটির রাস্তা । ফি বর্ষাতেও গ্রামবাসীদের দুর্ভোগের অন্ত ছিল না । যাইহোক এখন বর্ষায় কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলেছে গ্রামবাসীদের । চারিদিকে বেশিরভাগ কাঁচা মাটির বাড়ি । একাধিক পুকুরঘাটকে ঘিরে রয়েছে তাল নারকেল বাঁশ-সহ গাছের সারি । সেই দু'পাশের বাঁশ গাছের সারির ভিতর দিয়ে গেলেই মিলবে বিপ্লবীর জন্মভিটে । তবে এখন জন্মভিটে বলতে পড়ে আছে কেবল এক চিলতে জমি । বিপ্লবীর জমিতে রয়েছে অনেক পুরনো একটা শৌচাগার । আর কিছুদিন আগে একটা বিপ্লবীর নামাঙ্কিত ফলক খোদাই করা হয়েছে । গাছগাছালির ভিতর দিয়ে বোঝার উপায় নেই যে সেখানে লুকিয়ে আছে মহান বিপ্লবীর জন্মভিটে ।

দক্ষিণ দামোদরের রায়না ব্লকে সুবলদহ গ্রাম (নিজস্ব ছবি)

গ্রামবাসীদের দাবি, এই গ্রামকে কেন পর্যটন মানচিত্রে তুলে ধরার চেষ্টা করছে না প্রশাসন । যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী থেকে রাজ্য সরকারের একাধিক মন্ত্রী এই মহান বিপ্লবীর জন্মভিটেতে একাধিকবার ছুটে এসেছেন । প্রতিবারই তারা দিয়ে গিয়েছেন একাধিক প্রতিশ্রুতি । এমনকী রাজ্য সরকার বিপ্লবীর জন্মভিটে সংরক্ষণ করার জন্য কয়েক লক্ষ টাকা অর্থ বরাদ্দও করেছেন । সেই টাকা দিয়ে শুধুমাত্র বিপ্লবীর জমি লাগোয়া একটা ছোট পাঁচিল তোলা হয়েছে । আর হয়েছে একটা শৌচাগার । গ্রামবাসীদের আক্ষেপ, যে বিপ্লবীর হাত ধরে দেশ স্বাধীন হল তাঁর জন্মভিটে সংরক্ষণ করার জন্য সরকার কেন কোনও পদক্ষেপ করা হল না ।

স্বাধীনতার 77 বছর পরে গ্রামে শুধুমাত্র একচিলতে পাকা রাস্তা হয়েছে । গ্রামবাসীদের অভিযোগ, তাহলে যে টাকা উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ হল সেই টাকা কোথায় গেল ? কেন এই সুবলদহ গ্রামকে চেনানোর জন্য সরকারিভাবে কেন উদ্যোগ নেওয়া হল না, সেই প্রশ্নও উঠছে ।

বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর নামাঙ্কিত ফলক (নিজস্ব ছবি)

গ্রামবাসী দীপক কুমার দাস বলেন, "অবহেলিত একটা গ্রাম সুবলদহ । কোনোদিন কাউকে দেখলাম না এই গ্রামকে প্রচারের আলোয় আনার জন্য চিন্তাভাবনা করল প্রশাসন । তবুও তৃণমূল সরকার আসার পরে গ্রামে রাস্তা হয়েছে কিছুটা হলেও অন্যান্য কাজ হয়েছে । এই গ্রামকে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা উচিত । এই গ্রামে একটা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে সেটার উন্নতি করা উচিত । এখানে পর্যটন কেন্দ্র হলে সেটাকে কেন্দ্র করে মানুষের কর্মসংস্থান গড়ে উঠবে । অথচ কেন্দ্রের মন্ত্রী থেকে রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী এখানে ছুটে এসেছেন তারা প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন । কিন্তু এই তৃণমূল সরকারের আমলে কিছুটা কাজ হয়েছে । কিন্তু তাতে গ্রামের ছবিটা বদলে যায়নি ।

পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার দাবি গ্রামবাসীদের (নিজস্ব ছবি)

শেখ আসগর আলি বলেন, "রাসবিহারী বসুকে গোটা বিশ্ব চেনে । কিন্তু এখানে কেউ তাঁকে সম্মান জানায়নি । এখানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থেকে রাজ্যের মন্ত্রীরা এসেছেন কিন্তু কাজের কাজ হয়নি । গ্রামের কোনও উন্নতি হয়নি । আজ যে মানুষের হাত ধরে আমাদের দেশ স্বাধীনতার মুখ দেখেছে তিনিই আজ উপেক্ষিত রয়ে গেলেন ।"

পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার বলেন, "বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর জন্মভিটেতে দীর্ঘদিন কেউ নজর দেয়নি । গ্রামে রাস্তাঘাট ছিল না । আমাদের সরকার আসার পরে রাজ্য সরকারের তরফে সেখানে রাস্তাঘাট-সহ একাধিক কাজ হয়েছে । আগামিদিনে ওই জায়গাকে আরও উন্নত করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা আছে ৷"

ABOUT THE AUTHOR

...view details