চন্দ্রকোনা, 9 ফেব্রুয়ারি: শ্বশুরবাড়িতে এসে স্ত্রীকে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলল স্বামী ! এমনই অভিযোগ তুলল মেয়ের বাপের বাড়ির লোকজন। ময়নাতদন্তের পরও দেহ দীর্ঘক্ষণ ধরে বাপের বাড়িতে পড়ে রইল। সৎকার করবে কে? মৃতার বাপেরবাড়ি না শ্বশুরবাড়ি, এই নিয়ে রাত পর্যন্ত চলল টালবাহানা। শনিবার সকালে ঘটনাটি পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা থানার শাওড়া গ্রামের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শাওড়া গ্রামের বাসিন্দা জজাতি পানের বড় মেয়ে পুতুলের সঙ্গে প্রায় 14 বছর আগে বিয়ে হয় আনন্দপুর থানার তেঘরি গ্রামের বাসিন্দা রাজু মণ্ডলের। বিয়ের পর থেকে দু'জনের মধ্য়ে অশান্তি লেগেই থাকত। রাজু তার স্ত্রীকে কোনওমতেই সহ্য করতে পারত না বলে অভিযোগ। মাঝে মাঝেই স্ত্রী পুতুলের ওপর অত্যাচার করত রাজু, এমনটাই দাবি মেয়ের বাপের বাড়ির।
বাপের বাড়ি এসে অস্বাভাবিক মৃত্যু মেয়ের (ইটিভি ভারত) শুক্রবার দুপুরে পুতুলের বাপের বাড়িতে খবর আসে মেয়ের শরীর অসুস্থ। পরে পুতুলের ভাই গিয়ে তেঘরি গ্রাম থেকে তাঁর দিদি ও জামাইবাবুকে নিয়ে আসে শাওড়া গ্রামের বাড়িতে। স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চলছিল পুতুলের চিকিৎসা। শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ পুতুল কিছুটা সুস্থও হয়। রাতে স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া সেরে রাজু এবং পুতুল একই ঘরে ঘুমিয়ে পড়ে। শনিবার সকালে পুতুলকে ডাকাডাকি করলে কোনও সাড়াশব্দ মেলেনি। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসক পুতুলকে (33) মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এই ঘটনায় পুতুলের বাপের বাড়ির সদস্যদের অভিযোগ, পুতুলকে রাতে ঘুমনোর সময় বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলেছে জামাই। রাতে খাওয়া সেরে একই ঘরে শুয়েছিল তারা। কী এমন হল যে হঠাৎ সকালে তাঁদের মেয়ের কোনও সাড়াশব্দ মিলল না! মৃতার পরিবারের অভিযোগ, জামাই রাতে বালিশ চাপা দিয়ে মেয়েকে মেরে ফেলেছে ৷
ঘটনায় গ্রামের বাসিন্দা ও পাড়া প্রতিবেশীদের বক্তব্য, মেয়েটি শ্বশুরবাড়িতে অশান্তি ভোগ করত। জামাই স্ত্রীকে সহ্য করতে পারত না। তাঁদের বক্তব্য, "জামাইয়ের পরকীয়ার কারণে এই ঘটনা। রাজু পরিকল্পনা করে তাঁর অসুস্থ স্ত্রীকে বাপের বাড়িতে নিয়ে এসে মেরে দিয়ে নিজের ঘাড় থেকে দায় সরাতে চেয়েছে ৷"
এই খবর পেয়ে চন্দ্রকোনা থানার পুলিশ দেহ চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঘাটাল হাসপাতালে পাঠায়। মেয়ের বাড়ির অভিযোগের ভিত্তিতে আটক করা হয়েছে পুতুলের স্বামী রাজুকে। ময়নাতদন্তের পর দেহ সৎকার নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয় দুই পরিবারের। মৃতদেহ সৎকার কে করবে, মেয়ের বাপের বাড়ির লোকজন নাকি শ্বশুর বাড়ির লোকজন ? এই নিয়ে দীর্ঘক্ষণ মৃতার দেহ পড়ে থাকে বাড়িতে।
যদিও এ বিষয়ে চন্দ্রকোনার ওসি শুভঙ্কর রায়-এর বক্তব্য, এই ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে মৃতের স্বামীকে আটক করা হয়েছে । দেহকে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। যতক্ষণ না-রিপোর্ট আসে, ততক্ষণ এই বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।