মালদা, 11 ডিসেম্বর: পুরাতন মালদার পর এবার মানিকচক ৷ বিএল অ্যান্ড এলআরও'র পর এবার ঘুষ চাওয়ায় অভিযুক্ত দুই রেভিনিউ ইনস্পেক্টর ৷ এ নিয়ে বিডিওর কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন মানিকচকের এক বাসিন্দা তথা তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতা ৷ ইতিমধ্যে দুই আধিকারিককে শোকজ করেছেন বিডিও ৷ কিন্তু বারবার এমন অভিযোগ ওঠায় সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন, তবে কি ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর ঘুঘুর বাসায় পরিণত ? সেই আশঙ্কা কিন্তু করেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ৷
সম্প্রতি মালদা থানায় পুরাতন মালদার বিএল অ্যান্ড এলআরও'র বিরুদ্ধে 20 লাখ টাকার ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ দায়ের হয়েছে ৷ মোটা টাকার বিনিময়ে জমির রেকর্ড পরিবর্তনের অভিযোগও রয়েছে ওই আধিকারিকের বিরুদ্ধে ৷ তার প্রেক্ষিতে সরকারি কর্তার বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ ৷
তারও আগে হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকের বিএল অ্যান্ড এলআরও'র বিরুদ্ধে জেলাশাসক থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরেও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছিল ৷ এবার মানিকচক ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের দুই রেভিনিউ ইনস্পেক্টর নুর নবি ও হামেদ আলির বিরুদ্ধে বিডিওর কাছে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছেন চৌকি মীরজাদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সাহেবনগর গ্রামের মহম্মদ কাশেম আলি ৷
কাশেম আলি মানিকচকের প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা ৷ তাঁর স্ত্রী সুফিয়া বিহি মানিকচক পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ ৷ বিডিওর কাছে দায়ের করা লিখিত অভিযোগপত্রে কাশেম সাহেব জানিয়েছেন, তাঁর একটি ট্রলি-সহ ট্র্যাক্টর রয়েছে ৷ চৌকি মীরজাদপুর গ্রাম পঞ্চায়েত ও মানিকচক পঞ্চায়েত সমিতির অর্থবরাদ্দে সম্প্রতি তাঁর এলাকায় বেশ কয়েকটি ঢালাই রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে ৷ সেই কাজের জন্য মাটি সরবরাহের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি ৷
রীতিমতো টেন্ডারে অংশ নিয়েই এই কাজের বরাত মিলেছে তাঁর ৷ সরকারি নিয়ম মেনে মাটি কাটার জন্য তিনি গত 5 ডিসেম্বর মানিকচক ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে রয়্যালটির টাকা জমা দিতে যান ৷ নথিপত্র জমা দেওয়ার কিছুক্ষণ পর ওই দফতরের দুই রেভিনিউ ইনস্পেক্টর নুর নবি ও হামিদ আলি তাঁকে দফতরের বাইরে নিয়ে যান ৷ তখনই বাধে ঝামেলা ৷
কাশেম সাহেব বলছেন, "মাটি কাটার জন্য সরকারি অনুমতি পেতে আমি সেদিন রয়্যালটি জমা দিতে যাই ৷ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে নথিপত্র জমা দিয়ে অপেক্ষা করছিলাম ৷ তখনই ভিতর থেকে বেরিয়ে আসেন দুই রেভিনিউ ইনস্পেক্টর ৷ তাঁরা আমাকে দফতরের বাইরে নিয়ে যান ৷ রয়্যালটির অনুমতি দিতে তাঁরা আমার কাছে প্রথমে এক লাখ টাকা দাবি করেন ৷ অনেক টালবাহানার পর শেষ পর্যন্ত তাঁরা 50 হাজার টাকা ঘুষ চান ৷ আমি তাঁদের সাফ জানিয়ে দিই, সরকারি সমস্ত নিয়ম মেনে আমি রয়্যালটির টাকা জমা দিতে এসেছি ৷ কাউকে এক পয়সাও ঘুষ দেব না ৷"
তাঁর আরও অভিযোগ, "ওই কথা শুনেই ওই দুই আধিকারিক আমাকে হুমকি দিতে শুরু করেন ৷ তাঁরা পরিষ্কার জানিয়ে দেন, ঘুষ না দিলে মাটি কাটার অনুমতি মিলবে না ৷ এরপরেই আমি বিডিও এবং মানিকচক পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির কাছে ওই দুই আধিকারিকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করি ৷ গোটা জেলায় ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর ঘুঘুর বাসায় পরিণত হয়েছে ৷ টাকা ছাড়া কোথাও কাজ হয় না বলে অনেক অভিযোগ দায়ের হয়েছে ৷ এবার আমি নিজেই তার সাক্ষী থাকলাম ৷ আমি চাই, এই ঘটনায় প্রশাসন যথাযথ তদন্ত করে উপযুক্ত পদক্ষেপ করুক ৷"
এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে চাননি অভিযুক্ত দুই রেভিনিউ ইনস্পেক্টর ৷ তবে বিডিও অনুপ চক্রবর্তী বলেন, "এই বিষয় নিয়ে অভিযোগ পেয়েছি ৷ গোটা বিষয়টি মানিকচক ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিককে জানানো হয়েছে ৷ তাঁকেই ঘটনার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে ৷ অভিযুক্ত দুই আধিকারিককে শোকজ করা হয়েছে ৷ তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ করা হবে ৷"