কলকাতা, 3 জুলাই: রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা রাজ্যপালের ৷ সাম্প্রতিককালে তো নয়ই, এমনকী স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতে কোনও রাজ্যপাল কোনও মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দেশের কোনও আদালতে এমন মামলা ঠুকেছেন কিনা তা স্মরণ করতে পারছেন না আইনজীবীরা ৷
তবে এদিন এজলাসে দেখা মিলল রাজ্যের দুই প্রাক্তন এজি -জয়ন্ত মিত্র ও সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের ৷ যাঁরা রাজ্যের সঙ্গে মতপার্থক্যের জেরে অ্যাডভোকেট জেনারেল পদে নিজেরাই ইস্তফা দেন ৷ তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের মতো হেভিওয়েট মামলায় লড়তে রাজ্য একেবারে কোমর বেঁধেই ময়দানে নেমেছে ৷ মুখ্যমন্ত্রীর হয়ে সওয়াল-জবাবে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত তো রয়েছেনই, তাঁর সঙ্গে রয়েছেন প্রাক্তন দুই এজি ৷ একই সঙ্গে আছেন গভর্নমেন্ট প্লিডার বা সরকারি আইনজীবী অনির্বাণ রায় ৷
বুধবার এই মামলার শুনানি ছিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি কৃষ্ণা রাওয়ের বেঞ্চে ৷ মামলায় পদ্ধতিগত কিছু ত্রুটির জন্য আগামিকাল, বৃহস্পতিবার তার শুনানি হবে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি ৷ তাই মুখ্যমন্ত্রীর দুঁদে আইজীবীদের কেউ-ই এদিন কিছু বলার সুযোগ পাননি ৷ তাঁরা নিজেদের আইনি যুক্তি নিয়ে অবতীর্ণ হবেন আদালতে ৷ অন্যদিকে, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের হয়ে সওয়াল করবেন অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল ধীরজ ত্রিবেদী ৷ যিনি সিবিআই ও ইডির প্রায় সব মামলায় কেন্দ্রের আইনজীবী হিসেবে সওয়াল করে থাকেন ৷
মুখ্যমন্ত্রীর হয়ে আইনি ময়দানে নেমেছেন প্রাক্তন দুই এজি জয়ন্ত মিত্র ও সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ৷ একসময় তাঁরা দু'জনেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে তাঁদের পদ ছেড়েছিলেন এবং তা নিজেরাই ঘোষণা করেছিলেন ৷ কলকাতা হাইকোর্টের প্রবীণ আইনজীবী জয়ন্ত মিত্রকে এর আগেও বিভিন্ন মামলায় রাজ্যের হয়ে সওয়াল করতে দেখা গিয়েছে ৷ তিনি তাঁর আইনি জ্ঞান ও দক্ষতার কারণে বিচারপতিদের কাছ সমীহের পাত্র ৷
2014 সালের 16 ডিসেম্বর থেকে 2017 সালের 7 ফেব্রুয়ারি- 3 বছরের কিছু বেশি সময়কাল রাজ্যের এজি পদ সামলেছেন জয়ন্ত মিত্র । তখন রাজ্যে প্রথম তৃণমূল সরকারের জমানা ৷ মমতা সরকারের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে 2017 সালে তৎকালীন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কাছে ইস্তফা দিয়েছিলেন জয়ন্ত মিত্র ।
অন্যদিকে সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, যিনি গোপাল মুখোপাধ্যায় নামে বেশি পরিচিত তিনি রাজ্যের এজি পদে যোগ দেন 2021-এর 14 সেপ্টেম্বর ৷ মমতা তৃতীয় বারের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরপরই ৷ কলকাতা হাইকোর্টে ভোট পরবর্তী হিংসার মামলাকে কেন্দ্র করে তৎকালীন এজি কিশোর দত্ত আদালতে রাজ্যের ভাবমূর্তিকে তেমন ধরে রাখতে পারছিলেন না ৷ ঠিক সে সময় পদে আসেন সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ৷
একের পর এক মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশে বেসামাল রাজ্য ৷ তড়িঘড়ি ব্যারিস্টার সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে আসা হয়েছিল এজি পদে ৷ পরে 2023 সালের 10 নভেম্বর বিদেশে থাকাকালীনই রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের কাছে ইস্তফাপত্র পাঠিয়েছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ছেলে সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ৷ উল্লেখ্য তাঁর বাবা সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় প্রাক্তন বিজেপি রাজ্য সভাপতি অটল বিহারি বাজপেয়ির আমলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন ৷ তিনি ইস্তফা দিতেই এজি পদে এসেছিলেন কিশোর দত্ত ৷
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পুত্র সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের আইনি দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন না কেউ ৷ তার জেরেই আইনজীবী মহলে সমীহ আদায় করে নেন ৷ এদিন রাজ্যপালের দায়ের করা মামলা নিয়ে তিনিও নিতান্ত গল্পের ছলেই জানান, এই ধরনের মামলা সাধারণত টেকে না ৷ আইনি দিক থেকে এই ধরনের মামলার ভবিষ্যত নিয়েই তিনি সন্দিহান। তবে আপাতত আদালতে কী উঠে আসে সেদিকে তাঁদের লক্ষ থাকবে ৷
পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে রাজ্য বনাম রাজ্যপাল সংঘাত নতুন কিছু নয় ৷ তার জল যে আদালতে গড়াতে পারে, তা তাবড় আইনজীবীদেরও ভাবনার অতীত ৷ এবার মমতা সরকারের সঙ্গে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের লড়াইয়ের সূত্রপাত শপথ গ্রহণকে কেন্দ্র করে ৷ দুই নবনির্বাচিত তৃণমূল বিধায়ক বিধানসভায় শপথ নেবেন বলে অনড় ৷ বরানগরের সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, ভগবানগোলা রেয়াত খান বিধানসভায় ধরনা দিচ্ছেন ৷ এদিকে তাঁরা কেন রাজভবনে যাচ্ছেন না, সেই প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "রাজভবনে যে কীর্তি-কেলেঙ্কারি চলছে, তাতে মেয়েরা রাজভবনে যেতে ভয় পাচ্ছে ৷ আমাকে কমপ্লেন করেছে ।’’ উল্লেখ্য গত 2 মে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছিল ৷ সেই ঘটনাতেই আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন