নৈহাটি, 4 ফেব্রুয়ারি: চারদিন পার ! এখনও ফেরার নৈহাটির তৃণমূল কর্মী সন্তোষ যাদব খুনে মূল অভিযুক্ত রাজেশ সাউ । এফআইআরে নাম থাকা বাকি অভিযুক্তদেরও এখনও ধরতে পারেনি পুলিশ । ফলে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে । বিরোধীদের দাবি, খুনের ঘটনার পর কমিশনার বদল হয়েছে ঠিকই । কিন্তু, পুলিশের ভূমিকার কোনও পরিবর্তন হয়নি । পুলিশি ব্যর্থতার জন্যই এখনও অধরা মূল অভিযুক্ত-সহ বাকি দুষ্কৃতীরা ।
যদিও তেমনটা মনে করছেন না শাসকদলের নেতারা । তাঁদের পালটা দাবি, পুলিশ সঠিকভাবেই তদন্ত করছে । এক্ষেত্রে পুলিশের কোনও ব্যর্থতা নেই । আশা করা যায়, দ্রুত তাঁরা ফেরার অভিযুক্তদের ধরতে পারবে । ফলে এই দাবি এবং পালটা দাবি ঘিরে রীতিমতো সরগরম হয়ে উঠেছে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল ।
তৃণমূল কর্মী খুনে অর্জুনকে দায়ী করে ভাটপাড়ায় পোস্টার (ইটিভি ভারত)
তারমধ্যেই নৈহাটি-কাণ্ডে আরও একটি হাড়হিম করা সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে এসেছে । যেখানে দেখা যাচ্ছে, একটি টোটোর পিছনে ধাওয়া করছে দু’টি বাইকে মোট ছ'জন ব্যক্তি । কিছুটা দূরে রাস্তার উপর টোটো’টি থামিয়ে একপ্রকার জোর করেই টোটো থেকে নামানো হয় তৃণমূল কর্মী সন্তোষ যাদবকে । এই দৃশ্য দেখে আচমকা টোটোর ভিতরে থাকা এক যাত্রী ভয়ে দৌড়ে পালিয়ে যান । টোটোচালকও বাকি যাত্রীদের নিয়ে পিছন দিকে ফিরে যেতে দেরি করেননি । এরপরই দেখা যায় সেই ভয়াবহ দৃশ্য । যেখানে ইট দিয়ে অনবরত থেঁতলে খুন করা হচ্ছে ওই তৃণমূল কর্মীকে ।
এর আগের সিসিটিভি ফুটেজও দেখা গিয়েছিল, খুনের ঘটনার সময় এক মহিলা এগিয়ে এসে বাঁচানোর চেষ্টা করলে দুষ্কৃতীদের হুমকির মুখে ফিরে যেতে হয় তাঁকে । দলীয় কর্মী খুনে প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিং’কে দায়ী করে আসরে নামেন বর্তমান সাংসদ পার্থ ভৌমিক থেকে শুরু করে নৈহাটির বিধায়ক সনৎ দে'রা । পালটা জবাব দেন অর্জুনও । তারই মধ্যে নিজের খাসতালুক ভাটপাড়ায় এবার পোস্টার পড়ল প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিংয়ের নামে ।
অর্জুনকে দায়ী করে ভাটপাড়ায় পোস্টার (ইটিভি ভারত)
মঙ্গলবার ভাটপাড়া পুরসভার ঠিক সামনে পড়ে বেশ কিছু পোস্টার । সেই পোস্টারে লেখা, ‘‘তৃণমূল কর্মী সন্তোষ যাদব খুন হল কেন ? অর্জুন সিং জবাব চাই, জবাব দাও !’’ নিচে লেখা ভাটপাড়া বিধানসভা তৃণমূল কংগ্রেস । এর আগে নৈহাটিতেও দেখা গিয়েছিল অর্জুনের নামে এই ধরণের পোস্টার । ভাটপাড়া পুর এলাকায় ফের একই পোস্টার পড়ায় শোরগোল পড়ে যায় । যদিও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ গেরুয়া শিবির ।
এনিয়ে অর্জুন সিংয়ের কোনও প্রতিক্রিয়া না-মিললেও মুখ খুলেছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতা প্রিয়াঙ্কু পাণ্ডে । তিনি বলেন, ‘‘ওরা যত পোস্টার লাগাবে, তত বিজেপি শক্তিশালী হবে । এভাবে অর্জুন সিংকে বদনাম করা যাবে না । সিসিটিভি ফুটেজেই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, কারা এই খুনের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত । তারপরও পরিকল্পিতভাবে অর্জুন সিংয়ের নাম টেনে আনা হচ্ছে । ব্যারাকপুরের সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে পার্থ ভৌমিক গোটা শিল্পাঞ্চলে যে সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে, সেই ছবিও আমরা পোস্টার আকারে তুলে ধরব । তার জন্য বরং তৈরি থাকুক ওঁরা । আসল দোষীদের না-ধরে প্রাক্তন সংসদ অর্জুন সিং ও বিজেপি নেতা-কর্মীদের ফাঁসাতে চাইছে পার্থ ভৌমিক’রা । এসব তারই বহিঃপ্রকাশ ।’’
পালটা জবাব দিয়েছেন ভাটপাড়া শহর তৃণমূলের সভাপতি ও পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান দেবজ্যোতি ঘোষ । তাঁর কথায়, ‘‘এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মূল নায়ক অর্জুন সিং । তাঁর চক্রান্ত ছাড়া এতবড় অপরাধ সংগঠিত হতে পারে না । হিংসার পালটা হিংসা আমরা চাই না । দলও সেটা অনুমোদন করে না । তাই আমরা অর্জুনের মুখোশ জনসাধারণের সামনে তুলে ধরতে এই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছি । পুলিশ হয়তো এখনও অবধি সেভাবে এই খুনে সাফল্য পায়নি । আমরা আশা করছি, প্রত্যেক অপরাধীই দ্রুত ধরা পড়বে । পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে ।’’
ব্যারাকপুর কমিশনারেট সূত্রে জানা গিয়েছে, এই খুনের ঘটনায় অক্ষয় গন্ড গ্রেফতার হতেই মূল অভিযুক্ত রাজেশ সাউ-সহ বাকি অপরাধীরা ভিন রাজ্যে গা ঢাকা দিয়েছে । সেই কারণে বিহারে রাজ্যে পুলিশের একটি টিম ইতিমধ্যে পাঠানো হয়েছে বলে খবর কমিশনারেট সূত্রে ।