নয়াদিল্লি, 7 নভেম্বর: আরজি করে তরুণী পড়ুয়া চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের মামলার বিচার প্রক্রিয়া বাংলার বাইরে স্থানান্তরিত করার আবেদন খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট ৷ মঙ্গল ও বুধবার পিছিয়ে যাওয়ার পর বৃহস্পতিবার এই মামলার সপ্তম শুনানি হল দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চে ৷ তাঁর বেঞ্চে সম্ভবত এই স্বতঃপ্রণোদিত মামলার এদিনই শেষ শুনানি হল ৷ কারণ তিনি 10 নভেম্বর অবসর গ্রহণ করছেন ৷ এরপর নতুন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানি হতে পারে বলে সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে খবর। চার সপ্তাহ পর এই মামলার শুনানি হবে ৷
এদিন সিবিআই মামলা সংক্রান্ত ষষ্ঠ স্টেটাস রিপোর্ট জমা দেয় আদালতে ৷ তদন্ত চলছে বলে এনিয়ে প্রকাশ্য আদালতে কিছু বলতে রাজি হয়নি বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা, বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ ৷ শীর্ষ আদালত উল্লেখ করে, গত 4 নভেম্বর কলকাতার একটি আদালতেই ধর্ষণ ও খুনে মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে ৷ 11 নভেম্বর থেকে মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে ৷
বাংলার বাইরে আরজি কর মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় 'না'
এদিন শুনানির সময় এক আইনজীবী আদালতে আরজি করে নির্যাতিতার ধর্ষণ-খুনের মামলা রাজ্যের বাইরে স্থানান্তরের পক্ষে জোরদার সওয়াল করেন ৷ বিগত 90 দিনে তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই কিছুই করতে পারেনি বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি ৷ তাঁর আরও দাবি, রাজ্য যা করেছে শুধু তাতে সিলমোহর দিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা্ ৷ আইনজীবীর বক্তব্যের উত্তরে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় জানান, ট্রায়াল কোর্টের বিচারক এই তদন্ত নিয়ে নির্দেশ তিনি দিতেই পারেন ৷ তাঁর যথেষ্ট ক্ষমতা আছে ৷ সেই ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করবে না আদালত।
আরেকজন আইনজীবী সওয়াল করেন, রাজ্যের বিশৃঙ্খা চলছে ৷ এই পরিস্থিতিতে এই মামলার শুনানি এবং বিচার প্রক্রিয়া পশ্চিমবঙ্গের বাইরে কোথাও সরানো হোক ৷ তাঁর জবাবে দেশের প্রধান বিচারপতি মণিপুরের প্রসঙ্গে তুলে জানান, মণিপুরের অনেক মামলা সেখান থেকে অসমে স্থানান্তরিত করা হয়েছে ৷ এরপরই বেঞ্চ বলে, "কিন্তু আমরা এক্ষেত্রে তা করব না ৷ বিচার হোক ৷ মামলা অন্যত্র সরানো হলে তার অর্থ হবে যে আমরা আমাদেরই বিচার ব্যবস্থার উপর ভরসা রাখছি না ৷" রাজ্য সরকারের তরফে প্রবীণ আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী জানান, এই বিচার প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে ৷
এদিন আরজি কর হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতির প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন এক আইনজীবী ৷ দেশের প্রধান বিচারপতি বলেন, "সিবিআই যে স্টেটার রিপোর্ট আদালতে জমা দিয়েছে, তাতে আর্থিক দুর্নীতির কথা বলা আছে ৷ আমরা এই ইস্যু নিয়ে কিছু বলতে চাই না ৷ তাতে হয়তো তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে ৷ নিশ্চিন্তে থাকুন, সিবিআই আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত করছে ৷"
শুনানিতে সিবিআই-কে স্ব-বিরোধী বলে উল্লেখ করেন এক আইনজীবী ৷ তিনি দাবি করেন, সিবিআই কয়েকটি জায়গায় নতুন করে চার্জ গঠনের উপর জোর দিয়েছে ৷ এতে দেশের প্রধান বিচারপতি বলেন, " প্রথমে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়া দরকার ৷" আরেক আইনজীবী জানান, আরজি করের চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের মামলার তদন্ত করছে সিবিআই ৷ কিন্তু পুলিশ থেকে শুরু করে বিচার ব্যবস্থার উপর পশ্চিমবঙ্গের মানুষ আস্থা রাখতে পারছে না ৷ সিবিআই তদন্তে নিরাশ বঙ্গবাসী ৷ তাঁকে কড়া ভর্ৎসনা করে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় তাঁকে প্রশ্ন করেন, "আপনি আদালতে কার জন্য সওয়াল করতে এসেছেন ? এধরনের ভাসা ভাসা মন্তব্য করবেন না ৷ আদালত কি ক্যান্টিনের গল্পগুজবের জায়গা ?"
চিকিৎসক ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে প্রোটোকল ঠিক করতে জাতীয় টাস্ক ফোর্স (এনটিএ) গঠন করেছে সুপ্রিম কোর্ট ৷ এদিন শীর্ষ আদালতে একটি রিপোর্ট পেশ করে এনটিএফ ৷ শীর্ষ আদালত সেই রিপোর্ট সব রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে পাঠানোর নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট ৷
গত 9 অগস্ট কলকাতার আরজি কর হাসপাতালের চারতলায় সেমিনার হলে এক তরুণী পড়ুয়া চিকিৎসকের মৃতদেহ উদ্ধার হয় ৷ এই ঘটনাটি প্রথমে কলকাতা পুলিশের হাতে থাকলেও 13 অগস্ট কলকাতা হাইকোর্ট এই ঘটনার তদন্তভার তুলে দেয় সিবিআই-এর উপর ৷ সেপেটম্বর মাসে এই মামলাটি স্বতঃপ্রণোদিতভাবে গ্রহণ করে দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের বেঞ্চ ৷ তারপর থেকে বিভিন্ন সময়ে শুনানি হয়েছে।