নামখানা, 17 অক্টোবর: নামখানার নারায়ণগঞ্জের বঙ্কিমনগরে নদীর বাঁধ ভেঙে বিপত্তি। গ্রামে ঢুকছে জল, প্লাবিত বহু এলাকা। জলের তলায় চাষের জমি, অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন উঁচু জায়গায়। কোটালের জেরে জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় বাঁধের একাধিক জায়গায় ফাটল ৷ বৃহস্পতিবার এলাকার বাঁধ পরিদর্শনে গিয়ে স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে পড়লেন সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা।
মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সেচ দফতরের আধিকারিক, নামখানা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অভিষেক দাস, ওসি বিভাস সরকার-সহ জনপ্রতিনিধিরা। ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ 24 পরগনার নামখানার নারায়ণগঞ্জে। এই উপকূলের মাটির বাঁধ দীর্ঘদিন ধরে বেহাল। কোটালের ফলে একাধিক এলাকা নদীতে তলিয়ে যায়। বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই নদী বাঁধের সংস্কারের কাজ চলছিল। এই মেরামতির মধ্যেই গত মঙ্গলবার বিকেলে চালক-সহ বুলডোজার নদীতে তলিয়ে যায়।
গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে মন্ত্রী (ইটিভি ভারত)
নামখানার নারায়ণগঞ্জে বারেবারে নদী বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় গোটা এলাকা এমনকি সবেমাত্র সমাপ্ত হওয়া দুর্গাপুজোর আগেই প্রায় 50 মিটার নদী বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এলাকার মানুষজন। বিষয়টি প্রশাসনিক তৎপরতার সঙ্গে কাজ শুরু হয় ৷ কিন্তু , কাজ করতে গিয়ে একটি জেসিবিও ভাঙ্গনের কবলে পড়ে নদী গর্ভে চলে যায়। বৃহস্পতিবার দিন সকালবেলা সেই নদী বাঁধ পরিদর্শনে এসেই এলাকার মানুষের বিক্ষোভের মুখে পড়েন সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা ৷ পুলিশ ও প্রশাসনের সামনেই মন্ত্রীকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখান এলাকার মানুষ।
প্রতি বছরই বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় সম্মুখীন হতে হয় দক্ষিণ 24 পরগনার সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকা নামখানা। কখনও নদী ভাঙন এবং কখনও জলোচ্ছ্বাসে বিপদে পড়েন এলাকার মানুষ। মাটির নদী বাঁধ হওয়ায় প্রতি বছরই কোনও না কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় কিংবা কোটালের জলের তোরে ভেঙে যায় এই বাঁধ। সেই মাটির নদী-বাঁধ ফের নির্মাণ করার জন্য গ্রামবাসীদের জমি অধিগ্রহণ করে সেচ দফতর ৷ কিন্তু গ্রামবাসীদের প্রশ্ন, বারবার কেন অস্থায়ী বাঁধ, কেন স্থায়ী কংক্রিটে নদী বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে না ?
এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী। মন্ত্রীর কথাতেও তাঁরা সন্তুষ্ট হননি। কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে ৷ এই বিষয় সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী জানান, গ্রামবাসীদের কথা মাথায় রেখে স্থায়ী কংক্রিটের নদী বাঁধ নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যেই সেচ দফতরের কাছে আমি প্রস্তাব পাঠিয়েছি ৷ খুব শীঘ্রই এই এলাকায় স্থায়ী কংক্রিটের নদী বাঁধ নির্মাণ করা হবে। আপাতত এলাকায় নদী ভাঙন রোধ করার জন্য অস্থায়ীভাবে নদী বাঁধটি মেরামত করার কাজ করা হচ্ছে ৷
এলাকার মানুষের দাবি একাধিকবার এই এলাকায় নদী বাঁধ ভাঙলেও প্রশাসন সঠিকভাবে নদী বাঁধ মেরামত করে না। যে কারণে বারে বারে নদী বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় তাদের চাষের জমি। এমনকি এই ভাঙ্গনের কবলে পড়ে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে ওই এলাকার। স্থায়ী নদী বাঁধ না-করতে পারলেও বোল্ডার ফেলে কাজ করলে বারে বারে এই নদী বাঁধ ভাঙত না, এমনটাই দাবি গ্রামবাসীদের। মন্ত্রী সামনেই নদী বাঁধ পুনঃনির্মাণের কাজ থামিয়ে দেন এলাকাবাসীরা। তাঁদের দাবি, স্থায়ী কংক্রিটের নদী বাঁধ না-হলে অস্থায়ী বাঁধের জন্য তারা তাদের চাষ-জমি আর দিতে রাজি নয়।