বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশে প্রবেশের সময় ধরা পড়েন 92 বছরের বৃদ্ধা। মানবিকতার খাতিরে তাঁকে মুক্তি দিতে রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ ছেলে ৷
রায়গঞ্জ, 16 ডিসেম্বর: মাআদালতের নির্দেশে বর্তমানে রায়গঞ্জ সংশোধনাগারে রয়েছেন। মানবিকতার খাতিরে জীবনের শেষ ক'টা দিন নিজের বাড়িতে মা যদি থাকতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়৷ এমনই আশা নিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে লিখিত আবেদন করলেন ছেলে সুরেন্দ্র বর্মন। তিনি বৃদ্ধা আদো বর্মনের ছেলে ৷
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অশান্তির জেরে প্রাণ বাঁচাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সীমান্তের কাঁটাতার টপকে এপারে আসার সময় বিএসএফের হাতে ধরা পড়েন 92 বছরের এক বৃদ্ধা। নাম তাঁর আদো বর্মন ৷ মানবিকতার খাতিরে জীবনের শেষ ক'টা দিন নিজের বাড়ি উত্তর দিনাজপুর জেলার হেমতাবাদ ব্লকের মিঠাবাড়িতে রাখার জন্য রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হবেন বলে জানান বৃদ্ধার ছেলে সুরেন্দ্র বর্মন। সোমবার এই আর্জি জানিয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের কাছে চিঠি পাঠাচ্ছেন ৷
মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের কাছে চিঠি পাঠাচ্ছেন সুরেন্দ্রবাবু (ইটিভি ভারত)
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, 11 ডিসেম্বর গভীর রাতে 92 বছরের ওই বৃদ্ধা ধরা পড়েন। কালিয়াগঞ্জ থানার পুলিশ পরদিন তাঁকে রায়গঞ্জ জেলা আদালতে পেশ করে। বিদেশি নাগরিকদের জন্য তৈরি আইনের 14এ ধারায় 14 দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত।
92 বছরের ওই বৃদ্ধা সীমান্তে ধরা পড়েন (নিজস্ব ছবি)
ঘটনাক্রম-
হেমতাবাদ ব্লকের ভরতপুর এলাকার মিঠাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা সুরেন্দ্র বর্মন বলেন, "আমাদের পৈতৃক ভিটা বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার দেওজা গোসাইপুর গ্রামে। সেখানেই আমার জন্ম। 1999 সালে আমি ও আমার দাদা বাংলাদেশ থেকে এপারে চলে আসি। আমার দাদা বর্তমানে কালিয়াগঞ্জ ব্লকের নিশ্চিন্তপুরে থাকেন। 2005 সাল নাগাদ মাকে এনে আমার বাড়িতেই রাখি। মা আসার পর তাঁর বৈধ নথিপত্র তৈরি করার জন্য অনেক চেষ্টা করি। কিন্তু মায়ের বয়স বেশি থাকায় তা করা সম্ভব হয়নি।"
তাঁর কথায়, "বর্তমানে আমি ইসকনের প্রচারক। সম্প্রতি, বাংলাদেশের পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে পড়ে ৷ সপ্তাহ দু'য়েক আগে আমাদের বাংলাদেশের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। বাংলাদেশ থেকে এখানে নিয়ে আসার জন্য প্রতিদিনই মা আমায় ফোন করেন ৷
দিন দশেক আগে আমার দিদি ফোন করে জানায় মা-কে এদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। 11 ডিসেম্বর গভীর রাতে অচেনা একটা নম্বর থেকে আমার কাছে ফোন আসে। ফোনে আমাকে জানানো হয়, আমার মা সীমান্ত টপকে এপারে আসার সময় কালিয়াগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফের হাতে ধরা পড়েছেন। পরদিন সকালে আমি মায়ের খোঁজ পাই। এদেশে দীর্ঘদিন থাকলেও কোনও বৈধ নথিপত্র দেখাতে না-পারায় বিএসএফ ও পুলিশ মাকে ছাড়তে অস্বীকার করে।
সুরেন্দ্র বর্মন আরও জানান, আদালতে পেশ করার সময় মায়ের সঙ্গে সামান্য কথা বলার সুযোগ পান তিনি। মা তাঁকে বলেন, ওপারে থাকলে হামলাকারীদের হাতে প্রাণ যেত ৷ জীবন বাঁচাতে এপারে এসে জেলে থেকেই কি তাঁর মৃত্যু হবে? মা আর কতদিনই বাঁচবেন! তাই মানবিকতার খাতিরে জীবনের শেষ ক'টা দিন নিজের বাড়িতে যদি তিনি থাকতে পারেন, এই আশাতেই রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন করবেন বলে জানান সুরেন্দ্রবাবু ৷