পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

সেরিব্রাল পালসি ! কঠিন লড়াইয়ে অনুপ্রেরণা জোগাবে আসানসোলের অমৃতা - Cerebral Palsy

Cerebral Palsy Patient Story: 'নাই নাই ভয়, হবে হবে জয় ৷' সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত আসানসোলের তরুণীর বাস্তব জীবনের গল্প ভয়কে জয় করারই অনুপ্রেরণা ৷ কঠিন জীবনে লড়াই করার মনের জোর পেতে সাহায্য করবে এই প্রতিবেদন ৷

CEREBRAL PALSY , Asansol News
সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত ছাত্রী অমৃতা ভৌমিক (ইটিভি ভারত)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jun 7, 2024, 7:25 PM IST

আসানসোল, 6 জুন: জন্ম থেকেই কঠিন রোগ সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত আসানসোলের অমৃতা । হাঁটাচলা তো দূরের কথা, বসতে গেলেও অন্যের সাহায্য নিতে হয় তাঁকে । হাত,পা-সহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ অসাড় । ট্যাব নিয়ে পড়াশুনো করতে গেলেও, টাচ স্ক্রিনে নাক ঘষে তাঁকে ট্যাব বা মোবাইল চালাতে হয় । তারপরেও অমৃতা বলেন, "আমি সব পারি ।" হ্যাঁ, এই আত্মবিশ্বাসই তাঁকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে । উচ্চমাধ্যমিকে দারুণ ফল করে এখন অমৃতার ইচ্ছে ইংরেজি নিয়ে পড়াশুনো করা । আগামী দিনে শিক্ষিকা হতে চান তিনি ৷

2005 সালে জন্ম আসানসোলের মহিশীলার বাসিন্দা অমৃতা ভৌমিকের । বাবা অমিত কুমার ভৌমিক বর্তমানে রেলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী ৷ শারিরীকভাবে তিনিও অসুস্থ । মা মিলু ভৌমিক করোনায় মারা গিয়েছেন । এহেন পরিস্থিতিতে অমৃতার একমাত্র অবলম্বন জেঠিমা নীনা ভৌমিক । তিনিই এখন অমৃতার মায়ের মতো তাঁকে মানুষ করেছেন । চরম বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও অমৃতাকে এতদূর নিয়ে আসার যে কঠিন লড়াই তা বলতে গিয়ে বারবার গলা ধরে আসছিল নীনা ভৌমিকের ।

সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত অমৃতার মুখ থেকেই শুনুন ওঁর জীবনের বাস্তব গল্প (নিজস্ব ভিডিয়ো)

নীনা দেবীর কথায়, "জন্মের পর আমরা যখন লক্ষ্য করি ওর শরীর বেঁকে যাচ্ছে, তখনই ভয় পেয়ে আমরা বিভিন্ন হাসপাতালে যাই । চেন্নাই গিয়ে জানতে পারি ও সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত । সেই থেকে লড়াই শুরু । মধ্যবিত্ত পরিবারে কতই আর খরচ করে এই রোগের চিকিৎসা করানো যায় ৷ পরবর্তীকালে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারি এই রোগের প্রভাবে অমৃতার চোখ, কান, দাঁত সব আক্রান্ত । তবু চিকিৎসকদের চেষ্টায় চোখ, দাঁত পুরোপুরি সুস্থ হয়েছে । কানে যদিও মেশিন দিতে হয় ।"

সেরিব্রাল পালসিদের জাতীয় তাইকোন্ডো চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জয় মহারাষ্ট্রের রুদ্রর

শারীরীকভাবে নিজে কিছু করার ক্ষমতা নেই অমৃতার । হাত পায়ে কোনও বল নেই । তারপরেও নিজের চেষ্টায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো ফল করেছেন তিনি । জড়ানো কণ্ঠেই অমৃতা কথা বলেছেন ইটিভি ভারতের সঙ্গে ৷ তিনি জানিয়েছেন, মাধ্যমিকে স্কুলে প্রথম হয়েছিলেন । উচ্চমাধ্যমিকে মাত্র 4 নম্বরের জন্য হাতছাড়া হয়েছে ফার্স্ট ডিভিশন ৷ তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ছিল 296 । প্রিয় বিষয় ইংরেজিতে পেয়েছিলেন 70 ৷ তাই আগামীতে ইংরেজি নিয়ে পড়াশুনো করে শিক্ষিকা হতে চান অমৃতা ।

নিজে কলম ধরে লিখতে পারেন না । ঠোঁটে বইয়ের পাতা উলটে কিংবা নাক ঘষে মোবাইল বা ট্যাবে পড়তে হয় তাঁকে । কঠিন জীবন যুদ্ধ । ডামি রাইটার নিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়েছিল অমৃতাকে । নিজের শ্রেণির তুলনায় নিম্নশ্রেণির ছাত্রকে সহযোগী লেখক হিসেবে পেয়েছিলেন তিনি । অমৃতা হাসিমুখে বলেন, "সেই লেখককে উত্তর বোঝাতেই সময় চলে যায় । নইলে আরও বেশি নম্বর নিশ্চয় আসত ।"

খাটে ছড়ানো বিবেকানন্দের বই । বারবার পড়ার ঝোঁকে ঠোঁট দিয়ে বইয়ের পাতা ওল্টাচ্ছেন অমৃতা । আবার ট্যাবে হোয়াটসঅ্যাপ খুলে আত্মীয় বন্ধুদের প্রয়োজনীয় উত্তর দিচ্ছেন । প্রতিবন্ধকতা তাঁকে আটকাতে পারেনি । তাই তো দৃপ্ত কণ্ঠে তিনি বলতে পারেন 'আমি নারী, আমি সব পারি ।'

ছবিতেই জীবনের রঙ খুঁজে নিয়েছেন সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত সুকল্প

ABOUT THE AUTHOR

...view details