পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

'ঐতিহাসিক ভুলে'র কান্ডারি প্রকাশ কারাটের হাতেই উদ্বোধন জ্যোতি বসু গবেষণা কেন্দ্রের - JYOTIBASU CENTRE IN NEW TOWN

নিউটাউনে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর নামাঙ্কিত গবেষণা কেন্দ্রের প্রথম পর্বের উদ্বোধন করলেন প্রকাশ কারাট ৷ অতীতে তিনিই জ্যোতি বসুর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিরোধিতা করেছিলেন ৷

JYOTIBASU CENTRE IN NEW TOWN
প্রকাশ কারাটের হাতেই উদ্বোধন জ্যোতি বসু গবেষণা কেন্দ্রের (ইটিভি ভারত)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jan 17, 2025, 7:03 PM IST

রাজারহাট, 17 জানুয়ারি:সিপিএমের স্বপ্নপূরণ ৷ জ্যোতি বসুর নামাঙ্কিত গবেষণা কেন্দ্রের প্রথম পর্বের উদ্বোধন করলেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কো-অর্ডিনেটর প্রকাশ কারাট ৷ অতীতে প্রয়াত নেতা নিজে উল্লেখ করেছিলেন, তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হতে না দেওয়াটা ঐতিহাসিক ভুল ৷ সেই ভুলের কান্ডারি হিসাবে প্রকাশ কারাটকেই চিহ্নিত করে রাজনৈতিক মহল ৷ শুক্রবার তাঁর হাত ধরে জ্যোতি বসুর নামাঙ্কিত গবেষণা কেন্দ্রের উদ্বোধন অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ৷

কারাট বলেন, "বাবরি মসজিদ যখন ভাঙা হয়, সেই সময় জ্যোতি বসুর ভূমিকা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ ৷ এই ঘটনাকে তিনি বর্বর-দের কাজ বলেছিলেন ৷ এখন এই সময়েও তিনি প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ ৷ উগ্র হিন্দুত্ববাদের নামে হিন্দু রাষ্ট্র নির্মাণের চেষ্টা চলছে ৷ সেখানে দাঁড়িয়ে তাঁর দেখানো পথ তাঁর চিন্তাভাবনাকে আরও বলীয়ান করতে হবে ৷"

শুক্রবার নিউটাউনে জ্যোতি বসুর নামাঙ্কিত গবেষণা কেন্দ্রের উদ্বোধন করলেন প্রকাশ কারাট (ইটিভি ভারত)

রাজনৈতিক মহলের সকলে জানে 1996 সালে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর, প্রধানমন্ত্রীর হওয়ার প্রধান অন্তরায় ছিলেন এই কারাট ও তাঁর গোষ্ঠী ৷ সেই ঘটনাকে জ্যোতি বসু নিজেই ঐতিহাসিক ভুল বলেছিলেন ৷ 29 বছর পর জ্যোতি বসুর নামাঙ্কিত গবেষণা কেন্দ্রের প্রথম পর্বের উদ্বোধন করলেন সেই প্রকাশ কারাটই ৷ তিনি এখন সিপিএমের পলিট ব্যুরো কো-অর্ডিনেটর ৷

এই বিশেষ দিনে পুরনো বাম কর্মী-সমর্থকদের মনে পড়ছে জ্যোতি বসুর অনুগামী হিসাবে পরিচিত লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের কথা ৷ 2008 সালে প্রথম ইউপিএ সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে বামেরা ৷ সেই সময় দলের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হতে পারেননি স্পিকার পদে থাকা সোমনাথ ৷ তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করে সিপিএম ৷ জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেই আক্ষেপ ছিল সোমনাথের ৷

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

1996 সালের লোকসভা নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছিল বিজেপি ৷ দ্বিতীয় স্থানে ছিল কংগ্রেস ৷ 543টি লোকসভা আসনের ম্যাজিক ফিগার 272টি আসন কোনও দলই পায়নি ৷ এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস সরকার গড়তে কয়েকটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে ৷ সেই সময় একাধিক রাজনৈতিক নেতা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুকে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চেয়েছিলেন ৷ আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদ যাদব থেকে সমাজবাদী পার্টির মুলায়ম সিং যাদব, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ভিপি সিংও চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসুন জ্যোতি বসু ৷

সিপিএমের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক হরকিষণ সিং সুরজিৎও জ্যোতি বসুর প্রধানমন্ত্রী হওয়াকে ব্যক্তিগতভাবে সমর্থন জানিয়েছিলেন ৷ কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য প্রকাশ কারাট থেকে প্রয়াত সীতারাম ইয়েচুরি এবং বাংলার কিছু নেতা এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন ৷ পক্ষে ছিলেন সদ্য প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ৷ বাকি অনেকেই প্রকাশ কারাটদের মতকেই সমর্থন করেছিলেন ৷

জ্যোতি বসুর প্রধানমন্ত্রী হওয়া নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে ভোটাভুটি পর্যন্ত হয়েছিল ৷ তারপর সিপিএম সাফ জানিয়েছিল, জ্যোতি বসু প্রধানমন্ত্রী হবেন না ৷ এই সিদ্ধান্তের পর সমাজে বিশিষ্ট মানুষজন চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় কমিটিকে ৷ ফের বৈঠক বসে ৷ সেখানেও কারাটপন্থীদের অবস্থান অটুট থাকে ৷ পরে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক থেকে বেরিয়ে দলের এই প্রধানমন্ত্রীর না-হওয়ার সিদ্ধান্তকে 'ঐতিহাসিক ভুল' বলে উল্লেখ করেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ৷

তার 28 বছর পর অর্থাৎ 2024 সালে জ্যোতি বসুর প্রয়াণ দিবসে নিউটাউনে তাঁর নামাঙ্কিত গবেষণা কেন্দ্রের শিলান্যাস করেন পার্টির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ৷ গত বছরের 12 সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু হয় ৷ এখন দলের পলিটব্যুরো কো-অর্ডিনেটর প্রকাশ কারাট ৷ এবার তাঁর হাত ধরে এই কেন্দ্রের উদ্বোধন হল ৷

অনুষ্ঠানে কারা কারা ছিলেন ?

উপস্থিত ছিলেনসিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বৃন্দা কারাট, ইউসুফ তারিগামী, ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, বিমান বসু, সুহাসিনী আলী-সহ অন্যরা ৷ পাঁচ একর জমির উপর এই গবেষণা কেন্দ্র-সহ আরও অনেক কর্মকাণ্ড হবে এই গবেষণা কেন্দ্রে ৷ জ্যোতি বসু গবেষণা কেন্দ্রের জন্য এই জমি পেতে অনেক লড়াই করতে হয়েছে সিপিএমকে ৷

গবেষণা কেন্দ্রে কী কী হবে ?

আপাতত এই গবেষণা কেন্দ্রের দু'টি তলা তৈরি হয়েছে ৷ ভবনটি ছ'তলা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে ৷ নবনির্মিত ভবনে রাখা হয়েছে জ্যোতি বসুর ব্যবহার করা খাট থেকে বসার চেয়ার, তাঁর পাওয়া পুরস্কার, স্মারক থেকে শুরু করে তাঁর মোমের মূর্তি ৷ একাংশে চালু হয়েছে লাইব্রেরি ৷ সামনে থাকছে বিরাট জলাশয় ৷

এদিন জ্যোতি বসুর 12 মাসের 24টি ঘটনার সংকলন এবং এই গবেষণা কেন্দ্র সম্পর্কিত নানা বিষয় নিয়ে প্রকাশিত হয় একটি ডায়রি ৷ পাশাপশি দু'টি গবেষণাপত্রও প্রকাশিত হয়েছে ৷ প্রকাশ করেন অধ্যাপিকা ঈশিতা মুখোপাধ্যায় ৷ তাঁর কথায়, "মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন জ্যোতিবাবু মানুষের স্বার্থে ও উন্নতিতে কাজ করেছেন ৷ এই গবেষণা কেন্দ্র সেই দিকটা তুলে ধরবে ৷ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা বিশ্বিদ্যালয়, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়-সহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের বিশিষ্টরা এই কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত ৷ কেন্দ্রীয় সরকার বা রাজ্য সরকারের কেউ আসল তথ্য দিচ্ছে না ৷ তাই এই গবেষণা কেন্দ্র সেই সব তথ্য মানুষের কাছে তুলে ধরবে ৷"

এদিন প্রকাশিত দু'টি গবেষণাপত্র- 'Economic Deprivation in Rural West Bengal: Contours and Trajectories' এবং 'Looming Crisis of Lives and Livelihoods: Employment and Unemployment in West Bengal' ৷ এই দু'টি গবেষণাপত্রের একটিতে দুঃস্থ মানুষ, অন্যটিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details