পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

ফের মাহুত ও পাতাওয়ালাদের প্রশিক্ষণে পদ্মশ্রী পার্বতী বড়ুয়া

18 অক্টোবর থেকে প্রশিক্ষণ শিবির চালু হয়েছে ৷ চলবে 21 অক্টোবর পর্যন্ত । এবার মোট 20 জন মাহুত ও পাতাওয়ালাকে প্রশিক্ষণ দেবেন পার্বতী বড়ুয়া ।

By ETV Bharat Bangla Team

Published : 4 hours ago

mahouts and patawalas
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে মাহুত ও পাতাওয়ালাদের প্রশিক্ষণ শুরু (নিজস্ব ছবি)

আলিপুরদুয়ার, 19 অক্টোবর: ফের জলদাপাড়ায় শুরু হল মাহুত ও পাতাওয়ালাদের প্রশিক্ষণ শিবির ৷ তাঁদের প্রশিক্ষণ দিতে এলেন ভারতের প্রথম মহিলা মাহুত পদ্মশ্রী প্রাপক পার্বতী বড়ুয়া । এবারও মাহুত ও পাতাওয়ালাদের একটানা চারদিন প্রশিক্ষণ দেবেন তিনি ।

শুক্রবার জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের গভীরে মালঙ্গী বিটের অন্তর্ভুক্ত এনইসি বিট ওয়াচ-টাওয়ারে প্রশিক্ষণ শিবির শুরু হয়েছে, যা চলবে 21 অক্টোবর পর্যন্ত । জানা গিয়েছে, এবার মোট 20 জন মাহুত ও পাতাওয়ালা প্রশিক্ষণ নেবেন পার্বতী বড়ুয়ার কাছে ।

মাহুত ও পাতাওয়ালাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন পদ্মশ্রী পার্বতী বড়ুয়া (ইটিভি ভারত)

জুন মাসের মাঝামাঝি শেষবার জলদাপাড়ায় প্রশিক্ষণ দিতে এসেছিলেন হাতি বিশেষজ্ঞ পার্বতী বড়ুয়া । তারপর হলং বনবাংলো আগুন লাগার ঘটনা ঘটে ৷ যার ফলে ফের প্রশিক্ষণ শিবির করতে কিছুটা দেরি হয়ে যায় । জানা গিয়েছে, পরবর্তী শিবির ফের ডিসেম্বর মাসে আয়োজন করা হবে ।

উল্লেখ্য, জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে এই মুহূর্তে বিভিন্ন বয়সের মোট 87টি কুনকি হাতি রয়েছে । জাতীয় উদ্যানকে রক্ষা করায় যাদের ভূমিকা যথেষ্টই গুরুত্বপূর্ণ । পাশাপাশি পর্যটকদের জঙ্গল ভ্রমণেও দায়িত্ব পালন করে কুনকিরা । বন দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ওই কুনকি হাতিদের সামলাতে গিয়েই গত 15 বছরে 16 জন মাহুতের মৃত্যু হয়েছে । আহত হয়েছেন 40 জনের কাছাকাছি মাহুত ও পাতাওয়ালা ।

মূলত, মাহুত ও পাতাওয়ালাদের একাংশের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই তাঁদের বিপদের কারণ হয়ে উঠেছে বলেও মনে করা হয় । মাহুত ও পাতাওয়ালারা যেন আর সতর্কভাবে কুনকি হাতিদের সামলাতে পারেন, সেজন্যই উপস্থিত হয়ে এবারও নিজের পরামর্শ ও অভিজ্ঞতা সকলের সামনে তুলে ধরবেন মাহুত পার্বতী বড়ুয়া ।

প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, এবার চারদিনের প্রশিক্ষণে অন্যান্য বিষয় থাকছেই । তবে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে হাতির স্বভাব বোঝার ব্যাপারটিকে । অনেক সময় মাহুত ও পাতাওয়ালারা হাতির স্বভাব বুঝতে ভুল করেন । এরফলেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের যেমন স্বভাবের পার্থক্য রয়েছে । হাতিদের ক্ষেত্রেও তাই । হাতি কখন মনস্থির হচ্ছে, তা বুঝতে হবে মাহুত ও পাতাওয়ালাদের । পেছন থেকে হাতির কাছে যাওয়া উচিত নয় । সে ভয় পায় । কারণ হাতি পেছনের দিকে দেখতে পায় না । রাতের বেলা নির্দিষ্ট আওয়াজ করে কুনকি হাতিদের কাছে যাওয়া উচিত ।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, কুনকি হাতিদের মারধর করা হলে তারাও পালটা আক্রমণ করতে পারে । পদ্ধতি না মেনে খুব শক্তভাবে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখলে, নির্দিষ্ট সময় স্নান ও খাওয়ার ব্যবস্থা না হলে কুনকি হাতির মেজাজ চরমে পৌঁছে যেতে পারে । সবসময় কুনকির চরিত্র এবং মেজাজ বুঝে চলতে হবে মাহুত ও পাতাওয়ালাদের ।

পার্বতী বড়ুয়া বলেন, "কুনকি হাতিদের মেজাজ ও মতিগতি অবশ্যই বুঝতে হবে মাহুত পাতাওয়ালাদের । কুনকি হাতিরাও অসুস্থ হয়, ভালোবাসার অভাব হলে, পরিচর্চার অভাব হলে তারাও বিরক্ত হয় মানুষের মতো । আর তখনই ঘটে যায় দুর্ঘটনা ।"

মাহুত ও পাতাওয়ালাদের প্রশিক্ষণ আর নিবিড় করতে জলদাপাড়াতেই আর একটি প্রশিক্ষণ শিবিরের ব্যবস্থা যেমন করা হবে, তেমনই কুনকি হাতিদের সার্বিক ভাবে ভালো রাখতে একটি কমিটিও সক্রিয় হবে জলদাপাড়ায় ।

জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের সহ-বন্যপ্রাণ সহায়ক নভোজিত দের কথায়, "জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে কুনকিদের ঠিক হাতি হিসেবে বিবেচনা করা হয় না । তাদেরকেও আমাদের বনবিভাগের একজন কর্মী হিসেবে দেখা হয় । তাদের নির্দিষ্ট বেতন, পেনশন আছে । প্রতিদিনের ডিউটি রয়েছে । স্বাভাবিকভাবেই এত বড় একটি বিশাল প্রাণীকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখাটাও একটা চ্যালেঞ্জ ।"

তিনি বলেন, "মাহুত ও পাতাওয়ালারা যাতে সফলভাবে 86টি হাতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সেজন্যেই প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে । আমরা আশাবাদী চারদিনের শিবির থেকে অনেক কিছু তাঁরা শিখবেন । অতীতে বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে । আমাদের লক্ষ্য জলদাপাড়ায় ওইরকম দুর্ঘটনার সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনা ।"

উল্লেখ্য, কুনকি হাতিরা জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে নিরাপত্তায় বরাবরই বিশেষ ভূমিকা নিয়েছে । জাতীয় উদ্যানে অনেক স্থানে কুনকি হাতি ছাড়া জঙ্গলে পেট্রোলিং কার্যত অসম্ভব । তবে নিয়মিত কুনকিদের স্নান, খাওয়া, পরিচর্চার প্রয়োজন । সেক্ষেত্রে ঢিলেমি হলে কুনকি হাতির যাবতীয় ক্ষোভ উগরে দেয় নিজের মাহুত ও পাতাওয়ালাদের উপর । ঘটে যায় দুর্ঘটনা ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details