কলকাতা, 24 ডিসেম্বর: আরজি করের নির্যাতিতার বাবা-মায়ের আবেদন আপাতত গ্রহণ করলেন না কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ ৷ সিঙ্গল বেঞ্চের জুডিশিয়াল ডিসিপ্লিনের প্রশ্নে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ নির্দেশ দিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্ট অথবা হাইকোর্টের উচ্চ বেঞ্চ মামলায় নজরদারি করছে কি না, তা প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের থেকে ক্ল্যারিফাই করতে হবে ৷
আগামী 15 জানুয়ারির মধ্যে সেই ক্ল্যারিফিকেশন আনতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ ৷ সেই মতো ওইদিন তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন, নির্যাতিতার বাবা-মায়ের আবেদন তিনি গ্রহণ করবেন কি না ৷
উল্লেখ্য, গত 19 ডিসেম্বর তীর্থঙ্কর ঘোষের সিঙ্গল বেঞ্চে আরজি করের নির্যাতিতার বাবা-মা সিবিআই তদন্তে অনাস্থা জানিয়ে মামলা করার অনুমতি চেয়েছিলেন ৷ যেখানে একাধিক অভিযোগ সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে এনেছিলেন তাঁরা ৷ সেই আবেদন মতো, ওইদিন দ্বিতীয় ধাপে মামলার শুনানিও হয় ৷ যেখানে সিবিআই-কে 24 ডিসেম্বর মঙ্গলবার তদন্ত সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি ৷ প্রয়োজনে তদন্তে নজরদারির বিষয়টি ভাববেন বলেও জানিয়েছিলেন ৷
কিন্তু, এ দিন শুনানির শুরুতেই বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ এই মামলা শোনা বা তদন্তে নজরদারিতে সিঙ্গল বেঞ্চের এক্তিয়ার বা জুডিশিয়াল ডিসিপ্লিনের প্রসঙ্গ তোলেন ৷ বিচারপতি নির্যাতিতার আইনজীবী সুদীপ্ত মৈত্রকে প্রশ্ন করেন, "আপনারা ডিভিশন বেঞ্চ এবং সুপ্রিম কোর্টে কি আবেদন জানিয়েছিলেন ?"
জবাবে মামলাকারীর আইনজীবী বলেন, "আমরা কখনও সিবিআই তদন্ত চাইনি ৷ ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল ৷ আমরা সঠিক তদন্ত চেয়েছিলাম ৷ আর এই আবেদন সম্পূর্ণ আলাদা ৷"
এ নিয়ে সিবিআইয়ের আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার বলেন, "এই মামলা এখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন আছে ৷ কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এখনও মামলার বিচার স্থগিত রেখেছে ৷ কারণ, সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি বিচারাধীন আছে ৷"
এর প্রেক্ষিতে বিচারপতি জানান, "আমাকে আগে দেখতে হবে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এবং সুপ্রিম কোর্টে মামলা বিচারাধীন আছে কি না !" যার প্রেক্ষিতে মামলাকারীর আইনজীবীর বক্তব্য ছিল, "সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করেছে ৷ সেটা নিরাপত্তা নিয়ে ৷ তদন্তের বিষয়ে নয় ৷"
যদিও, বিচারপতি সেই যুক্তি মানতে চাননি ৷ তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, "নিম্ন আদালতের বিচার প্রক্রিয়ায় আমি হস্তক্ষেপ করতে পারি ৷ কিন্তু, জুডিশিয়াল ডিসিপ্লিন মোতাবেক যদি উচ্চ বেঞ্চ বা উচ্চ আদালত নজরদারি করে, তাহলে এই মামলা আমি গ্রহণ করতে পারি না ৷ এই বিষয়টায় আমি সন্তুষ্ট না-হয়ে শুনানি করতে পারি না ৷ আপনি প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ থেকে বিষয়টি ক্ল্যারিফিকেশন করে আসুন ৷ ডিভিশন বেঞ্চ যদি বলে, এই মামলা শোনার অধিকার আমার আছে, তাহলে আমি এই মামলা গ্রহণ করব ৷ কারণ, জুডিশিয়াল ডিসিপ্লিন বলে একটা বিষয় আছে ৷"
উল্লেখ্য, আরজি কর-কাণ্ডে কলকাতা হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিলেও, সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতির ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের স্পেশাল বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিতভাবে মামলা করে শুনানি শুরু করে ৷ এমনকি চার্জশিট পেশ করার আগে তদন্তের আগে ও পরে তদন্তের একাধিক স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দেয় ৷ আগামী বছর অর্থাৎ, 2025 সালের মার্চ মাসে ফের শুনানি রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে ৷