ভরতপুর, 22 সেপ্টেম্বর: পুজো আসতে ব্যস্ততা চরমে মালাকার পাড়ায়। ছুরি দিয়ে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম করে শোলা কেটে প্রতিমার অঙ্গসজ্জা প্রস্তুতি চলছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত পরিবারের সদস্যরা। শোলার গয়নার চাহিদা আজও রয়েছে ৷ সাত পুরুষের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে মালাকার পরিবার। মুর্শিদাবাদের ভরতপুর ব্লকের জজান গ্রামের মালাকার পরিবার এখন ব্যস্ত শোলার সাজ তৈরি করতে। পরিবারের সকলে দেবী দশভূজাকে সাজানোর জন্য বিভিন্ন রকমের শোলার সাজ তৈরিতে এখন এতই ব্যস্ত যে নাওয়া-খাওয়া ভুলতে বসেছেন তাঁরা ৷
শোলার সাজ অত্যন্ত নিখুঁত ! এই কাজ মুর্শিদাবাদ জেলার ঐতিহ্যও বটে। এমনই শোলা শিল্পী হলেন, জজান গ্রামের বাসিন্দা জনার্দন মালাকার ও তাঁর স্ত্রী ঝর্না মালাকার। রথের দিন বা কাঠামো পুজো হওয়ার পর থেকে তাঁদের কাজও শুরু হয়ে যায়।
দেবীর সাজে সাত পুরুষ (ইটিভি ভারত) সারা বছর ধরে নানা পুজোর কাজ করলেও শারদোৎসব উপলক্ষে কাজের মান ও চাহিদা যথেষ্ট পরিমাণে বেড়ে যায়। দিনরাত এক করে এখন প্রতিমার সাজ তৈরি করতে ব্যস্ত মালাকার দম্পতি। দুর্গাপুজো উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গা থেকে এই শোলার কাজের অর্ডার আসে।
নাওয়া-খাওয়া ভুলে কাজে ব্যস্ত শিল্পী জনার্দন (নিজস্ব ছবি) মালাকাররা প্রায় সাত পুরুষ ডাকের সাজের গয়না বানাচ্ছেন। দেবী মূর্তির সাজে যাতে কোনও খামতি না-হয়, সেদিকেই এখন চোখ ওঁদের ৷ জজানের এই মালাকার পরিবার শোলার গয়না তৈরিতে পরিচিতিও রয়েছে ৷ বাজারে অত্যধুনিক জিনিস এলেও শোলার গয়নার সাজের এক আলাদাই মাহাত্ম্য রয়েছে, তেমনটাই বলছেন শিল্পীরা।
শিল্পী জনার্দন মালাকার ও তাঁর স্ত্রী ঝর্না মালাকার (নিজস্ব ছবি) বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় থার্মোকলের প্রচলন হওয়ায়, শোলার সাজ এখন ফিকে হচ্ছে ৷ জেলা ও জেলার বাইরেও পারি দেয় এই সাজের উপাদান। এ বিষয়ে শিল্পী প্রকাশ দাস বলেন, "বর্তমান সময়ে এই শোলা আর পাওয়া যাচ্ছে না ৷ তাই থার্মোকলেরই প্রচলন বেড়ে গিয়েছে। বনেদি বাড়ির পুজোর ক্ষেত্রে যে মূর্তি নিয়ে যাওয়া হয় তাতে ডাকের সাজ ছাড়া মানায় না। যুগের সঙ্গে জলাশয় জায়গা প্রায় কমে গিয়েছে, তাই এই শোলার চাষ আর হয় না ৷"