কলকাতা, 22 ফেব্রুয়ারি: বছরখানেক পরই রাজ্যে বিধানসভা ভোটের দামামা বেজে যাবে ৷ তাই পরপর তিন বছরের ঘাটতি সত্ত্বেও জনমুখী বাজেটের দিকেই মন দিয়েছে কলকাতা পুরনিগম ৷ 2025-26 অর্থবর্ষের জন্য যে বাজেট পেশ করা হয়েছে, সেখানে পুর-পরিষেবার মান বৃদ্ধির দিকেই নজর দেওয়া হয়েছে ৷ সেই কারণেই বরাদ্দ বেড়েছে পানীয় জল সরবরাহ থেকে শুরু করে জঞ্জাল সাফাই, বস্তি উন্নয়ন থেকে রাস্তা নির্মাণ, আলোক সজ্জা থেকে পার্কিং একাধিক খাতে ।
আগামী অর্থবর্ষে কলকাতা পুরনিগমের ঘাটতির পরিমাণ হতে পারে প্রায় 114 কোটি টাকা ৷ 2023-24 ও 2024-25 আর্থিক বছরেও কর্পোরেশনের ঘাটতির মধ্যে দিয়েই চলেছে ৷ এই দুই অর্থবর্ষে পুরনিগমের ঘাটতির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে 146 কোটি ও 112 কোটি ৷
তবে কোষাগারের হাল যেমনই থাক, তার জেরে যাতে মনক্ষুন্ন না হন নাগরিক মহল, সেদিকে নজর দিয়েছে বর্তমান তৃণমূল পরিচালিত বোর্ড । ফলে পানীয় জলের সমস্যা সমাধান, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত, রাস্তার হাল ফেরানো বা নিকাশি উন্নত মানের করে জমা জলের যন্ত্রণা মুক্তি দিতে চেয়েছেন ফিরহাদ । আর শহুরে নাগরিকদের এমন গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা পেলে তার প্রভাব পড়বে ভোট ব্যাংকে । 26-এর বিধানসভা নির্বাচনে কলকাতার আসনগুলি ধরে রাখতে পুর বাজেট তাই বড় হাতিয়ার তৃণমূলের ।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক কোন কোন পরিষেবায় বরাদ্দ বেড়েছে এবং কত বরাদ্দ হয়েছে -
- পানীয় জল: বরাদ্দ হয়েছে প্রায় 455 কোটি টাকা । গত বছর ছিল 445 কোটি টাকার কাছে ।
- নিকাশি উন্নয়ন ও পরিষেবা: গত বছর বাজেট ধরা হয়েছিল 335 কোটি টাকা, 25-26 অর্থবর্ষে সেই বাজেট বেড়ে হয়েছে 352 কোটি টাকার বেশি ।
- রাস্তা: গত অর্থবর্ষে 318 কোটি বরাদ্দ করা হয়েছিল । এই অর্থবর্ষে বেড়ে হয়েছে 325 কোটি টাকা ।
- জঞ্জাল সাফাই: 666 কোটির কিছু বেশি টাকা । এই বাজেটে বেড়ে সেই বরাদ্দ দাঁড়িয়েছে 686 কোটি টাকার বেশি ।
- শিক্ষা: গতবার ছিল 52 কোটি টাকার কিছু বেশি । এই বাজেটে 59 কোটির কিছু বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে ।
- বস্তি উন্নয়ন: 232 কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল গতবার । এবার সেই বরাদ্দ বেড়ে হয়েছে 249 কোটি টাকার বেশি ।
প্রায় 45 লাখ মানুষের বসবাস এই শহরে । তাদের সব রকমের পুর পরিষেবা দিয়ে থাকে কলকাতা কর্পোরেশন । এই বাজেটে প্রতি নাগরিকের পর্যাপ্ত পানীয় জল, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নতমানের, নিরাপত্তার স্বার্থে আলোকায়ন, রাস্তা, বস্তিবাসীদের উন্নত পরিষেবা প্রদান, দারিদ্র্য দূরীকরণ, সমাজকল্যাণমূলক কাজ নজর দেওয়া হয়েছে । বৃক্ষরোপণ, ঐতিহ্যশালী স্থাপনা রক্ষায় প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে ।
কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘নাগরিকদের স্বার্থরক্ষা উন্নত পরিষেবা প্রদান মূল লক্ষ্য । আয় বৃদ্ধি করে ব্যয়ের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা চালানো হচ্ছে ।’’ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বকেয়া মেটানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি । পাশাপাশি অহেতুক খরচে লাগাম দেওয়া থেকে অগ্রাধিকার ও প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে খরচ করার পক্ষে সওয়াল করেছেন । রাজ্যের ও কেন্দ্রের অনুদান সঠিক ব্যবহার করার কথা জানান ।