তারকেশ্বর, 18 জানুয়ারি: আর মিড ডে মিলে পড়ুয়ারা খাবে না কীটনাশক দেওয়া সবজি ৷ তাই তো স্কুলের ছাদেই তৈরি করা হয়েছে আস্ত কিচেন গার্ডেন ৷ হুগলি জেলার বেশ কিছু স্কুলে গেলে দেখা মিলছে এই ছাদ বাগানের । তার মধ্যে একটি স্কুল হল, তারকেশ্বর ব্লকের রামচন্দ্রপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ৷ এই ছাদ বাগানে শিক্ষকদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে বিভিন্ন ধরনের সবজি থেকে ফুলের চাষ করছে পড়ুয়ারা ।
অধিকাংশ সবজি বাগানগুলি স্কুলের ফাঁকা জমিতে করা হয় । রামচন্দ্রপুর প্রাথমিক স্কুলে সামনে ফাঁকা জমির অভাব রয়েছে । তাই স্কুলের ছাদের উপর শিক্ষক ও ছাত্র ছাত্রীরা মিলে অভিনব ছাদ বাগান তৈরি করেছে । সেই ছাদ বাগানে পিয়াঁজকলি, টমেটো, মটরশুঁটি, মুলো, রসুন, লঙ্কা, ধনে ও পালংক-সহ বিভিন্ন ধরনের ফসল ফলানো হচ্ছে ।
স্কুলের ছাদেই অভিনব কিচেন গার্ডেন, মিড ডে মিলে পুষ্টিকর খাবার মিলছে পড়ুয়াদের (ইটিভি ভারত) বর্ষাকাল বাদে সারা বছর স্কুলের ছাদে পলিথিনের উপর তিন ইঞ্চি মাটিতে চাষ করা হয় । শুধুমাত্র জৈব সার প্রয়োগ করে এখানে ফসল ফলানো হয় । প্রধান শিক্ষক ছাড়াও অন্যান্য শিক্ষক ও ছাত্র ছাত্রীরা স্কুলের টিফিন ও ছুটির পর এই কাজ করে । আর এতে মিডে মিলের ক্ষেত্রে অনেকটাই খরচ যেমন কমে, তেমনই পড়ুয়ারা পুষ্টিকর খাবার পায় ।
কিচেন গার্ডেনের জন্য ইচ্ছুক স্কুলগুলিকে সাহায্য করা হয় রাজ্য সরকারের তরফেও । গত দু'বছর ধরে সেই বাবদ পাঁচ হাজার টাকা করে সহযোগিতা পাচ্ছে রামচন্দ্রপুর প্রাথমিক স্কুল । হুগলির সিঙ্গুর, হরিপাল, তারকেশ্বর-সহ বিভিন্ন ব্লকে প্রচুর পরিমাণে সবজি চাষ হয় । অনেক সময় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে সবজির বাজার চড়া থাকে । বিশেষ করে মিডে মিলের ক্ষেত্রে কম টাকায় সবজি তরকারি খাওয়াতে হিমশিম খেতে হয় স্কুলগুলিকে ।
রামচন্দ্রপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় (নিজস্ব ছবি) সেই সমস্যার সামাধান করতেই কয়েক বছর ধরে রামচন্দ্রপুর প্রাথমিক স্কুলে সবজি চাষ হচ্ছে । পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত এই স্কুলে 6 জন শিক্ষক ও 128 জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে । তাদের প্রতিদিন মিড ডে মিলের খাবার এই ছাদ বাগানের সবজি দিয়ে রান্না করা হয় । সবজি ছাড়াও ফুল গাছ করা হয়েছে স্কুলে । পড়াশোনা ছাড়াও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কৃষিকাজ ও গাছ লাগানোর প্রতি আগ্রহী বাড়াতেই এই উদ্যোগ শিক্ষকদের । ছাদের উপর জৈব পদ্ধতিতে রাসায়নিক ও কীটনাশক ছাড়া খাবার পাচ্ছে পড়ুয়ারা ।
স্কুলের ছাদে সবজি থেকে ফলের চাষ (নিজস্ব ছবি) রামচন্দ্রপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশিস চক্রবর্তী বলেন, "আমরা স্কুলের শিক্ষক ও ছাত্র সংসদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কিচেন গার্ডেন তৈরি করি । বিদ্যালয়ে অল্প পরিসর হওয়ায় আমরা ছাদের উপরই বাগান তৈরি করেছি । সবজি বাগান ছাড়াও ফুল গাছও লাগানো হয়েছে ছাদে । এতে কৃষি কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়বে । ছাত্রদের কৃষকদের প্রতি সম্মান বাড়বে । আগামিদিনে ছাত্র-ছাত্রীরা এটাকেই কাজে লাগাতে পারবে ।"
শিক্ষকরা সবজি চাষে উদ্য়োগ নেন (নিজস্ব ছবি) তাঁর কথায়, "বিগত কয়েক বছর ধরেই আমরা এই ছাদ বাগানের ফসল চাষ করছি । গত দু'বছর তারকেশ্বর উন্নয়ন ব্লক থেকে আমরা পাঁচ হাজার টাকা করে বছরে পাই । স্থানীয় কৃষকদের জমি থেকে মাটি নিয়ে ছাদে ত্রিপল পেতে গাছ তৈরি করি । এই সবজি চাষের ফলে খাবারের গুণগত মান ও পরিমাণেও বাড়ে মিড ডে মিল । এর জন্য মাসে কয়েকবার ডিম এবং মাংসও খাওয়ানো যায় স্কুলে । বর্তমানে শুধু পড়াশোনা নয়, কৃষিকাজের ব্যাপারে পাঠ ও উৎসাহ দেওয়া প্রয়োজন ছাত্রছাত্রীদের ।"
অন্যান্য শিক্ষকের সঙ্গে কিচেন গার্ডেনের দায়িত্বে সামলান সঞ্জিতকুমার মাইতি । তিনি বলেন, "কীটনাশক বর্জিত পুষ্টিকর শাকসবজি খাওয়ালে এখানকার পিছিয়ে পড়া এলাকার ছেলেমেয়েরা উপকৃত হবে । অনেকেই পুষ্টির অভাবে ভুগছে । সেই জন্যই আমাদের ছাদে সবজি চাষ করার চিন্তা ভাবনা মাথায় আসে । সমস্ত শিক্ষক এবং রন্ধন কর্মীদের নিয়ে আমাদের এই প্রচেষ্টা । আমাদের উদ্দেশ্য শিক্ষার কোনও ক্ষতি না করে নতুন কিছু শেখানো ।"
স্কুলের ছাদেই অভিনব কিচেন গার্ডেন (নিজস্ব ছবি) তাঁর সংযোজন, "এই অঞ্চল কৃষি বলয় এলাকা । এখানে সকলেই চাষি পরিবারের ছেলে মেয়ে । এতে কৃষিকাজ ও গাছের প্রতি যত্নবান হবে পড়ুয়ারা । পরিবেশে যেভাবে গ্লোবাল ওয়ার্মিং হচ্ছে । সেটাই পড়াশোনার পাশাপাশি হাতে কলমে শিক্ষাও হয়ে যাচ্ছে এই স্কুল থেকেই । আগামিদিনে এরাই গাছ লাগানোর ব্যাপারে আগ্রহী হবে ।"
গাছের পরিচর্যার মগ্ন পড়ুয়ারা (নিজস্ব ছবি) স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ছাদ বাগানে সবজি চাষ করায় অনেকটাই উৎসাহী । নিয়মিত শিক্ষকদের পরিচালনায় ও সাহায্যে গাছের আগাছা পরিষ্কার থেকে জল দেওয়া, সবই করে থাকে । তাদের মধ্যেই এক ছাত্র বিহান হাজরা বলে, "স্কুলে জায়গা কম থাকায় ছাদেই সবজি চাষের চিন্তা ভাবনা করেন শিক্ষকরা । তাই তাদের সঙ্গে আমরাও সাহায্য করি । শিক্ষকদের নির্দেশ অনুযায়ী টিফিনের সময় গাছে জল ও গাছগুলি পরিচর্যা করি । এই সবজি দিয়ে দিদিমণিরা আমাদের বিভিন্ন ধরনের রান্না করে খাওয়ান ।"