আলিপুর, 25 ডিসেম্বর:প্রতি বছর বড়দিনে ব্যাপক ভিড় হয় আলিপুর চিড়িয়াখানা-সহ কলকাতার অন্য সব পর্যটনস্থলে ৷ এবারও তার অন্যথা হয়নি ৷ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে অভিভাবকদের সঙ্গে শিশুরা আলিপুর চিড়িয়াখানায় জীবজন্তু দেখতে আসে ৷ বুধবার চিড়িয়াখানার আসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর সৌমেন মণ্ডল জানালেন, গত রবিবার 68 হাজার মানুষের ভিড় হয়েছিল ৷ আজ সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছে বলেই আশা করছেন তিনি ৷
এদিকে এই ভিড় সামলাতে আলিপুর চিড়িয়াখানার নিরাপত্তারক্ষীরা রীতিমতো হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন ৷ বাঘের খাঁচার সামনে প্রচুর মানুষ দাঁড়িয়ে থাকছেন, অনুযোগ করলেন এক দর্শক ৷ এর উপর খাঁড়ার ঘা হল মোবাইল ৷ খাঁচার সামনে ছবি তুলতে গিয়ে সামনের দিকের দর্শকদের জন্য পিছনের দর্শকরা পশুপাখি দেখার সুযোগই পাচ্ছেন না ৷
বড়দিনে খাঁচা বন্দি পশুপাখি দেখতে চিড়িয়াখানায় মানুষের ভিড় (ইটিভি ভারত) বাঘের খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে মাইকিং করছিলেন চিড়িয়াখানার এক নিরাপত্তা কর্মী ৷ তিনি বলেন, "বাঘের প্রতি বাচ্চাদের আকর্ষণ বেশি থাকে ৷ চিড়িয়াখানা শিশুদের জন্যে ৷ কিন্তু, বড়রা যদি খাঁচার সমানে দাঁড়িয়ে ছবি-ভিডিয়ো তুলতে থাকে, তাহলে পিছনের দিকে শিশুরা কিছুই দেখতে পাচ্ছে না ৷ এতেই আরও ভিড় হচ্ছে ৷"
বাঘের খাঁচার সমানে প্রতিনিয়ত মাইকিং করা হচ্ছে ৷ বেশিক্ষণ দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না ৷ ছবি-ভিডিও তুলতেও নিষেধ করা হচ্ছে। কারণ, ছবি-ভিডিও তুলতে অনেক দর্শক দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকছেন ৷ এর ফলে, বাকি দর্শকরা বাঘ দেখার সুযোগ পাচ্ছেন না ৷ দু'দিন আগে ভিড়ের চাপে বাঘের খাঁচার সামনের ব্যারিকেড ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয় ৷ তাই অতিরিক্ত সচেতনতা অবলম্বন করা হয়েছে ৷
হাতির খাঁচার সামনে ছোট থেকে বড়, সবাই (ইটিভি ভারত) প্রবল ভিড়ে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কয়েক দিন আগে উদ্বোধন হওয়া কাচের দেওয়াল ঘেরা পাখির খাঁচা ৷ এই খাঁচায় ঢুকে সাধারণ দর্শক বাইরে থাকা পাখিদের দেখার সুযোগ পেতেন ৷ এছাড়া কড়া নিরাপত্তার মুড়ে ফেলা হয়েছে আলিপুর চিড়িয়াখানার বাইরে ও ভিতরের এলাকা ৷
কলকাতা পুলিশের দু'টি থানা ও ভবানীপুর ট্রাফিকের কর্মীরা প্রতিনিয়ত কাজ করছেন ৷ ওয়াটগঞ্জ থানার 90 জন পুলিশ কর্মী চিড়িয়াখানার ভিতরের ভিড় সামলাচ্ছেন ৷ পাশাপাশি চিড়িয়াখানার বাইরে মোতায়েন রয়েছে আলিপুর থানার পুলিশ ৷ চিড়িয়াখানার সামনে ও সংলগ্ন এলাকায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন ভবানীপুর ট্রাফিকের কর্মী আধিকারিকরা ৷ একই ভাবে চিড়িয়াখানার নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মীরাও রয়েছেন ৷
নিজের ঘরে ফিরে যাচ্ছে বাঘ (ইটিভি ভারত) ব্যারাকপুর থেকে পরিবার-আত্মীয় মিলিয়ে 22 জনের একটি দল চিড়িয়খানায় বেড়াতে এসেছে সকাল সাড়ে দশটায় ৷ কিন্তু, বিকেল 3টের সময় হাতে গোনা কয়েকটি পশুপাখি দেখার সুযোগ পেয়েছেন তাঁরা ৷ আয়েশা বিবি বলেন, "এত ভিড়ে শিশুদের নিয়ে সব খাঁচার সমানে পৌঁছনো সম্ভব নয় ৷ বড় বড় লোকেরাই ঘিরে রেখেছে, ছোটরা কী করে দেখবে ? আর ভিড় ঠেলে হাঁটতে পারছি না ৷ অন্য সময় আসব ৷"
হুগলির ডানকুনি থেকে পরিবার নিয়ে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এসেছেন রিয়া মাটিয়া ৷ তিনি বলেন, "সাড়ে দশটা থেকে নানা পাখি, গণ্ডার, সাপ ইত্যাদি দেখেছি। কিন্তু, ভিড়ের চাপে বাঘ-সিংহ দেখা হয়ে ওঠেনি ৷ সেইসব দেখে বাড়ির পথে রওনা দেব ৷" তালডাঙা থেকে আগত আরেক দর্শক বলেন, "হাতি, জিরাফ দেখেছি ৷ মারাত্মক ভিড় হয়েছে ৷ ফলে, কতটা কী দেখতে পাব জানি না ৷ যা হয় দেখে বাড়ি যাব ৷ অন্য কোথাও যাওয়ার প্ল্যানিং নেই ৷"
আলিপুর চিড়িয়াখানার আসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর সৌমেন মণ্ডল বলেন, "গত রবিবার থেকেই ভিড় বাড়ছে ৷ সেদিন 68 হাজারেরও বেশি দর্শক এসেছিলেন ৷ আজ তার থেকে অনেকটাই বেশি ৷ আশা করি, প্রায় 80 হাজার মানুষের ভিড় হয়েছে ৷ অনলাইনে স্পট টিকিট কাটার সুযোগ পেয়ে দর্শকরা খুশি ৷ নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ ৷ কলকাতার দু'টি থানার পুলিশ আমাদের সাহায্যের জন্য রয়েছেন ৷"