হাওড়া, 22 এপ্রিল: এক সময় প্রাচ্যের শেফিল্ড বলা হত হাওড়াকে ৷ সেই হাওড়া তার শিল্পনগরীর তকমা অনেক আগেই হারিয়েছে ৷ একে বন্ধ হয়েছে ছোট-বড় কারখানা ৷ যেগুলো আছে, সেগুলোর অবস্থায় ‘মৃতপ্রায়’ ৷ ভোট এলেই হাওড়ার অতীতের গৌরব আর বর্তমান দুর্দশার ছবির তুলমূল্য বিচার শুরু হয়ে যায় ৷ 2024 সালের লোকসভা নির্বাচনও তার ব্যতিক্রম নয় ৷
শিল্পের জন্যই একসময় হাওড়ার পরিচিত ছিল ৷ ছোট-বড় অনেক কারখানাই ছিল সেখানে ৷ তথ্য বলছে, সাতের দশকের পর থেকে সেভাবে হাওড়ার শিল্পোন্নয়নের কাজ সেভাবে হয়নি । হাওড়ার শিল্পের যা কিছু ছিল, তা সবই সাতের দশকের সময়ে । যার মধ্যে অন্যতম ছিল বার্ন স্ট্যান্ডার্ড, জে কে ডব্লিউ, হুগলি ডক, গ্যাসকিং-সহ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ শিল্প । যে নগরীর জন্য প্রণীত হয়েছিল বিশেষ আইন । যদিও তার সবই এখন ইতিহাসের পাতাতেই সীমাবদ্ধ ।
একদা প্রাচ্যের শেফিল্ড তকমা পাওয়া হাওড়া শিল্পনগরীর দশা বড়ই বেহাল । এই কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে আরতি কটন মিল, ব্রিজ অ্যান্ড রুফ, রেল প্রিন্টিং প্রেসের মতো কেন্দ্রীয় সংস্থা, একইভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা বার্ন স্ট্যান্ডাড, হুগলি ডক, গ্যাসকিং-সহ বহু মাঝারি ও ছোট শিল্প ।
হাওড়ার দাস নগর এলাকা তথা ইছাপুর এলাকাতে ছোট বড় লেদ মেশিনের কারখানা রয়েছে । সেখানেও ব্যবসার হাল মন্দ হওয়ার জন্য শ্রমিকদের সংখ্যাও দিনের পর দিন কমেছে । এই সকল লেদ কারখানাতে অতীতে শ্রমিকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো । যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হাওড়ার শিল্পের জৌলুশ তলানিতে এসে ঠেকার কারণে এই ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে পরবর্তী প্রজন্ম ।
অথচ হাওড়ার শিল্পনগরীর উত্থান ও অর্থনীতির বিকাশে ছোট-বড় সব সংস্থারই অবদান ছিল । এই কেন্দ্রে এই সমস্ত অতীতের কারখানাগুলোকে চালু করানোর উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে কেন্দ্রের জীবিকা সংস্থানে এলাকার অর্থনৈতিক বিকাশে উল্লেখযোগ্য মাধ্যম হতে পারতো । সেই পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার কি সম্ভব ? সেটাই এখন ভোটের ইস্যু হাওড়ায় ৷
আগামী 20 মে হাওড়ার লোকসভা কেন্দ্রের নির্বাচন । স্থানীয় সাংসদ তথা প্রাক্তন ফুটবলার প্রসূন বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের উপরই ভরসা রেখেছে তৃণমূল ৷ তাঁর মূল দুই প্রতিপক্ষের একজন রথীন চক্রবর্তী ৷ এক সময় তৃণমূলে প্রসূনের সতীর্থ রথীন এখন হাওড়ার পদ্ম ফোটাতে নেমেছেন ৷ আর রয়েছেন সিপিএমের সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় ৷ আইনজীবী হিসেবেও তাঁর বেশ পরিচিতি রয়েছে ৷
বিজেপির রথীন হোক, কিংবা সিপিএমের সব্যসাচী, দু’জনেই প্রচারে মানুষের দুয়ারে পৌঁছে এই ইস্যুকেই উস্কে দিচ্ছেন ৷ পাশাপাশি আগামিদিনে হাওড়ার শিল্পে সুদিন ফেরানোর আশ্বাসও দিচ্ছেন ৷ এই কেন্দ্রের বাম প্রার্থী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় বলছেন, "মানিকপুর ডেল্টা জুটমিল থেকে এই কেন্দ্রের শুরু । সেখানে শ্রমিকদের জীবনযাত্রার অবস্থা খুব করুণ । রাজগঞ্জ, আরতি কটন মিল চললেও সেখানে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা নেই । হুগলি ডক বন্ধ, আপনি কোথায় যাবেন ! এগুলো চালাতে গেলে পরিকল্পনা লাগে । বন্ধ কারখানার জমি বেচারামের মতো বেচে দিয়ে সেখানে বড়লোকদের থাকার জন্য আবাসন তুললেও কেনার মতো এত বড়লোক হাওড়াতেও নেই ।"
হাওড়ার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিজেপি প্রার্থী রথীন চক্রবর্তী অভিযোগ করেন, "হাওড়া 600 বছরের প্রাচীন শহর । এই শহরকে বিশেষ পদ্ধতিতে হত্যা করা হয়েছে । এখানে থাকা বড়, মাঝারি, ছোট সব শিল্প শেষ হয়ে গিয়েছে । হাওড়াতে বার্ন স্ট্যান্ডার্ড, জিকে ডব্লিউ মতো শিল্প ছিল । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে রেলমন্ত্রী হলেও বার্ন স্ট্যান্ডার্ড বাঁচাতে অক্ষম ছিলেন । রেলের সবচেয়ে বড় ওয়াগন তৈরির কারখানা বন্ধ হয়ে গেল, বাঁচাতে পারেননি । এখন মেট্রো রেল ময়দান অবধি চালু হয়েছে, আগামিদিনে এর সম্প্রসারণ হবে সাঁতরাগাছি অবধি । আমাদের দাবি একে ধূলাগড়, বালিখাল অবধি নিয়ে যাওয়া ।"
রথীনের আরও অভিযোগ, "হাওড়াতে নবান্ন করা হলেও শহরটার জন্য কিছু করা হল না । একদা 600 বছর পুরানো শেফিল্ড নগরী থেকে বর্তমানে জঞ্জাল নগরীর তকমা পেয়েছে । হাওড়া সবদিক থেকে বঞ্চিত রয়ে গিয়েছে । সামান্য সরকারি মেডিক্যাল কলেজ শহরে তৈরি হয়নি । স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিল্প নিয়ে আমরা ভাবছি । আগামীদিনে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আমরা তা তুলে ধরবো । আমরা বিশ্বাস করি, কেন্দ্রের সরকার অবশ্যই সাহায্য করবে ।"