পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

বাবার মদের নেশা ছাড়াতে না-পেরে অভিমানে আত্মহত্যা! তরুণের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারে প্রশ্ন

বৃহস্পতিবার পুরাতন মালদার একটি আমবাগানে উদ্ধার তরুণের ঝুলন্ত দেহ ৷ মৃতের নাম কনক পাল ৷ বয়স 22 ৷

By ETV Bharat Bangla Team

Published : 4 hours ago

Representative Image
প্রতীকী ছবি (ফাইল ছবি)

মালদা, 18 অক্টোবর: আমবাগান থেকে উদ্ধার হল এক তরুণের ঝুলন্ত দেহ ৷ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে 11টা নাগাদ পুরাতন মালদা পুরসভার 19 নম্বর ওয়ার্ডের পালপাড়া নেতাজিপল্লিতে ঘটনাটি ঘটে ৷ স্থানীয়দের দাবি, বাবার মদের মেশা ছাড়াতে না-পারার অভিমানে আত্মঘাতী হন কনক পাল নামে ওই তরুণ ৷

এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি পরিবার ৷ তবে স্থানীয়দের দাবি, বছর বাইশের কনক এলাকায় নম্র-ভদ্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন ৷ তাই তাঁর এই অস্বাভাবিক মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ পুরো এলাকা ৷ পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করেছে ৷ জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের পরই মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা সম্ভব হবে ৷

তরুণের অস্বাভাবিক মৃত্যুর শোকার্ত পরিবার৷ (নিজস্ব চিত্র)

তবে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় কয়েকজন দেখেন একটি আমবাগানে গাড়ির হেডলাইট জ্বলছে ৷ কৌতুহলবশত তাঁরা বাগানের দিকে যান ৷ দেখতে পান, একটি বাইক রাখা৷ সেটির হেডলাইট জ্বলছে ৷ কিন্তু কাছাকাছি কেউ নেই ৷ তাঁরা এদিক ওদিক তাকাতে থাকেন ৷ তখনই তাঁদের নজরে পড়ে, খানিক দূরে একটি আমগাছে কেউ গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছে ৷

এগিয়ে যান তাঁরা৷ দেখেন, ঝুলন্ত তরুণ তাঁদের পাড়ারই ছেলে ৷ নাম কনক পাল ৷ সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা কনককে গাছ থেকে নামিয়ে আনেন ৷ কিন্তু ততক্ষণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে ৷ খবর দেওয়া হয় কনকের বাড়িতে ৷ জানাজানি হয় গোটা পাড়ায় ৷ সবাই সেই বাগানে ছুটে আসেন ৷ খবর পেয়ে আসেন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরও ৷ তিনি মালদা থানায় খবর দিলে পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে স্থানীয় মৌলপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যায় ৷ এ দিন দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিক্যালে পাঠানো হয় ৷

স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, কনক পেশায় ছিলেন লেদমিস্ত্রি ৷ রোজগারও খুব খারাপ ছিল না ৷ এলাকায় ভালো ছেলে হিসাবে পরিচিত৷ সবার সঙ্গে তাঁর খুব ভালো সম্পর্ক ছিল ৷ প্রতিটি বাড়িতে ছিল তাঁর অবারিত দ্বার ৷ নম্র স্বভাবের জন্য সবাই তাঁকে পছন্দ করতেন ৷

সেই কনক আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিলেন কেন ? সেই উত্তর খুঁজতে গিয়েই বেরিয়ে এসেছে অন্য কাহিনি ৷ স্থানীয়দের দাবি, কনকের বাবা বিশু পাল পেশায় গ্যারাজমিস্ত্রি ৷ প্রতিদিন মদ্যপানের নেশা তাঁর ৷ মদ্যপান করে বাড়ি ফিরে প্রায়শই ঝামেলা বাঁধান বিশু ৷ এদিকে কনক কোনও নেশা করতেন না ৷ বাবার মদ্যপানের নেশাও তিনি পছন্দ করতেন না ৷ অনেকবার বাবাকে এই নেশা থেকে বিরত থাকার আবেদন করেছেন ৷ বাবার গ্যারাজে গিয়েও সবাইকে জানিয়েছেন, তাঁকে যেন মদ্যপানে বাধা দেওয়া হয় ৷ কিন্তু কোনও কাজ হয়নি ৷

তরুণের অস্বাভাবিক মৃত্যুর শোকার্ত পরিবার৷ (নিজস্ব চিত্র)

স্থানীয়দের আরও দাবি, লক্ষ্মীপুজোর আগের দিন কাজ থেকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরেছিলেন কনক ৷ বাড়ির পুজো নিয়ে মায়ের সঙ্গে কথা বলছিলেন ৷ সেই রাতেও বিশুবাবু মদ্যপান করে বাড়ি ফিরে ঝামেলা শুরু করেন ৷ এই নিয়ে বাবার সঙ্গে তাঁর কথা কাটাকাটি হয় ৷ তারপর থেকেই মনমরা হয়ে পড়েছিলেন তিনি ৷ সবার ধারণা, সেই মানসিক অবসাদেই কনক আত্মঘাতী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ৷

এই নিয়ে কনকের পরিবারের কেউ সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে চাননি ৷ তবে 19 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিশ্বজিৎ হালদার বলেন, “ছেলেটি ভীষণ ভালো ছিল ৷ ওর বাবা নেশাগ্রস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরেছিলেন ৷ এই নিয়ে বাবার সঙ্গে কনকের কথা কাটাকাটি হয়েছিল ৷ হয়তো সেই অভিমানেই সে আত্মঘাতী হয়েছে ৷ এই ঘটনায় এলাকার সবাই দুঃখিত ৷”

(আত্মহত্যা কোনও সমাধান নয় -যদি আপনার মধ্যে কখনও আত্মহত্যার চিন্তা মাথাচাড়া দেয় বা আপনার কোনও বন্ধু বা পরিচিত এই সমস্যায় জর্জরিত হন, তাহলে ভেঙে পড়বেন না। জানবেন, এমন কেউ আছে যে আপনার যন্ত্রণা, আপনার হতাশা ভাগ করে নিতে সদা-প্রস্তুত। আপনার পাশে দাঁড়াতে তৎপর। সাহায্য পেতে দিনের যে কোনও সময়ে 044-24640050 এই নম্বরে কল করুন স্নেহা ফাউন্ডেশনে। টাটা ইন্সটিটিউট অফ সোশাল সায়েন্সের হেল্পলাইন নম্বরেও (9152987821) কল করতে পারেন। এখানে ফোন করতে হবে সোমবার থেকে শনিবার সকাল 8টা থেকে রাত 10টার মধ্যে।)

ABOUT THE AUTHOR

...view details