আসানসোল, 12 এপ্রিল: কোনও জামতাড়া গ্যাং নয়, সরকারি আইটি পার্কে কল সেন্টারের নামে গড়ে উঠেছিল ভুয়ো সংস্থা ৷ অভিযোগ এদের কাজ ছিল, সাধারণ মানুষকে ফোন করে, বোকা বানানো ও বিভ্রান্ত করে তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সাফ করা ৷ আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের সাইবার বিভাগ গোপন সূত্রে খবর পেয়ে, সম্প্রতি অভিযান চালায় ওই অফিসে ৷ সেখানে অভিযান চালিয়ে 8 জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে খবর ৷
আসানসোলের উত্তর থানার অন্তর্গত কল্যাণপুর স্যাটেলাইট টাউনশিপে ওয়েবল আইটি পার্কের ঘটনা এটি ৷ সেখানেই অফিস ভাড়া নিয়ে চলছিল প্রতারণা কেন্দ্র ৷ তিন শিফটে একাধিক যুবক-যুবতী সেখানে কাজ করতে আসত ৷ আর তাদের কাজ ছিল, ফোন করে মানুষজনকে লোভ দেখানো, বিভ্রান্ত করা ও সবশেষে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের টাকা লুঠ ৷
কয়েক বছর আগে আসানসোলের কল্যাণপুর স্যাটেলাইট টাউনশিপে গড়ে উঠেছিল ওয়েবেল আইটি পার্ক ৷ সরকারি উদ্যোগে এই আইটি পার্ক তৈরি করা হয়েছিল ৷ উদ্দেশ্য ছিল আসানসোলের আইটি সংস্থাগুলিকে একছাতার তলায় নিয়ে আসা ৷ কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে ছবিটা অন্য দেখা গেল ৷ আইটি পার্কে অফিস হল, লোকাল টিভি চ্যানেল থেকে শুরু করে কল সেন্টার ও আরও বিভিন্ন সংস্থার ৷ আইটি পার্কের অন্যান্য সংস্থার কর্মীদের কাছেও, এই ভুয়ো সংস্থার পরিচয় ছিল কল সেন্টার হিসেবে ৷
কিন্তু, গত বুধবার সন্ধ্যায় হঠাৎই পুলিশি-হানা ওই আইটি পার্কে ৷ আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের সাইবার সেলের এসিপি বিশ্বজিৎ নস্করের নেতৃত্বে এই অভিযান হয় ৷ কেন এই অভিযান, প্রথমে কিছুই বোঝা যায়নি ৷ পুলিশও তদন্তের স্বার্থে বিশেষ খোলসা করেনি কিছুই ৷ ওই কল সেন্টার থেকে 6 জনকে আটক করে পুলিশ ৷ তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করা হয় ৷ আটক করা হয় অসংখ্য কম্পিউটার, মোবাইল ও প্রচুর সিম কার্ড, এটিএম কার্ড-সহ অন্যান্য সামগ্রী ৷
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কল সেন্টার থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের নাম করে ফোন করা হত গ্রাহকদের ৷ কখনও গ্রাহকরা উপহার পেয়েছেন, তো কেউ লটারিতে টাকা জিতেছেন, এমন নানান উপায়ে গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করা হত ৷ এরপর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সমস্ত তথ্য জেনে নিয়ে টাকা সাফ করত এই ভুয়ো কল সেন্টারের কর্মীরা ৷ অভিযোগ, ঠিক জামতাড়া গ্যাংয়ের কায়দায় আসানসোলে বসে মানুষজনকে প্রতারিত করছিল এরা ৷ কর্পোরেট অফিসের মতো তিন শিফটে চলত এই প্রতারণা কেন্দ্র ৷
উল্লেখ্য, ধৃত ছয় জনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ আরও দু’জনকে গ্রেফতার করে ৷ তদন্তকারীদের অনুমান এর শিকড় অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত ৷ তাই এই সংস্থার মাথায় কারা রয়েছে, কাদের দ্বারা পরিচালিত হত, তা জানতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে ৷ পুলিশের দাবি এই পুরো চক্রটিকে খুব দ্রুত ধরতে সক্ষম হবে তারা ৷
আরও পড়ুন:
- মাদকপাচারে জড়িত সন্তান ! হোয়াটসঅ্যাপ কলে পুলিশ পরিচয় দিয়ে নয়া ফাঁদ
- সাইবার প্রতারণায় পাঁচ পদ্ধতিতে বছরে 708 কোটি লুঠ!
- ফেক কল, সাইবার জালিয়াতি রোধে সতর্কতা জারি; কী কী পরামর্শ কেন্দ্রের ?