মালদা, 9 অক্টোবর: কথা ছিল, মহাষষ্ঠীতে ঘরে ফিরবেন ৷ পুজো কাটিয়ে ফের কর্মস্থলে ফিরে যাবেন ৷ কথাও রেখেছেন তিনি ৷ মহাষষ্ঠীতেই ফিরছেন ঘরে ৷ তবে লাশ হয়ে ৷ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে উত্তরাখণ্ডে মৃত্যু হয়েছে মালদার পরিযায়ী শ্রমিক শঙ্কর মণ্ডলের ৷ বুধবারই তাঁর দেহ গ্রামে ফিরে আসছে ৷
46 বছর বয়সি শঙ্কর মণ্ডলের বাড়ি রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের মহানন্দটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের সম্বলপুর গ্রামে ৷ আদতে পেশায় কৃষিজীবী তিনি ৷ কিন্তু গঙ্গা লাগোয়া গ্রামে ভাঙন আর বন্যার ভ্রূকুটি লেগেই থাকে ৷ এবারও বন্যায় ভেসে গিয়েছে এই গ্রামের বিস্তীর্ণ কৃষিজমি ৷ এলাকায় কোনও কাজও নেই ৷ বাধ্য হয়েই গ্রামের আরও কয়েকজনের সঙ্গে প্রায় আড়াই মাস আগে উত্তরাখণ্ডের ঝুলন এলাকায় শ্রমিকের কাজে যান শঙ্কর ৷ সেখানে নির্মাণ শ্রমিকের কাজও পেয়ে যান তাঁরা ৷ রাজমিস্ত্রির জোগানদারের কাজ করতেন শঙ্কর ৷
উত্তরাখণ্ড থেকে ফিরছে শঙ্করের দেহ (নিজস্ব চিত্র) রবিবার রাতে হঠাৎ অসুস্থ বোধ করেন তিনি ৷ রাতেই সহকর্মীরা তাঁকে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যান ৷ পরিস্থিতি সুবিধের নয় দেখে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ তাঁকে তড়িঘড়ি সরকারি হাসপাতালে রেফার করে দেয় ৷ কিন্তু হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় শঙ্করের ৷ হাসপাতালের চিকিৎসকরাও তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন ৷ ময়নাতদন্তের পর শঙ্করের মৃতদেহ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন তাঁর দু’জন সহকর্মী ৷ মঙ্গলবার রাতে দেহ গ্রামে ফেরার কথা থাকলেও সেটা সম্ভব হয়নি ৷ এদিন মৃতদেহ গ্রামে ফিরছে বলে জানালেন শঙ্করের আত্মীয় পরিজনরা ৷
মৃত শঙ্করের বাড়িতে স্ত্রী আদরি মণ্ডল ছাড়াও রয়েছেন দুই ছেলে দুর্গাসেন ও পাতানু ৷ অভাবের সংসার ৷ অভাবেই দুই ছেলের পড়াশোনা বিশেষ এগোয়নি ৷ দুর্গাসেন জানান, “এই এলাকায় প্রায় প্রতি বছরই বন্যা হয় ৷ বিস্তীর্ণ অংশের চাষের জমি জলের নীচে চলে যায় ৷ তখন এলাকায় কাজ পাওয়া যায় না ৷ সে কারণেই গ্রামের পুরুষরা ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতে যান ৷ বাবাও উত্তরাখণ্ড গিয়েছিলেন ৷ রাজমিস্ত্রিদের সঙ্গে কাজ করতেন ৷ ষষ্ঠীর দিন তাঁর বাড়ি ফেরার কথা ছিল ৷ কিন্তু রবিবার কাজ থেকে ঘরে ফেরার পর তিনি অসুস্থ বোধ করেন ৷ তাঁকে তড়িঘড়ি স্থানীয় একটি নার্সিংহোমেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ৷ কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি ৷ নার্সিংহোম থেকে হাসপাতাল যাওয়ার পথে মারা যান তিনি ৷ এখন বাবা আর নেই ৷ এলাকায় কাজও নেই ৷ এবার আমাদের দুই ভাইকে ভিনরাজ্যে কাজে যেতে হবে ৷ নইলে সংসার চলবে কীভাবে ?”
এলাকারই বাসিন্দা তথা রতুয়ার বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায় জানান, “খুবই দুঃখজনক ঘটনা ৷ পুজোর মধ্যে ছেলেটা চলে গেল ৷ আমি ব্যক্তিগতভাবে ওর পরিবারের পাশে আছি ৷ দল ও প্রশাসনের তরফেও শঙ্করের পরিবারকে কতটা সাহায্য করা যায় তা দেখছি ৷”