বর্ধমান, 27 ফেব্রুয়ারি: নেতা মন্ত্রীদের পারিবারিক অনুষ্ঠানে কাজ করতে হচ্ছে আশাকর্মীদের ৷ এছাড়া নিত্যদিনের কাজকর্ম তো আছেই ৷ কাজের পরিমাণ দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে অথচ মাসের শেষে বেতন হিসেবে পাঁচ হাজার টাকাও মেলে না ৷ ফলে সারা রাজ্যের সঙ্গে পূর্ব বর্ধমান জেলাতেও 1 মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকালীন কর্মবিরতিতে সামিল হচ্ছেন আশাকর্মীরা ৷ রাজনৈতিক মহলের মতে লোকসভা নির্বাচনে আশাকর্মীদের দাবিদাওয়া অন্যতম ইস্যু হতে চলেছে ৷
পশ্চিমবঙ্গ আশাকর্মী ইউনিয়নের পূর্ব বর্ধমান জেলা ইনচার্জ ঝরনা পাল বলেন, "1 মার্চ থেকে আশাকর্মীরা কর্মবিরতির পথে যাচ্ছে ৷ তাদের বাহবা দেওয়া হলেও কাজের সময় বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করিয়ে নেওয়া হচ্ছে ৷ এমনকী নেতা-মন্ত্রীদের অনুষ্ঠান বাড়িতেও তাদের ডিউটি করতে পাঠানো হচ্ছে ৷ তাদের ফোনের মাধ্যমে কাজ করতে বলা হচ্ছে ৷ অথচ গত অক্টোবর মাস থেকে তাদের ফোনের বিল দেওয়া হচ্ছে না ৷ ইনসেনটিভের টাকা ভাগে ভাগে পাঠানো হচ্ছে ৷"
এই পরিস্থিতিতে আশাকর্মীরা জাতীয় পোলিও টিকাকরণ কর্মসূচি করবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ঝরনা পাল ৷ তিনি বলেন, "এবার আমরা ন্যাশনাল প্রোগ্রাম পোলিও টিকাকরণ বয়কট করব ৷ কারণ কেন্দ্রীয় সরকারের 7 শতাংশ এবং রাজ্য সরকারের 40 শতাংশের মধ্যে দিয়েই এই কাজটা হয় ৷ সেখানে 15 বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকার 75 টাকা করে দিয়ে যাচ্ছে ৷ কোনও টাকা বাড়ায়নি ৷ উলটে যেখানে দু'টি সেন্টার ছিল, সেখানে সেন্টারের সংখ্যা কমিয়ে একটি করা হয়েছে ৷ অথচ আশাকর্মীদের দিয়ে দ্বিগুণ কাজ করানো হবে ৷"
রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দেন পূর্ব বর্ধমান জেলা ইনচার্জ ৷ তিনি বলেন, "রাজ্য বাজেটে মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ভাতা বাড়ানোর কথা বলেছিলেন ৷ তিনি দাবি করেছিলেন আশা কর্মীদের কোনও বকেয়া বাকি নেই ৷ অথচ অক্টোবর মাসের পর থেকে কোনও ইনসেনটিভ পাওয়া যায়নি ৷ মাসের শেষে আশাকর্মীদের সাড়ে চার হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে ৷ এর প্রতিবাদে 1 মার্চ থেকে কোনও আশাকর্মী আর কাজে যোগ দেবে না ৷"
দেখা গিয়েছে, একাধিক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশাকর্মীদের আশ্বাস দিয়েছেন ৷ কিন্তু বাস্তবে তাদের অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয় ৷ এমনকী পোলিও টিকাকরণের মতো কর্মসূচিতেও তাদের উপরে বাড়তি দায়িত্ব দিয়ে চাপিয়ে দেওয়া হয় ৷ পোলিওর জন্য দু'টি বুথকে যোগ করে একটি বুথে পরিণত করে দ্বিগুণ কাজ চাপিয়ে দেওয়া হয় আশাকর্মীদের উপরে ৷ উলটে তাদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয় না ৷ ফলে আগামী দিনে রাজ্যব্যাপী কর্মবিরতির ডাক দিচ্ছে আশাকর্মীরা ৷
এই প্রসঙ্গে আশাকর্মী শবনম খাতুন বেগম বলেন, "আমাদের ভাতা বাড়াতে হবে ৷ যে মাইনে হাতে পাই, তাতে সংসার চলে না ৷ কোনও ছুটি নেই ৷ অথচ দিনের পর দিন আমাদের পরিশ্রম বেড়েই চলেছে ৷ যে হারে কাজ করি, সেই হারে পারিশ্রমিক দেওয়া হয় না ৷ আমাদের এই সমস্যা দীর্ঘদিনের।" আরেক আশাকর্মী কাকলি তা বলেন, "জেলাজুড়ে আমরা কর্মবিরতিতে যাচ্ছি ৷ আমাদের দাবিদাওয়া নিয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে স্বাস্থ্য ভবন পর্যন্ত গিয়েছি ৷ কিন্তু কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি ৷ তাই বাধ্য হয়ে আমরা কর্মবিরতির পথ বেছে নিয়েছি ৷ এ নিয়ে সিএমওএইচের কাছেও স্মারকলিপি দিয়েছি ৷"
আরও পড়ুন:
- শিশুদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, হুঁশ নেই প্রশাসনের
- রামজীবনপুরে 11টি ওয়ার্ডের 13টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে বেহাল পরিকাঠামোর অভিযোগ
- অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে কর্মীদের বিক্ষোভ, লিখিত অভিযোগ জমা শিশু বিকাশ প্রকল্পের অফিসে